Friday 26 April 2024

আর্নল্ড সমারফেল্ড

আর্নল্ড সমারফেল্ড

 গৌতম গঙ্গোপাধ্যায়

 


আমরা বোরের মডেলের কথা স্কুলে পড়েছি। এই ব্লগের অন্য লেখাতে সেই মডেলের কথা আছে। হাইড্রোজেনের বর্ণালী ব্যাখ্যা করতে সফল হলেও বোরের মডেল অন্যান্য পরমাণুর ক্ষেত্রে সমান সাফল্য পায়নি। এমনকি হাইড্রোজেন পরমাণুর উপর তড়িৎ বা চৌম্বকক্ষেত্র প্রয়োগ করলে তার বর্ণালীর চরিত্র পাল্টে যায়, বোর মডেল তার সমস্ত দিক ব্যাখ্যা করতে পারছিল না। এই সমস্যার সমাধানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন একাধিক বিজ্ঞানী, তাঁদের মধ্যে প্রথমেই আসে আর্নল্ড সমারফেল্ডের কথা। কোয়ান্টাম তত্ত্বের অন্য দিকপালদের ঔজ্জ্বল্যে তাঁর নাম এখন কিছুটা আড়ালে পড়লেও আমরা দেখব যে সেই তত্ত্বে তাঁর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে।

সমারফেল্ড এক বিশেষ রেকর্ডের অধিকারী। নোবেল পুরস্কারের জন্য তাঁর সমর্থনে মোট চুরাশিটি মনোনয়ন জমা পড়েছিল, অন্য যে কোনো পদার্থবিজ্ঞানীর থেকে বেশি। কিন্তু সেই পুরস্কার তাঁর অধরাই থেকে গিয়েছিল। অন্য একদিক থেকে তাঁকে জে জে টমসনের সঙ্গে তুলনা করা যায়। তাঁর ছাত্রদের মধ্যে নোবেল পেয়েছিলেন ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ, উলফগ্যাং পাউলি, পিটার ডিবাই, হান্স বেথে, ইসিডর রাবি, লাইনাস পাউলিং ও মাক্স ফন লউ। এছাড়াও তাঁর বেশ কয়েকজন ছাত্র পদার্থবিদ্যার জগতে খুবই বিখ্যাত। কঠিন পদার্থের আপেক্ষিক তাপ বিষয়ক আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তাপ তত্ত্বের উন্নতিসাধন করেছিলেন ডিবাই, তবে তিনি অণুর গঠন এবং গ্যাস মাধ্যমে এক্স-রশ্মি ও ইলেকট্রন অপবর্তন বিষয়ে রসায়নবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। পাউলি ও হাইজেনবার্গ কোয়ান্টাম বলবিদ্যাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন।

সমারফেল্ডের জন্ম ১৮৬৮ সালের ৫ ডিসেম্বর জার্মানির ক্যোনিসবার্গ শহরে, বর্তমানে তা অবশ্য রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত। বাবা ফ্রাঞ্জ ছিলেন ডাক্তার, মায়ের নাম সিসিলিয়া। তিনি ক্যোনিসবার্গের আলবার্টিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা ও গণিত বিষয়ে পড়াশোনা করেন। সেখানে থেকে মাত্র ২২ বছর বয়সে ডক্টরেট করার পরে তিনি গটিনগেন, আখেন ও মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে পড়িয়েছিলেন। তাঁকে জার্মান তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার জনক বলা হয়, একই সঙ্গে পদার্থবিদ্যার সর্বকালের সেরা শিক্ষকদের মধ্যেও তাঁর নাম একেবারে উপরের সারিতে আসবে। ১৯১০ ও ১৯২০-র দশকে বলা হত জার্মান পদার্থবিদ্যা তিন স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে - প্লাঙ্ক, আইনস্টাইন ও সমারফেল্ড। আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের তাৎপর্য যাঁরা প্রথম উপলব্ধি করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে সমারফেল্ড অন্যতম। তাঁর সমর্থন বিজ্ঞানী মহলে এই তত্ত্বের স্বীকৃতির পথ প্রশস্ত করেছিল।

সমারফেল্ডের নানা অবদানের এমনকি উল্লেখ করারও পরিসর আমাদের নেই, আমরা কোয়ান্টাম বলবিদ্যাতে তাঁর সবথেকে উল্লেখযোগ্য অবদানের উপরেই দৃষ্টি রাখব। সমারফেল্ড বোরের তত্ত্বকে আরো এগিয়ে নিয়ে যান এবং কোয়ান্টাম তত্ত্বে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। একটি আমরা এখনো নানা জায়গায় ব্যবহার করি, সেটিকে আমরা সমারফেল্ড কোয়ান্টাম শর্ত বলি।

সমারফেল্ডের কোয়ান্টাম শর্ত থেকে শুধুমাত্র বোরের মডেল পাওয়া যায়, তা নয়। বোরের মডেলে ধরে নেওয়া হয়েছিল যে ইলেকট্রন শুধুমাত্র বৃত্তাকার কক্ষপথে ভ্রমণ করে। কিন্তু পদার্থবিদ্যা অনুযায়ী ইলেকট্রনের কক্ষপথ বৃত্তাকার না হয়ে উপবৃত্তাকারও হতে পারে। উপবৃত্তাকার কক্ষপথে ইলেকট্রনের ভরবেগ পরিবর্তন হয়, তাই বোরের মডেল সরাসরি প্রযোজ্য নয়। ( তুলনায় বলতে পারি, পৃথিবী সূর্যকে ঘিরে উপবৃত্তাকার কক্ষপথে আবর্তন করে বলে তার বেগ সারাবছর সমান নয়। ডিসেম্বর মাসে যখন পৃথিবী সূর্যের সব থেকে কাছে তাকে তার বেগ সব থেকে বেশি হয়। আবার জুন মাসে সূর্য থেকে সর্বোচ্চ দূরত্বে থাকে বলে পৃথিবীর বেগ সেই সময় সব থেকে কম হয়। এটি কেপলারের দ্বিতীয় সূত্র।) সমারফেল্ডের মডেলে পরমাণুর মডেলে উপবৃত্তাকার কক্ষপথ যোগ করা সম্ভব হল। এর জন্য আরো নতুন কোয়ান্টাম সংখ্যার প্রয়োজন হয়েছিল। এর নাম কৌণিক কোয়ান্টাম সংখ্যা। এই সমস্ত কোয়ান্টাম সংখ্যার তাৎপর্য অবশ্য কোয়ান্টাম বলবিদ্যা আবিষ্কারের আগে পুরোপুরি বোঝা সম্ভব হয়নি।

