Sunday, 23 June 2024

প্রেম ও বিচ্ছেদঃ কলকাতা ও চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রামন

 

প্রেম ও বিচ্ছেদঃ কলকাতা ও চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রামন


গৌতম গঙ্গোপাধ্যায়


()

এ এমন এক মানুষের কাহিনি যিনি কলকাতাকে ভালোবেসেছিলেন, মহানগরও তাঁকে আপন করে নিয়েছিল। কলকাতাকে তিনি বিশ্বের মানচিত্রে স্থান করে দিয়েছিলেন। সেই মানুষটি হলেন চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রামন। তাঁর প্রথম চাকরিস্থল ছিল ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতা সেখানে বাসের ছাব্বিশ বছর সময়কে রামন মনে করতেন তাঁর জীবনের স্বর্ণযুগ। এখানেই তিনি অধ্যাপনা ও গবেষণার সুযোগ পেয়ে বিশ্বখ্যাতি লাভ করেন, নোবেল পুরস্কার পান। কিন্তু বিচ্ছেদ যখন হয়েছিল, তখন সেই ভালোবাসার তিলমাত্র অবশিষ্ট ছিল না। এ সেই প্রেম ও বিচ্ছেদের কাহিনি। 


রমানাথন চন্দ্রশেখরন আয়ার ও পার্বতীর দ্বিতীয় পুত্র চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রামনের জন্ম ১৮৮৮ সালের ৭ নভেম্বর। মাত্র এগারো বছর বয়সে ম্যাট্রিক পাস করেন রামন। দু’ বছর পরে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন, কলেজের সর্বকালের কনিষ্ঠতম ছাত্র। ১৯০৪ সালে বিএ এবং ১৯০৭ সালে পদার্থবিজ্ঞানে এমএ, দুটি পরীক্ষাতেই প্রথম। ইতিমধ্যে রামন প্রকাশ করেছেন তাঁর প্রথম গবেষণাপত্র, বয়স তখনো আঠারো হয়নি। পরীক্ষা দিলেন সরকারের ফিনান্সিয়াল সিভিল সার্ভিসে; এবারে সারা ভারতে প্রথম। চাকরি হল কলকাতাতে। এই সময়েই রামনের বিয়ে। সামাজিক রীতি নানাভাবে ভেঙেছিলেন রামন। নিজে পছন্দ করেছিলেন তাঁর স্ত্রী লোকসুন্দরীকে। ব্রাহ্মণ হলেও লোকসুন্দরীরা ছিলেন অন্য গোষ্ঠীর, দক্ষিণভারতের রীতিতে সেই বিয়ে নিষিদ্ধ ছিল। সর্বোপরি কোনো রকম পণ নিতে অস্বীকার করেছিলেন রামন।

কলকাতায় আসার অল্পদিন পরেই একদিন সকালে অফিস যাওয়ার সময় রামন বৌবাজার স্ট্রিট আর কলেজ স্ট্রিট জংশনের কাছেই ট্রাম থেকে দেখেছিলেন একটা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড, ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স' ২১০ নম্বর বৌবাজার (বর্তমানে বিপিন বিহারী গাঙ্গুলী) স্ট্রিটের ঠিকানাটা তাঁর স্কট লেনের ভাড়াবাড়ির থেকে বেশি দূরে নয়। গবেষণার সুযোগ খুঁজছিলেন রামন;

মহেন্দ্রলাল সরকার
সেদিন সন্ধ্যাবেলাই তিনি সেই প্রতিষ্ঠানের দরজায় কড়া নাড়লেন। দরজা খুলে দিলেন আশুবাবু, আশুতোষ দে। তাঁকে নিয়ে গেলেন অমৃতলাল সরকারের কাছে।

সালটা ছিল ১৯০৭। এভাবেই চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রামন ও ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর কাল্টিভেশন অফ সায়েন্সের যোগাযোগের সূচনা, যা ভারতের আধুনিক বিজ্ঞানের ইতিহাসের এক দিকচিহ্ন। ১৮৭৬ সালে অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকার। ভারতীয়দের মধ্যে বিজ্ঞানচর্চা ও গবেষণার উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু হলেও অর্থাভাবে সে কাজ বিশেষ এগোয়নি। কয়েক বছর পরেই কলকাতা থেকে ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী দিল্লীতে স্থানান্তরিত হবে সেই সময় রামন যদি কাজ শুরু করতেন, তাহলে তাঁর প্রথম পোস্টিং কলকাতাতে হওয়ার সম্ভাবনা কম ছিল ভারতে জগদীশচন্দ্র ও প্রফুল্লচন্দ্রের হাত ধরে আধুনিক বিজ্ঞানের জন্ম হয়েছিল কলকাতাতেই; রামনের সঙ্গে সেই মহানগরের যোগাযোগ রামন এবং ভারতের বিজ্ঞান দুপক্ষেরই প্রয়োজন ছিল মহেন্দ্রলালের মৃত্যুর তিন বছর পরে তাঁর ছেলে অমৃতলাল রামনকে অ্যাসোসিয়েশনের ল্যাবরেটরি ব্যবহারের অনুমতি দিলেন।

অমানুষিক পরিশ্রম করতেন রামন। সোমবার থেকে শনিবার প্রতিদিন নিয়ম করে সকাল সাড়ে পাঁচটায় তিনি অ্যাসোসিয়েশনে যেতেনপৌনে দশটায় বাড়ি ফিরতেন, কোনোরকমে চান খাওয়া সেরে ট্যাক্সি ধরে অফিসঅফিস থেকে পাঁচটায় বেরিয়ে সোজা অ্যাসোসিয়েশনরাত সাড়ে নটা থেকে দশটায় বাড়িরবিবার সারা দিন অ্যাসোসিয়েশন। কাজের সুবিধার জন্য অ্যাসোসিয়েশনের পাশেই এক বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন, যদিও সেই অঞ্চলটা ভদ্র পরিবারের
বাসোপযোগী ছিল না। যাতায়াতের সুবিধার জন্য দুই বাড়ির মাঝের দেওয়ালে এক দরজা বসিয়ে নিয়েছিলেন। গবেষণার সঙ্গী সহকারী শুধুমাত্র আশুবাবু। গবেষণা শুরু করেছিলেন স্বনবিদ্যা বা শব্দবিজ্ঞান বিষয়ে

