Sunday 13 January 2019

জগদীশচন্দ্রের বিজ্ঞান গবেষণা


জগদীশচন্দ্রের বিজ্ঞান গবেষণা

গৌতম গঙ্গোপাধ্যায়

      “জার্মান, ফরাসি, ইংরেজ, ইতালি প্রভৃতি বুধমন্ডলী-মণ্ডিত মহারাজধানীতে তুমি কোথায় বঙ্গভূমি? কে তোমার অস্তিত্ব ঘোষণা করে? সে বহু গৌরবর্ণ প্রতিভামণ্ডলীর মধ্য হতে এক যুবা যশস্বী বীর বঙ্গভূমির, আমাদের মাতৃভূমির নাম ঘোষণা করলেন, সে বীর জগৎ প্রসিদ্ধ বৈজ্ঞানিক, ডঃ জে সি বোস একা, যুবা বাঙ্গালি বৈদ্যুতিক, আজ বিদ্যুতবেগে পাশ্চাত্যমন্ডলীকে নিজের প্রতিভা মহিমায় মুগ্ধ করলেন ... সমগ্র বৈদ্যুতিকমন্ডলীর শীর্ষস্থানীয় আজ জগদীশ চন্দ্র বসু, ভারতবাসী, বঙ্গবাসী ধন্য বীর
      ১৯০০ সালে প্যারী বিজ্ঞান প্রদর্শনীতে উপস্থিত ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ, তিনি এভাবেই জগদীশচন্দ্রের বন্দনায় মুখর হয়েছিলেন। প্যারীর বিজ্ঞান প্রদর্শনী যে শতকের অন্তিমগ্নকে চিহ্নিত করেছিল সেই ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলাদেশের সমাজে শিক্ষাতে সাহিত্যে ধর্মে এক অভূতপূর্ব আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিলআজ তাকে আমরা নবজাগরণ বা রেনেসাঁ বলে চিহ্নিত করি। সেই যুগের সমস্ত পুরোধাদের কথা স্মরণে রেখেও জগদীশচন্দ্রের কথা আলাদা করে বলতে হয়, কারণ আধুনিক বিজ্ঞানে তিনি আমাদের দেশে অগ্রপথিক। বিজ্ঞানের, বিশেষ করে মৌল বিজ্ঞানের, একটা আন্তর্জাতিক চরিত্র আছে। বিজ্ঞানীকে নিজের দেশকালের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলে না, তাঁর প্রতিযোগিতা হয় সারা বিশ্বের সমস্ত বিজ্ঞানীর সঙ্গে। সেখানে জগদীশচন্দ্রের সঙ্গে সমসাময়িক  বিজ্ঞানীদের তুলনায় কী অবস্থায় ছিলেন সংক্ষেপে দেখে নেওয়া যাক। 
জগদীশচন্দ্র বসু ( নভেম্বর ৩০, ১৮৫৮ - নভেম্বর ২৩, ১৯৩৭)

      বিজ্ঞান চর্চার একটা প্রাথমিক শর্ত হল সমাজে বিজ্ঞানের ঐতিহ্য। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে জগদীশচন্দ্রের সে সৌভাগ্য ছিল না কারণ তিনি যখন কাজ শুরু করছেন, তার থেকে হাজার বছরেরও বেশি আগে ভারতে মৌলিক বিজ্ঞানের চর্চা প্রায় সমস্ত ক্ষেত্রেই কানাগলিতে ঢুকে পড়েছিল।  প্রাচীন ভারতে বিজ্ঞান চর্চার ইতিহাস আমাদের সবারই জানা; চরক, সুশ্রুত, আর্যভট্ট, ভাস্করাচার্য, শ্রীধরাচার্যদের নাম প্রাচীন যুগের বিজ্ঞানের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। কিন্তু তারপরেই আসে এক অন্ধকার যুগ। এই নিবন্ধে তার কারণ বিশ্লেষণ করার অবকাশ নেই, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র তাঁর হিন্দু রসায়নের ইতিহাস গ্রন্থে দেখিয়েছেন যে শঙ্করের মায়াবাদ ও জাতব্যবস্থাই ভারতের বিজ্ঞানের ঐতিহ্যকে ধ্বংস করেছে। এমনকি ইসলামের অভ্যুত্থানের সঙ্গে সঙ্গে আরবে মৌলিক বিজ্ঞানের যে চর্চা শুরু হয়েছিল, আমাদের দেশে তার বিশেষ কোনো প্রভাব পড়েনি। ফলে আমাদের দেশে বিজ্ঞানচর্চার কোনো পরম্পরাই ঊনবিংশ শতাব্দীতে অবশিষ্ট ছিল না। ভারতের সমাজে গুরুবাক্যের প্রতি যে প্রশ্নহীন আনুগত্য দেখানোই রীতি, তা কখনোই বিজ্ঞান চর্চার পাথেয় হতে পারে না। বিজ্ঞানের অগ্রগতি একমাত্র পুরাতনকে প্রশ্ন করা ও সম্ভব হলে তাকে ভুল প্রমাণ করার মাধ্যমেই সম্ভব। তাই যে সমাজে জগদীশচন্দ্রের জন্ম হয়েছিল, সেখানে বিজ্ঞান চর্চার পথ প্রশস্ত ছিল না।
