কোথায় মোদের স্থান?
কোথায়
মোদের স্থান?
গৌতম
গঙ্গোপাধ্যায়
পাঠকরা
সবাই জানেন যে প্রাচীন কালে
দু'একজন
ছাড়া সব মানুষেরই বিশ্বাস
ছিল যে পৃথিবী আছে ব্রহ্মাণ্ডের
কেন্দ্রে, তাকে
ঘিরেই সমস্ত কিছু আবর্তন করে।
সেই ভূকেন্দ্রিক চিন্তা ভাবনার
বিরোধিতার মাধ্যমেই আধুনিক
বিজ্ঞানের জন্ম। কেন প্রায়
সব প্রাচীন সভ্যতাই মনে করত
যে পৃথিবী স্থির?
কারণটা
খুব সহজ, চোখে
দেখা যেত যে সূর্য গ্রহ নক্ষত্ররা
তাকে প্রদক্ষিণ করছে। জাড্য
সম্পর্কে সঠিক ধারণার আগে
পৃথিবী যে দ্রুতবেগে চলতে
পারে তা বোঝা অসম্ভব ছিল।
ব্যতিক্রম ছিলেন না তা নয়,
যেমন
গ্রিসে আরিস্টার্কাস (আনু
310–230
খ্রিপূ)
বলেছিলেন
সূর্যকেন্দ্রিক জগতের কথা।
কিন্তু সেই সময়ের জ্ঞানের
বিচারে বিচার করলে অ্যারিস্টার্কাসের
মতকে সমর্থনের কোন কারণ ছিল
না। প্রাচীন
যুগে গ্রহদের চলাফেরার সব
থেকে ভালো বর্ণনা দিয়েছিলেন
আলেকজান্দ্রিয়ার বিজ্ঞানী
ক্লডিয়াস টলেমি (100-170
খ্রি);
এবং
তা অ্যারিস্টার্কাসের থেকে
অনেক ভালোভাবে পর্যবেক্ষণকে
ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হয়েছিল।
টলেমির
মডেলে পৃথিবী ছিল স্থির,
তার
চারদিকে সূর্য সহ অন্য নক্ষত্ররা
প্রদক্ষিণ করছে। সেই প্রদক্ষিণের
পথ ছিল অত্যন্ত জটিল,
কারণ
পৃথিবীর গতির জন্য আকাশে
গ্রহদের বেগের পরিবর্তন হয়,
কখনো
কখনো কখনো তাদের উল্টোদিকে
যেতে দেখা যায়। বিখ্যাত গ্রিক
পণ্ডিত অ্যারিস্টটটলকে
(384-322
খ্রি
পূ)
অনুসরণ
করে টলেমি ধরে নিয়েছিলেন
গ্রহদের কক্ষপথ বৃত্তকার এবং
তাদের বেগ অপরিবর্তনীয়।
অ্যারিস্টটল বলছিলেন বৃত্তই
একমাত্র নিখুঁত এবং জ্যোতিষ্করা
নিখুঁত ও অপরিবর্তনীয় কারণ
তারা এই পরিবর্তনশীল পৃথিবীর
ক্লেদের ঊর্ধ্বে অবস্থান
করে। মূল বৃত্তটির পরিধির
উপরে বৃত্ত (epicycle)
বসিয়ে
টলেমি গ্রহদের এই বিপরীতগতির
ব্যাখ্যা করেছিলেন। ভূকেন্দ্রিক
মডেল বলা হলেও কিন্তু গ্রহদের
কক্ষপথের মূল বৃত্তটির কেন্দ্র
পৃথিবী থেকে দূরে অবস্থান
করত। নিচের ছবি থেকে হয়তো
টলেমির মডেলটা কিছুটা পরিষ্কার
হবে।
|
এপিসাইকল
তত্ত্ব |
গ্রিক
সভ্যতার পতনের পরে টলেমির
তত্ত্ব আরব বিজ্ঞানীদের হাত
ঘুরে আবার যখন ইউরোপে এসেছিল
তখন তা দৃঢ়প্রতিষ্ঠ। টলেমির
পরে প্রায় দেড় হাজার বছর
পৃথিবীকেন্দ্রিক বিশ্বের
সত্যতা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেন
নি। বাইবেল থেকে তার পক্ষে
যুক্তিও খুঁজে পেয়েছিলেন
খ্রিস্টান দার্শনিকরা। চার্চ
ছিল অ্যারিস্টটলের উৎসাহী
সমর্থক। তাঁকে অনুসরণ করে
চার্চ বলত আকাশের জ্যোতিষ্করা
সবাই নিখুঁত ও অপরিবর্তনীয়।
পৃথিবী অন্য সমস্ত জ্যোতিষ্কদের
থেকে আলাদা,
পাপ
ও ক্লেদে ভরা পৃথিবীর কোনো
আলো নেই। চাঁদ পৃথিবীর কাছে
আছে,
পৃথিবীর
প্রভাব তার উপর পড়েছে। তাই
তার নিজের আলো নেই। মাটির
পৃথিবীই একমাত্র পরিবর্তনশীল;
আকাশের
জ্যোতিষ্করা অপরিবর্তনীয়,
বিধাতার
অমোঘ নিয়মে মেনে চলে। তাদের
সকলের গতি বৃত্তাকার পথে,
কারণ
বৃত্ত হল একমাত্র নিখুঁত
আকৃতি। পৃথিবী আছে বিশ্বের
কেন্দ্রে,
তার
পরে চাঁদ,
অন্যান্য
গ্রহ এবং সবশেষে নক্ষত্রেরা।
বিশ্বের এই মডেলে নক্ষত্রদের
থেকে দূরে খ্রিস্টধর্মের
কল্পিত স্বর্গ ও নরকের জন্য
অনেকটা জায়গা পাওয়া যাচ্ছিল।
এখানে
একটা বিষয় পরিষ্কার করে বলা
যাক,
পৃথিবীর
গতির কথা বলতে আমরা তার বার্ষিক
গতি,
অর্থাৎ
সূর্যের চারদিকে তার আবর্তনের
কথা বলছি। পৃথিবীর নিজের
অক্ষের চারদিকে আবর্তনের
জন্য দিনরাত্রি হয়,
তাকে
বলে আহ্নিক গতি। আহ্নিক গতির
কথা অনেকেই বলেছিলেন,
প্রাচীন
গ্রিসে অ্যানাক্সিমান্ডার
(610-546
খ্রিপূ)
,
লিউচিপ্পাস
(খ্রিপূ
পঞ্চম শতাব্দী)
বা
ভারতে আর্যভট্ট (476-550)
আহ্নিক
গতির কথা বলেছিলেন।
গ্রিসে অ্যারিস্টটলের তীব্র
বিরোধিতার ফলে সেই ধারণা
পরিত্যক্ত হয়। ভারতেও বরাহমিহির
(আনু
505-587),
ব্রহ্মগুপ্ত
(আনু
598-668),
এমনকি
আর্যভট্টের অনুরাগী লল্লও
(আনু
720-790)
আর্যভট্টের
এই মতের বিরোধিতা করেছিলেন।
কোথাও
কোথাও শোনা যায় যে আর্যভট্ট
বার্ষিক গতির কথা বলেছিলেন
এবং তার সমর্থনে এই শ্লোকটি
উদ্ধৃত হয়।
স্থির
পৃথিবী নিয়ে প্রশ্ন উঠল ষোড়শ
শতকে। 1543
খ্রিস্টাব্দে
প্রকাশিত হল পোল্যান্ডের
খ্রিস্টান যাজক নিকোলাস
কোপার্নিকাসের (1473-1543)
স্থির
সূর্য ও চলমান পৃথিবীর তত্ত্ব
নিয়ে সেই বিখ্যাত বই ডি
রেভেলোউশনিবাস অরবিয়াম
সেলেশ্চিয়াম। অবশ্য কোপার্নিকাস