প্রেমচাঁদ বড়াল স্ট্রিটে রমনের বাড়ি
রামনের পরিবারে সঙ্গীতের চল ছিল, তাঁর বাবা বেহালা বাজাতেনভারতীয় বাদ্যযন্ত্রের উপর রামন অত্যন্ত মৌলিক কাজ করেছিলেন। রামনের উৎসাহে এমনকি কোনোদিন কলেজের চৌকাঠ না পেরোনো আশুবাবুও একা গবেষণাপত্র ছাপিয়েছিলেন বিদেশি জার্নালে। মাঝে অল্পদিনের জন্য রেঙ্গুন ও নাগপুরে বদলি হয়েছিলেন রামন, গবেষণা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবে সেই বদলি নিতান্তই অল্পদিনের জন্য, আবার কলকাতাতে ফিরে এসেছেন।

 

()

আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
রামনের কলকাতায় আসার আগের বছর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হয়েছেন আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, তারপরেই বিশ্ববিদ্যালয়ে আটটি বিষয়ে এম এ পড়ানো শুরু করেছেন। এর আগে পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধুমাত্র ডিগ্রি দেওয়া হত। কলকাতায় সে সময় এমএসসি পড়ানো হত শুধু প্রেসিডেন্সি কলেজেআশুতোষের ইচ্ছা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান পড়ানো ও গবেষণা শুরু করবেনকিন্তু সরকার তাঁকে এর জন্য কোনো সাহায্য করতে রাজি নয়শুধু বিজ্ঞান নয়, যে শিক্ষাই শাসিতদের প্রশ্ন করতে শেখায়, ভাবতে শেখায়-- তা ঔপনিবেশিক শাসনের পক্ষে বিপজ্জনক

 তারকনাথ পালিত 
রাসবিহারী ঘোষ
আশুতোষের চেষ্টায় ব্যারিস্টার স্যার তারকনাথ পালিত প্রায় সমস্ত সম্পত্তি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করলেন। এর পরিমাণ হল সাড়ে চোদ্দ লক্ষ টাকা। অপর এক ব্যারিস্টার
, স্যার রাসবিহারী ঘোষ মোট সাড়ে একুশ লক্ষ টাকা দান করেছিলেন। সেদিনের এক টাকা আজকের প্রায় হাজার টাকার সমান। সেই দানেই শুরু হল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান কলেজপ্রথমেই যে কটি বিভাগ প্রতিষ্ঠা হল, তার মধ্যে ছিল পদার্থবিজ্ঞান। রাজাবাজারে পালিতের বাগানবাড়িতে এবং বালিগঞ্জে পালিতের বাড়িতে তৈরি হল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞান কলেজ। 



 

পালিত ও ঘোষের শর্ত ছিল তাঁদের দানের টাকায় ভারতীয়দের জন্য কয়েকটি অধ্যাপক পদ সৃষ্টি করতে হবে অন্যান্য কয়েকটি বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গে পদার্থবিদ্যা বিভাগে পালিত অধ্যাপক এবং ঘোষ অধ্যাপক পদ সৃষ্টি হয়। ভারতীয়রা যাতে বিশ্বমানের গবেষণা করতে পারেন, সে জন্য প্রয়োজনে বিদেশের কোনো প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দু’বছর গবেষণা করার কথা দানের শর্তে ছিল। তাঁরা সেজন্য সবেতন ছুটি পেতেন। এছাড়া কয়েকটি গবেষক বা রিসার্চ ফেলোর পদ চালু করা হয়। ১৯১৪ সালের জানুয়ারি মাসে পালিত গভর্নিং বডির সভাতে পদার্থবিজ্ঞানে রামন এবং রসায়নে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রকে পালিত অধ্যাপকের পদে নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আশুতোষের ইচ্ছা ছিল জগদীশচন্দ্রকে পদার্থবিজ্ঞানে অধ্যাপক পদে নিয়োগ করা, কিন্তু তিনি রাজি হননি। তিনি তখনই নিজের প্রতিষ্ঠান তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

রামন পালিত অধ্যাপক পদের জন্য আবেদন করেছিলেন। একা একা আংশিক সময়ে খুব সামান্য পরিকাঠামোর মধ্যে গবেষণা করেও রামন যথেষ্ট পরিচিতি লাভ করেছিলেন, না হলে জহুরি আশুতোষ তাঁকে বেছে নিতেন না। তখনই রামন মোট বাইশটা গবেষণা পত্র প্রকাশ করেছেন, ষোলটা বিদেশের সেরা সব জার্নালে। ঠিক আগের বছর মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে গবেষণার জন্য বিশেষ পুরস্কার দিয়েছিল। রামনের চাকরিতে মাইনে এক সময় দাঁড়াত মাসে দুহাজার টাকা; মাত্র পঁচিশ বছর বয়সেই রামনের সাফল্যে সবাই নিশ্চিত ছিলেন যে এক সময় তিনি ফিনান্সিয়াল সার্ভিসে শীর্ষস্থানে উঠবেন এবং ভাইসরয়ের কাউন্সিলের সদস্য হবেন। কোনো ভারতীয়ের পক্ষে সরকারি স্তরে তা ছিল সর্বোচ্চ সম্মান। পালিত অধ্যাপকের পদে পাবেন আটশো টাকা, বাড়িভাড়া বাবদ আরো দুশো টাকা। অর্ধেক মাইনে সত্ত্বেও রামন অধ্যাপক পদে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে সামান্যও দ্বিধা করেননি, শুধু বলেছিলেন যে দেশের বাইরে দু’বছর গবেষণার শর্ত তুলে না নিলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিতে যোগ দিতে পারবেন না। তাছাড়া তিনি জানতে চেয়েছিলেন যে পড়ানো তাঁর পক্ষে বাধ্যতামূলক কিনাবিশ্ববিদ্যালয় জানায় যে তাঁর জন্য বিদেশে গবেষণা বা ক্লাস নেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। সরকারি চাকরি ছেড়ে আসার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমতি লেগেছিল, তা পাওয়ার পরে ১৯১৭ সালের ২ জুলাই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। চিঠিতে যাই লিখুন, রামন প্রথম থেকেই ক্লাস নিয়েছিলেন।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেওয়ার পরে রামন পুরোপুরি গবেষণাতে মন দিতে পারলেন। অবশ্য ভারতবর্ষের নানা জায়গায় পড়ানো, বিদেশে কনফারেন্সে যোগদান ও ল্যাবরেটরি পরিদর্শন, বিভিন্ন সরকারি কমিটিতে অংশগ্রহণ ছাড়াও বিভাগীয় প্রধান হিসাবে তাঁকে অনেক দায়িত্ব পালন করতে হত। ১৯৩৩ সালের ১ এপ্রিল রামন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে বাঙ্গালোরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সের ডাইরেক্টর হিসাবে যোগ দেন। মাঝের ষোল বছর তিনি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান।