      শুধু যে ভারতীয় সমাজ বিজ্ঞানচর্চার পক্ষে বাধাস্বরূপ ছিল তা নয়, পরাধীন ভারতবর্ষের ব্রিটিশ শাসকরাও বহুদিন পর্যন্ত তাঁর অনুকূল ছিলেন না। দেশে কোনো বিজ্ঞান চর্চার উপযোগী প্রতিষ্ঠান ছিল না সরকারি অর্থসাহায্য দূরে থাক, পদে পদে ছিল বিধিনিষেধ। ভারতীয়দের প্রাপ্য ছিল তাচ্ছিল্য আর অবহেলা। প্রেসিডেন্সি কলেজে  একই চাকরিতে জগদীশচন্দ্রের জন্য বরাদ্দ হয়েছিল সাহেব অধ্যাপকদের অর্ধেক মাইনে, তিনি তা নিতে অস্বীকার করেছিলেন। তিন বছর বিনা বেতনে চাকরি করার পরে ব্রিটিশ সরকার তাঁর দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল। একটা পুরানো বাথরুমকে সংস্কার করে ব্যবহারের উপযোগী করেছিলেন, কলেজে এইটুকু জায়গাই জুটেছিল তাঁর পরীক্ষাগারের জন্য। ক্লাস এমনভাবে দেওয়া হত যাতে তাঁর গবেষণাতে ব্যাঘাত পড়ে। তাঁর শিক্ষক ও বিশ্বখ্যাত বৈজ্ঞানিক লর্ড র‍্যালেকে তিনি এক রবিবার তাঁর ল্যাবরেটরি দেখিয়েছিলেন বলে তাকে কলেজ কর্তৃপক্ষ কারণ দর্শানোর চিঠি ধরায় – কেন তিনি ছুটির দিনে এক বহিরাগতকে কলেজে ঢুকতে দিয়েছেন। বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্রের প্রতিযোগিতা সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানীদের সঙ্গে, কিন্তু তাঁরা প্রায় কেউই এই ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হননি। সরকারের আনুকূল্য তাঁদের সঙ্গে ছিল। জগদীশচন্দ্রের বিজ্ঞান গবেষণাকে এই পটভূমিতে দেখলে আমাদের মনে হবে নবজাগরণের প্রাণপুরুষদের মধ্যেও তিনি অনন্য।
      খুব সংক্ষেপে জগদীশচন্দ্রের জীবনীর দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক। ভগবানচন্দ্র বসু ও বামাসুন্দরী দেবীর পুত্র জগদীশচন্দ্রের জন্ম ১৮৫৮ সালের ৩০ নভেম্বর পূর্ববঙ্গের ময়মনসিংহে। বাবা ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। বাবা ও মায়ের চারিত্রিক দৃঢ়তা ও মহত্ত্ব ছেলের মনে প্রভাব ফেলেছিল। তাঁর শৈশব কেটেছিল বাবার কর্মস্থল ফরিদপুরে। দশ বছর বয়েসে কলকাতায় এসে প্রথমে হেয়ার স্কুলে ভর্তি হন। তারপর সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল এবং সেখান থেকে স্নাতকস্তরে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ। ডাক্তারি পড়া জন্য ইংল্যান্ড যাত্রা করেছিলেন জগদীশ, কিন্তু শারীরিক কারণে ডাক্তারি ছেড়ে পদার্থবিদ্যা পড়া শুরু করেন। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ট্রাইপস’ এবং একই সঙ্গে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। দেশে ফিরে প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ানো শুরু করেন। কলেজের অধ্যক্ষ বা শিক্ষাদপ্তরের অধিকর্তা কেউই খুব উৎসাহী ছিলেন না, কিন্তু তখনকার ভাইসরয় লর্ড রিপনের হস্তক্ষেপে তাঁর যোগদানে বাধা কাটে।