তার অনেক আগে থেকেই বন্ধুদের
মধ্যে তাঁর মত তিনি প্রচার
করেছিলেন। সেই যুগে অবশ্য
বইটি বিশেষ সাড়া ফেলেনি,
তার
কিছু কারণও ছিল। কোপার্নিকাসও
বৃত্তাকার পথের চিন্তা থেকে
বেরোতে পারেননি,
ফলে
তাঁর মডেলেও এপিসাইকেল দরকার
ছিল,
যদিও
সংখ্যায় তা টলেমির মডেলের
থেকে অপেক্ষাকৃত কম। অপর এক
কারণের কথায় আমরা পরে আসছি।
বৈজ্ঞানিক যুক্তির বাইরের
এক ঘটনাচক্রে বইটি বিজ্ঞানীমহলে
বিশেষ সাড়া ফেলতে পারেনি।
কোপার্নিকাস তাঁর মত বন্ধুদের
চিঠিপত্র মারফত জানালেও বই
আকারে প্রকাশের সিদ্ধান্ত
নেন শেষ বয়সে। ছাপা যখন শুরু
হয়েছে তখন কোপার্নিকাস খুবই
অসুস্থ ছিলেন,
দেখাশোনা
করার দায়িত্ব তিনি দিয়েছিলেন
আর এক খ্রিস্টান যাজক আন্দ্রিয়াস
ওসিয়ান্দারকে (1498-1552)।
ওসিয়ান্দার দেখলেন যে বইটি
বাইবেলের ব্রহ্মাণ্ডতত্ত্বের
বিরোধী,
তিনি
কোপার্নিকাসের অজ্ঞাতসারে
বইতে এক ভূমিকা যোগ করেছিলেন।
তাতে তিনি লিখেছিলেন যে সেই
বইয়ের বর্ণিত জগৎ বাস্তব নয়,
শুধুমাত্র
অঙ্ক কষার সুবিধার জন্যই এই
নতুন তত্ত্ব। কোপার্নিকাস
মৃত্যুশয্যায় বইটির প্রথম
কপি হাতে পেয়েছিলেন,
তিনি
সেই ভূমিকার কথা কোনোদিন জানতে
পারেননি। এই ভূমিকাটির জন্য
কোপার্নিকাসের সৌরজগতের
মডেলকে অনেকেই উপেক্ষা করেছিলেন।
টলেমি
ও কোপার্নিকাস ছাড়াও ব্রহ্মাণ্ডের
আরো একটা মডেল ছিল। ড্যানিশ
বিজ্ঞানী টাইকো ব্রাহে
(1546-1601)
দূরবিন
আবিষ্কারের আগের যুগে গ্রহ
নক্ষত্রের গতিবিধি বিষয়ে সব
থেকে নিখুঁত পর্যবেক্ষণ
করেছিলেন। তিনি কোপার্নিকাসের
মতে বিশ্বাসী ছিলেন না,
আবার
পুরোপুরি টলেমির অনুগামীও
ছিলেন না। তাঁর মডেলে পৃথিবী
কেন্দ্রীয় অবস্থানে আছে।
চন্দ্র,
সূর্য
ও দূরের নক্ষত্ররা পৃথিবীকে
আবর্তন করছে। অন্য গ্রহগুলি
আবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ
করছে।তবে টাইকোই প্রথম যে এই
তত্ত্ব দিয়েছিলেন তা নয়।
বিখ্যাত কেরালা গণিত সম্প্রদায়ের
নীলকান্ত স্বামী (১৪৪৪-১৫৪৪)
টাইকোর
আগেই একই মডেল দিয়েছিলেন।
তারও হাজার বছর আগে খ্রিস্টিয়
পঞ্চম শতাব্দীতে মার্টিনিয়াস
ক্যাপেলা বলেছিলেন যে বুধ ও
শুক্র সূর্যকে প্রদক্ষিণ
করে,
এবং
চন্দ্র সূর্য সহ অন্য সমস্ত
গ্রহ ও নক্ষত্র পৃথিবীকে
প্রদক্ষিণ করে। কোপার্নিকাসের
বইতে তাঁর সপ্রশংস উল্লেখ
আছে। পরবর্তীকালে দূরবিনের
সাহায্যে পর্যবেক্ষণ থেকে
টলেমির মডেল বাতিল হয়ে গেলেও
কোপার্নিকাস ও টাইকোর মডেলের
মধ্যে কোনটি ঠিক তার বিচার
অত সহজ ছিল না। সপ্তদশ শতাব্দীর
মাঝামাঝি সময় থেকে টাইকোর
মডেলে বিশেষ কেউ বিশ্বাস করত
না,
কিন্তু
তা দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না
এমন পর্যবেক্ষণ পেতে 1838
সাল
পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।
আগেই
বলেছি কোপার্নিকাসের মত খুব
একটা প্রভাব ফেলে নি। তার কারণ
সাধারণ মানুষ সহজে বুঝবে এমন
কোনো প্রমাণ কোপার্নিকাসের
তত্ত্ব থেকে পাওয়া যায়নি।
বরঞ্চ বিপক্ষের লোকরা অনেক
কথাই বলতেন,
যার
কোনো উত্তর দেওয়া যেত না।
একটা উদাহরণ দেখা যাক। গাড়িতে
যাচ্ছি,
সামনে
আছে একটা গাছ আর পিছনে একটা
পাহাড়। যত এগোচ্ছি,
গাছ
আর পাহাড়ের আপেক্ষিক জায়গা
পরিবর্তন হচ্ছে। তেমনি পৃথিবী
যদি চলমান হয় তাহলে ছ'মাস
আগে পরে সে আলাদা জায়গায় আছে,
সুতরাং
তার সাপেক্ষে আকাশে নক্ষত্রদের
মধ্যে আপেক্ষিক অবস্থানের
পরিবর্তন হওয়া উচিত,
এই
পরিবর্তনের কৌণিক মাপকে বলে
লম্বন। কেন লম্বন দেখা যাচ্ছে
না তা কোপার্নিকাসপন্থীরা
বলতে পারতেন না।
গ্যালিলিওর
দূরবিন দিয়ে পর্যবেক্ষণ শুরু
করেন ১৬০৯ সালে। দূরবিন অনেক
প্রশ্নের জবাব নিয়ে এল।
গ্যালিলিও যখন রাতের আকাশে
দুধ-সাদা
আকাশগঙ্গার দিকে দূরবিন
ফেরালেন,
দেখলেন
তা হল অসংখ্য নক্ষত্রের সমষ্টি।
গ্যালিলিও প্রথম বুঝলেন যে
আকাশগঙ্গার নক্ষত্ররা এত
দূরে আছে যে খালি চোখে তাদের
আলাদা করে চেনা যাচ্ছে না।
দূরবিন দিয়ে দেখেও তাদের
বিবর্ধিত করা যাচ্ছে না,
অর্থাৎ
দূরত্ব এতই বেশি যে দূরবিনেও
তাদের বিন্দুর মতো লাগছে। এই
একটি পর্যবেক্ষণই মহাবিশ্বের
আয়তনকে অনেক গুণ বাড়িয়ে দিল।
গ্যালিলিও বললেন যে নক্ষত্রদের
দূরত্ব এত বেশি যে তাদের লম্বন
মাপ যায় না,
যেমন
অল্প পথ গেলে কিন্তু দূরের
দুটো পাহাড়ের আপেক্ষিক স্থান
পরিবর্তন বোঝা যায় না। এই
বিরাট ব্রহ্মাণ্ডে তাহলে
পৃথিবীর স্থান অতি নগণ্য,
সে
কি ব্রহ্মান্ডের কেন্দ্রে
থাকতে পারে?
