Tuesday 6 February 2018

নামহীন লেখা (২)

     বরোদার মহারাজা সয়াজি রাও বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বিখ্যাত প্রাক্তনীদের মধ্যে একজন বেঙ্কটরমন রামকৃষ্ণন। তিনি ২০০৯ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি রয়াল সোসাইটির প্রেসিডেন্ট। তাঁর আগে যাঁরা এই পদ অলঙ্কৃত করেছিলেন তাঁদের মধ্যে আছেন আইজ্যাক নিউটন। এমন একজন বিজ্ঞানী তাঁর পুরানো বিশ্ববিদ্যালয়ের সামান্য নতুন বছরের ডায়েরি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কেন? ২০১৭ সালের ডায়েরিতে আছে ভারতের বিজ্ঞানীদের কথা সেখানে আর্যভাট, জগদীশচন্দ্র, সি ভি রমন, রামানুজন ও বিক্রম সারাভাই যে জায়গা পেয়েছেন, এটাকে তাঁদের সৌভাগ্য বলে মানতেই হবে। কারণ নিউক্লিয় প্রযুক্তির সঙ্গে নিশ্চয় সামান্য রমন এফেক্টের তুলনা চলতে পারে না।  ইস্কুলে পড়ানো হয় যে পরমাণুর নিউক্লিয়াস আবিষ্কার করেছিলেন রাদারফোর্ড। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা খুঁজে বার করেছেন যে তথ্যটা ভুল, আসলে নিউক্লিয়ার প্রযুক্তির জন্মদাতার নাম ঋষি কণাদ। ডায়েরিতে আছেন রকেট ও এরোপ্লেনের আবিষ্কর্তা ঋষি ভরদ্বাজ, কসমেটিক সার্জারির আবিষ্কর্তা সুশ্রুত, মহাবিশ্বতত্ত্বের জন্মদাতা কপিল মুনি বা নক্ষত্রবিজ্ঞানী গর্গ মুনি। এঁদের তুলনায় জগদীশচন্দ্ররা কোথায়? কোথা থেকে এই সমস্ত খবর পাওয়া গেল? রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের তাত্ত্বিক দীননাথ বাটরার বই থেকে। ভারতের প্রাচীন গৌরবকে সকলের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্যই ডায়েরি।
        ভেঙ্কটরমন বলেছেন যে বিজ্ঞানে ভারতের সত্যিকারের অবদানের দিকে নজর না দিয়ে ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে বিজ্ঞান খূঁজে বার করাটা হতাশাজনক। যাঁরা এই কাজ করছে, তাঁরা ভাবছেন যে তাঁরা দেশপ্রেমিক, কিন্তু এতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের তথা দেশের দুর্নামই হচ্ছে। সেনেটে বিতর্কের সময় সেনেট সদস্য জিগর ইনামদার বলেন, ‘বিজেপির সসস্য ও আর এস এস কর্মী হিসাবে আমি গর্বিত যে আমরা ভারতের প্রকৃত ঐতিহ্যকে সামনে আনছি। কে প্রমাণ করতে পারবে যে মুনিঋষিরা এই সমস্ত আবিষ্কার করেন নি? আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে রামচন্দ্র পুষ্পক বিমানে ভ্রমণ করতেন। আমাদের সেটা শুধু প্রমাণ করতে হবে।’

        বিজ্ঞান গবেষণা সম্পর্কে সামান্য ধারণা যাদের নেই, তাদের হাতেই এখন দেশের বিজ্ঞান প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ!

No comments:

Post a Comment