Sunday 9 August 2020

লিমেরিক (অনুবাদ)

লিমেরিক (অনুবাদ)

গৌতম গঙ্গোপাধ্যায় 

এই লিমেরিকের অনুবাদগুলো ম্যাজিক ল্যাম্প ওয়েব পত্রিকার জুলাই ২০২০ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। এই লিঙ্কে পাওয়া যাবে। নিচে মূল ইংরাজি আর তার বাংলা অনুবাদগুলো তুলে দিলাম। অনুবাদে কিছুটা স্বাধীনতা নিয়েছি। একটা মূল ছড়া অবশ্য লিমেরিকই নয়। 

There was an Old Man with a beard,

Who said, "It is just as I feared!—

Two Owls and a Hen, 

Four Larks and a Wren,

Have all built their nests in my beard. 

(Edward Lear)

 

মাথা নেড়ে বুড়ো বলে, ‘যা ভেবেছি তাই,

পাখিদের বাসা হল মোর দাড়িটাই!

পেঁচা আছে দুইখানি,

মুরগিও আছে জানি,

শেষে কিনা এসে জোটে শালিক চড়াই!’

 

“A wonderful bird is the Pelican.

His beak can hold more than his belly can.

He can hold in his beak

Enough food for a week!

But I'll be darned if I know how the hellican?”

(Dixon Lanier Merritt)

 

পেলিক্যান পাখি এসে আমারে শুধায়,

বলো এই ঝামেলায় কী করি উপায়?

ঠোঁটে মোর যা ধরে

আঁটে না তা উদরে,

এত মাছ রাখি কোথা পড়েছি  দায়

 

There was a young lady named Bright

Whose speed was far faster than light;

She set out one day

In a relative way

And returned on the previous night.

(A. H. Reginald Buller)

 

কন্যে ছোটেন আলোর থেকে জোরে,

বেরিয়েছিলেন রবিবারের ভোরে

আইনস্টাইন মেনে

চলেন পিছন পানে,

পৌঁছে গেলেন আগের শনিবারে

 

There once were two cats of Kilkenny,

Each thought there was one cat too many,

So they fought and they fit,

And they scratched and they bit,

Till, excepting their nails

And the tips of their tails,

Instead of two cats, there weren't any.

(Traditional)

 

দুইটি বিড়াল ছিল কলকাতা নগরে

দুজনেই ভেবেছিল, ‘আমি একা রব রে

বিল্লির ঝগড়ায়

কান পাতা হল দায়,

চিহ্ন শেষেতে শুধু লেজে আর নখরে

 

Thursday 6 August 2020

পেত্নি রানির মহাকাব্য অথবা পেত্নিমঙ্গল

লকডাউনে কবি পেত্নি রানি!

চাঁদনি রাতের পেত্নি রানি 
লেখেন বসে ছড়া,
বাঁচতে গেলে শুনতে হবে,
পায় নারে কেউ ছাড়া।
লকডাউনে ভূতের রানির
হল বিষম দায়,
নেইকো নাপিত, নেই পার্লার,
করেন কী উপায়?
অনেক ভেবে ভূতের রানি
বাছেন নতুন ছাঁট,
প্রেতের দেশে চালু হল
ন্যাড়া হেয়ারকাট।
ন্যাড়া মাথায় কবিতারা
ভসভসিয়ে ওঠে,
ছন্দরা সব এদিক ওদিক
ছটফটিয়ে ছোটে।
আগে ছিলেন রবি কবি
এখন আছেন ন্যাড়া,
পেত্নি বলেন, লাইক কেন
দিস না হতচ্ছাড়া?
হাড় চিবোব, মাস চিবোব,
মটকে দেব ঘাড়,
পদ্যেতে মোর লাইক যদি
না পাই হাজারবার।

আবার লকডাউনে, এবার রোমান্টিক পেত্নি রানি!!

চাঁদের দেশের পেত্নি রানি 
হন যে বেজায় বোর,
কাঁহাতক আর সময় কাটান 
খেলে গোলামচোর?
সন্ধে হওয়ার আগে থেকেই 
সবাই পালায় ঘরে,
দাঁত খিঁচিয়ে পেত্নি রানি 
ভয় দেখান আর কারে?
এই কটা মাস আগেও মানুষ 
এমনটা তো ছিল না,
পেত্নি  রানির থেকেও কিনা 
বেশি ভয়ের করোনা?
ফেসবুকেতে লিখলে ছড়া 
লাইক মেলে বটে,
ভার্চুয়ালে রিয়াল লাইফ 
ফ্লেভার কি আর জোটে?
ভূত রাজাতেও মন ওঠে না 
লকডাউনের কালে,
পেত্নি রানি রোমান্স খোঁজেন 
ইন্টারনেট জালে।