সমারফেল্ডের মডেল তড়িৎক্ষেত্রে হাইড্রোজেনের বর্ণালীর পরিবর্তনকে ব্যাখ্যা করতে সম্ভব হয়েছিল। জোহানেস স্টার্ক দেখেছিলেন যে হাইড্রোজেন পরমাণুকে তড়িৎক্ষেত্রে রাখলে বর্ণালীর প্রতিটি রেখা একাধিক রেখাতে ভেঙে যায়। তড়িৎক্ষেত্রের মান বাড়ালে এই রেখাগুলোর মধ্যে ব্যবধান বাড়ে। স্টার্ক ভেবেছিলেন হাইড্রোজেন পরমাণুতে নিঃসন্দেহে একের বেশি ইলেকট্রন আছে, তা না হলে বোরের মডেল থেকে এতগুলি রেখা পাওয়া যেতে পারে না। সমারফেল্ডের মডেল প্রয়োগ করে কার্ল শোয়ারচাইল্ড ও সমারফেল্ডের একদা ছাত্র পল এপস্টাইন আলাদা আলাদাভাবে দেখালেন যে নতুন কোয়ান্টাম সংখ্যাগুলি প্রয়োগ করলে সহজেই এই ঘটনার ব্যাখ্যা সম্ভব, কারণ তড়িৎক্ষেত্র থাকলে হাইড্রোজেন পরমাণুর শক্তি স্তরের মান পরিবর্তন হয়ে যায়। তখন আর তাকে শুধুমাত্র বোর মডেলের কোয়ান্টাম সংখ্যা দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না, শক্তি স্তরগুলি এই নতুন কোয়ান্টাম সংখ্যার উপরও নির্ভর করে। ফলে একটি রেখার জায়গায় একাধিক রেখা পাওয়া যায়। একাধিক রেখার ব্যাখ্যার জন্য তাই একাধিক ইলেকট্রন লাগে না। প্রসঙ্গত শোয়ার্জচাইল্ড প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন, এবং সেখানে এক দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হন। যুদ্ধক্ষেত্র থেকেই তিনি তড়িৎক্ষেত্রে হাইড্রোজেন পরমাণুর বর্ণালীর ব্যাখ্যা করেছিলেন। তিনি আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা সমীকরণের প্রথম সমাধান দিয়েছিলেন, কৃষ্ণ গহ্বরের ব্যাসার্ধকে তাঁর নামে বলা হয় শোয়ার্জচাইল্ড ব্যাসার্ধ। সেই বিখ্যাত গবেষণাপত্রটিও যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পাঠানো। কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি মারা যান।

সমারফেল্ডের মডেলে একই সঙ্গে আরো একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কেও হিসাবে আনা সম্ভব হল, তা হল বিশেষ আপেক্ষিকতার জন্য ভরের পরিবর্তন। ১৯০৫ সালেই আইনস্টাইন দেখিয়েছিলেন বস্তুর ভর তার বেগের উপর নির্ভর করে। অবশ্য সাধারণ মানের বেগের জন্য বস্তুর ভরের পরিবর্তন ধর্তব্য নয়; বেগ যদি আলোর বেগের থেকে খুব কম না হয়, তাহলেই একমাত্র সেই পরিবর্তন চোখে পড়বে। উপবৃত্তাকার কক্ষপথে আবর্তনরত ইলেকট্রনের বেগ পথের সর্বত্র সমান নয়, ফলে তার ভরেরও পরিবর্তন হয়। সেক্ষেত্রে বেগের জন্য ভরের পরিবর্তনকে হিসাবে আনতে হবে। সেই কাজটা সমারফেল্ডের মডেলে করা যায়। সমারফেল্ড সেই অঙ্কটা কষলেন, এবং দেখালেন যে কোনো বিশেষ মুখ্য কোয়ান্টাম সংখ্যার জন্য যতগুলি কৌণিক কোয়ান্টাম সংখ্যা হয়, তাদের সকলের শক্তি স্তর আলাদা আলাদা, যদিও তারা পরস্পরের খুব কাছাকাছি অবস্থান করে। কয়েক মাসের মধ্যেই পরীক্ষা করে দেখা গেল যে দেখা গেল তাঁর গণনা একদম সঠিক।

পরমাণুর অভ্যন্তরে ইলেকট্রনদের বেগ পারমাণবিক সংখ্যার সমানুপাতী। হাইড্রোজেন পরমাণুর পারমাণবিক সংখ্যা এক, কিন্তু অন্য মৌলের পরমাণুর ক্ষেত্রে তা অনেক বেশি, যেমন সিসার 82 বা ইউরেনিয়ামের 92। এই সব মৌলের পরমাণুতে ইলেকট্রনের বেগ এত বেশি হয় যে তা আলোর বেগের কাছে পৌঁছে যায়। সে জন্য হাইড্রোজেন বর্ণালীতে এই বিভিন্ন শক্তি স্তরের মধ্যে পার্থক্য খুব কম, তাই আগে এই বিষয়টা দেখা যায়নি। একমাত্র খুব উন্নত বর্ণালীবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েই হাইড্রোজেন পরমাণুর শক্তি স্তরের এই বিভাজন পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব।

তড়িৎক্ষেত্রের মতো চৌম্বকক্ষেত্রেও পরমাণুর বর্ণালী বিশ্লিষ্ট হয় যায় বা একধিক রেখায় ভেঙে যায়। ১৮৯৬ সালে বিজ্ঞানী পিটার জিম্যান এই ঘটনা প্রথম দেখিয়েছিলেন। তার ব্যাখ্যা অবশ্য আরো জটিল। সমারফেল্ড ও পিটার ডিবাই আলাদা আলাদাভাবে দেখান যে শুধুমাত্র কৌণিক ভরবেগকে ধরে নিলেই তড়িৎ বা চৌম্বকক্ষেত্রে পরমাণুর বর্ণালীর সমস্ত চরিত্রের ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে না। বাইরে থেকে কোনো তড়িৎক্ষেত্র বা চৌম্বকক্ষেত্র প্রয়োগ করলে ইলেকট্রনের আবর্তনতল ওই ক্ষেত্রের সঙ্গে কয়েকটি নির্দিষ্ট কোণ করে থাকবে, এবং সেই কোণগুলির মানও প্লাঙ্কের ধ্রুবকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, এই অনুমানও জরুরি। ওই নির্দিষ্ট কোণগুলির মানের সঙ্গে সমারফেল্ডের নতুন কোয়ান্টাম সংখ্যা সংশ্লিষ্ট। এই নতুন কোয়ান্টাম সংখ্যাকে বলা হয় চৌম্বক কোয়ান্টাম সংখ্যা।