তাহলে
কি কোপার্নিকাসই ঠিক বলেছেন,
পৃথিবী
সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে?
অ্যারিস্টটল
আর টলেমি কি ভুল করতে পারেন?
বাইবেলে
কি ভুল লেখা আছে?
আগে
থেকেই কোপার্নিকাসের মতেই
বিশ্বাস করতেন গ্যালিলিও,
কিন্তু
তার প্রচারে তিনি খুব উৎসাহী
ছিলেন না। কেপলারকে 1597
সালে
চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন যে
লোকের ঠাট্টার ভয়ে তিনি
প্রকাশ্যে কোপার্নিকাসের
মত সমর্থন করতে পারছেন না।
সেই সুযোগ এলো 1610
সালের
জানুয়ারি মাসের 7
তারিখ।
সেই দিন বৃহস্পতিকে ভালো করে
দেখতে গিয়ে আবিষ্কার করলেন
তার চারটি উপগ্রহ। বৃহস্পতিকে
কেন্দ্র করে যদি উপগ্রহরা
পাক খেতে পারে,
তাহলে
পৃথিবী বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের
কেন্দ্র না হতেও পারে। তিনি
পরে দেখিয়েছিলেন যে পৃথিবীকে
চলমান ধরে নিলেই এক মাত্র সহজে
বৃহস্পতির চাঁদেদের গ্রহণের
সময় বার করা যায়।
সূর্যকেন্দ্রিক
জগৎ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে
গ্যালিলিও
বলবিদ্যাকে পাল্টে দিয়েছিলেন।
অ্যারিস্টটল বলেছিলেন পৃথিবী
চলমান হলে কোনো বস্তুকে উপর
থেকে ছেড়ে দিলে তা পিছিয়ে
যাবে। একই কারণে চাঁদও গতিশীল
পৃথিবীর সঙ্গে থাকতে পারবে
না। গ্যালিলিও বললেন যে বৃহস্পতি
যদি চারটি চাঁদকে সঙ্গে নিয়ে
চলতে পারে,
তাহলে
পৃথিবী কেন পারবে না?
তিনি
উদাহরণ দিলেন যে চলমান জাহাজের
মাস্তুল থেকে কোনো বস্তুকে
নিচে ফেললে তা মাস্তুলের
গোড়াতেই পড়ে,
জাহাজের
গতির জন্য পিছন দিকে চলে যায়
না। তেমনি পৃথিবীতেও পতনশীল
বস্তু সোজা নিচের দিকেই পড়ে,
পিছিয়ে
যায় না। তিনি দেখালেন যে
বস্তুর গতিতে স্থিতাবস্থার
আলাদা করে কোনো গুরুত্ব নেই।
এখান থেকেই নিউটন জাড্য বিষয়ে
তাঁর চিন্তাতে পৌঁছান। অসাধারণ
কয়েকটি পরীক্ষার মাধ্যমে
গ্যালিলিও দেখালেন ঘর্ষণ বা
অন্য কোনো বল না থাকলে সচল
বস্তু চিরকাল সচল থাকবে।
টাইকো
ছিলেন Holy
Roman Empire বা
পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের
রাজদরবারের জ্যোতির্বিদ।
জার্মান বিজ্ঞানী জোহানেস
কেপলার (1571-1630
খ্রি)
তখন
ছিলেন টাইকোর সহকারী,
টাইকোর
মৃত্যুর পর তিনি তাঁর পদে
বসেন। গ্রহদের গতিবিধি সংক্রান্ত
তিনটি সূত্রের জন্য তিনি
বিখ্যাত। গ্রহদের গতিবিধি
সংক্রান্ত যে বিশাল তথ্যভাণ্ডার
টাইকো সারাজীবন ধরে পর্যবেক্ষণ
করে সঞ্চয় করেছিলেন,
তার
উত্তরাধিকারী হয়েছিলেন কেপলার।
কেপলার
কোপার্নিকাসের তত্ত্বে
বিশ্বাসী ছিলেন;
বেশ
কিছুদিন তিনি সূর্যকেন্দ্রিক
বিশ্বে গ্রহদের বৃত্তাকার
কক্ষপথ ধরে টাইকোর পর্যবেক্ষণ
ব্যাখ্যা করার চেষ্টা
করেছিলেন। ব্যর্থ হয়ে তিনি
অন্য পথ খুঁজতে শুরু করেন।
তাঁর আগে পর্যন্ত কেউ গ্রহনক্ষত্রদের
কক্ষপথ যে বৃত্তাকার ছাড়া
অন্য কিছু হতে পারে সে কথা
চিন্তাই
করেননি।
কেপলার দেখলেন যে বৃত্তাকার
কক্ষপথ না ধরলে সমস্যার সমাধান
অনেক সোজা হয়ে যায়,
এপিসাইকেলের
কোনো প্রয়োজন হয় না। তিনি
আবিষ্কার করলেন যে গ্রহরা
সুর্যের চারদিকে উপবৃত্ত
(ellipse),
এই
আকারের কক্ষপথে চলে। বৃত্তের
যেমন একটি কেন্দ্র থাকে,
উপবৃত্তের
আছে দুটি নাভি। তার মধ্যে এক
নাভিতে থাকে সুর্য। এই হল
কেপলারের প্রথম সূত্র। নিচের
ছবিতে সুর্যের চারদিকে গ্রহের
কক্ষপথ দেখানো হয়েছে,
বোঝার
সুবিধার জন্য বৃত্তাকার
কক্ষপথের সঙ্গে পার্থক্যকে
অনেকটা বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে।
কেপলার
আরও দেখলেন যে কোনো গ্রহ আর
সূর্যকে যদি এক কাল্পনিক রেখা
দিয়ে যুক্ত করি,
তাহলে
তা সমান সময়ে কক্ষপথের সমান
এলাকা অতিক্রম করবে। এটি হল
তাঁর দ্বিতীয় সূত্র। এই দুটি
সূত্র তিনি প্রকাশ করেন 1609
সালে,
যে
বছর গ্যালিলিও দূরবিন দিয়ে
আকাশ পর্যবেক্ষণ শুরু করেছিলেন।
এরপর কেপলার বিভিন্ন গ্রহের
গতিবিধির মধ্যে সম্পর্ক খোঁজার
কাজ শুরু করেন। এর ফলেই আবিষ্কার
হয় তাঁর তৃতীয় সূত্র,
সুর্যের
চারপাশে কোনো গ্রহের আবর্তন
কালের বর্গ সূর্য থেকে তার
গড় দূরত্বের (আরো
সঠিকভাবে বললে কক্ষপথের
অর্ধ-পরাক্ষের)
ঘনকের
সমানুপাতী। এই সূত্রগুলি
ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আইজ্যাক
নিউটন
(1643-1727)
তাঁর
সার্বজনীন মাধ্যাকর্ষণ সূত্র
আবিষ্কার করেছিলেন।
কোপার্নিকাসের
মডেলের সব থেকে বড় সমালোচনা
ছিল নক্ষত্রদের লম্বনের
অনুপস্থিতি,
গ্যালিলিও
তার একটা ব্যাখ্যা দেন,
বলেন
নক্ষত্ররা অনেক দূরে আছে;
কিন্তু
কত দূরে?