এটা এক গেটটুগেদারের বর্ণনা। 

চাঁদের দেশের পেত্নি রানি
জুগিয়েছিল ঘর,
গণ্ডা দুয়েক ভূত পেত্নি
মাত করে আসর।
আট গোত্রের ভূত পেত্নির
আটখানা বায়না,
মেছো পেত্নি মৎস্য ছাড়া
আর কিছু খায় না।
ভূত স্মৃতিধর ড্রিঙ্কস দেখে
খুঁজতে গেলো কোলা,
পেত্নিদীপা শনিবারে
ভেজ খায় নির্জলা।
গৌ  নামের গোভূত আছে, 
খায় যাহা পায় তাই,
নেই গার্জেন নেই কন্ট্রোল
বাছ বিচারও নাই।
ভৃঙ্গী নেই তো  নেই পরোয়া
নন্দী ছিল সাথে,
দুপুর থেকে রান্না সেরে
আউট হল রাতে।
নানা ভূতের  ডিম্যান্ড রানি
মেটায় হাসিমুখে,
হাজার খানা থ্যাঙ্কস পাঠালাম
ভূতপেত্নির থেকে। 
 
 
 
এটা এমএসসি র বন্ধুদের জন্য লেখা। করোনা মিটলে আবার দেখা হওয়ার কথা।

অল্পেতে খুশি হবে কোভিড উনিশ কি?

মাথা না মুড়ানো কি হবে খুব রিস্কি?

নিউটাউনের সেই ন্যানো গেটটুগেদার,

সেকেন্ড ওয়েভ সে এনেছিল করোনার?

এই ভেবে যদি থাকি বেঁধে দড়ি উদরে

তাহলে করোনা কি পালাবে এ দেশ ছেড়ে?

তার চেয়ে পরি মাস্ক, মাখি স্যানিটাইজার,

সময়েতে নিয়ে নিই ভ্যাক্সিন দুইবার।

মেদিনিপুরেতে কি যাব নাকো আমরা?

মনে পড়ে কোলাঘাটে হোটেলের কামরা?

ইলিশ হুইস্কির সেই অ্যাডমিক্সচার

আশা রাখি ফিরে সেতো আসবেই বারবার।

ওয়েভ সেকেন্ড থার্ড যাই থাক কপালে,

দেখা হবে সকলের একদিন সকালে।

ততদিন ডিসট্যান্স রাখি ফুট ছয় সাত,

দূরে থাকি, মনে তবু রই যেন একসাথ।


ভৃঙ্গি বলে, 'নন্দী দাদা করো মোদের ত্রাণ,

পেত্নী রানি আসছে আবার ভোলাবাবার থান।

হাওড়া থেকে ট্রেনে চেপে নামলো হরিদ্বার। 

সেখান থেকে কয় পা বলো বদ্রি কি কেদার?

ভোলাবাবা ভোলা মনের নাইকো নজর হেথা,

পেত্নী রানির হুকুম মেনে গাত্রে হবে ব্যাথা।

আগের বারে, দুখের কথা বলব কাকে আর,

শরীর আমার হয়েছিল হাড় কখানা সার।

একা আমি নয়কো, যত বাবার অনুচর

সবে মিলে খেটে কত রাত করেছি ভোর!' 

শিং নাড়িয়ে নন্দী বলে, 'তিনপাওলা বোকা,

না পড়লে নিউজপেপার মিথ্যে কেন রাখা?

রানির খবর আছে জুড়ে সেটার প্রথম পাতা।

পুলিশ তাকে দিয়েছে ফের ফিরিয়ে কলকাতা।'


          * * *


প্রেতিনি রানিরে          পুলিশ ছল করে 

       ফিরায়ে দিয়াছে কলকাতা,

নতুবা তাহারে             হিমাদ্রি পাহাড়ে

        রুধিবে কার হেন ক্ষমতা?

কৈলাস সে ভূধর          অতীব মনোহর,

          কোটি শশী সেথা পরকাশ।

তা বলে নয় হেন           নীলকণ্ঠ যেন          

          করেন সেথা সদা নিবাস।।

সুদীর্ঘ হিমালয়              পশ্চিমে কাশ্মীর রয়

         পূরবে আছে অরুণাচল। 

অপূর্ব হেরি শোভা           মুনি মনোলোভা

          সকলি দেব নিবাসস্থল।।

অতীত যুগে কবে             কুমারসম্ভবে

            ছন্দে এঁকে দিয়ে ছবি,

পর্বত হিমালয়                  শিবের শ্বশুরালয় 

            কাব্যে লিখেছেন কবি।।

 শহর দার্জিলিং                হিলস্টেশন কিং

             নাই থাক পুরাণে নাম,

 বঙ্গে পূজা সেরে               উমা সপরিবারে

              সেথায় লহেন বিশ্রাম।।

ঘুম স্টেশন হতে                 কাঞ্চনজঙ্ঘাতে         

              দেখিলে সূর্যের উদয়,

 জুড়ায় আঁখিদুটি               উদ্বেগ যায় ছুটি

                শান্ত তাপিত হৃদয়।।      

  সেথায় মিলিবারে             ভোলা মহেশ্বরে

              রানি বাহিরান পথে। 

   লইয়া দলবলে                 চড়ে ইন্ডিয়ান রেলে

               চলেন হিমাদ্রি পর্বতে।।

  কাঁদিয়া গৌতম                গোভূতের অধম

               ভাসিয়া কহে আঁখিনীরে,

   নেক্সট বার হতে                  ট্যুর প্ল্যান করিতে

                চিত্তে রেখো এ দাসেরে ।।