কোয়ান্টাম সংক্রান্ত আগের ধারণাগুলির থেকে এই বিষয়টা অনেকটাই আলাদা বলে মনে করা হচ্ছিল। এখানে শক্তি বা কৌণিক ভরবেগের মতো কোনো বিশেষ রাশির নয়, ইলেকট্রনের কক্ষপথ কোন দিকে ঘুরে থাকবে সে কথা বলা হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে যে তারও কতকগুলো নির্দিষ্ট অভিমুখ আছে। সেজন্য এই ধারণাকে বলা হল স্পেস বা স্থান কোয়ান্টাইজেশন।

সমারফেল্ড ছিলেন আদ্যন্ত জার্মান, কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে জার্মানিতে যে উন্মাদনা দেখা দিয়েছিল, তিনি তার শরিক হননি। প্লাঙ্কের অধ্যায়ে আমরা দেখেছি যে বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির বেলজিয়াম অধিকার সমর্থন করে তিরানব্বই জন বুদ্ধিজীবী এক প্রচারপত্রে সই করেছিলেন, সমারফেল্ড তাঁদের মধ্যে ছিলেন না। পরে কিন্তু তিনি আর নিরপেক্ষ থাকতে পারেননি, জার্মান যুদ্ধোন্মাদনার শিকার হয়ে পড়েছিলেন, এবং জার্মানির পরাজয়ের পরে হতাশ হয়ে পরেছিলেন, যদিও পড়াশোনা বা গবেষণা তাতে প্রভাবিত হয়নি। তবে ১৯৩০-এর দশকে নাৎসিদের চূড়ান্ত জাতীয়তাবাদী মতকে তিনি মেনে নিতে পারেননি। হিটলারের আমলে ইহুদি বিজ্ঞানীদের সমর্থনের জন্য এবং আইনস্টাইনের তত্ত্ব পড়ানোর জন্য তিনি প্লাঙ্ক ও হাইজেনবার্গের মতোই নাৎসিদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। ইহুদি ছাত্ররা যাতে বিদেশে কাজ করার সুযোগ পায়, তার জন্য তিনি নানা চেষ্টা করেছিলেন। হল্যান্ডে তাঁকে কয়েকটি বক্তৃতা দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়, তিনি তার জন্য অনেক টাকা চেয়েছিলেন। উদ্যোক্তারা অবাক হলেও রাজি হলেন। পুরো টাকাটাই তিনি ইংল্যান্ডে পালিয়ে যাওয়া জার্মান বিজ্ঞানীদের জন্য দান করে দিয়েছিলেন, অন্য কোনো ভাবে জার্মানি থেকে টাকা পাঠানোর উপায় ছিল না। শেষ পর্যন্ত তাঁকে অবসর নিতে বাধ্য করা হয়, এবং সেই পদে তাঁর পছন্দের হাইজেনবার্গের জায়গায় এমন এক ব্যক্তিকে নিয়োগ করা হয় যাঁর তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে কোন জ্ঞানই ছিল না। ছ'বছর পরে জার্মানি পরাজিত হলে সমারফেল্ড আবার পড়ানো শুরু করেন।

সমারফেল্ডের সঙ্গে ভারতীয় বিজ্ঞানীদের সম্পর্ক ছিল বেশ গভীর। মেঘনাদ সাহা জার্মানিতে থাকার সময় সমারফেল্ড তাঁর গবেষণাপত্র পড়ে তাঁকে মিউনিখে আমন্ত্রণ জানান। সেই সময়ে রবীন্দ্রনাথও মিউনিখে গিয়েছিলেন, সমারফেল্ড তাঁর সঙ্গে দেখা করেন, মেঘনাদকেও তিনিই রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে পরিচয় করান। রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিত্ব তাঁকে মুগ্ধ করেছিল, তাই কয়েক বছর পরে তিনি যখন ভারতে আসেন, শান্তিনিকেতনে কবির সান্নিধ্যে কয়েকদিন কাটান।

সমারফেল্ডের কলকাতা আসার পিছনে ছিল মেঘনাদ সাহা ও চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রামনের প্রয়াস। রামনের বিখ্যাত আবিষ্কার হয়েছিল ১৯২৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি। সমারফেল্ড তার কয়েকমাস পরে রামনকে এক চিঠিতে তাঁর আবিষ্কারের ভূয়সী প্রশংসা করে লিখেছিলেন, “আপনি একটা দারুণ পরীক্ষা করেছেন, আমরা সকলেই এই নিয়ে খুব উৎসাহী। জাপান আধুনিক পদার্থবিদ্যা নিয়ে আরো অনেকদিন কাজ করছে, সেখান থেকে তো আপনার কাজের সঙ্গে তুলনীয় কিছু এখনো বেরোয়নি।” সমারফেল্ডের সমর্থন ইউরোপে রামনের স্বীকৃতি আদায়ে সাহায্য করেছিল। 


 

সমারফেল্ড কলকাতা আসেন সে বছর অক্টোবর মাসে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সাম্মানিক ডিএসসি উপাধি দিয়েছিল। তিনি সেখানে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার উপরে কয়েকটি বক্তৃতা দিয়েছিলেন। সেগুলির নোট নিয়েছিলেন কে এস কৃষ্ণন ও নিখিলরঞ্জন সেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেই নোটগুলি বই আকারে প্রকাশিত হয়েছিল, Lectures on Wave Mechanics নামের সেই বইটি কোয়ান্টাম বলবিদ্যা বিষয়ে পৃথিবীর প্রথম বইগুলির অন্যতম। তিনি রামনের মূল কর্মক্ষেত্র ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স-এও সময় কাটিয়েছিলেন। তাঁর ডায়েরিতে অ্যাসোসিয়েশিনের কাজকর্মের প্রশংসার সঙ্গে বাথরুমগুলো যে খুব খারাপ সে কথা লিখতে তিনি ভোলেননি! দেশে ফিরে তিনি এক পত্রিকাতে প্রবন্ধ লিখে ভারতের বিজ্ঞান গবেষণার প্রশংসা করেছিলেন। লিখেছিলেন যে তা ইউরোপ ও আমেরিকার সঙ্গে একই স্তরে অবস্থান করছে। বিশেষ করে তিনি রামন ও সাহার উল্লেখ করেছিলেন। অনেক বছর পরে এক বিজ্ঞানী ভারতীয় গবেষণা সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করাতে তিনি প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন। এক পথ দুর্ঘটনায় ১৯৫১ সালের ২৬ এপ্রিল তিনি মারা যান। যে বছর তাঁর মৃত্যু হয়, সেই বছরেও তাঁর সমর্থনে চারটি মনোনয়ন জমা পড়েছিল; একজন মনোনয়নকারী ছিলেন মেঘনাদ সাহা। 

