গ্যালিলিওর ভুল
গৌতম গঙ্গোপাধ্যায়
‘ম্যাডাম?
আপনার কয়েক মিনিট সময় হবে?’ দরজা ঠেলে সোম মুখ বাড়াল।
সোম
আমাদের ডিভিশনের সবচেয়ে জুনিয়র স্টাফ, এমএসসি পাস করেই সবে গত বছর জয়েন করেছে। ছেলেটা
সত্যিই ব্রিলিয়ান্ট সন্দেহ নেই। আমি নিজে ওর ইন্টারভিউতে ছিলাম, অসাধারণ ভালো করেছিল।
আমি শেষকালে মজা করেই জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ‘তোমার নামের সঙ্গে মিল আছে, এমন জায়গায় কাজ
করবে?’ এক মুহূর্ত না ভেবে উত্তর দিয়েছিল,
‘নিশ্চয়।’ এক বছরও হয়নি চাকরিতে ঢুকেছে, এর মধ্যেই মাঝে মাঝে মনে হয় যে ওকে ছাড়া আমাদের
লুনার ডিভিশনের অর্ধেক কাজ বন্ধ হয়ে যাবে।
আজ
আমি সত্যিই ব্যস্ত। চাঁদে মানুষ নেমেছিল সেই কবে, তারপর শুধু আমেরিকাই আরও কয়েকটা মিশন
পাঠিয়েছিল। তাও অনেক বছর হয়ে গেল। চাঁদে শেষবার মানুষের পা পড়ার পর পঞ্চাশ বছর কেটে
গেছে, আর কেউ চেষ্টাও করেনি। এত বছর পরে আমরা আবার চাঁদে মানুষ পাঠাব। আমাদের যান কোথায়
নামবে ঠিক করতে হবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে। তবু সোম যখন বলছে, নিশ্চয় দরকারি কথা।
‘এসো।
সোম
চেয়ারে বসে বলল, ‘আপনাকে একটা জিনিস দেখাতে চাই।’
আমি
কম্পিউটারের দিকে হাত বাড়ালাম। সোম বলল, ‘না না, এখনো কিছু পাঠাইনি আপনাকে। আমার ল্যাপটপে
আছে। সত্যি কথা বলতে কি, নিজেও ঠিক বুঝতে পারছি না কী করব। প্রিন্ট আউট নিয়ে এসেছি।’
আমার দিকে কয়েকটা কাগজ এগিয়ে দিল।
উপরের
কাগজটা হাতে নিলাম। চাঁদের ফটো। এ ছবি আমার প্রায় মুখস্থ হয়ে গেছে। চোখ বুজে এঁকে দিতে পারি। তবে এটা অষ্টমীতে তোলা আধখানা চাঁদের
ছবি, বাকিটা অন্ধকারে ঢাকা। আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম।
‘এবার
এটা দেখুন।’
একটা
পুরানো বইয়ের পাতার কপি, সেখানেও অর্ধেক চাঁদ, হাতে আঁকা। চাঁদের বুকের উল্কা গহ্বর,
পাহাড় এগুলো দেখানো হয়েছে। ফটোগ্রাফের মতো নয়, কিন্তু বেশ ভালো। ‘এটা কোথা থেকে পেলে?’
‘এটা
গ্যালিলিওর সাইদেরাস নানসিয়াস বই থেকে পেয়েছি।’ ওরে বাবা, সে তো খুব বিখ্যাত বই। তার
মানে গ্যালিলিও দূরবিন দিয়ে চাঁদ দেখে যে ম্যাপ
এঁকেছিলেন, এটা সেই ছবি। আমি পড়িনি, তবে এটা খুব ভালো জানি যে বিজ্ঞানের ইতিহাসে সেই
বইয়ের বিরাট ভূমিকা আছে। কিন্তু সোম এটা আমাকে দেখাতে এনেছে কেন?
‘দুটোর
মধ্যে তফাতটা দেখতে পাচ্ছেন?’