রামন শিক্ষাদানের কাজ বিজ্ঞান কলেজ ও প্রেসিডেন্সি কলেজের শিক্ষকদের মধ্যে ভাগ করে দেন, ফলে বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষকদের নিজস্ব গবেষণার সুবিধা হয়। পড়ানো ও গবেষণার জন্য বিভাগের ল্যাবরেটরি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তৈরি করালেন রামন। সেই কাজের সময় তাঁর সঙ্গে জগদীশচন্দ্রের বিরোধ বাধল। রামন জগদীশচন্দ্রের ল্যাবরেটরির মেকানিককে তিন গুণ বেশি মাইনে দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। জগদীশচন্দ্র কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দেবপ্রসাদ সর্বাধিকারীর কাছে নালিশ করেন। ব্যাপারটা আর এগোয়নি।

()

রামন প্রধানত আলো ও শব্দ বিষয়ে গবেষণা করতেন। সারা দেশ থেকে তাঁর কাছে বহু ছাত্র গবেষণার জন্য আসত। তাঁর সঙ্গে কাজ করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিশিরকুমার মিত্র, বিধুভূষণ রায়, ফণীন্দ্রনাথ ঘোষ,‌ ব্রজেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, সুকুমারচন্দ্র সরকারতাঁর অন্য ছাত্রদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন কে আর রমানাথন, কে এস কৃষ্ণন, এল এ রামদাস, সুরি ভগবন্তম প্রমুখ। রমানাথন আমেদাবাদের ফিজিক্যাল রিসার্চ ল্যাবরেটরির প্রথম অধিকর্তা হয়েছিলেন। কৃষ্ণন হয়েছিলেন দিল্লীর ন্যাশনাল ফিজিক্যাল ল্যাবরেটরির প্রথম অধিকর্তা। ভগবন্তম হয়েছিলেন বাঙ্গালোরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউটের অধিকর্তা। বেশ কয়েকবার ইউরোপ ও আমেরিকাতে যান রামন, রামন এফেক্ট আবিষ্কারের আগেই তিনি সেখানকার বিজ্ঞানী মহলে বিশেষ সমাদর লাভ করেছিলেন। বিদেশ থেকে বিজ্ঞানীরা ভারতে এলে তাঁর সঙ্গে অবশ্যই দেখা করতেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেও রামনের গবেষণার কেন্দ্র ছিল কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স।

রামনের সামগ্রিক গবেষণা নয়, এই লেখাতে আমরা শুধু রামন এফেক্ট বা রামন ক্রিয়া আবিষ্কারের ইতিহাসের কথা শুনব। ১৯২১ সালে প্রথমবার ইউরোপ যাত্রা করেন রামন। ফেরার সময় জাহাজ থেকে সমুদ্রের জল দেখে তাঁর মনে প্রশ্ন জাগে সমুদ্র নীল কেন? আকাশের রঙ কেন নীল তার কারণ বায়ুমণ্ডল কর্তৃক আলোর বিচ্ছুরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করেছিলেন লর্ড র‍্যালে। তিনি বলেছিলেন যে সমুদ্রের রঙ আসলে আকাশের রঙের প্রতিফলন। নানাভাবে রামন নিশ্চিত হলেন তা নয়তিনি দেখালেন যে সমুদ্রের জল নিজেই আলোকে বিচ্ছুরণ করে বলেই সমুদ্রের জলের রঙ নীল। এর পর থেকে তিনি আলোর বিচ্ছুরণ নিয়ে আগ্রহী হয়ে পড়েন।

দু’ বছর পরে রামন ও তাঁর ছাত্র রমানাথন জল ও অ্যালকোহল কর্তৃক আলোর বিচ্ছুরণ সংক্রান্ত পরীক্ষানিরীক্ষার সময় এক নতুন রঙের আলোর খুব ক্ষীণ চিহ্ন দেখতে পান। এর উৎস তাঁরা বুঝতে পারেন নি, ভেবেছিলেন যে তাঁদের ব্যবহৃত স্যাম্পল হয়তো যথেষ্ট বিশুদ্ধ নয়১৯২৫ সালে রামনের ছাত্র কে এস কৃষ্ণনও একই ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন। ১৯২৭ সালে আরেক ছাত্র ভেঙ্কটেশ্বরন দেখেন যে গ্লিসারিন কর্তৃক বিচ্ছুরিত সূর্যের আলোর রঙ হওয়া উচিত ছিল নীল, কিন্তু তা হয়েছে সবুজ। রামন বুঝতে পারেন যে তিনি এক বিরাট আবিষ্কারের খুব কাছাকাছি এসে গেছেন। কৃষ্ণনকে তিনি পরীক্ষা শুরু করতে নির্দেশ দেন। সেটা ছিল ১৯২৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। ২৮ ফেব্রুয়ারি বোঝা গেল যে বিচ্ছুরিত আলোতে এক নতুন রঙের আলোর রেখা দেখা যাচ্ছে। আবিষ্কৃত হল রামন এফেক্ট। পাঁচ বছর আগে অস্ট্রিয়ান বিজ্ঞানী অ্যাডলফ স্মেকাল তাত্ত্বিকভাবে এই নতুন রঙের আলোর কথা ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন।

রামনেরবর্ণালীবীক্ষণ যন্ত্র ও রামান এফেক্টের প্রথম আলোকচিত্র

এখানে আমরা রামন এফেক্ট সম্পর্কে আরো কিছু জেনে নিই। আলো, আমরা সবাই জানি, তড়িৎচৌম্বকীয় তরঙ্গ। সে আলো আমরা চোখে দেখতে পাই বা না পাই, যেমন রেডিও তরঙ্গ, অবলোহিত, অতিবেগুনী, এক্স-রশ্মি, বা গামা-রশ্মি। আবার ১৯০০ সালে মাক্স প্লাঙ্ক দেখালেন, আলোকে অবিচ্ছিন্ন ঢেউ হিসেবে না দেখে বিচ্ছিন্ন শক্তির প্যাকেট হিসেবেও দেখা যায়, যাকে বলে ফোটন। কোনো অণুর ওপর আলো এসে পড়লে আলোর গতিপথ পাল্টে যায়, কিন্তু ফোটনের শক্তি একই থাকে। একে বলে স্থিতিস্থাপক বিক্ষেপ বা র‍্যালে বিক্ষেপ, যার কথা আগে এসেছে।