      শুধুমাত্র শিক্ষাদান করে জগদীশচন্দ্র সন্তুষ্ট ছিলেন না। যে বয়সে সাধারণত অন্যান্য বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবনী শক্তির ক্ষয় শুরু হয়, সেই মধ্যতিরিশে জগদীশচন্দ্র সিদ্ধান্ত করলে যে বাকি জীবন তিনি বিজ্ঞান গবেষণাতে নিয়োজিত করবেন। প্রেসিডেন্সি কলেজের ভিতরে সামান্য পরিসরে সরকারি সাহায্য ছাড়াই যে গবেষণা শুরু করেছিলেন, তা তাঁকে বিজ্ঞানী মহলে খ্যাতি এনে দেয়। ১৮৯৬ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডিএসসি ডিগ্রি দেয়। ১৯২০ সালে ব্রিটেনের রয়্যাল সোসাইটির ফেলো হয়েছিলেন জাতিসঙ্ঘ বা লিগ অফ নেশনসের ইন্টারন্যাশনাল ইন্টালেকচুয়াল কোঅপারেশন কমিটির সদস্য হয়েছিলেন জগদীশচন্দ্র।  ১৯১৭ সালে প্রতিষ্ঠা করেন বসু বিজ্ঞান মন্দির। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু, তিনি জগদীশচন্দ্রকে নানাভাবে সাহায্য করেছিলেন। ১৯৩৭ সালের ২৩ নভেম্বর তাঁর মৃত্যু ঘটে।
      জগদীশচন্দ্র গবেষণা শুরু করেছিলেন পদার্থবিজ্ঞানে, ক্রমে তাঁর আগ্রহ উদ্ভিদের শারীরবিদ্যার প্রতি গিয়েছিল। উদ্ভিদ গবেষণাতে পদার্থবিজ্ঞানীর যন্ত্রপাতি ব্যবহার শুরু করেছিলেন জগদীশচন্দ্র। সে জন্য সে সময় প্রতিষ্ঠিত উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা তাঁর সমালোচনা করেছিলেন, কিন্তু আজ আমরা তাঁকে জীবপদার্থবিদ্যা বা বায়োফিজিক্সের একেবারে প্রথম যুগের অগ্রপথিক বলে চিহ্নিত করতে পারি। সবচেয়ে বড় কথা হল যে তাঁর প্রয়োজনের সমস্ত যন্ত্রপাতি তাঁর নির্দেশমতো এদেশের স্বল্পশিক্ষিত কারিগররাই বানাতেন। তিনি পাট, গন্ধক ইত্যাদি সাধারণ বস্তু ব্যবহার করে রেডিয়োতরঙ্গের নানা ধর্ম প্রমাণ করেছিলেন। সম্পূর্ণ নিজের আর্থিক সঙ্গতির উপর নির্ভর করে বিদেশের গবেষণাগারের তুল্য যন্ত্র নির্মাণ করে তিনি দেখিয়ে দিয়েছিলেন যে মেধার কোনো বিকল্প হয় না। তরুণ গবেষকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছিলেন, ‘সর্বদা শুনিতে পাওয়া যায় যে, আমাদের দেশে যথোচিত উপকরণবিশিষ্ট পরীক্ষাগারের অভাবে অনুসন্ধান অসম্ভব এ কথা যদিও অনেক পরিমাণে সত্য, কিন্তু ইহা সম্পূর্ণ সত্য নহে ... আমাদের অনেক অসুবিধা আছে, অনেক প্রতিবন্ধক আছে সত্য, কিন্তু পরের ঐশ্বর্যে আমাদের ঈর্ষা করিয়া কি লাভ? অবসাদ ঘুচাও দুর্বলতা পরিত্যাগ কর মনে কর, আমরা যে অবস্থাতে পড়ি না কেন সে-ই আমাদের প্রকৃষ্ট অবস্থা ভারতই আমাদের কর্মভূমি, এখানেই আমাদের কর্তব্য সমাধা করিতে হইবে    