লম্বন
মাপা গেলে সহজ জ্যামিতির
সাহায্যে নক্ষত্রদের দূরত্ব
মাপা সম্ভব।
সহজ
জ্যামিতি দেখায় যে কোনো
নক্ষত্রের দূরত্ব =
তার
লম্বন কোণ (রেডিয়ান
মাপে)/পৃথিবী
ও সূর্যের গড় দূরত্ব। সরাসরি না হলেও দূরত্ব অন্য
ভাবে মাপতে চেষ্টা করেছিলেন
বিজ্ঞানীরা। এর মধ্যে নিউটনের
হিসাবই খুব কাছে পৌঁছেছিল।
তিনি ধরে নিয়েছিলেন যে লুব্ধক
সূর্যের মতোই উজ্জ্বল। তিনি
জানতেন যে শনি ও লুব্ধকের
ঔজ্জ্বল্য প্রায় সমান। সূর্য
থেকে কতটা আলো শনি পায় এবং
কতটা প্রতিফলিত করতে পারে তা
অনুমান করে তিনি নির্ণয় করেছিলেন
লুব্ধকের দূরত্ব সূর্য ও
পৃথিবীর দূরত্বের আট লক্ষ
গুণ। আধুনিক এককে নিউটনের
নির্ণয় করা দূরত্ব হবে 12.6
আলোকবর্ষ।
প্রকৃত মান হল 8.6
আলোকবর্ষ।
হিসাবে অনেক অনুমান থাকলেও
নিউটন অনেকটা কাছাকাছি গিয়েছিলেন
সন্দেহ নেই। বোঝা গিয়েছিল যে
লম্বন দেখতে গেলে খুব সূক্ষ্ম
যন্ত্রের প্রয়োজন হবে।
অন্যদিকে,
কোপার্নিকাসের
মৃত্যুর তিনশো বছর পরেও তাঁর
ও টাইকোর সৌরজগতের মডেলের
পার্থক্য করা সম্ভব ছিল
শুধুমাত্র লম্বনের মাধ্যমে।
টাইকোর মডেলে পৃথিবী স্থির,
তাই
টলেমির মডেলের মতোই সেখানে
লম্বনের মান শূন্য হবে। যদিও
নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ সূত্রের
পর আর কেউ টাইকোর মডেলে বিশ্বাস
করত না,
তবু
বিজ্ঞানে প্রমাণ জরুরি। সুতরাং
বিজ্ঞানীরা লম্বন মাপার চেষ্টা
করেই চলেছিলেন। সফল হলেন
জার্মান বিজ্ঞানী ফ্রিয়েডরিশ
উইলহেল্ম বেসেল (1784-1846)।
প্রয়োজনীয় সূক্ষ্ম যন্ত্রটি
বানিয়েছিলেন বিজ্ঞানী ও
সমকালের জ্যোতির্বিদ্যাতে
শ্রেষ্ঠ যন্ত্রনির্মাতা
জোসেফ ফন ফ্রনহফার (1787-1826)।
বেসেল কোনিসবার্গ মানমন্দিরের
জন্য সেই রকম যন্ত্র নির্মাণের
দায়িত্ব দেন ফ্রনহফারকে।
যন্ত্রটা শেষ করার আগেই
ফ্রনহফারের মৃত্যু হয়,
তবে
অন্যরা সেটা সম্পূর্ণ করেছিল।
বেসেলই
প্রথম নির্ভুলভাবে লম্বন
মাপতে সফল হয়েছিলেন। 1838
সালে
হংস (Cygnus)
নক্ষত্রমণ্ডলের
61
Cygni নক্ষত্রের
লম্বন মেপে
তিনি পেলেন 0.31
সেকেন্ড।
এই
সেকেন্ড হল কোণের মাপ। এক
ডিগ্রিতে ষাট মিনিট,
এক
মিনিটে ষাট সেকেন্ড। দূরত্ব ও লম্বনের সম্পর্ক
থেকে দেখা যাচ্ছে ওই নক্ষত্রের
দূরত্ব হয় 10.5
আলোকবর্ষ।
এই প্রথম নক্ষত্রদের মধ্যের
দূরত্ব মাপা সম্ভব হল। প্রায়
একই সময়ে আরো দু'জন
জ্যোতির্বিদ,
অটো
স্ট্রুভে (1819-1905)
ও
ও টমাস হেন্ডারসন (1798-1844)
এই
কাজে সফল হয়েছিলেন। দুজনেই
বেসেলের আগেই লম্বনের পরিমাপ
করেছিলেন,
কিন্তু
প্রকাশ করেছিলেন পরে। স্ট্রুভের
মাপ অবশ্য অনেকটাই ভুল ছিল।
বেসেলের
মাপ আমাদের কাছে ব্রহ্মাণ্ডের
বিশালতাকে প্রথম প্রতিষ্ঠা
করল। অবশ্য তখন আমরা যা ভাবতাম,
মহাবিশ্ব
তার থেকে অনেক বড়। তবে অনেক
সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও কোপার্নিকাসের
সময় থেকেই আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের
সূচনা হল ধরে নিতে পারি।
কোপার্নিকাস
ও গ্যালিলিওর মত প্রতিষ্ঠা
হওয়ার পরে বোঝা যায় যে আমাদের
সূর্যের মতো বহু নক্ষত্র আছে।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে
যে এই নক্ষত্ররা কি ব্রহ্মাণ্ডের
সর্বত্র ছড়িয়ে আছে,
নাকি
অনন্ত শূন্যের মাঝে কিছুটা
জায়গা অধিকার করে আছে?