আলোর আরেক রকমের বিক্ষেপ হয় যেখানে ফোটনের শক্তি পাল্টে যেতে পারে। সাধারণত কোনো অণুর মধ্যে ইলেকট্রনের বিন্যাস এমন হয় যে তার শক্তি হয় সর্বনিম্ন। কিন্তু অণুর আরো সম্ভাব্য শক্তিস্তর আছে যাদের শক্তি আরো বেশি। এখানে অণুকে ওঠাতে গেলে ফোটনকে কিছুটা শক্তি খরচ করতে হয়, তার ফলে ফোটনের নিজের শক্তি কিছুটা কমে যায়। অর্থাৎ অণুর ওপর যে আলো এসে পড়ল, তার থেকে বিক্ষিপ্ত আলোর শক্তি খানিকটা কম। উল্টোটাও যে হতে পারে না তা নয়; অণুটা হয়ত প্রথমে উঁচু শক্তিস্তরে ছিল, ফোটনের ধাক্কায় নিচে নেমে এলো, ফলে বিক্ষিপ্ত ফোটনের শক্তি বেড়ে গেল। এই দুইকে বলে অস্থিতিস্থাপক বিক্ষেপ। এইরকম অস্থিতিস্থাপক বিক্ষেপ ঘটার সম্ভাবনা স্থিতিস্থাপক বিক্ষেপের তুলনায় নিতান্তই কম। রামন বিক্ষেপ হল এই অস্থিতিস্থাপক বিক্ষেপ।

রামন প্রথম থেকেই তাঁর আবিষ্কারের গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিলেন। তিনি পরের দিনই অর্থাৎ ২৯ ফেব্রুয়ারি কলকাতার স্টেটসম্যান খবরের কাগজে এই আবিষ্কারের খবর প্রকাশের ব্যবস্থা করেন৮ মার্চ রামন নেচার পত্রিকায় তাঁর আবিষ্কারের বিষয়ে এককভাবে গবেষণা পত্র পাঠান। ৩১ মার্চ তা প্রকাশিত হয়। তিনি বিদেশী বিজ্ঞানীদের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করেছিলেন। সুইডেনের নোবেল জয়ী বিজ্ঞানী মানে সিগবান এবং বিখযাত জার্মান বিজ্ঞানী আর্নল্ড সমারফেল্ড তাঁর গবেষণার প্রশংসা করে চিঠি দিয়েছিলেন। সমারফেল্ড লিখেছিলেন,আপনার প্রবন্ধগুলির ওপরে আমি মিউনিখে একটি বক্তৃতা দিয়েছি। বার্লিনের অধ্যাপক প্রিংসহাইম আপনার আবিষ্কৃত বিক্ষেপের কিছু চমৎকার ছবি তুলেছেন, সেই স্লাইডগুলোও দেখিয়েছি। আপনি একটা দারুণ পরীক্ষা করেছেন, আমরা সকলেই এই নিয়ে খুব উৎসাহী। জাপান আধুনিক পদার্থবিদ্যা নিয়ে আরো অনেকদিন কাজ করছে, সেখান থেকে তো আপনার কাজের সঙ্গে তুলনীয় কিছু এখনো বেরোয়নি।” সমারফেল্ডের কথায় আমরা ফিরে আসব।

রামনের এই দ্রুততার প্রয়োজন ছিল, কারণ মে মাসেই দুই সোভিয়েত বিজ্ঞানী মেন্ডেলশাম ও ল্যান্ডসবার্গ এই বিষয়ে তাদের গবেষণা প্রকাশ করেন। তাঁরা এমনকি রামনের আগেই এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছিলেন। তাতে অবশ্য রামনের কৃতিত্ব বিন্দুমাত্র খাটো হয় না। রামন তাঁদের গবেষণার বিষয় জানতেন না। সোভিয়েত বিজ্ঞানীরা যদি তাঁদের কাজের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকতেন ও তাঁদের পরীক্ষার ফল বিষয়ে নিশ্চিত হতেন, তাহলে তাঁরা নিশ্চয় আরো আগেই গবেষণাপত্র প্রকাশ করতেন। রামনকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার সময় নোবেল কমিটি এই নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছিলেন, কাজেই রামনই যে পুরস্কারের যোগ্য প্রাপক তা নিয়ে সন্দেহ নেই।

রামন এফেক্ট এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে আবিষ্কারের দু’ বছরের মধ্যেই তার উপর দুশোর বেশি গবেষণা পত্র প্রকাশিত হয়েছিল। রামন এফেক্ট ব্যবহার করলে বিশ্লেষণের সময় নমুনার কোনো ক্ষতি হয় না। তাই রাসয়ানিক বা গঠন বিশ্লেষণের সময় তার কার্যকারিতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। লেজার আবিষ্কারের পরে লেজার রামন বিশ্লেষণ আরো নানা জায়গায় ব্যবহৃত হচ্ছে। রসায়ন শিল্পে, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে, ভূতত্ত্বে, ঔষধ শিল্পে। জীববিদ্যা, ইলেকট্রনিক্স – কত জায়গায় যে রামন এফেক্ট কাজে লাগছে তা লিখে শেষ করা যাবে না।

১৯৩০ সালে রামন নোবেল পুরস্কার পান, এশিয়ার প্রথম বিজ্ঞানী যিনি এই সম্মান লাভ করেছিলেন। পুরস্কারের প্রস্তাবক ছিলেন দশজন বিজ্ঞানীতাঁদের মধ্যে ছিলে ছ’জন নোবেলজয়ী -- নিলস বোর, আর্নেস্ট রাদারফোর্ড, লুই দ ব্রয়লি, জোহানেস স্টার্ক, চার্লস উইলসন ও জাঁ পেরিন। রামন নোবেল পুরস্কার নিতে রওনা হন ১৯৩০ সালের ২১শে নভেম্বর, সেদিন বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করেছিল

()

রামনের আবিষ্কার কলকাতার শিক্ষিত মহলে সাড়া ফেলেছিল। বসুমতী পত্রিকাতে ১৯২৮ সালের ৩১ মে সেই বিষয়ে খবর প্রকাশিত হয় স্মেকাল রামনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। কয়েকদিন পরে অমৃতবাজার পত্রিকা একই খবর ছাপায়। রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত মডার্ন রিভিউ সেই বছর অক্টোবর সংখ্যায় এই বিষয়ে প্রবন্ধ প্রকাশ করে। পরের বছর রামন বিদেশে যান, অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মান জানায়। সেই খবর ইংলিশম্যান, ক্যালকাটা রিভিউ, মডার্ন রিভিউ ইত্যাদি কলকাতার পত্রিকাতে প্রকাশিত হয়। রামনের কলকাতাতে ফেরার পরে ইংলিশম্যান তাঁর বক্তব্য ও ছবি ছাপায়। নোবেল পুরস্কার নেওয়ার পরে রামন যখন কলকাতাতে পা দেন, হাওড়া স্টেশনে তাঁকে অধ্যাপক, ছাত্র ও সাধারণ মানুষ অভ্যর্থনা জানায়। উপস্থিত ছিলেন কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র সন্তোষ কুমার বসু। কলকাতা পুরসভা মিউনিসিপ্যাল গেজেটের একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে। নানা প্রতিষ্ঠান তাঁকে সংবর্ধনা জানায়; রামন কিছুটা মজা করেই এক বক্তৃতাতে বলেন গবেষণার জন্য একটানা পাঁচ মিনিট সময়ও তিনি পাচ্ছেন না।