      শুধুমাত্র উদ্ভিদবিজ্ঞানে পদার্থবিদ্যার পদ্ধতির প্রয়োগ নয়, বহু ক্ষেত্রেই জগদীশচন্দ্র ছিলেন তাঁর সমসাময়িক বিজ্ঞানীদের থেকে অনেকটা অগ্রসর।  ১৯৭৭ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন নেভিল মট, তাঁর মতে জগদীশচন্দ্র তাঁর সময়ের থেকে অন্তত ষাট বছর এগিয়ে ছিলেন। তিনি আরো বলেছেন যে পি বা এন শ্রেণির অর্ধপরিবাহী বা সেমিকন্ডাক্টর হল আধুনিক ইলেকট্রনিক্সের প্রাণ, জগদীশচন্দ্রের গবেষণাতেই প্রথম তাদের ধারণা পাওয়া যায়।
      জগদীশচন্দ্র গবেষণা শুরু করেন তড়িৎচৌম্বক তরঙ্গ বিষয়ে, তিনি বিজ্ঞানী অলিভার লজের লেখা ‘হাইনরিখ হার্জ এন্ড হিজ সাকসেসরস’ বইটি পড়ে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। হার্জ ছিলেন এ বিষয়ে  সে যুগের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী। ঊনবিংশ শতাব্দীতে মাইকেল ফ্যারাডে দেখান যে তড়িৎ ও চুম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে অঙ্গাঙ্গী সম্পর্ক আছে। ডায়নামোর সৃষ্টির মাধ্যমে বিদ্যুৎ সৃষ্টি হয়েছিল বলে ফ্যারাডের গবেষণাগারকে আধুনিক সভ্যতার আঁতুড়ঘর বললে অত্যুক্তি হয় না। জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল দেখান যে তড়িৎচৌম্বক ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত আছে এক তরঙ্গআলো একধরনের তড়িৎচৌম্বক তরঙ্গ। এরপর ১৮৮৬ সালে হার্জ নিজের ল্যাবরেটরিতে রেডিয়োতরঙ্গ সৃষ্টি করতে ও ধরতে সক্ষম হন।
      জগদীশচন্দ্র এই রেডিয়োতরঙ্গ বিষয়েই কাজ শুরু করেন। ১৮৯৫ সালে তিনি প্রথম রেডিয়োতরঙ্গ তৈরি করতে এবং তা ধরতে সক্ষম হন। রেডিয়ো আবিষ্কারক হিসাবে যাঁদের নাম আসে, তাঁদের একজন, মার্কনি ১৮৯৭ সালে প্রথমবার প্রকাশ্যে পরীক্ষা করে দেখান। অপরজন হলেন রাশিয়ার আলেকজান্ডার পোপভ, তিনিও ১৮৯৫ সালের আগে কাজটা করে উঠতে পারেন নি। কিন্তু জগদীশচন্দ্র বেতার সম্প্রচার নয়, মৌলিক বিজ্ঞানের গবেষণাতে আগ্রহী ছিলেন। তিনি তাঁর এই সংক্রান্ত গবেষণার কোনো পেটেন্ট নেননি। তার সুযোগ নিয়েছিলেন মার্কনি, যাঁদের মতো গবেষকদের বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞানের ঐতিহাসিক জে ডি বার্নাল বলেছেন ‘শৌখিন সুযোগসন্ধানী বিজ্ঞানকর্মী’।
      পেটেন্ট না নেওয়ার ক্ষেত্রে জগদীশচন্দ্রের চিন্তাধারা খুবই সুস্পষ্ট। তিনি বিশ্বাস করতেন আবিষ্কারই মুখ্য, আবিষ্কারক গৌণ। তাঁর আবিষ্কারের ব্যবসায়িক ব্যবহারের এক প্রস্তাবকে ফিরিয়ে দিয়ে তিনি রবীন্দ্রনাথকে চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘বন্ধু, তুমি যদি এদেশের টাকার উপর মায়া দেখিতেটাকাটাকা কি. ভয়ানক সর্বগ্রাসী লোভ। আমি যদি এই যাঁতাকলে একবার পড়ি, তাহা হইলে উদ্ধার নাই। দেখ, আমি যে কাজ লইয়া আছি, তাহা বাণিজ্যিক লাভালাভের উপায় মনে করি না। আমার জীবনের দিন কমিয়া আসিতেছে, আমার যাহা বলিবার তাহার সময় পাই না ...’।  ব্যক্তি জগদীশচন্দ্রের ক্ষেত্রে এই মনোভাব নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়, কিন্তু হয়তো এর ফল আমাদের দেশে বিজ্ঞানচর্চার প্রসারের অনুকূল হয়নি। একথা নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় যে বিজ্ঞানের জগতে তাঁর নিজের অবদান প্রতিষ্ঠার পক্ষে অন্তরক হয়ে দাঁড়িয়েছিল তাঁর এই মনোবৃত্তি।