রেনে
দেকার্তে (1596-1650)
মনে
করেছিলেন যে বস্তুর পরিমাণ
সসীম, এবং
বস্তুর সীমার বাইরে স্থানের
অস্তিত্ব থাকতে পারে না। তরুণ
নিউটন কিন্তু ভেবেছিলেন যে
বস্তুর পরিমাণ সসীম হলেও
শূন্যস্থান অসীম পর্যন্ত
বিস্তৃত;
নিউটনের
ভাষায় সর্বশক্তিমান ঈশ্বর
ইচ্ছা করলেই অসীম স্থান সৃষ্টি
করতে পারেন। পরে এই প্রশ্ন
নিউটনের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ
হয়ে দাঁড়িয়েছিল,
কারণ
মাধ্যাকর্ষণ আবিষ্কারের পরে
প্রশ্ন আসে যে নক্ষত্ররা কেন
পারষ্পরিক আকর্ষণে কাছে চলে
আসছে না। তিনি অনুমান করেছিলেন
যে অনন্ত পর্যন্ত নক্ষত্ররা
একই ভাবে বিস্তৃত;
তিনি
ভেবেছিলেন যে সেই ক্ষেত্রে
যে কোনো নক্ষত্রের উপরে সবদিকে
টান সমান হবে,
সুতরাং
সে কোনোদিকেই যাবে না। কিন্তু
তিনি পরে বোঝেন যে এই অবস্থা
স্থায়ী হতে পারে না;
যে
কোনো দিকে নক্ষত্র একটু সরলেই
সেই দিকের আকর্ষণ আরো বেশি
হবে এবং সে সেদিকেই চলতে শুরু
করবে। তখন তিনি এর জন্য ঐশ্বরিক
হস্তক্ষেপের প্রয়োজন বোধ
করেছিলেন।
পর্যবেক্ষণ
থেকে এই প্রশ্নের প্রথম উত্তর
দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন টমাস
রাইট (1711-1786)।
পরিষ্কার রাতের আকাশের দিকে
তাকালে দেখা যায় সাদা দুধের
মতো আকাশগঙ্গা,
গ্যালিলিওর
দূরবিনে যা অজস্র নক্ষত্রের
সমষ্টি হয়ে দেখা দিয়েছিল।
রাইট অনুমান করেন যে নক্ষত্ররা
একটা নির্দিষ্ট অঞ্চলের মধ্যেই
সীমাবদ্ধ,
তার
বাইরে শুধুই শূন্য। তা না হলে
সারা আকাশই ওইরকম দুধের মতো
হয়ে থাকত,
কারণ
যেদিকেই তাকাই,
অসংখ্য
নক্ষত্র দৃষ্টিগোচর হত। এই
নক্ষত্রজগতেরই নাম ছায়াপথ,
আকাশগঙ্গা
বা Milky Way।
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসে
এই নক্ষত্রজগতের আকার কেমন?
রাইট
সিদ্ধান্ত করেছিলেন এটা একটা
লেন্সের মতো। লেন্সের দৈর্ঘ্য
বরাবর দেখলে অসংখ্য নক্ষত্রকে
আলোকিত এক মেঘ বা কুয়াশার মতো
দেখাবে,
কিন্তু
বেধ বরাবর দেখলে অন্ধকার
মহাকাশ চোখে পড়বে। রাইট মনে
করেছিলেন এই নক্ষত্রমণ্ডলী
অক্ষের চারপাশে ঘুরছে,
যার
জন্য নক্ষত্রগুলি কেন্দ্রের
দিকে আকর্ষণ অগ্রাহ্য করতে
পারছে।
দূরবিনের
সাহায্যে আমাদের পর্যবেক্ষণকে
সৌরজগতের বাইরে প্রসারিত
করেন আঠারো শতকের শ্রেষ্ঠ
জ্যোতির্বিজ্ঞানী উইলিয়াম
হার্শেল (1738-1822)।
তিনি দেখলেন যে আমাদের সৌরজগত
হারকিউলিস নক্ষত্রপুঞ্জের
দিকে গতিশীল। হার্শেল আকাশে
685টি
বিভিন্ন অঞ্চল বেছে নিয়ে
সেগুলিতে তারার সংখ্যা গুনলেন,
তার
থেকে তিনি আমাদের এই নক্ষত্রজগতের
আকার নির্ণয় করার চেষ্টা
করলেন। তাঁর পর্যবেক্ষণ
রাইটকেই সমর্থন করলো,
তিনি
অনুমান করলেন যে লেন্সের
দৈর্ঘ্য হবে দুটি তারার মধ্যের
গড় দূরত্বের আটশো গুণ এবং বেধ
হবে একশো পঞ্চাশ গুণ।
হার্শেল
তারাদের মধ্যেকার দূরত্বের
অনুপাত সম্পর্কে কিছুটা
জানলেও কোনো তারার সঠিক দূরত্ব
জানতেন না,
কারণ
1838 সালের
আগে সূর্য ছাড়া অন্য কোনো
নক্ষত্রের দূরত্ব মাপা সম্ভব
হয়নি। প্রকৃত মাপ অবশ্যই এর থেকে
অনেক বেশি,
কিন্তু
হার্শেল আমাদের ছায়াপথের
আকার অনেকটাই সঠিক পেয়েছিলেন।
হার্শেলের হিসাবে মোট নক্ষত্রের
সংখ্যা হয় তিরিশ কোটি। দৈর্ঘ্য
বরাবর আকাশগঙ্গার ঔজ্জ্বল্য
প্রায় সমান,
সেই
কারণে হার্শেলের মনে হয় যে
আমাদের সৌরজগৎ এই নক্ষত্রজগতের
কেন্দ্রের খুব কাছে অবস্থান
করে।
বিংশ
শতাব্দীর প্রথম দিকে হার্লো
শেপলি (1885-1972)
আমেরিকার
মাউন্ট উইলসন মানমন্দির থেকে
গ্লোবুলার ক্লাস্টার বা
বর্তুলাকার তারাগুচ্ছ পর্যবেক্ষণ
করেছিলেন। এদের প্রায় নব্বই
শতাংশকেই আকাশে ধনু রাশিতে
দেখতে পাওয়া যায়। শেপলি বিভিন্ন
পদ্ধতিতে আমাদের থেকে এই
বর্তুলাকার তারাগুচ্ছের
দূরত্ব মাপছিলেন। তিনি দেখলেন
যে এই বর্তুলাকার তারাগুচ্ছগুলি
ছায়াপথের একটি বিন্দুকে
কেন্দ্র করে মোটামুটি প্রতিসাম্য
বজায় রেখে অবস্থান করছে। সেই
বিন্দুটি আমাদের থেকে অনেক
দূরে আকাশের ধনুরাশিতে অবস্থান
করে,
সে
জন্য আমরা অধিকাংশ তারকাগুচ্ছকেই
আকাশের ওই দিকে দেখতে পাই।
এই তারকাগুচ্ছগুলি বিপুলাকার,
এদের
মধ্যে কয়েক হাজার থেকে কয়েক
লক্ষ নক্ষত্র থাকে। তিনি
সিদ্ধান্ত করলেন এই বিশালায়তন
তারকাগুচ্ছরা নিশ্চয় ছায়াপথের
কেন্দ্রকে ঘিরেই অবস্থান
করে,
অর্থাৎ
সেটি আমাদের থেকে অনেক দূরে
আছে। নব্য কোপার্নিকাসবাদ
সৌরজগৎকেও ছায়াপথের বাইরের
দিকে পাঠিয়ে দিল।
তাহলে
হার্শেলের পর্যবেক্ষণের কী
হবে? তিনি
যে দেখেছিলেন আকাশগঙ্গা
দৈর্ঘ্য বরাবর সব দিকে সমান
উজ্জ্বল!