গ্যালিলিওর
ছবিটা ভালো করে দেখলাম। ‘আরে, মাঝখানের এই বড় গহ্বরটা কোথা থেকে এলো? এরকম কিছু তো
চাঁদে নেই।’ গ্যালিলিও অবশ্য গহ্বর বলেননি, ওগুলোকে সমুদ্র ভেবেছিলেন।
‘ঠিক।
বিজ্ঞানের ঐতিহাসিকরা মনে করেন গ্যালিলিও ইচ্ছে করে ওই গহ্বরটাকে বড় করে এঁকেছিলেন,
যাতে ছবিটা বেশ চমকপ্রদ হয়। এবার পরের কাগজটা দেখুন।’
পরের
কাগজটাও অর্ধেক চাঁদের হাতে আঁকা ছবি। ‘এটাও কি ওই একই বইয়ের?’
না,
এটা টমাস হ্যারিয়ট বলে এক ইংরেজের আঁকা। বিষয়টা খেয়াল করেছেন?’
‘হ্যাঁ,
এখানেও ঠিক একই জায়গায় একটা গহ্বর আছে। তাতে কি হল? হয়তো গ্যালিলিওর বই দেখেই ছবিটা
এঁকেছিল।’
‘এই
ছবিটা ১৬১০ সালের ১৭ জুলাই আঁকা, গ্যালিলিওর বইটা প্রকাশিত হয়েছিল সে বছর মার্চ মাসে।
হতেই পারে ম্যাপটা গ্যালিলিওর বই দেখে আঁকা। হ্যারিয়ট ছিলেন জ্যোতির্বিদ, তিনি নিশ্চয়
গ্যালিলিওর বইটা পড়েছিলেন। হ্যারিয়ট বেশ বড় বিজ্ঞানী ছিলেন, বস্তুর পতনের সূত্রগুলো
তিনিও আবিষ্কার করেছিলেন। গ্যালিলিও সূত্রগুলো ছাপিয়েছিলেন, তিনি ছাপান নি। তিনি নিজেই ১৬০৯ সালের জুলাই মাস থেকেই দূরবিন দিয়ে
চাঁদ পর্যবেক্ষণ করছিলেন আর এঁকে রাখছিলেন, মানে গ্যালিলিওরও আগে। তবে তিনি বইতে ছাপাননি
বলে বহু বছর পরে এসব কথা জানা গেছে। এক বছর
আগে তাঁর আঁকা ছবিতেও কিন্তু এই গহ্বরের মতো একটা কিছু আছে বলেই আমার মনে হচ্ছে, আপনি দেখুন।’
পরের
ছবিটা অত ডিটেল্ড নয়, কিন্তু মনে হল একই জায়গায় একটা গহ্বর মতো আছে। নাকি সোমের কথা
শুনে আমি প্রভাবিত হলাম? ‘বুঝলাম। কিংবা বুঝিনি। কিন্তু এর সঙ্গে আমাদের কাজের কী সম্পর্ক?
আমি এ দেখে কী করব?’
‘ম্যাডাম, এমন যদি হয় যে ওখানে একটা বড় গহ্বর গ্যালিলিও আর হ্যারিয়টের সময় ছিল, কিন্তু এখন আর নেই।’
আমি
কয়েক মুহূর্ত ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম, তারপর হাসিতে ফেটে পড়লাম। ‘সোম, তুমি বড্ড বেশি
চাপ নিচ্ছ। কদিন ছুটি নিয়ে কোথাও থেকে ঘুরে এসো।’
‘আমি
জানতাম আপনি এই কথাই বলবেন। কিন্তু কেন একটু বুঝিয়ে দিন।’
গ্যালিলিওর
বইয়ের ছবির কপিটা হাতে নিলাম। ‘এই গহ্বরটা অন্তত চারশো কিলোমিটার চওড়া।’ চাঁদের ব্যাস
আমার জানা, তার থেকে আন্দাজ করলাম।
‘চারশো
পঁচিশ কিলোমিটার,’ সোম সঙ্গে সঙ্গে বলল।
‘তাহলে
চারশো পঁচিশ কিলোমিটার চওড়া একটা খাদ কি উবে গেল নাকি? নতুন গহ্বর তৈরি হতে পারে, কিন্তু