      জগদীশচন্দ্র যে রেডিয়োতরঙ্গ তৈরি করেছিলেন তার তরঙ্গদৈর্ঘ্য ছিল এক থেকে পাঁচ মিলিমিটার। তাঁর তৈরি গ্রাহকযন্ত্রের নাম তিনি দিয়েছিলেন কৃত্রিম অক্ষিপট বা আর্টিফিসিয়াল রেটিনা।  তিনিই প্রথম মিলিমিটার তরঙ্গ তৈরি করেছিলেন যা আজকাল কৃত্রিম উপগ্রহের সঙ্গে যোগাযোগে ও কম্পিউটার নেটওয়ার্কে ব্যবহার হয়। এই তরঙ্গের প্রতিফলন, প্রতিসরণ, অপবর্তন, সমবর্তন ইত্যাদি ধর্ম প্রমাণ করার জন্য লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডিএসসি ডিগ্রি দেয়। বেতারযন্ত্রে গ্রাহককে বলা হয় কোহেরার। মার্কনি যে কোহেরার ব্যবহার করেন, আধুনিক ঐতিহাসিকরা অনুমান করেন যে তা জগদীশচন্দ্রের ডিজাইন মেনে তৈরি। তবে মনে রাখা প্রয়োজন যে রেডিয়ো আবিষ্কারক হিসাবে কোনো একজনকে চিহ্নিত করাটা অনৈতিহাসিক, অনেক বিজ্ঞানীই স্বাধীনভাবে এই বিষয়টিতে অবদান রেখেছেন।
      জগদীশচন্দ্রের সমর্থনে ভগিনী নিবেদিতার প্রয়াস সুবিদিত, তাঁর মাধ্যমেই জগদীশচন্দ্রের সঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দের মার্কিন শিষ্যা সারা বুলের সঙ্গে জগদীশচন্দ্রের যোগাযোগ হয়েছিল। বিবেকানন্দের চেষ্টায় সারা বুল জগদীশচন্দ্রের হয়ে তাঁর এই কৃত্রিম অক্ষিপটের পেটেন্ট নিয়েছিলেন। এটি হল গ্যালেনা বা লেড সালফাইড নামক অর্ধপরিবাহী নির্মিত গ্রাহকযন্ত্র। জগদীশচন্দ্রই প্রথম অর্ধপরিবাহীকে এই কাজে ব্যবহার করেন। আধুনিক যুগে আলোর গ্রাহক হিসাবে অর্ধপরিবাহী নির্মিত ফটোডায়োডের ব্যবহার হয়, গ্যালেনাও সেই কাজে সক্ষম। এই বিষয়ে গবেষণা করতে গিয়েই তিনি এন ও পি এই দুই শ্রেণির অর্ধপরিবাহীর সম্মুখীন হন এবং দেখেন যে এই দুই ধরনের অর্ধপরিবাহী দিয়ে তৈরি যন্ত্র তড়িৎপ্রবাহের সুপরিচিত ওহমের সূত্র মেনে চলে না। এই কাজের মধ্যে ভবিষ্যতের ডায়োডের ইঙ্গিত ছিল, কিন্তু জগদীশচন্দ্রসহ কোনো বিজ্ঞানীই সে কথা সে যুগে বুঝতে পারেননি। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সেই স্তরে তা সম্ভবও ছিল না। তাঁর এই গবেষণা পরবর্তীকালে সলিড স্টেট ফিজিক্স বা কঠিন পদার্থের বিজ্ঞানের সূচনাতে কিছুটা সাহায্য করেছিল।  
      জগদীশচন্দ্র তাঁর অর্ধপরিবাহী গবেষণার তাৎপর্য যে বুঝতে পারেননি, তা তাঁর কথা থেকেই স্পষ্ট। ১৯০১ সালে তিনি যখন গ্যালেনা নির্মিত গ্রাহকযন্ত্রের কথা আলোচনা করছেন, তখন তিনি মূলত তা ব্যবহার করে বিদ্যুতের প্রভাবে জড় ও জীবের প্রতিক্রিয়ার উপর জোর দিয়েছিলেন। সেই প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে সংক্ষেপে তাঁর পদার্থবিজ্ঞান গবেষণার আলোচনা সমাপ্ত করা যাক। তিনি দুটি প্রিজম ব্যবহার করে রেডিয়ো তরঙ্গের তীব্রতা পরিবর্তনের যে পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিলেন, তা ১৯৯৫ সালে আরিজোনার রেডিও মানমন্দিরে কাজা