হার্শেলই
সেই সময় আরো একটা আবিষ্কার
করেছিলেন যা এই সমস্যার সমাধান
করবে। তিনি আমাদের ছায়াপথে
অনেকগুলি অন্ধকার অঞ্চল খুঁজে
পেয়েছিলেন,
অর্থাৎ
যেখানে কোনো নক্ষত্র দেখা
যাচ্ছে না। এখন আমরা জানি
এগুলি হল ধুলিকণা দিয়ে তৈরি
মহাজাগতিক মেঘ,
যা
পিছনের আলোকে আটকে দেয়। ছায়াপথের
মধ্যের তলে ধূলিকণার ঘনত্ব
অনেক বেশি,
তা
দিয়ে তৈরি মেঘ কেন্দ্রকে
আমাদের থেকে ঢেকে রেখেছে।
|
আমাদের
ছায়াপথ
|
শেপলির
গবেষণা থেকে আমরা ছায়াপথের
একটা মডেল পাই। একটা চাকতি
যার মাঝখানটা ফুলে উঠে গোলকের
আকার নিয়েছে। আধুনিক গবেষণা
অনুসারে ওই চাকতির ব্যাস হল
এক লক্ষ কুড়ি হাজার থেকে দুই
লক্ষ আলোকবর্ষের মতো,
মাঝের
গোলকটার ব্যাস ষোল হাজার
আলোকবর্ষ। সৌরজগত থেকে ছায়াপথের
কেন্দ্র প্রায় সাতাশ হাজার
আলোকবর্ষ দূরে অবস্থান করে।
বোঝা যাচ্ছে যে ছায়াপথে আমরা
নেহাতই মফস্বলের বাসিন্দা।
শেপলি অবশ্য ঠিক এই মাপগুলো
পাননি,
তাঁর
হিসাবে ছায়াপথের ব্যাস হয়
তিন লক্ষ আলোকবর্ষ। নক্ষত্রের
দূরত্ব নির্ণয়ে তখনো অনেকটা
ত্রুটি ছিল।
শেপলি
মনে করতেন আমাদের নক্ষত্রজগৎ
একক, অর্থাৎ
যে সমস্ত জ্যোতিষ্ক দেখি সবই
তার মধ্যে পড়ে। তার বাইরে
অনন্ত শূন্যস্থান ছাড়া কিছুই
নেই। কিন্তু ভিন্ন মতও ছিল।
অনেক জ্যোতির্বিদ মনে করতেন
যে আমাদের নক্ষত্রজগতের মতো
আরো অনেক নক্ষত্রজগৎ আছে।
আমেরিকার ন্যাশনাল অ্যাকাদেমি
অফ সায়েন্স এই দুই পরস্পর
বিরোধী তত্ত্ব নিয়ে বিতর্কের
জন্য সভার আয়োজন করেছিল,
সেটি
জ্যোতির্বিদ্যার মহাবিতর্ক
বলে পরিচিত। শেপলি নিজে
এসেছিলেন,
তাঁর
বিপক্ষের প্রতিনিধিত্ব করেন
জ্যোতির্বিজ্ঞানী হেবার
কার্টিস (1872-1942)।
দু'জনের
বক্তব্যের কেন্দ্রে ছিল M31
নীহারিকা,
যার
অন্য নাম অ্যান্ড্রোমিডা।
সেটি একটি সর্পিলাকার (spiral)
নীহারিকা।
আকাশে
কিছু বস্তুকে নীহারিকা বলে
চিহ্নিত করা হত,
দূরবিনে
তাদের দেখতে হত উজ্জ্বল মেঘের
মতো। খালি চোখেও কয়েকটি
নীহারিকা দেখা যায়,
টলেমি
ও টাইকো ব্রাহে নীহারিকার
উল্লেখ করেছেন। হার্শেল ঠিক
করেছিলেন তিনি তাদের প্রকৃতি
নির্ধারণ করবেন। তাঁর বানানো
দূরবিন ছিল সে যুগের সব থেকে
শক্তিশালী,
তা
দিয়ে তিনি আড়াই হাজার নীহারিকা
পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি দেখলেন
যে অনেকগুলি নীহারিকাই আসলে
নক্ষত্রের সমষ্টি। কিছু
নীহারিকা অবশ্য তাঁর কাছে
মেঘের মতোই রয়ে গিয়েছিল।
প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন যে সব
নীহারিকাই আসলে নক্ষত্রমণ্ডলী,
অনেক
দূরে আছে বলে তাদের তারাদের
আলাদা করে দেখা যাচ্ছে না।
সেই অনুমানই ঠিক ছিল কিন্তু
পরে হার্শেল সেই মত থেকে সরে
আসেন।
হার্শেলের
দূরবিনকে ছাড়িয়ে যায় আয়ারল্যান্ডের
রসে নামের জমিদারির আর্ল বা
জমিদার উইলিয়াম পার্সন্সের
(1800-1867)
লেভিয়াথান,
বাংলায়
বলা যায় মহাকায়। অ্যান্ড্রোমিডা
নীহারিকাকে খালি চোখেই দেখা
যায়,
হার্শেলের
দূরবিন তাকে মেঘের মতো দেখিয়েছিল।
1850 সালে
লেভিয়াথান দিয়ে দেখে পার্সন্স
প্রথম বুঝতে পারেন যে তার আকার
হল সর্পিলাকার। এর পরে
অ্যান্ড্রোমিডার বর্ণালী
বিশ্লেষণ করে বোঝা যায় যে সেটি
হল নক্ষত্রপুঞ্জ,
অর্থাৎ
হার্শেলের প্রথম ধারণাই ঠিক
ছিল। ক্রমে ক্রমে আরো অনেক
সর্পিলাকার নীহারিকা আবিষ্কার
হয়, তবে
তাদের কেউই খালি চোখে দৃশ্যমান
নয়।
অ্যান্ড্রোমিডা
কি আমাদের নক্ষত্রপুঞ্জের
মধ্যে পড়ে —
এই ছিল কার্টিস ও শেপলির সেই
মহাবিতর্কের মূল বিষয়। তবে
এই নিয়ে তর্কের ইতিহাস আরো
প্রাচীন। নিউটন বা দেকার্তের
পরে এ বিষয়ে নাম করতে হয় পিয়ের
লুই মোপারটুই-এর
(1698-1759); তিনি
1745 সালেই
বলেছিলেন যে অ্যান্ড্রোমিডা
আমাদের ছায়াপথ থেকে দূরের এক
নক্ষত্রপুঞ্জ। তিনি এর নাম
দিয়েছিলেন দ্বীপ ব্রহ্মাণ্ড
(Island Universe)।
সেই নামটা বহুদিন পর্যন্ত
ব্যবহার হয়েছিল,
এখন
আমরা তাকে বলি গ্যালাক্সি।
দশ বছর পরে বিখ্যাত জার্মান
দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট
(1724-1804)
বলেছিলেন
আমাদের ছায়াপথের মতো অগুন্তি
নক্ষত্রপুঞ্জ বা গ্যালাক্সি
