বিষম চিন্তা
– সুকুমার রায়
মাথায় কত প্রশ্ন আসে, দিচ্ছে না কেউ জবাব তার-
সবাই বলে, মিথ্যে বাজে বকিস নে আর খবরদার!
অমন ধারা ধমক দিলে কেমন করে শিখব সব?
বলবে সবাই মুখ্য ছেলে, বলবে আমায় “গো গর্দভ!”
কেউ কি জানে দিনের বেলায় কোথায় পালায় ঘুমের ঘোর?
বর্ষা হলেই ব্যাঙের গলায় কোথেকে হয় এমন জোর?
গাধার কেন শিং থাকে না, হাতির কেন পালক নেই?
গরম তোলে ফোড়ন দিলে লাফায় কেন তাধেই-ধেই?
সোডার বোতল খুললে কেন ফঁসফঁসিয়ে রাগ করে?
কেমন করে রাখবে টিকি মাথায় যাদের টাক পড়ে?
ভুত যদি না থাকবে তবে কোত্থেকে হয় ভূতের ভয়?
মাথায় যাদের গোল বেধেছে তাদের কেন “পাগোল” কয়?
কতই ভাবি এসব কথা, জবাব দেবার মানুষ কই?
বয়স হলে কেতাব খুলে জানতে পাব সমস্তই।
চিন্তামুক্তি
ছোট্টবেলার প্রশ্ন যত ছিল মাথার মধ্যে মোর,
কেতাবে নয়, গুগল করে পেয়েছি তার সদুত্তর।
দিনের বেলা ঘুমের ঘোর ঠাঁই করে নেয় দপ্তরে,
বড়বাবুর টেবিলে আর অফিসারের চেম্বারে।
বর্ষাকালে ব্যাঙগিন্নি বাড়িয়ে যে দেয় গলার জোর,
কারণ সুপুত্রটি তখন হয়েছে এক মস্ত চোর।
গাধা নিজেই ভাঙল শিং নিতে বাছুর ছদ্মবেশ,
গরু বলে ডাকলে তাকে থাকে না তার খুশির শেষ।
ডেন্টিস্টের ভিজিট দিয়ে হয় যখনি খালি ট্যাঁক,
পালক বেচে কেনে হাতি টুথপেস্টের ট্রিপল প্যাক।
গরম তেলে পড়লে ফোড়ন নাচে কেন তাধেই-ধেই ,
গ্রীষ্মকালে খালি পায়ে উঠলে ছাদে টের পাবেই।
খুললে ছিপি সোডার বোতল একটু না হোক ফঁসফঁসায়,
কাঁচা ঘুম ভাঙিয়ে দিলে রাগ করা কি দোষের হয়?
টাক পড়ছে মাথায় না হয় টিকি নিয়ে চিন্তা কি,
পরচুলার দোকানেতেই মিলছে এখন পরটিকি।
ভূতপেত্নি নেই বলে কি থাকবে নাকো ভূতের ভয়?
হোমিওপ্যাথির ওষুধ তবে কেমন করে রোগ সারায়?
চৌকোনো বা তিনকোণা কি মাথার মাপ কভুও হয়?
গোল মাথাতো সবারই, তাই মাথার গোলে পাগোল কয়।
যার যেমনই প্রশ্ন আছে গুগল জানে জবাব তার,
এমন দিন কি কল্পনাতেও দেখেছিলেন সুকুমার?
গৌতম গঙ্গোপাধ্যায়
No comments:
Post a Comment