লাগানো হয়। রেডিয়ো তরঙ্গের জন্য প্রথম ওয়েভগাইড বা তরঙ্গচালক তাঁর সৃষ্টি। মাইক্রোওয়েভ বা মিলিমিটার ওয়েভে বহুলব্যবহৃত শিঙার মতো আকৃতির হর্ন অ্যন্টেনা তিনি তৈরি করেছিলেন। তিনি প্রথম সূর্য থেকে রেডিয়োতরঙ্গের কথা বলেন এবং অনুমান করেন যে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে তাকে শোষণ করে নেয়। ১৮৯৭ সালের তাঁর সেই কথা প্রমাণ হতে সময় লেগেছিল আরো অর্ধেক শতাব্দী।
      জগদীশচন্দ্রের সাফল্য আলোচনার সঙ্গে সঙ্গেই বলতে হবে যে পদার্থবিজ্ঞানে ১৮৯৭ সালে ইলেকট্রন আবিষ্কারের সঙ্গে  যে নবযুগের সূচনা ঘটেছিল এবং কোয়ান্টম তত্ত্ব ও আপেক্ষিকতা তত্ত্ব যে বিপ্লব ঘটিয়েছিল, জগদীশচন্দ্র সে বিষয়ে সম্পূর্ণ উদাসীন ছিলেন। তিনি তখন গবেষণার নতুন ক্ষেত্রের সন্ধান পেয়েছেন। প্রেসিডেন্সি কলেজে তাঁর ছাত্র বিখ্যাত রসায়নবিজ্ঞানী জ্ঞানচন্দ্র ঘোষের মন্তব্য দিয়ে আলোচনার এই পর্যায়ের যবনিকা ফেলা যাক। ‘A physicist cannot help regretting that Bose should have left this promising and then unexplored region of physical investigations—in which he could have been a pioneer—for physics-physiological investigations, where his appearance was resented by the orthodox physiologists and his work was much hampered by their opposition.
      জগদীশচন্দ্রের গবেষণার কালকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা হয়। প্রথমভাগ ১৮৯৫ সাল থেকে ১৮৯৯ সাল পর্যন্ত যখন তিনি বেতারতরঙ্গ বিষয়ে কাজ করেছেন। ১৮৯৯ সাল থেকে জগদীশচন্দ্রের গবেষণা দিক পরিবর্তন করতে থাকে। গ্রাহক যন্ত্র নির্মাণের সময় তিনি দেখেন যে কিছু কিছু পদার্থ বারবার ব্যবহার করলে তাদের প্রতিক্রিয়া ক্রমশ শ্লথ হতে থাকে, কিন্তু সময় দিলে তারা আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে। তাঁর সামনে সুযোগ এসেছিল কঠিন পদার্থের বিজ্ঞানের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করার, কিন্তু জগদীশচন্দ্রের  প্রতিভা বেছে নিয়েছিল অন্য পথ। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর মনে আসে জীবের প্রতিক্রিয়া ও ক্লান্তির কথা। তিনি পরীক্ষা করে দেখান যে জড় ও জীবের প্রতিক্রিয়ার মধ্যে খুব স্পষ্ট সাদৃশ্য আছে। এর থেকে তিনি ভাবতে শুরু করেন যে জড় ও জীবের মধ্যে একটা ঐক্য আছে। উপনিষদের মধ্যে তিনি তাঁর মতের সমর্থন খুঁজে পান। এই অত্যন্ত বিতর্কিত প্রসঙ্গে আলোচনা এই প্রবন্ধের পরিসরে করা সম্ভব নয়। ব্যক্তিগতভাবে তিনি  প্রাচীন শাস্ত্রে তাঁর মতের সমর্থন খুঁজে নিতেই পারেন, কিন্তু অন্য বিজ্ঞানীদের কাছে, বিশেষ করে পশ্চিমের বিজ্ঞান জগতে, তাঁর এই ধরনের চিন্তা অনেকটাই অবৈজ্ঞানিক মনে হয়েছিল। জগদীশচন্দ্র এই নিয়ে নানা পরীক্ষানিরীক্ষা করেছিলেন, কিন্তু বিজ্ঞানীদের মনে হয়েছিল তিনি নিজের মতের সমর্থন করতে গিয়ে সেই পরীক্ষার ফলকেও ছাড়িয়ে অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছেন যা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে একেবারেই অনভিপ্রেত।  