পুরানোগুলো কোথায় যাবে?’ চাঁদের বুকে গহ্বরগুলো
তৈরি হয়েছিল বড় বড় গ্রহাণু আর উল্কার সঙ্গে ধাক্কা লাগার ফলে। গত চারশো বছরের মধ্যে
আর একটা বড় সংঘর্ষ হয়ে থাকতেও পারে, যদিও সেরকম কোনো রিপোর্ট নেই। কিন্তু সব সময় তো
চাঁদকে পৃথিবী থেকে দেখা যায় না, তাই তর্কের খাতিরে নতুন গহ্বর সৃষ্টির সম্ভাবনা উড়িয়ে
দেওয়া যায় না। কিন্তু চাঁদে নদী সমুদ্র বায়ুমণ্ডল নেই, ভূমিকম্প হয় না, সেখানে একবার
কোনো গহ্বর তৈরি হলে তা চিরকালের জন্যই থেকে যাবে।
‘আমারও
সেটাই প্রশ্ন,’ সোম উত্তর দিল।
‘ভুল
দেখেছিলেন, বা ভুল এঁকেছিলেন, এটাই মেনে নিতে হবে। প্রথমদিকের টেলিস্কোপ নিশ্চয় খুব
নির্ভরযোগ্য ছিল না। গ্যালিলিও একটু প্রচার ভালোবাসতেন, সেইজন্যই ছবিটাতে গহ্বরটা বাড়িয়ে
দেখিয়েছিলেন। তুমিই তো বললে যে লোকজন তাই মনে করে।’
‘গ্যালিলিও
প্রচার ভালোবাসতেন সেটা ঠিক, কিন্তু বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে তিনি কোনো কিছু বাড়িয়ে বলতেন
বলে মনে হয় না।’ সে কথাটা হয়তো ঠিক। মাত্র কয়েকবছর হল গ্যালিলিওর নোট থেকে দেখা গেছে
যে তিনি নেপচুন গ্রহকে টেলিস্কোপ দিয়ে দেখতে পেয়েছিলেন, কিন্তু নিশ্চিত হতে পারেননি
বলে কাউকে জানান নি। তার প্রায় আড়াইশো বছর পরে গ্রহটা আবিষ্কার হয়। ‘সোম, তুমি কী বলতে
চাইছ, আরও একটু পরিষ্কার করে বলো।
‘ম্যাডাম,
এমন যদি হয় যে,’ এক মুহূর্ত থেমে সোম আবার শুরু করল। ‘এমন তো হতেও পারে যে এর মধ্যে
ওই গহ্বরটা কেউ বুজিয়ে দিয়েছে।’
আমি
অবাক হয়ে তাকিয়ে বললাম, ‘চারশো কিলোমিটার চওড়া একটা গর্ত বুজিয়ে দিয়েছে! কে বুজিয়ে
দিয়েছে?’
‘মানে,
পৃথিবীতে অন্য গ্রহের প্রাণীদের আসার কথা তো কত শোনা যায়, হয়তো তার মধ্যে একটা সত্যি
হতেই পারে। হয়তো সেই প্রাণীরাই ...’
না:,
এবার সত্যিই বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। ‘সোম, ওসব কল্পবিজ্ঞানের গল্পে পাওয়া যায়, বাস্তবে
নয়। যদি এসেও থাকে, তাদের কাজকর্ম নেই, খামোখা চাঁদের বুকে একটা গহ্বর বন্ধ করে যাবে
কেন? আর পশ্চিমবঙ্গের থেকে বড় একটা গহ্বর বোজানো কি সম্ভব? এইরকম একটা কাজ চাঁদের বুকে
হল অথচ কারোর সেটা চোখে পড়ল না, এতবার চাঁদে
অভিযান গেল কিন্তু কেউ কিছু দেখতে পেল না – এ আবার হয় নাকি?’