১৯৩১ সালের ২৬ জুন কলকাতা পৌরসভার পক্ষ থেকে রামনকে নাগরিক সংবর্ধনা দেন কলকাতার মেয়র ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়। রামন তঁর ভাষণে মহেন্দ্রলাল এবং আশুতোষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। কলকাতার বন্ধুদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন, আলাদা করে জানিয়েছেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রকে, "আমার সমস্ত বৈজ্ঞানিক কাজের সব ব্যাপারে সহযোগিতা ও সহানুভূতির জন্যে আমি সর্বদা প্রফুল্লচন্দ্রের ওপর নির্ভর করতে পারতাম, কখনো এর অন্যথা হয়নি।

ক্যালকাটা মিউনিসিপ্যাল গেজেটে ছাপা কলকাতাবাসীদের উদ্দেশ্যে রামনের বার্তা

কলকাতার প্রশংসায় রামন পঞ্চমুখ, “গত একশো বছর ধরে কলকাতা শুধু বাংলা বা ভারত নয়, গোটা এশিয়ার বৌদ্ধিক চর্চার কেন্দ্র।" ১৯৩১ সালে এক সাক্ষাৎকারে রামন বলেছিলেন যে বছরে দশ লক্ষ টাকা পেলে তিনি দেশকে স্বয়ম্ভর করে দিতে পারেন; তার কেন্দ্র হবে হয় বম্বে নয়তো কলকাতা।

অথচ নোবেল পাওয়ার পর রামন পুরো তিন বছরও কলকাতায় থাকেননি। এই সময়ে তাঁর কিছু কথা বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল, বেশ অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। রামনের সঙ্গে যাদের ব্যক্তিত্বের সংঘাত হয়েছিল, ঘটনাচক্রে তাঁরা সকলেই বাঙালি, আর তাই "রামন বাঙালিবিদ্বেষী” এরকম একটা সাধারণীকরণ বাতাসে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল, খবরের কাগজে লেখালেখিও হয়েছিল। এটা ছিল সম্পূর্ণ ভুল কথা। এগারো জন বাঙালি ছাত্র রামনের গবেষণাগারে কাজ করে ডক্টরেট হয়েছেন (বিশ্ববিদ্যালয় ও কালটিভেশন মিলিয়ে), আরো অনেকে কাজ করেছেন কিন্তু ডক্টরেট শেষ করেননি। মানুষ হিসেবে দোষগুণ তো সবারই থাকে, কিন্তু রামনের অবদান ছোট করে দেখানো এক রকম অসহিষ্ণুতা। দুর্ভাগ্যের বিষয়, সেই অসহিষ্ণুতাই শেষ পর্যন্ত জিতেছিল।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রামনের জীবন একেবারে মসৃণ ছিল তা নয়। অর্থবরাদ্দের সীমাবদ্ধতার জন্য সকল অধ্যাপকের গবেষণাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল, সেখানেই জন্ম নিয়েছিল ভবিষ্যৎ সংকটের বীজ। রামন বিভাগে যোগদান করার আগে থেকেই সত্যেন্দ্রনাথ বসু ও মেঘনাদ সাহা দুজনেই ছিলেন পালিত অধ্যাপকের সহকারী। তাঁরা কখনোই রামনের সঙ্গে কোনো গবেষণা করেন নি, রামনও কোনোদিন তাঁদের এই নিয়ে কিছু বলেন নি। রামন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে রিপোর্টে নিজের ছাত্রদের ভূয়সী প্রশংসা করছেন, কর্মশালার যন্ত্রবিদ বাবু বিপিনচন্দ্র মল্লিককে নিয়েও এক প্যারাগ্রাফ লিখছেন, কিন্তু মেঘনাদ সাহার কাজ সম্পর্কে প্রায় নীরব। বয়সে তরুণ হলেও মেঘনাদ তাঁর সাহা সমীকরণের জন্য রামনের আগেই বিশ্বখ্যাতি লাভ করেন।

সত্যেন্দ্রনাথ ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি নিয়ে চলে যান। সেই বছরই মেঘনাদ পদার্থবিদ্যা বিভাগে খয়রা অধ্যাপক পদে যোগ দেন। বিশেষ করে গবেষণার সুযোগসুবিধা নিয়ে তাঁর সঙ্গে রামনের বারবার বিরোধ বেঁধেছিল, মধ্যস্থতা করতে হয়েছিল আশুতোষ বা তৎকালীন উপাচার্যকে। তামিল ব্রাহ্মণ রামনের হিমালয়প্রমাণ অহং এবং সমাজের নিচুস্তর থেকে সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় উঠে আসা মেঘনাদের স্বাভিমানকে মেলানোর কোনো জায়গা খুঁজে পাওয়া সহজ ছিল না। শেষ পর্যন্ত গবেষণার সুযোগের অভাবে মেঘনাদ ১৯২৩ সালে কলকাতা ছেড়ে এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যান। রামন তার পরেও ছোট মনের পরিচয় দিয়েছেন। এলাহাবাদে পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য মার্কিন অর্থ সাহায্যের আয়োজন করেছিলেন মেঘনাদ। ঘটনাচক্রে রামন তখন আমেরিকাতে, এবং তাঁকেই সেই বিষয়ে মতামত দিতে বলা হয়েছিল। রামন বললেন পরীক্ষামূলক বিজ্ঞানে মেঘনাদের অভিজ্ঞতা নেই, তাঁকে অর্থসাহায্য বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কাজেই না-মঞ্জুর হল আবেদন।