 

Sunday 21 April 2024

পিটার হিগস (২৯ মে, ১৯২৯ - ৮ এপ্রিল, ২০২৪)

  

পিটার হিগস (২৯ মে, ১৯২৯ - ৮ এপ্রিল, ২০২৪) 


গত ৮ এপ্রিল প্রয়াত হলেন ২০১৩ সালের পদার্থবিজ্ঞানের নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী পিটার হিগস। তাঁর জন্ম হয় ইংল্যান্ডে ১৯২৯ সালের ২৯ মে। তাঁর পড়াশোনা ব্রিস্টলে, সেই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র ছিলেন কিংবদন্তী পদার্থবিজ্ঞানী পল ডিরাক। ডিরাকের বিভিন্ন কৃতিত্বের কথা শুনে তাঁর পদার্থবিজ্ঞানে আগ্রহ জন্মায়। লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে তিনি পদার্থবিদ্যাতে বিএসসি, এমএসসি ও গবেষণা করে ডক্টরেট করেন। ১৯৬০ সাল থেকে তিনি এডিনবার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন, ১৯৯৬ সালে অবসর নেওয়ার পরে তাঁকে সেই প্রতিষ্ঠানেই এমিরিটাস অধ্যাপক করা হয়। ২০১২ সালে সার্নের লার্জ হ্যাড্রনিক কোলাইডারে যে বোসন কণাটির সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল, তার প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে ১৯৬৪ সালে হিগস তার কথা প্রথম বলেছিলেন। সেই অত্যন্ত মৌলিক গবেষণার স্বীকৃতিতেই হিগসকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল।

হিগসের গবেষণার তাৎপর্য অল্প কথায় বলা কঠিন। সংক্ষেপে বলা যায়, মৌলিক কণাদের জন্য আমাদের এখনো পর্যন্ত সব সেরা তত্ত্বের নাম হল স্ট্যান্ডার্ড মডেল। মহাবিশ্বে বল চার প্রকার, মাধ্যাকর্ষণ, তড়িৎচৌম্বক বল, পীন বা সবল বল এবং ক্ষীণ বা দুর্বল বল। স্ট্যান্ডার্ড মডেলের মধ্যে প্রথমটিকে স্থান দেওয়া সম্ভব হয়নি, কিন্তু বাকি তিনটি বলের সাহায্যে মৌলিক কণারা কেমনভাবে নিজেদের মধ্যে ক্রিয়াপ্রতিক্রিয়া করে, তার ব্যাখ্যা স্ট্যান্ডার্ড মডেল থেকে পাওয়া যায়। কিন্তু, এই মডেলের এক সমস্যা ছিল যে একমাত্র ভরশূন্য মৌলিক কণাদের জন্যই সে কাজ করে। কিন্তু ইলেকট্রন, মিউয়ন, বিভিন্ন কোয়ার্ক বা অন্য সমস্ত ভরযুক্ত মৌলিক কণাদের এই মডেলে জায়গা হবে কেমন করে?

এই সমস্যার সমাধানে প্রায় একই সময়ে কয়েক দল বিজ্ঞানী আলাদা আলাদা ভাবে প্রস্তাব করেন যে মৌলিক কণাগুলি আসলে ভরহীন, কিন্তু মহাবিশ্বে এমন এক বিশেষ ফিল্ড বা ক্ষেত্র আছে যার সঙ্গে ক্রিয়ার মাধ্যমে তারা বল পায়। এই ক্ষেত্রের নাম আমরা পরে দিয়েছি হিগস ক্ষেত্র। তার সঙ্গে যে কণার ক্রিয়ার পরিমাণ যত বেশি, তার ভর তত বেশি। বিজ্ঞানী মহলে একটা সুপরিচিত উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করা যাক। একটি ঘরের দুপাশে দুটি দরজা আছে; ঘরে বেশ কিছু লোক ইতস্তত ঘোরাফেরা করছেন। একজন সম্পূর্ণ অপরিচিত মানুষ যদি এক দরজা দিয়ে ঢুকে অন্য দরজা দিয়ে বেরিয়ে যান, তাঁর বিশেষ সময় লাগবে না, কারণ তাঁর সঙ্গে কারোরই কথা হবে না। কিন্তু যদি এমন একজন ঢোকেন যাঁর কয়েকজনের সঙ্গে পরিচিতি আছে, স্বাভাবিকভাবেই তিনি দাঁড়িয়ে পড়ে বা গতি কমিয়ে অন্যদের সঙ্গে কথাবার্তা বলবেন, ফলে তাঁর ঘর পেরোতে সময় লাগবে। আর যদি প্রবেশকারী কোনো বিখ্যাত ব্যক্তি হন, তাঁর সঙ্গে কথা বলতে, সেলফি তুলতে, অটোগ্রাফ নিতে হুড়োহুড়ি পড়ে যাবে; ফলে তাঁর অনেকটাই বেশি সময় লাগবে। আমাদের উপমাতে ঘরের মধ্যের মানুষজন হলেন হিগস ক্ষেত্র এবং প্রবেশকারী হলেন মৌলিক কণা; ক্ষেত্রের সঙ্গে ক্রিয়ার মাধ্যমে কণার ভরের সৃষ্টি হচ্ছে। ভরশূন্য কণা আলোর গতিতে চলাফেরা করে, ভর বৃদ্ধি পেলে তার বেগ কমে যায়। ক্রিয়া যত বেশি, ভরও তত বেশি।

প্রায় একই সময়ে বেলজিয়ামের ব্রাসেলস বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্রাঁসোয়া আংলেয়ার ও রবার্ট ব্রাউট, এডিনবার বিশ্ববিদ্যালয়ে পিটার হিগস, এবং লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজের জেরাল্ড গুরালনিক, রিচার্ড হ্যাগেন, ও টমাস কিবল প্রায় একই ধরনের প্রস্তাব করেন। হিগস একটি অতিরিক্ত কথা বলেছিলেন। এই তত্ত্বকে প্রমাণ করব কেমন করে, বিজ্ঞান প্রমাণ ছাড়া কিছু মানে না। মহাবিশ্বের সর্বত্রই এই ক্ষেত্র অবস্থান করে, কাজেই আমাদের পক্ষে দেখা সম্ভব নয় সত্যিই ক্ষেত্রের বাইরে গেলে কণাদের ভর শূ্ন্য হয়ে যায় কিনা। হিগস বলেছিলেন যে এই ক্ষেত্রকে কখনো কখনো একটা কণার আকারে দেখা যাবে। আগের উপমাতে ফিরে যাই, ধরা যাক ঘরে উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছেন, সেই কথা শুনতে অনেকে ভিড় করবে। আবার শ্রোতাদের মধ্যে একজন অন্য একজনকে বলতে গেলেন, আরো কয়েকজন শুনতে এলেন, তাঁরা নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা চালালেন। এভাবে একটা জটলা ঘরের এক পাশ থেকে অন্য পাশে চলে গেল। হিগস বোসন হিগস ক্ষেত্রের সেইরকম এক উত্তেজনা, একে আমাদের যন্ত্রে খুঁজে পাওয়া গেলে প্রমাণ হবে যে বিজ্ঞানীদের ধারণা ঠিক। এই কণাটি বোসন, কারণ এ সত্যেন্দ্রনাথ আবিষ্কৃত বোস পরিসংখ্যান মেনে চলে।