বিশ্বে ছড়িয়ে আছে।
মহাবিতর্কে
প্রথম বলতে উঠেছিলেন শেপলি।
আমাদের নক্ষত্রকুঞ্জের মাপ
তিনি ধরেন তিন লক্ষ আলোকবর্ষ,
কার্টিস
এর দশ ভাগের এক ভাগ মানতে তৈরি
ছিলেন। একই সঙ্গে কার্টিস
অ্যান্ড্রোমিডা বা অন্য সর্পিল
নীহারিকার দূরত্ব অন্তত পাঁচ
থেকে দশ লক্ষ আলোকবর্ষ বলে
অনুমান করেছেন। শেপলি বলেন
যে আমাদের গ্যালাক্সির অনেক
নক্ষত্রই আমাদের থেকে তিরিশ
হাজার আলোকবর্ষের থেকে অনেক
বেশি দূরত্বে আছে,
এবং
তাঁর পর্যবেক্ষণ থেকে এটা
প্রতিষ্ঠিত যে সূর্য নিজেই
গ্যালাক্সির কেন্দ্র থেকে
পঞ্চাশ হাজার আলোকবর্ষ দূরে
অবস্থান করছে। অ্যান্ড্রোমিডা
নক্ষত্রপুঞ্জে সম্প্রতি একটি
নোভা বা হঠাৎ অতি উজ্জ্বল নতুন
তারা পর্যবেক্ষণ করা গেছে।এই
নোভাটি দেখা গিয়েছিল 1885
সালে,
এটি
এস অ্যান্ড্রোমিডা (S
Andromeda) নোভা
বলে পরিচিত। সেটি যদি আমাদের থেকে সত্যিই
পাঁচ লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে থাকে
তাহলে তার ঔজ্জ্বল্য আমাদের
নক্ষত্রজগতের পর্যবেক্ষণ
করা অন্য সমস্ত নোভার থেকে
অনেক লক্ষগুণ বেশি হবে। তিনি
আরো বলেন যে কার্টিসের হিসাব
ধরলে সর্পিল নীহারিকাদের
দৈর্ঘ্য প্রস্থ বিশাল,
আমাদের
নক্ষত্রজগতের তুলনীয় বা তার
থেকেও অনেক বড়। জ্যোতির্বিদ
ভ্যান মানেন (1884-1946)
তাদের
ঘূর্ণন লক্ষ করেছেন। হিসাব
করলে দেখা যাবে যে সেক্ষেত্রে
বাইরের দিকের নক্ষত্রগুলির
বেগ অত্যন্ত বেশি হতে হয়।
কার্টিস
বলেন যে আমাদের সৌরজগৎ গ্যালাক্সির
কেন্দ্রের কাছেই অবস্থান
করছে, এ
বিষয়ে অনেক বিজ্ঞানীই একমত।
তাঁর হিসাবে আমাদের গ্যালাক্সির
আয়তন ছিল অনেক ছোট,
তা
ব্যাস তিরিশ হাজার আলোকবর্ষের
বেশি নয় বলেই তিনি বিশ্বাস
করতেন। আমাদের ছায়াপথে অন্যান্য
নোভার থেকে তাদের গড় ঔজ্জ্বল্য
ছিল অনেকগুণ কম। তিনি অনুমান
করেছিলেন যে নিশ্চয় সেগুলি
অনেক দূরে আছে,
সে
জন্যই তাদের এত ম্লান দেখাচ্ছে।
অ্যান্ড্রোমিডার দূরত্ব
অন্তত পাঁচ লক্ষ আলোকবর্ষ
ধরে নিলে গড় ঔজ্জ্বল্যের এই
পার্থক্য আর থাকবে না। তাঁর
দ্বিতীয় যুক্তি ছিল যে
অ্যান্ড্রোমিডা যদি অনেক
কাছে হয়,
তাহলে
তার আয়তন অনেক ছোট। গত কয়েকবছরের
মধ্যে অ্যান্ড্রোমিডা
নক্ষত্রপুঞ্জে ষোলটি নোভা
দেখা গেছে। অথচ তার আগের তিন
শতাব্দীতে আমাদের ছায়াপথে
মাত্র পঁয়তিরিশটি নোভা দেখা
গেছে। ওই অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র
নক্ষত্রপুঞ্জের মধ্যে অল্প
সময়ের মধ্যে এতগুলি নোভার
সম্ভাবনা অত্যন্ত কম। তিনি
বলেন যে আকাশে সর্পিল নীহারিকাদের
বিন্যাসের সঙ্গে যে সমস্ত
নক্ষত্র নিশ্চিত ভাবে আমাদের
ছায়াপথের সদস্য তাদের বিন্যাসের
কোনো মিল নেই;
তাদের
বেগও অন্যান্য নক্ষত্রের
বেগের কয়েকগুণ;
তারা
নিশ্চয় ছায়াপথের বাইরের বস্তু।
শেপলি নোভার অত্যন্ত বেশি
ঔজ্জ্বল্যের কথা বলছেন,
কিন্তু
আমাদের কাছের নোভাদের ঔজ্জ্বল্যও
অনেকরকম হয়;
কাজেই
সে বিষয়ে শেষ কথা বলার সময়
এখনো আসেনি। ভ্যান মানেনের
পর্যবেক্ষণ ঠিক হলে শেপলির
মতই গ্রাহ্য হবে,
কিন্তু
সেই পর্যবেক্ষণেই গলদ আছে।
ভ্যান
মানেন বলেছিলেন যে অ্যান্ড্রোমিডার
ঘূর্ণনকাল হল এক লক্ষ বছর।
আধুনিক হিসাব বলছে যে সেটি
হল পঁচিশ কোটি বছর। কীভাবে
ভ্যান মানেন এতখানি ভুল
করেছিলেন তা নিয়েও গবেষণা
হয়েছে।
বিতর্কে সেই
সময় কারো জয়পরাজয় হয়নি,
কারণ
সমস্যার মূলে ছিল অ্যান্ড্রোমিডা
নক্ষত্রপুঞ্জের দূরত্ব যা
সে সময় ছিল নিছকই অনুমান।
কয়েক বছরের মধ্যে পর্যবেক্ষণ
থেকে সেই দূরত্ব নির্ণয় করেন
বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী
এডুইন হাবল। 1923
সালের
অক্টোবর মাসের শুরুতে তিনি
হুকার টেলিস্কোপ ব্যবহার করে
অ্যান্ড্রোমিডা নীহারিকাতে
এক নোভার সন্ধান পান ও ছবি
তোলেন। 6
অক্টোবর
তারিখের সেই ফটোর পিছনে লিখে
দিলেন ‘N’
অর্থাৎ
নোভা। পরের দিন তিনি পুরানো
ফটোগ্রাফ থেকে ওই অঞ্চলের
ছবি খুঁজে বার করলেন। তিনি
অবাক হয়ে দেখলেন যে নক্ষত্রটি
আদৌ নতুন তারা নয়,
কারণ
নোভারা কখনো দীর্ঘদিন দৃশ্যমান
থাকে না। সেটি আসলে সেফিড
ভেরিয়েবল নক্ষত্র। হেনরিয়েটা