১৯২৮ সালে জার্মানি থেকে কলকাতা আসেন আর্নল্ড সমারফেল্ড। মেঘনাদই মিউনিখে তাঁর সঙ্গে দেখা করে তাঁর ভারতে আসার ব্যবস্থা করেছেনঅ্যাসোসিয়েশনে তাঁর সামনে রামন বক্তৃতা দেবেন। সমারফেল্ড নিয়মিত ডায়েরি রাখেন, সেখানে প্রায় সব কথাই লেখেন। অ্যাসোসিয়েশনে রামনের বক্তৃতার দিন সন্ধ্যাবেলা ডায়েরিতে লিখলেন, সারা দিনে ভালোই আলোচনা হয়েছে, অ্যাসোসিয়েশনে বিজ্ঞান গবেষণার মান সত্যিই আশাতীত ভালো। রামনের বক্তৃতার পরে বেশ প্রাণবন্ত আলোচনা হয়েছে, যেমন বিজ্ঞানের সেমিনারে হয়ে থাকে। আলাদা করে সে বিষয়ে কিছু লেখার কথা তাঁর মনে এলো না।

সমারফেল্ডের কাছে আলোচনা খুব স্বাভাবিক ধরনের, কিন্তু রামনের কাছে তা নয়। মেঘনাদ আলোচনাতে বলেছিলেন, পাঁচ বছর আগে অ্যাডলফ স্মেকল রামন এফেক্টের কথাই বলেছিলেন। রামন সেই দুর্বল বর্ণালীকে খুঁজে বার করেছেন। সেটা মোটেই সহজ কাজ নয়, ইউরোপীয়রা চেষ্টা করেও পারেননি। রামন প্রাথমিকভাবে পরীক্ষামূলক বিজ্ঞানী, তাত্ত্বিক বিষয়ে তিনি গবেষণা করেন না। তাই বক্তৃতা শেষে মেঘনাদ যখন স্মেকলের তত্ত্বের কথাটা তুলছেন, রামনের কৃতিত্বকে খাটো করার কথা হয়তো তাঁর মনে ছিলনা। কিন্তু রামন সহজভাবে সেই মন্তব্যকে নিতে পারেননি।

রামন ও মেঘনাদ দুজনের মধ্যে অনেক মিল। দুজনেই বিজ্ঞানী হিসাবে বিরাট মাপের, দুজনেই নিজের নিজের কৃতিত্ব বিষয়ে সচেতন এবং সবসময়েই সে বিষয়ে নিজেদের দাবী এতটুকু ছাড়তে রাজি নন। রামন চাকরিসূত্রে মাদ্রাজ ছেড়ে কলকাতায় এসেছেনঢাকার গ্রামের নিচু জাতের ছেলে মেঘনাদ বাংলারই লোক হলেও দীর্ঘদিন কলকাতার উচ্চবর্ণের নাগরিক সমাজের কাছে খুব গ্রহণযোগ্য ছিলেন না।

অথচ দুজনের অমিলও অনেক। দক্ষিণ ভারতীয় ব্রাহ্মণ, আর্থিকভাবে সচ্ছল পরিবারের সন্তান রামন সামাজিক অবস্থানে মেঘনাদের থেকে অনেক দূরে। তিনি অর্ধেক মাইনেতে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি নিয়েছেন এবং সে কথা মনে রেখেছেন। মেঘনাদও মনে রেখেছেন যে বিপ্লবীদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের চাকরির জন্য পরীক্ষাতেই বসার অধিকার পাননি। রামনের দেশপ্রেম নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠতে পারে না, পরাধীন ভারতবর্ষ থেকে বিদেশে পাঠানো কোনো সরকারি বিজ্ঞানী প্রতিনিধি দলে অংশ নিতে তিনি একাধিকবার অস্বীকার করেছেন। অথচ ১৯১৯ সালে অসহযোগ আন্দোলনের সময় ছাত্রদের পিকেটিং ভেঙে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকবেন তিনি, যা মেঘনাদের কাছে অচিন্তনীয়।

রামন ও মেঘনাদের সম্পর্ক ছিল জটিল। তাঁরা কখনো একে অন্যের প্রশংসা করেছেন, কখনো বা সমালোচনা। রামনের জন্যই মেঘনাদের কলকাতা ত্যাগ, অথচ তাঁর বইয়ের ভূমিকা লেখার অনুরোধ তাঁকেই করলেন, এবং রামন সেখানে মেঘনাদকে প্রশংসার বানে ভাসিয়ে দিলেন। লিখলেন, "(মেঘনাদ সাহা) উচ্চ তাপমাত্রায় অণু পরমাণুর ভেঙে যাওয়ার বিষয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে পথিকৃৎ। আধুনিক জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণার এক বিরাট অংশের সূচনাবিন্দু হল বিখ্যাত সাহা আয়নন সমীকরণ" অন্যদিকে মেঘনাদ রামনের সম্পর্কে ১৯৩৩ সালে ইন্ডিয়া এন্ড দি ওয়ার্ল্ড পত্রিকায় লিখলেন, ‘ইউরোপীয়রা যে তত্ত্বের বাস্তব রূপ দিতে ব্যর্থ হয়েছে, একজন ভারতীয় সেই কাজে সফল হয়েছেন যে যাই বলুন, রামনের কাজের স্বীকৃতি একান্তভাবে তাঁরই প্রাপ্য এবং সে গৌরব অন্যের কথায় এতটুকু ক্ষুণ্ণ হয় না

টাকাপয়সা ও গবেষণাগারের স্থানসঙ্কুলানের ব্যাপারে রামন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি ক্ষুব্ধ ছিলেন। তিনি গবেষণার উন্নতির জন্য বিভিন্ন প্রস্তাব বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু অর্থাভাবে সেগুলি রূপায়িত হয়নি। তবে নিজেদের সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় রামনকে যথাসাধ্য সুযোগ দিতে কার্পণ্য করেনি। রামন যোগদানের পর থেকে ১০০০ টাকা বেতনের সঙ্গে ১২৫ টাকা ভাতা পেতেন। ১৯৩০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেটে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় প্রস্তাব আনলেন যে এই ভাতা বাড়িয়ে মাসে ৫০০ টাকা করা হোক। গণিতের বিভাগীয় প্রধান গণেশ প্রসাদ একজন অধ্যাপককে আলদা করে সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি তুললেন। শেষে অনেক আলোচনার পর প্রস্তাবটি গৃহীত হল। রামন এফেক্ট আবিষ্কৃত হয়েছিল কালটিভেশনের গবেষণাগারে, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে পালিত অধ্যাপকের পদে থাকার জন্যে রামন অনেক সুবিধাও পেয়েছিলেন। বিদেশযাত্রার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়মিত আর্থিক সহায়তা না পেলে রামনের পক্ষে বিদেশ যাওয়া খুব সহজ হত না। বিদেশযাত্রার ফলেই ইউরোপীয় ও আমেরিকান বিজ্ঞানীদের সঙ্গে রামনের আলাপ পরিচয় হয়, এবং রামন তাঁর কাজের গুরুত্ব সম্বন্ধে তাঁদের বোঝাতে সক্ষম হন। বিদেশী বিজ্ঞানীদের প্রত্যক্ষ সমর্থন না থাকলে রামন নোবেল পুরস্কার পেতেন কি না, সন্দেহ। মনে রাখতে হবে, রামন যতটুকু পেতেন, অন্যান্য অধ্যাপকরা তার সঙ্গে তুলনীয় কিছুই পেতেন না। তা অনেকের গাত্রদাহের কারণ হয়েছিল।