‘ম্যাডাম,
আপনি ভালোই জানেন, মাসের মধ্যে অনেকটা সময় চাঁদের ওই অংশটা অন্ধকারে ঢাকা থাকে। খুব
ভালো দূরবিন তৈরি হওয়ার আগে সেই সময় সেখানে কী হচ্ছে কারোর পক্ষে জানা সম্ভব নয়। ওই
জায়গাটার কাছাকাছি কোনো চন্দ্র অভিযান হয়নি। ভিনগ্রহবাসীরা কী পারে আর কী পারে না,
তা আমাদের পক্ষে বলা সম্ভব? কেন একটা খাদ বুজিয়েছে তা আমি কী করে বলব? হয়তো ওর নিচে
ভিনগ্রহীরা একটা স্টেশন বানিয়েছে, সেখানে থেকে আমাদের উপর নজর রাখছে। আমরাও চাঁদে স্থায়ী
স্টেশনে তৈরির কথা ভাবছি, সেটা তো মাটির নিচেই করতে হবে।’
এই
কথাবার্তা শেষ করার সময় এসেছে। ‘সোম তোমার কথা শুনলাম। সে যাই হোক, তার সঙ্গে আমাদের
ডিভিশনের কাজের কোনো সম্পর্ক নেই। আজ সন্ধে হয়ে গেছে, বাড়ি যাও। কাল থেকে মন দিয়ে অফিসের
কাজ কোরো।’
‘ম্যাডাম,
আমি বলতে চাইছিলাম যে আমরা কী ওই জায়গাটার কাছাকাছি কোনো ল্যান্ডিং স্পট বাছতে পারি?
তাহলে প্রমাণ হয়ে যাবে আমার কথা ঠিক না ভুল।’
‘দেখো
সোম, আমি যদি এই সমস্ত কথা রিপোর্টে লিখে, লোকে আমাকে পাগল বলবে।’
‘না
ম্যাডাম, এসব কথা লিখবেন না। আমি নিশ্চিত যে সেই প্রাণীরা আমাদের উপর নজর রাখে। সেই
জন্যই আমি আপনাকে মেল করিনি। যারা অন্য নক্ষত্র থেকে আসতে পারে, আমাদের উপর নজর রাখা,
আমাদের মেলের এনক্রিপশন ভাঙা ওদের কাছে জলভাত। আমি যা বুঝেছি, সবই আমার ল্যাপটপে আছে।
কিন্তু মেলে পাঠাব না।’
একবছর
একসঙ্গে কাজ করলাম, সোমটা যে এত প্যারানয়েড জানা ছিল না। অবশ্য ব্রিলিয়ান্ট লোকজন একটু
আনস্টেবল হয়। ‘সে কথা যদি তোলো, তুমি যে এত কথা আমাকে বললে, আমার ঘরের ক্যামেরা তো
চালু আছে, সমস্ত রেকর্ড হয়েছে। সেটাও তো তাহলে তোমার ইটিরা দেখে নিতে পারে। তাহলে?’
সোম
উঠে দাঁড়ালো, ফ্যাকাসে হয়ে গেছে ভয়ে। ‘আপনার ক্যামেরা চালু ছিল? আমাদের সব ফাইলই তো
ডিভিশনের মেন কম্পিউটারে যায়, সেটা তো ইন্টারনেটে কানেক্টেড। তাহলে তো?‘
এতো
পুরো বেহেড হয়ে গেছে। আমি ওকে ঠাণ্ডা করার জন্য বলি, ‘তাহলে তো কী? সেটাতে কি বাইরে
থেকে অ্যাক্সেস করা যায় নাকি? চিন্তা কোরো না, তুমি বাড়ি যাও, আমি ফাইলটা মুছে দেব।’
‘এখনি
মুছে দিন, ম্যাডাম। হয়তো অলরেডি দেরি হয়ে গেছে, তবু এখনি মুছে দিন। আমার কথা যদি সত্যি
হয়, তাহলে লুনার ডিভিশনের উপর নিশ্চয় নজর আছে। আমাদের ফায়ারওয়াল ভেঙে কম্পিউটারে অ্যাক্সেস
করা ওদের কাছে কোনো ব্যাপার নয়।’
আমি
একটু কড়া হলাম। ‘দেখো সোম, অনেকক্ষণ তোমায় সময় দিয়েছি। আমার অনেক কাজ আছে। আমি বলেছি