হিগস কণাকে যন্ত্রে তৈরি করা মোটেই সহজ নয়, কারণ এর ভর খুব বেশি। আধুনিক গবেষণাগারে কণাত্বরক দিয়ে উচ্চশক্তিতে দুটি কণার সংঘর্ষ ঘটিয়ে নতুন কণা সৃষ্টি করা হয়। আমরা আইনস্টাইনের ভর ও শক্তির সমতুল্যতা সূত্র জানি, সুতরাং বেশি ভরের কণা সৃষ্টি করতে হলে সংঘর্ষের শক্তি অবশ্য বেশি হতে হবে। যে কণাত্বরক যত বড়, তা দিয়ে তত উচ্চশক্তির সংঘর্ষ ঘটানো সম্ভব। অবশ্য হিগস কণার ভর কত তা স্ট্যান্ডার্ড মডেল থেকে জানা যায় না, তবে ভর কম হলে আমাদের ছোটখাটো কণাত্বরকে তাকে আগেই খুঁজে পাওয়া যেত। পৃথিবীর সব থেকে বড় কণাত্বরক, লার্জ হ্যাড্রনিক কোলাইডার, যার রিংটার পরিধি হল সাতাশ কিলোমিটার, তা দিয়েই শেষ পর্যন্ত হিগস বোসনকে খুঁজে পাওয়া গেল; দেখা গেল তার ভর প্রোটনের ভরের মোটামুটি একশো তেত্রিশগুণ। হিগস বোসন খুবই স্বল্পস্থায়ী, সৃষ্টির পরেপরেই তা ভেঙে অন্য অনেক কণা সৃষ্টি হয়। সেই সমস্ত কণা আমাদের যন্ত্রে ধরা পড়ে, তার থেকে বোঝা গেল যে সত্যিই হিগস কণা তৈরি হয়েছিল। এই গবেষণাতে ভারত সহ অনেক দেশের বিজ্ঞানীরা যুক্ত ছিলেন। হিগস বোসনের সন্ধান পাওয়ার পরের বছরেই হিগস ও ফ্রাঁসোয়া আংলেয়ারকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হল। তার আগেই অবশ্য হিগস পদার্থবিজ্ঞানের প্রায় সমস্ত পরিচিত পুরস্কারই পেয়েছেন, তাদের মধ্যে আছে হিউজেস পদক, রাদারফোর্ড পদক, উল্‌ফ পুরস্কার, ডিরাক পদক, সাকুরাই পদক, অস্কার ক্লাইন সম্মান, ইত্যাদি। নোবেল পুরস্কারের পরে পাওয়া সম্মানের মধ্যে আছে পৃথিবীর প্রাচীনতম পুরস্কার, রয়্যাল সোসাইটির কপলি পদক।

তাঁর গবেষণা এত স্বীকৃতি পেলেও ব্যক্তি হিগস কিন্তু অনেক দিক থেকেই বর্তমান বিজ্ঞানীমহলের অধিকাংশের থেকে আলাদা। 'পাবলিশ অর পেরিশ'-এর যুগেও প্রবন্ধ ছাপার ইঁদুর দৌড়ে তিনি কখনোই নাম লেখান নি। ১৯৬৪ সালের পরে তাঁর মোট প্রকাশিত বিজ্ঞানপ্রবন্ধের সংখ্যা দুই অঙ্কে পোঁঁছায়নি। তিনি নিজেই বলেছিলেন আধুনিক কালে তিনি চাকরিই পেতেন না। এডিনবার বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর চাকরি যায়নি তার একমাত্র কারণ ছিল যে ১৯৮০ সালেই তাঁর নাম নোবেল পুরস্কারের জন্য প্রস্তাবিত হয়েছিল, কর্তৃপক্ষ ভেবেছিল যে হয়তো তিনি একদিন পুরস্কার পাবেন। হিগসের নিজের কথায়, 'না পেলে যে কোনো সময় ছাঁটাই করা যাবে।'

অন্য অনেক বিজ্ঞানীর মতো হিগস গজদন্তমিনারে বাস করতেন না, বৃহত্তর সমাজের সঙ্গে তাঁর নিবিড় যোগ ছিল। নিজের মত স্পষ্ট করে জানাতে তিনি ভয় পেতেন না। উনিশশো ষাট ও সত্তরের দশকে এডিনবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ছাত্র আন্দোলন বিরোধী আচরণের এবং বর্ণবিদ্বেষী দক্ষিণ আফ্রিকার কোম্পানিদের সঙ্গে এডিনবার বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগের সমালোচনা করে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরাগভাজন হয়েছিলেন। নিউক্লিয় অস্ত্র বিরোধী আন্দোলন সেন্টার ফর নিউক্লিয়ার ডিসআর্মামেন্টের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন, কিন্তু তা যখন নিউক্লিয় বিদ্যুতেরও বিরোধিতা করে, তখন তিনি তার থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। তেমনি পরিবেশবাদী গ্রিনপিস সংগঠনের সদস্য হইয়েছিলেন, কিন্তু সেই সংগঠন যখন জিন প্রযুক্তির বিরোধিতা শুরু করে, তখন তিনি সদস্যপদ ত্যাগ করেন। প্যালেস্টাইনের প্রতি ইজরায়েলের মনোভাবের প্রতিবাদে তিনি জেরুজালেমে দিয়ে উলফ পুরস্কার নিতে অস্বীকার করেছিলেন। ১৯৯৯ সালে তিনি নাইট উপাধি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, তাঁর মনে হয়েছিল ব্রিটিশ সরকার এই সম্মান রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে। ২০১২ সালে অবশ্য তিনি অনুরূপ এক সম্মান গ্রহণ করেছিলেন, কারণ তাঁকে ভুল বোঝানো হয়েছিল যে ব্রিটেনের রাণীই সেই সম্মান দেন, তার সঙ্গে সরকারের কোনো সম্পর্ক নেই। হিগস ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেন না, তাঁর প্রস্তাবিত কণাটি গড পার্টিকল বা ঈশ্বরকণা নামে পরিচিত হওয়াতে তিনি খুব বিরক্ত হয়েছিলেন।