একই সঙ্গে তিনি সেই সময় পা রাখছেন বিজ্ঞানের এক নতুন জগতে, উদ্ভিদবিজ্ঞানে, যে বিষয়ে তাঁর কোনো প্রথাগত শিক্ষা নেই। পদার্থবিদ্যা থেকে আহরিত তাঁর পদ্ধতি সে যুগের প্রতিষ্ঠিত উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের কাছে অবোধ্য ঠেকেছিল। এই দুইয়ের যুগপৎ ফল হল এই যে উদ্ভিদের শারীরবিদ্যা বিষয়ে তাঁর পরবর্তী গবেষণা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ হলেও বিজ্ঞানজগতে অনেকটাই অবহেলিত হয়ে পড়ে। ফলে সেখানে তিনি নিঃসঙ্গ পথিক রয়ে গেছেন। ১৯০২ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত দ্বিতীয় বহুবিতর্কিত পর্বে তিনি জড় ও জীবের ঐক্য সন্ধান করেছেন। তৃতীয় পর্ব শুরু হয়েছিল ১৯০২ সালে যখন তিনি উদ্ভিদের শারীরবিদ্যাতে মনোনিবেশ করেছেন। প্রবন্ধ শেষের আগে আমরা খুব সংক্ষেপে এই তৃতীয় ভাগের দিকে চোখ রাখি।
      একটা কথা এখানে বলে রাখা প্রয়োজন। সাধারণভাবে শোনা যায় জগদীশচন্দ্র গাছের প্রাণ আছে একথা আবিষ্কার করেন। কথাটা সর্বৈব ভুল। হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ উদ্ভিদের প্রাণের কথা জানে। জগদীশচন্দ্র দেখান যে বাইরে থেকে বিভিন্ন ধরনের উত্তেজনার প্রয়োগ করলে উদ্ভিদ ও প্রাণীর সাড়া একই রকম হয়। এই অতি সাধারণ কথাটা এখানে বলতে হল, কারণ পাঠ্য পুস্তক থেকে শুরু করে বহু জায়গায় এই ভ্রান্তি চোখে পড়ে।
      উদ্ভিদের শারীরবিদ্যা সংক্রান্ত জগদীশচন্দ্রের গবেষণার প্রথমেই বলতে হয় তাঁর তৈরি নানা অত্যন্ত সুবেদী যন্ত্রের কথা যার সাহায্যে তিনি উদ্ভিদের নড়াচড়াকে কোটিগুণ পর্যন্ত বিবর্ধিত করে দেখিয়েছেন। এসের অদ্যে রয়েছে ক্রেস্কোগ্রাফ, রেসোন্যান্ট রেকর্ডার, প্লান্ট ফাইটোগ্রাফ, ফটোসিন্থেটিক রেকর্ডার, ইত্যাদি যন্ত্র। এই সমস্ত যন্ত্রের সাহায্যে তিনি দেখালেন যে আপাতদৃষ্টিতে যে উদ্ভিদ নড়াচড়াতে সক্ষম নয়, তারাও লজ্জাবতী লতা বা বনচাঁড়াল উদ্ভিদের মতোই সাড়া দেয়, শুধুমাত্র তাদের সাড়া অনেক মৃদু। বিষ প্রয়োগে তাদের মৃত্যুযন্ত্রণা প্রাণীরই অনুরূপ। তিনি দেখান যে উদ্ভিদের এ ধরনের সাড়া বিদ্যুৎনির্ভর। বাইরে থেকে প্রয়োগ করা উত্তেজনার প্রভাবে উদ্ভিদের দেহে বিদ্যুৎপ্রবাহ নিয়ে তিনি কাজ করেন। কোশের মধ্যে তড়িৎদ্বার প্রবেশ করিয়ে তিনি দেখান যে ফ্লোয়েম ও প্রোটোজাইলেম কলার মধ্য দিয়ে এই প্রবাহ হয়। সে সময় তাঁর এই মত প্রায় কেউ স্বীকার না করলেও পরবর্তীকালে উদ্ভিদের শরীরে তড়িৎ মাধ্যমে সঙ্কেত বহন ও তার পর্যায়ক্রমিক আচরণের মাধ্যমে জৈব ছন্দের সমর্থনে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। উদ্ভিদের বৃদ্ধির উপর আলো, তাপমাত্রা, বিদ্যুৎ, রেডিয়োতরঙ্গ ইত্যাদির প্রভাব তিনি নিরূপণ করেন। তিনি বলেন যে উদ্ভিদের কোশ ব্যাটারি বা তড়িৎচালক কোশের মতোই শক্তি সঞ্চয় করে রাখে। আলোকের বিকিরণের প্রভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের শক্তি কোশে জমা থাকে ও বৃদ্ধি ইত্যাদি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াতে কাজে লাগে।