তো ফাইলটা মুছে দেব। সেরকম বুঝলে তুমি কদিন ছুটির আবেদন করতে পারো, আমি অ্যাপ্রুভ করে
দেব। এখন তুমি আসতে পারো।’
সোম
আরও কিছুক্ষণ আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করল, আমি আর পাত্তা দিইনি। মনে মনে ঠিক করে রাখলাম,
কালকেই ডিভিশনের সাইকিয়াট্রিস্টকে বলব সোমের সঙ্গে কথা বলতে। আমি কাজে মন দিলাম, সোমকে
সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য বলেছি ফাইলটা মুছে দেব, নিশ্চয় দেব। কিন্তু পরে করলেও চলবে।
অনেক
কাজই ছিল, বাড়ি যেতে দেরি হচ্ছে। অফিসের সবাই বেরিয়ে গেছে, আমি একাই কাজ করে যাচ্ছি।
ঘণ্টা চারেক পরে মোবাইলটা বেজে উঠল। আমার ডেপুটি চৌধুরি ফোন করেছে।
‘ম্যাডাম,
আপনি শুনেছেন? একটা খারাপ খবর আছে। সোমের গাড়ি অ্যাকসিডেন্ট করেছে, ওকে হসপিটালে নিয়ে
যাওয়া হয়েছিল, কিন্তু তার আগেই মারা গেছে।’
‘সে
কি, সোম তো খুব সাবধানী ড্রাইভার।’ ওর মানসিক অবস্থা ভালো ছিল না, আমার হয়তো ওকে আজ
গাড়ি চালাতে বারণ করা উচিত ছিল।
‘না,
পুলিস বলছে ড্রাইভারের দোষ নয়। হঠাৎ করে গাড়ির সমস্ত ইলেক্ট্রনিক্স ক্র্যাশ করেছে। আধুনিক গাড়ি পুরোপুরি ইলেক্ট্রনিক্স কন্ট্রোল্ড,
তাই সোম একেবারেই সামলাতে পারেনি। সোজা গিয়ে একটা দেয়ালে ধাক্কা মেরেছে। এরকম ইলেক্ট্রনিকালি
ডেড গাড়ি নাকি পুলিসের কেউ আগে দেখেনি। আরও স্ট্রেঞ্জ ব্যাপার হল যে ওর ল্যাপটপটা ছিল
পিছনের সিটে। সেটার ফিজিক্যালি কোনো ক্ষতি হয়নি, কিন্তু সেটাও ইলেক্ট্রনিকালি ডেড।
একই সঙ্গে এরকম কি করে হতে পারে কেউ বুঝতে পারছে না।’
আমি
মোবাইলটা শক্ত করে চেপে ধরলাম। কথা বলতে পারছিলাম না।
‘ম্যাডাম,
আপনি ঠিক আছেন তো?’ চৌধুরির গলাটা উদ্বিগ্ন শোনাল।
মোবাইলটা
টেবিলে রেখে আমি কম্পিউটার থেকে সিকিউরিটি সিস্টেমে লগ ইন করলাম। আমার ঘরের ক্যামেরার
বিকেলের ফাইলটা আরেকবার দেখি।
‘ম্যাডাম,
ম্যাডাম,’ চৌধুরি ডাকছে। আমি আতিপাতি করে খুঁজে চলেছি, কিন্তু ফাইলটা নেই। আমার আগেই
কেউ সেটা মুছে দিয়েছে।
ফোনটা
কেটে গেল। চোখের সামনে এনে দেখলাম সেটা একেবারে ডেড। অথচ একটু আগেও ফিফটি পার্সেন্ট
চার্জ ছিল।
ফোনটা থেমে যাওয়ার পরে ফাঁকা অফিসের নৈঃশব্দটা মনের উপর চেপে বসছিল। হঠাৎ একটা খড়খড় আওয়াজে চমকে উঠলাম। টেবিলের এককোণে পড়ে ছিল সোমের কাগজগুলো, সবার উপরে গ্যালিলিওর আঁকা চাঁদের ছবিটা। আমার ঘরের দরজা বন্ধ, তবু হঠাৎ কোথা থেকে একটা দমকা হাওয়া এসে সেটাকে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
প্রকাশ- ছোটদের কলরব ২০২২