হিগস লোকচক্ষুর অন্তরালে কাজ করাই পছন্দ করতেন, তিনি মোবাইল ফোন, ইমেল বা ইন্টারনেট ব্যবহার করতেন না। ঘটনাচক্রে কণাটির সঙ্গে একমাত্র তাঁর নাম যুক্ত হওয়াটাকে তিনি পছন্দ করতেন না, তিনি নিজে তার পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। সার্নের আবিষ্কারের পরে প্রচারমাধ্যম তাঁকে নিয়ে যে মাতামাতি শুরু করেছিল, তা তাঁর নিতান্তই অপছন্দ ছিল। ২০১৩ সালের নোবেল পুরস্কারের তালিকাতে তাঁর নাম থাকবে বলে সকলেই অনুমান করেছিলেন। সংবাদমাধ্যমকে এড়াতে তিনি পুরস্কার ঘোষণার দিন আগেভাগেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। কয়েকঘণ্টা এডিনবার শহরে ঘোরাঘুরির পরে তিনি যখন বাড়ি ফিরছেন, তখন পরে এক প্রতিবেশী তাঁকে খবরটা দেয়। পরে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন যে তিনি আশা করেননি যে তাঁর জীবৎকালে কণাটি খুঁজে পাওয়া যাবে। তাই সার্নের আবিষ্কারের খবর পেয়ে প্রথমে তাই তাঁর ভালো লেগেছিল, কিন্তু তার পরেই মনে হয়েছিল যে তাঁর শান্তিপূর্ণ জীবন শেষ হতে চলেছে। কিছুটা মজা করেই হয়তো বলেছিলেন, ওই একটি কণা তাঁর জীবনকে ধ্বংস করে দিল। তাঁর আবিষ্কারকে ঘিরে এত উত্তেজনা তিনি নিজে অপছন্দ করতেই পারেন, কিন্তু সন্দেহ নেই যে হিগস ও অন্যান্যরা বিজ্ঞানের এক নতুন দিগন্তের সন্ধান দিয়েছেন।


                                                                                          গৌতম গঙ্গোপাধ্যায় 

প্রকাশ সংবাদ প্রতিদিন,  ২০২৪

Thursday 21 March 2024

ভালোলাগা বই: The sky is for everyone: Women astronomers in their own words

 

ভালোলাগা বই: The sky is for everyone: Women astronomers in their own words

Edited by Virginia Trimble and David A. Weintraub, Princeton University Press, 2022

 

অন্যান্য অনেক সামাজিক ক্ষেত্রের মতোই বিজ্ঞান বহুদিন পর্যন্ত পুরুষদের একচেটিয়া অধিকারেই ছিল। বিশেষ করে আধুনিক বিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে তা ছিল আরো বেশি করে সত্য, কারণ একটা ন্যূনতম শিক্ষা ছাড়া তার অঙ্গনে প্রবেশাধিকার মেলে না। ইউরোপে নবজাগরণের পরে ঈশ্বরের পরিবর্তে শিল্প সংস্কৃতির কেন্দ্র অধিকার করল প্রকৃতি ও মানুষ; তার পরেই প্রকৃতি সম্পর্কে ঔৎসুক্য বৃদ্ধি পেল এবং আধুনিক বিজ্ঞানের সূচনা হল। কিন্তু শিক্ষাদানকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলি ছিল মূলত চার্চের নিয়ন্ত্রণে, ফলে সেখানে পরিবর্তন এসেছে বাইরের সমাজের থেকে অনেক ধীরগতিতে। তাই নারীদের শিক্ষাঙ্গনে প্রবেশাধিকার পেতে সময় লেগেছে। আমরা দেখতে পাই যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ব্রিটেনের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আগে নারীদের স্নাতক স্তরে পড়ার অধিকার দিয়েছে, কারণ তা পুরানো ঐতিহ্যের দোহাই দিয়ে বাঁধা ছিল না। আধুনিক বিজ্ঞানের জন্ম ইউরোপে, কিন্তু দু'একটি সীমিতক্ষেত্র ছাড়া বিংশ শতাব্দীর আগে সেখানেও নারীদের সন্ধান পাওয়া যাবে না, কারণ শিক্ষা ছাড়া বিজ্ঞান গবেষণা সম্ভব নয়।

তবু তার মধ্যেও দু-একটি ব্যতিক্রম পাওয়া যায়, এবং তা বিশেষ করে দেখা যায় জ্যোতির্বিদ্যার ক্ষেত্রে। সেখানেও মহিলাদের প্রবেশ ঘটেছে কখনও স্বামী, কখনও ভাই, কখনো বা অন্য কোনো আত্মীয়ের হাত ধরে। লুক্রেশিয়া ছিলেন এক যুগের সেরা জ্যোতির্বিদ উইলিয়াম হার্শেলের বোন, মেরি সমারভিল ও লিন্ডসে হাগিন্সকে উৎসাহ দিয়েছিলেন তাঁদের স্বামীরা। তাঁদের গবেষোণা কখনোই প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নেয়নি, তা ছিল নিতান্ত ব্যক্তিগত প্রয়াস। এভাবেই ঊনবিংশ শতাব্দী শেষ হতে পারত, কিন্তু তা হয়নি তার কারণ হিসাবে যদি একজনকে নির্দেশ করতে হয় তাহলে নিঃসন্দেহে আসবে মেরি কুরির নাম। মেরির পাশেও তাঁর স্বামী ছিলেন, কিন্তু পথপ্রদর্শক বা উৎসাহদাতা নয়, সহকর্মী হিসাবে। তবে মেরির কর্মক্ষেত্র ছিল নিউক্লিয় বিজ্ঞান। জ্যোতির্বিদ্যাতেও নতুন যুগের সূচনা হচ্ছিল, কিন্তু তা সকলের অলক্ষ্যে, যখন জ্যোতির্বিদ্যাতে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড মানমন্দিরে একদল নারী কাজ শুরু করেছিলেন। সমকাল তাঁদের বিজ্ঞানী হিসাবে স্বীকার করেনি, কিন্তু উইলামিনা ফ্লেমিং, অ্যানি জাম্প ক্যানন, বা হেনরিয়েটা লেভিটের অবদান জ্যোতির্বিদ্যার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে সন্দেহ নেই।