লেভিটের (1868-1921)
উদ্ভাবিত
পদ্ধতি অবলম্বন করে তিনি
দেখলেন তার দূরত্ব হবে দশ লক্ষ
আলোকবর্ষের মতো,
অর্থাৎ
কার্টিসের হিসাবেরও দু'গুণ।
এত দূরের নক্ষত্র কখনোই শেপলির
নির্ধারণ করা গ্যালাক্সির
মধ্যে থাকতে পারে না। অর্থাৎ
অ্যান্ড্রোমিডা নিঃসন্দেহে
পৃথক এক গ্যালাক্সি। পেন বার
করে তিনি ফটোর পিছনে নিজের
হাতে লেখা ‘N’
কেটে
‘VAR!’ লিখে
দিলেন। সেই H335H
অর্থাৎ
হুকার টেলিস্কোপে হাবলের
তোলা 335
নম্বর
ছবিটি হল মাউন্ট উইলসনের সব
থেকে বিখ্যাত ফটোগ্রাফ। শেপলি
ছিলেন হাবলের দূরত্ব নির্ণয়
পদ্ধতির তীব্র সমালোচক,
হাবল
তাঁকে সমস্ত তথ্য এক করে এক
চিঠি লেখেন। সেই চিঠি পড়ে
শেপলি এক সহকর্মীকে বলেন,
“এই
সেই চিঠি যে আমার ব্রহ্মাণ্ডকে
ধ্বংস করে দিল।” তিনি নিজের
মত পরিবর্তন করে গ্যালাক্সি
পর্যবেক্ষণে মন দেন এবং তাদের
বিন্যাস সম্পর্কে বেশ কিছু
গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করেন।
শেপলি
কার্টিস বিতর্কে অন্তিম জয়
কার্টিসের হলেও শেপলিও কিছু
বিষয়ে জিতেছেন। আমাদের
গ্যালাক্সির আয়তন কার্টিসের
অনুমানের থেকে অনেক বড়,
তা
প্রায় শেপলির মাপের কাছে।
সূর্য সত্যিই গ্যালাক্সির
কেন্দ্র থেকে অনেকটা দূরে
আছে। সর্পিল নীহারিকাদের
ঘূর্ণন বিষয়ে ভ্যান মানেনের
পর্যবেক্ষণ স্পষ্টতই ভুল
ছিল।
প্রশ্ন ওঠে যে শেপলি যে বলেছিলেন
অ্যান্ড্রোমিডা অনেক দূরে
হলে নোভার ঔজ্জ্বল্য অনেক
বেশি হতে হবে,
তার
ব্যাখ্যা কী?
আমরা
এখন জানি যে এস অ্যান্ড্রোমিডা
ছিল সুপারনোভা,
যা
নোভার থেকে অনেক বেশি উজ্জ্বল।
সুপারনোভা নিয়ে আলোচনা পরে
আসবে। সুপারনোভা খুব বিরল
ঘটনা,
আমাদের
ছায়াপথের যে সমস্ত সুপারনোভা
আমরা দেখতে পেয়েছি,
তাদের
মধ্যে সর্ব শেষটি হয়েছিল
দূরবিন আবিষ্কারেরও আগে 1604
সালে,
কেপলার
সেটির পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা
লিকেহ্রেখেছিলেন বলে সেটি
কেপলারের সুপারনোভা বলে
পরিচিত। তাই শেপলি যখন অন্য
গ্যালাক্সির নোভার ঔজ্জ্বল্য
এত বেশি হতে পারেনা বলে যুক্তি
দিয়েছিলেন,
তাঁকে
দোষ দেওয়া যায় না। কেপলারের
সুপারনোভা এতই উজ্জ্বল ছিল
যে দিনের আলোতেও দেখা যেত।
অ্যান্ড্রোমিডার
দূরত্ব কিন্তু আসলে হাবল যা
মেপেছিলেন তারও অনেক বেশি।
হাবল গ্যালাক্সিদের যে দূরত্ব
নির্ণয় করেছিলেন,
তা
ব্যবহার করে দেখা যাচ্ছিল যে
আমাদের ছায়াপথ বাকি সমস্ত
গ্যালাক্সির থেকে অনেক বড়।আমরা
দেখেছি কিভাবে কোপার্নিকাসের
সময় থেকে শুরু করে মানুষ
সৃষ্টির কেন্দ্রীয় অবস্থান
থেকে বিচ্যুত হয়েছে। তাই যে
পর্যবেক্ষণ দেখায় সৃষ্টিতে
আমাদের কোনো বিশেষ অবস্থান
আছে বিজ্ঞানীরা তাকে সন্দেহের
চোখে দেখেন। 1940
ও
1950-এর
দশকে
উনিশশো চল্লিশ ও পঞ্চাশের
দশকে বিজ্ঞানী ওয়াল্টার বাডে
(1893-1960)
দেখান
যে
গ্যালাক্সিদের দূরত্ব আসলে
হাবলের মাপের তিনগুণ,
যেমন
অ্যান্ড্রোমিডার দূরত্ব হল
মোটামুটি পঁচিশ লক্ষ আলোকবর্ষ।
এই মাপের সঙ্গে সঙ্গে
অ্যান্ড্রোমিডা সহ সমস্ত
গ্যালাক্সি দৈর্ঘ্য প্রস্থের
মাপও তিনগুণ বেড়ে গেল। এখন
আমরা জানি যে আকাশগঙ্গা হল
এক মাঝারি মাপের গ্যালাক্সি।
এডিংটনের অনুমান সত্যি প্রমাণিত
হয়েছে।
আমাদের
ছায়াপথের মডেল থেকে বোঝা গেছে
যে সেটি একটি সর্পিলাকার
গ্যালাক্সি,
সে
নিজের চারদিকে একবার পাক খেতে
সময় নেয় একুশ কোটি বছরের মতো।
গ্যালাক্সিরা সাধারণত দল
বেঁধে থাকে,
আমাদের
গ্যালাক্সি যে দলের সদস্য
তার নাম স্থানীয় গুচ্ছ বা
লোকাল গ্রুপ। এই গ্রুপের সঠিক
সদস্য সংখ্যা জানা নেই,
কারণ
ধূলিকণার জন্য আকাশগঙ্গার
মাঝের তল বরাবর আমাদের দৃষ্টি
প্রসারিত হয় না;
তবে
তা আশির কম নয়। এই স্থানীয়
গুচ্ছ আবার ভার্গো সুপারক্লাস্টার
বা কন্যা মহাগুচ্ছের সদস্য,
ওই
মহাগুচ্ছে অন্তত এই রকম একশোটি
গ্যালাক্সি গ্রুপ আছে। মহাবিশ্বে
অন্তত এক কোটি মহাগুচ্ছ আছে।
পাঁচশো বছর আগেও আমরা বিশ্বাস
করতাম পৃথিবীর হল বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের
কেন্দ্র,
সেখান
থেকে কতটা পথ আমরা অতিক্রম
করেছি!
প্রকাশঃ সন্ধিৎসা, নভেম্বর ২০২২
No comments:
Post a Comment