      সালোক সংশ্লেষের সময় বেরোনো অক্সিজেনের মাত্রা তিনি মেপেছিলেন এবং দেখিয়েছিলেন যে এই প্রক্রিয়ায় কিছু উদ্ভিদ ম্যালিক অ্যাসিড তৈরি করে। উদ্ভিদের মূল থেকে পাতায় জল যাওয়ার পদ্ধতির নাম রসের ঊর্ধ্বগমন। সাধারণভাবে মনে করা হয় যে এর জন্য দায়ী, শিকড়ের চাপ, জাইলেম কলার কৈশিকতা এবং গাছের পাতার প্রস্বেদন প্রক্রিয়ার ফলে সৃষ্ট টান অর্থাৎ একেবারেই ভৌত প্রক্রিয়া।। জগদীশচন্দ্র সিদ্ধান্ত করেছিলেন যে এই জলশোষণ উদ্ভিদ কোশের স্বাভাবিক ধর্ম। সে সময় অবশ্য তাঁর মতকে অবহেলা করা হয়েছিল। কিন্তু এক শতাব্দী পরেও যে রসের ঊর্ধ্বগমন প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি, তার থেকে বোঝা যায় যে উদ্ভিদবিজ্ঞানে শিক্ষিত না হয়েও তিনি একটা গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাকে চিহ্নিত করে তার সমাধানের চেষ্টা করেছিলেন। উদ্ভিদবিজ্ঞানে তাঁর আরো নানা উল্লেখযোগ্য কাজ রয়েছে, কিন্তু স্থানাভাবে তা নিয়ে আলোচনা করা গেল না।
      জগদীশচন্দ্র তাঁর গবেষণার কথা সাধারণের জন্য বাঙলায় লিখে প্রকাশ করতেন, সেই যুগে এটা খুব কম কথা ছিল না। এর জন্য তাঁকে বিজ্ঞান সংক্রান্ত পরিভাষা সৃষ্টি করতে হয়েছিল।  রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ ও নিবেদিতা তাঁর গবেষণাতে আগ্রহী হয়েছিলেন। পরাধীন ভারতে বিশেষ করে শিক্ষিত বাঙালীদের মধ্যে জগদীশচন্দ্রের গবেষণা বিষয়ে একটা কৌতূহল জেগেছিল। জগদীশচন্দ্রের সাফল্য ছিল ভারতীয়দের ক্ষমতা সম্পর্কে ইংরেজদের তাচ্ছিল্যের মনোভাবের সমুচিত প্রত্যুত্তর। জগদীশচন্দ্র নিজেও নবজাগ্রত জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেমকেই তাঁর গবেষণার প্রেরণা হিসাবে চিহ্নিত করেছেন।
        জগদীশচন্দ্রের বিজ্ঞান গবেষণা বিষয়ে ইতি টানার আগে একটা কথা বলা প্রয়োজন। তাঁর গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার যোগ্য উত্তরসূরি আসেনি। তার কারণ আলোচনার জন্য পৃথক নিবন্ধের প্রয়োজন। পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নে সেই সময় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসছিল, যার ফলে ছাত্ররা সেই দিকেই আকৃষ্ট হচ্ছিল। প্রফুল্লচন্দ্র বা রমন কলকাতাতে রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞানে যে ধরনের পরম্পরা বা স্কুল তৈরি করেছিলেন, নিজের গবেষণা প্রতিষ্ঠান থাকা সত্ত্বেও জগদীশচন্দ্রের ক্ষেত্রে তা ঘটেনি। জীববিজ্ঞানের সীমাহীন সম্ভাবনার কথা আমরা আজ বলে থাকি, কিন্তু সে যুগে তার কথা কারো মাথায় আসেনি। ফলে সারা জীবনই জগদীশচন্দ্র নিঃসঙ্গ পথিক রয়ে গেলেন।

প্রকাশঃ জাগ্রত বিবেক নভেম্বর ২০১৮