জ্যোতির্বিদ্যাতে মহিলাদের অংশগ্রহণের সূচনার ইতিহাস অনেক জায়গায় পাওয়া যাবে। যা পাওয়া যাবে না, তা হল সেই ইতিহাস যাঁরা সৃষ্টি করেছিলেন তাঁদের নিজেদের ভাষায় নিজেদের কথা; সে সময় তা জানার চেষ্টা কেউ করেননি। এখন আর সেই সুযোগ নেই, তাই তাঁদের সংগ্রামকে বাইরে থেকেই দেখে আমাদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়। আমাদের আলোচ্য বইয়ের সম্পাদকদ্বয় ঠিক করেছেন যে সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি তাঁরা হতে দেবেন না। তাই পাঁচ দশকব্যাপী সময়কালের সাঁইত্রিশজন নারী জ্যোতির্বিদদের নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা তাঁরা বইতে সংগ্রহ করেছেন। একজন সম্পাদক, ভার্জিনিয়া ট্রিম্বল (পিএইচডি ১৯৬৮), এই ইতিহাসের এক মুখ্য চরিত্রও বটে। বই শুরু হয়েছে অ্যানে পাইন কাউলির স্মৃতিকথা দিয়ে, তিনি ডক্টরেট করেছিলেন ১৯৬৩ সালে। শেষ চরিত্রটি হলে ওয়াইলেন গোমেজ ম্যাকুয়েও চিউ, তাঁর ডক্টরেটের সাল ২০১০। মাঝের এই সাতচল্লিশ বছরের ইতিহাস বাঁধা পড়েছে দুটি সূত্রে। একটিতে আছে জ্যোতির্বিদ্যার অগ্রগতির কাহিনি, অন্যটিতে ধরা পড়েছে সেই বিজ্ঞানের জগতে নারীদের পদসঞ্চারের ইতিহাস; প্রথমটি শুধুই এগিয়ে চলার গল্প, সেখানে দ্বিতীয় সূত্রটির মতো পিছুটান নেই, নেই বারবার এগিয়ে গিয়েও পিছিয়ে পড়ার কথা। তাই এই বই শুধু বিজ্ঞান বা বিজ্ঞানীর কাহিনি নয়, সমাজ ও বিজ্ঞানের আন্তঃসম্পর্কের দলিল।

স্বাভাবিকভাবেই এই সাঁইতিরিশজন বিজ্ঞানীর প্রত্যেকেই সফল, তা না হলে তাঁদের কাহিনি বইতে স্থান পেত না। পরিবারের সমর্থন অবশ্যই তাঁরা পেয়েছিলেন। পড়তে পড়তে প্রশ্ন জাগে, এমন অনেকেই নিশ্চয় ছিলেন বা এখনো আছেন, যাঁরা অনায়াসেই এই বইতে নিজেদের জায়গা করে নিতে পারতেন, কিন্তু সামাজিক বাধার বা পারিবারিক সমস্যার জন্য গবেষণা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন, অথবা পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য নিজেদের কৃতিত্বের স্বীকৃতি পাননি? তাঁদের ইতিহাস কোথাও লেখা থাকবে না।

নারী হিসাবে বিজ্ঞানের জগতকে কেমন লাগে? গ্যাব্রিয়েল গঞ্জালেজ (পিএইচডি ১৯৯৫) লিখেছেন যে এই প্রশ্ন তাঁর কাছে অনেকবার এসেছে। অন্যদের লেখার মধ্যেও নিজেদের মতো করে এই অনুচ্চারিত প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার প্রয়াস আছে। কিংবদন্তী জ্যোতির্বিদ জোসেলিন বেল বার্নেল (পিএইচডি ১৯৬৮) অন্যত্র বলেছিলেন যে কোনো বিষয়ে প্রথম যে নারীরা কাজ শুরু করেন, তাঁদের পুরুষের সমকক্ষ হলেই চলবে না, টিকে থাকতে গেলে তাঁদের পুরুষদের থেকেও এগিয়ে থাকতে হবে। জোসেলিনের মতো প্রথম যুগের বিজ্ঞানীরা পরের যুগের নারীদের কাছে একাধারে রোল মডেল ও মেন্টর। জোসেলিনের মতো নারীদের বিজ্ঞানগবেষণাতে অংশগ্রহণ ষাটের দশকে ছিল ব্যতিক্রম, পঞ্চাশ বছরে পরে তা হয়তো নিয়মে পরিণত হয়েছে। তা সত্ত্বেও আমাদের আলোচ্য বইয়ের অনেক বিজ্ঞানীই ইম্পোস্টার সিন্ড্রোমের শিকার, তাঁদের মনে হয়েছে যে তাঁরা যেন বিজ্ঞান গবেষণাতে বেআইনি অনুপ্রবেশকারী, এখানে তাঁদের অধিকার নেই। ভাবতে আশ্চর্য লাগে যে মেরি কুরির নোবেল পুরস্কারের একশো বছর পরেও বিজ্ঞান গবেষণার জগৎ নারীদের আত্মীকৃত করতে পারেনি!

প্রেরণা কোথা থেকে পেয়েছিলেন এই বিজ্ঞানীরা? পথিকৃৎরা ছিলেন, তারও আগে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছিল বিদ্যালয়; কিন্তু সেখানেও ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে প্রভেদ ছিল খুবই সাধারণ। প্রায় প্রত্যেকেই সকৃতজ্ঞভাবে পুরুষ সহকর্মী বা শিক্ষকদের সমর্থনের কথা উল্লেখ করেছেন, অথচ সেই পুরুষরাই সমবেতভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনার সময় নারীদের প্রতি বৈষম্যকে সমর্থন করেছেন! আমরা প্রত্যেকেই বিশেষের প্রতি সহানুভূতিশীল হলেও সেই অনুভবকে সাধারণের উপর প্রতিস্থাপিত করতে কুণ্ঠাবোধ করি কেন, মনস্তত্ত্ববিদরা তার কারণ ব্যাখ্যা করতে পারবেন। ডারা নর্মান (পিএইচডি ১৯৯৯) সঠিকভাবেই বলেছেন, নিজেদের গবেষণার আহরিত তথ্য যাতে ব্যক্তিগত পক্ষপাতের দ্বারা প্রভাবিত না হয় তার জন্য বিজ্ঞানীরা সর্বদাই সচেষ্ট, কিন্তু সেই চেষ্টা পেশাগত ক্ষেত্রে প্রয়োগের কথা সব সময় তাঁদের মাথায় আসে না।