()

পুরসংবর্ধনার উত্তরে রামনের ভাষণের বড়ো জায়গা জুড়ে ছিল কালটিভেশন,কালটিভেশনের গবেষণাগার ও গ্রন্থাগার যদি আরো সমৃদ্ধ হত, ভারতের সব জায়গার সব প্রস্তাব একত্র করে আমাকে দিলেও এই শহর থেকে আমাকে কেউ নড়াতে পারত না।" রামনের গুরুত্বপূর্ণ কাজের বেশির ভাগই সেখানে করা। কালটিভেশনকে রামন পশ্চিমী দুনিয়ার সঙ্গে তুলনীয় একটি অ্যাকাডেমি বানাতে চেয়েছিলেন, সে উদ্দেশ্যে ইওহানেস স্টার্ক, পীটার জীমান, ও নিলস বোরের মতো বিজ্ঞানীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। মহেন্দ্রলালের স্বপ্নকে সার্থক করেছিলেন রামন, এতে কোনো ভুল নেই। রামন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হয়েছেন, তিনি নিজের ইচ্ছা মতো একে গড়ে তুলছেন। আগে যা ছিল ভদ্রলোকদের শখের বিজ্ঞান ক্লাব, তাকে তিনি একটা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের রূপ দিয়েছেন। সেখানে সারা ভারত থেকে ছাত্ররা গবেষণা করতে আসে। তাই তাঁর বিশ্বাস অ্যাসোসিয়েশনের ভবিষ্যৎ বিষয়ে তাঁর মতামতেরই সবচেয়ে গুরুত্ব পাওয়া উচিত। কলকাতার বাঙালীদের অ্যাসোসিয়েশন নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। তিল তিল করে গড়ে তোলা এই প্রতিষ্ঠানটি তাঁর অনুপস্থিতিতে ধ্বংসের পথে না যায় তা দেখতে চাওয়া রামনের পক্ষে স্বাভাবিক। রামনের কাছে তাঁর যোগ্য উত্তরসূরি হলেন তাঁরই ছাত্র কৃষ্ণন। তিনি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছেন। তাঁর জন্যই রামন টাকার ব্যবস্থা করে তৈরি করলেন এক নতুন পদ। তাঁর নির্দেশে কৃষ্ণন যোগ দিলেন মহেন্দ্রলাল সরকার অধ্যাপক পদে। তিনিই হলেন অ্যাসোসিয়েশনের সচিব। বিজ্ঞানী হিসাবে কৃষ্ণনের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে না। সাত বছর পরে ১৯৪০ সালে তিনি রয়্যাল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হবেন।

কিন্তু ইতিমধ্যে রামন হয়েছেন কলকাতার চক্ষুশূল। তাঁর আকর্ষণে সারা ভারত থেকে ছাত্ররা অ্যাসোসিয়েশনে গবেষণা করতে আসে অথচ সরকারি তরফ থেকে সাহায্য খুব সামান্য মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস আধুনিক বিজ্ঞানপ্রযুক্তির বিষয়ে উদাসীন বললে কম বলা হয় বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের প্রেরণায় দেশীয় শিক্ষা-গবেষণাতে যে স্বতঃস্ফূর্ত পৃষ্ঠপোষণা এসেছিল তাও এতদিনে স্তিমিত হয়ে এসেছে এই পরিস্থিতিতে গবেষণার সুযোগ নিতান্তই সীমিত, অথচ ইচ্ছুক ছাত্রের সংখ্যা অনেক স্থানীয় ছাত্রদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে

দেশের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লীতে স্থানান্তরিত হয়েছে কংগ্রেসের জন্ম থেকেই ভারতের রাজনীতিতে বাংলা কেন্দ্রীয় স্থান অধিকার করেছিল; মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বের যুগে সেখান থেকে সে বিচ্যুত তাই বাঙালীরা নিজেদের বঞ্চিত মনে করছে কলকাতার কাগজে অ্যাসোসিয়েশনে রামনের মাদ্রাজি-প্রীতি নিয়ে চিঠি বেরোতে শুরু করল বাঙালীদের কাছে দক্ষিণ ভারতীয় মানেই মাদ্রাজি! রামনও খবরের কগজেই তার জবাব দিলেন লিখলেন, ‘আমি আমার ল্যাবরেটরির দরজা বাংলার বাইরের ছাত্রদের জন্য বন্ধ করে পদার্থবিদ্যার সর্বভারতীয় স্কুলের জায়গায় বাঙালী স্কুল তৈরি করলে আমার কোনো কোনো বাঙালী বন্ধু নিশ্চয় খুশি হতেন। কিন্তু আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে তাহলে নোবেল পুরস্কার সুয়েজ খালের পূর্বদিকে আসত না’ আগুনে ঘি পড়ল। আনন্দবাজার পত্রিকায় অ্যাসোসিয়েশনের পরিস্থিতি নিয়ে ধারাবাহিক প্রবন্ধ ছাপা হল। কথা উঠল রামন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থে কেনা জিনিসপত্র বেআইনিভাবে অ্যাসোসিয়েশনে নিয়ে গেছেন। যে মডার্ন রিভিউ এতদিন রামনের প্রশংসা করে যাচ্ছিল, সেখানে প্রবন্ধ ছাপা হল, Curzon Redivivus?”(কার্জনের পুনর্জন্ম)