বিজ্ঞানীদের মধ্যে একমাত্র ক্যারোল মান্ডেল (পিএইচডি ১৯৯৫) রাজনৈতিক সদিচ্ছার উল্লেখ করেছেন। রাজনীতিবিদরা অন্য গ্রহের মানুষ নন, আমাদের সমাজের থেকেই তাঁরা উঠে এসেছেন, সমাজের আশাআকাঙ্ক্ষার তাঁরা প্রতিভূ। সেই অর্থে সেই সদিচ্ছা সমাজেরই প্রতিফলন, এবং স্পশটভাবে না বললেও বইয়ের অনেক লেখাতেই তার পরিচয় পাওয়া যায়। প্রথম যুগের অধিকাংশ নারীবিজ্ঞানীই ছিলেন অবিবাহিত; একই সঙ্গে পেশা এবং সন্তান প্রতিপালন ও সংসার রক্ষার সামাজিক চাহিদাকে মেটাতে তাঁরা সক্ষম হননি। পরের বিজ্ঞানীরা অনেক সময়েই একই পেশার মধ্যেই জীবনের সঙ্গীকে খুঁজে নিয়েছেন। আধুনিক কালে অবশ্য সেই বাঁধাবাধির অবসান ঘটেছে; কিন্তু এখনও সন্তান প্রতিপালনকে মুখ্য স্থান তাঁদের দিতে হচ্ছে। তার পিছনে জৈবিক কারণ অবশ্যই আছে, কিন্তু সমাজের চাপও উপেক্ষণীয় নয়। এই 'টু বডি প্রবলেম'-এর সঠিক সমাধানের অভাবে আমরা কত প্রতিভাকে হারাচ্ছি, তার হিসাব নেই।

আরো একটা সাধারণ সূত্র বইতে লক্ষণীয়, সম্ভবত লিঙ্গগত সংখ্যালঘু অংশ থেকে আসার ফলেই জাতিগত বর্ণগত বা ধর্মীয় সংখযালঘুদের প্রতি নারী বিজ্ঞানীদের সহানুভূতিও নানা ভাবে প্রকাশ পেয়েছে। বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় প্যাট্রিসিয়া হুইটলক (পিএইচডি ১৯৭৬)-এর কথা, যিনি বিদেশী হয়েও দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবৈষম্য দূর করার জন্য সচেষ্ট ছিলেন, এবং যাতে সেই বৈষম্য দূর করার ভোটে অংশ নিতে পারেন, সেজন্য সেদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছিলেন।

বাস্তব কারণেই সাঁইত্রিশ জন বিজ্ঞানীর অধিকাংশই ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার মানুষ। প্রায় সকলেই সেখানে পড়াশোনা করেছেন। দুইজন ভারতীয় বিজ্ঞানী স্থান পেয়েছেন, এবং তাঁদের অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রিয়ম্বদা নটরাজন (পিএইচডি ১৯৯৯)-এর জন্ম এক মধ্যবিত্ত পরিবারে, বাবা মা দুজনেই শিক্ষাজগতের মানুষ। প্রিয়ম্বদার নিজের ভাষায়, ভাররবর্ষের অসম সমাজব্যবস্থাতে তিনি ‘birth lottery’ জিতেছিলেন। চেন্নাইয়ের বাসিন্দা হলেও স্কুল করেছেন দিল্লিতে, সেই সময়েই তাঁর বাড়িতে তাঁর জন্য ছিল পার্সোনাল কম্পিউটার। কলেজে পড়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, ডক্টরেট করেছেন কেমব্রিজে। বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানীরা তাঁকে গাইড করেছেন। পুনম চন্দা (পিএইচডি ২০০৫) -র জন্ম উত্তরভারতের এক ছোট শহরে যেখানে লিঙ্গবৈষম্য ছিল ঘরেবাইরে প্রাত্যহিক জীবনের অঙ্গ। মেয়েদের জীবনের ছিল দুটি ভাগ, বিয়ের আগে ও পরে, এবং প্রথম ভাগের বছরগুলি শুধুমাত্র বিয়ের প্রস্তুতি হিসাবেই ব্যবহার করা হত। বিজ্ঞানের জগতে প্রবেশ করার জন্য পরিবারের ইচ্ছাকে অমান্য করতে হয়েছিল, পুনমের কাছে সে ছিল প্রথম সাহসী ঘোষণা। এমনকি তাঁর কলেজের শিক্ষিকাও তাঁকে গবেষণাতে যেতে বারণ করেছিলেন, কারণ বিয়েতে দেরি হলে তাঁর ভালো স্বামী জোটার সম্ভাবনা কমে যাবে। দেশের প্রথম শ্রেণির গবেষণা প্রতিষ্ঠানে তিনি নিজের যোগ্যতায় স্থান করে নিয়েছেন, কিন্তু সেই যোগ্যতা দেখানোর সুযোগ পাওয়ার জন্য তাঁকে ঘরেবাইরে সংগ্রাম করতে হয়েছে।

বইয়ের শেষ বিজ্ঞানী ওয়াইলেন গোমেজ ম্যাকুয়েও চিউ নানাভাবে 'বহিরাগত'। তিনি আমাদের মতোই তৃতীয় বিশ্বের এক দেশ মেক্সিকোর নাগরিক, সেখানে গবেষণার সুযোগ আমাদের দেশের থেকেও কম। সেই হিসাবে তিনি বিজ্ঞান জগতের কেন্দ্রে বহিরাগত। তিনি মহিলা, এবং জন্মসুত্রে চিনা, অর্থাৎ দু'ভাবে সমাজে বহিরাগত। পড়াশোনার জন্য ফ্রান্সে গিয়ে তিনি এক কালচারাল শক-এর মুখোমুখি হয়েছিলেন। তিনি আবার নিজের দেশে ফিরে গেছেন, কিন্তু তাঁর নিজের কথায়, সেই ফিরে যাওয়াটাও কম 'শক' ছিল না।

বিজ্ঞানের কথা এই বইতে আছে। কখনোই তা খুব জটিল নয়, সাধারণ যে কোনো মানুষ সামান্য চেষ্টাতেই তার রসাস্বাদন করতে পারবেন। কিন্তু তা এই বইয়ের প্রাণ নয়, তা লুকিয়ে আছে ওই সাঁইত্রিশজনের জীবন সংগ্রাম ও অনুভূতির মধ্যে। এই ধরনের বই কেন আরো বেশি দরকার, তার কারণ বইয়ের সূচনাতে মাও সে তুঙের উদ্ধৃতি থেকে স্পষ্ট, “Women hold up half the sky”


গৌতম গঙ্গোপাধ্যায় 

 

প্রকাশঃ সৃষ্টির একুশ শতক, মার্চ ২০২৪