রামনের অহংবোধ এবং কর্তৃত্বপূর্ণ আচরণ কলকাতার শিক্ষাজগতে অনেককেই চটিয়েছিল। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বাংলার রাজনীতি ও শিক্ষা জগতে উদীয়মান নক্ষত্র, অল্পদিনের মধ্যেই তিনি হবেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বকালের কনিষ্ঠতম উপাচার্য। অ্যাসোসিয়েশনে নিজের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে চাইছেন রামন, তাঁর পক্ষে চিরকালই কোনো সমকক্ষের সঙ্গে কাজ করা কঠিন। রামনের সভাপতিত্বে অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালন সমিতি শ্যামাপ্রসাদের সদস্যপদের আবেদন অনুমোদন করলেন না। আশুতোষ রামনকে অধ্যাপক পদে নিয়ে এসেছিলেন, তাঁর গবেষণার জন্য অর্থ সংগ্রহ থেকে শুরু করে নানাভাবে যথাসাধ্য সাহায্য করেছেন। শ্যামাপ্রসাদের মনে হল রামন তাঁর বাবার স্মৃতির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করছেন। বিখ্যাত রসায়নবিদ জ্ঞানেন্দ্রনাথ মুখার্জী এবং আশুতোষের আর এক পুত্র রমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের আবেদনেরও একই হাল হল। অধ্যাপক গণেশপ্রসাদ বহুদিন ধরেই রামনের উপর বিরূপ, বিশ্ববিদ্যালয় রামনকে যে ধরনের সুযোগসুবিধা দিয়েছে, অন্য কোনো অধ্যাপক তা পাননি। কালাজ্বরের প্রতিষেধক আবিষ্কর্তা উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারীর জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ঘর দেওয়া হয়েছিল। রামন মনে করেছিলেন বিজ্ঞান কলেজের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই এমন কাউকে বিজ্ঞান কলেজের ঘর ব্যবহার করতে দেওয়া উচিত নয়। তাঁর চেষ্টাতেই সেই ঘর পদার্থবিজ্ঞানের এক শিক্ষককে দেওয়া হয়। এঁরা সবাই কলকাতার শিক্ষাজগতের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব।

অ্যাসোসিয়েশনের দু ধরনের সদস্য ছিল, সাধারণ ও আজীবন। আজীবন সদস্যপদের অনুমোদনের উপর পরিচালন সমিতির কোনো হাত নেই, অ্যাসোসিয়েশনের ট্রাস্টি বোর্ডের কোনো সদস্যের কাছে অ্যাসোসিয়েশনের জন্য আড়াইশো টাকা দান করে যে কেউ আজীবন সদস্য হতে পারেনঅ্যাসোসিয়েশনে ভবিষ্যতেও যাতে রামনের অধিকার নিয়ে কোনো প্রশ্ন না ওঠে তার জন্য সংবিধান সংশোধন করে আজীবন সদস্যপদের অনুমোদনও পরিচালন সমিতির অধীনে আনার সিদ্ধান্ত নিলেন রামনতপরিচালন সমিতির ১০ জুন ১৯৩৪ সালের সভায় ঠিক হল ন’দিন পরে এই সিদ্ধান্ত অনুমোদনের জন্য বিশেষ সাধারণ সভা ডাকা হবে।

শ্যামাপ্রসাদের কাছে খবর গেল। রাজনীতিতে তাঁর কাছে রামন নেহাতই শিক্ষানবিশ মেঘনাদের সহায়তায় কয়েক দিনের মধ্যে আটষট্টিজন নতুন আজীবন সদস্য জোগাড় করলেন শ্যামাপ্রসাদতাঁদের মধ্যে কয়েকজন সত্যিই অ্যাসোসিয়েশনের ভালো চান, কিন্তু অনেকেই ছিলেন যাঁরা আগে কোনোদিন প্রতিষ্ঠানের চত্বরে পা রাখেননি। সাধারণ সভায় তাই সংবিধান সংশোধনের জন্য রামনের প্রস্তাব ভোটাধিক্যে অগ্রাহ্য হল। রামন ও কৃষ্ণন পরিচালন সমিতির পদ থেকে ইস্তফা দিলেন। রামন ও কলকাতার বিচ্ছেদ সম্পূর্ণ হল। পরের দিন অমৃতবাজার পত্রিকার সম্পাদকীয়তে লেখা হল, ‘বাংলা অনেক কিছু সহ্য করতে রাজি আছে, কিন্তু সাধারণের জন্য তৈরি প্রতিষ্ঠানকে ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত করা মেনে নেবে না। অ্যাসোসিয়েশনের এই ঘটনাক্রম দেখাল বাঙালীরা সংকটকালে সব বিভেদ ভুলে এক হয়ে দাঁড়াতে পারে’ এই অমৃতবাজার পত্রিকাই কৃষ্ণনের রয়্যাল সোসাইটির ফেলো হওয়ার খবর ছাপানোর যোগ্য মনে করবে না। অসহিষ্ণুতা ও প্রাদেশিকতারই জয় হল।

বাঙ্গালোরেও রামন সুখী হবেন না, নানা বিতর্কের মধ্যে পড়ে কয়েক বছরের মধ্যেই তিনি ইন্সটিটিউটের অধিকর্তার পদ ছাড়তে বাধ্য হবেন। ২১০ নম্বর বৌবাজার স্ট্রিটের বাড়িটা আর নেই, সেখানে তৈরি হয়েছে গোয়েঙ্কা কলেজ। কাল্টিভেশন স্থানান্তরিত হয়ে চলে গেছে যাদবপুরে। বিশ্ববিদ্যালয়ে রামনের গবেষণাগারের কোনো চিহ্নই আর অবশিষ্ট নেই। তাঁর ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি বহুকাল আগেই বাতিলের খাতায় নাম লিখিয়েছে। কিছু যন্ত্র অবশ্য কালটিভেশনে রাখা আছে। রামনের কলকাতাবাসের স্মৃতি হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে আছে শুধু একখানা ভাঙা পিয়ানো, তাঁর স্বনবিদ্যা বিষয়ক গবেষণার নিদর্শন।


যে সব সূত্রের সাহায্য নেওয়া হয়েছেঃ

G. Venkataraman, Journey into Light: Life and Science of C.V. Raman, Indian Academy of Sciences

Rajinder Singh, C.V. Raman and the Press: Science Reporting and Image Building, Part 1: Kolkata Period, Shaker Verlag

Gautam Gangopadhyay, Anirban Kundu and Rajinder Singh, The Dazzling Dawn: Physics Department of Calcutta University (1916-36), Shaker Verlag

গৌতম গঙ্গোপাধ্যায় ও অনির্বাণ কুণ্ডু, সোনাঝরা দিনগুলি, জয়ঢাক

গৌতম গঙ্গোপাধ্যায়, মেঘনাদ সাহা, খোয়াবনামা প্রান্তজনের কথা 

প্রকাশঃ সন্ধিৎসা, আগস্ট ২০২৪



1 comment:

  1. খুব ভালো লাগল স্যার।

    ReplyDelete