নক্ষত্রের মৃত্যু
ও দুই বিজ্ঞানী
গৌতম গঙ্গোপাধ্যায়
(জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানী
চন্দ্রশেখরের জন্মশতবর্ষে ছোটোদের পরিচালিত একটি পত্রিকায় এই লেখাটা প্রকাশিত হয়েছিল।
সামান্য পরিবর্তনের পর লেখাটি এখানে তুলে দিলাম।)
তোমরা সবাই নিশ্চয়
জেনে গেছে যে ২০০৯ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত এক বিজ্ঞানী,
ভেঙ্কটরমন রামকৃষ্ণণ। এও নিশ্চয় জানো যে কোষের মধ্যে যে রাইবোজোম থাকে, তার গঠন আবিষ্কারের
জন্য তাঁকে এই সম্মান দেওয়া হয়েছে। আমি আজ অন্য এক বিজ্ঞানীর আবিষ্কার নিয়ে একটা
গল্প তোমাদের শোনাতে বসেছি। তিনিও জন্মসূত্রে ভারতীয়, তিনিও নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন।
এবছর তার জন্মের একশো বছর পূর্ণ হল। অনেকেই নিশ্চয় নামটা ধরে ফেলেছ। হ্যাঁ, ঠিকই বলেছ,
আমি সুব্রহ্মনিয়ান চন্দ্রশেখরের নোবেল জয়ের কথাই তোমাদের আজ বলব। সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানীমহল
তাঁকে চন্দ্র নামে চেনে।
চন্দ্রশেখরের জন্ম
হয়েছিল অবিভক্ত ভারতের লাহোরে ১৯১০ সালের ১৯শে অক্টোবর। তাঁর বাবা চন্দ্রশেখর সুব্রহ্মনিয়া
আয়ার তখন সেখানে রেল দপ্তরে চাকরি করতেন। মা সীতালক্ষ্মী বালাকৃষ্ণ পড়াশোনায় খুব
ভালো ছিলেন যদিও স্কুলে প্রথাগত পড়াশোনার সুযোগ তাঁর বিশেষ হয়নি। নিজের চেষ্টাতে
সারাজীবন তিনি লেখাপড়া চালিয়ে যান। কিন্তু তাঁদের পরিবারের যে সদস্যের কথা আমরা সকলেই
জানি, তিনি হলেন বাবার ছোটো ভাই। তার নাম চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রমন, আজ পর্যন্ত এক মাত্র
ভারতীয় নাগরিক যিনি বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।
চন্দ্রশেখরের পড়াশোনা
মাদ্রাজের প্রেসিডেন্সি কলেজে। তাঁর শিক্ষকেরা সবাই বুঝতে পেরেছিলেন যে এক বিরল প্রতিভার
তাঁরা সম্মুখীন। কাকা রমন তার কলকাতার গবেষণাগারে কাজ করার সুযোগ তাঁকে দিয়েছিলেন।
চন্দ্রশেখরের বয়স তখন মাত্র আঠারো । তবে অচিরেই বহু যন্ত্রপাতি ভাঙার পরে সবাই বুঝলেন
যে পরীক্ষামূলক বিজ্ঞান তাঁর বিষয় হতে পারে না। কিন্তু এই সময়ের এক যোগাযোগে চন্দ্রশেখরের
ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল।
![]() |
সুব্রহ্মনিয়ান চন্দ্রশেখর (অক্টোবর ১৯, ১৯১০ - আগস্ট ২১, ১৯৯৫) |
রমনের ঘরে তাঁর হাতে
এসেছিল জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞান অর্থাৎ Astrophysics সংক্রান্ত একটি বই The Internal
Constitution of the Stars। নক্ষত্রদের অভ্যন্তরীণ গঠন নিয়ে বইটি লেখেন আর্থার স্ট্যানলি
এডিংটন। বইটি রুদ্ধশ্বাসে শেষ করেন চন্দ্রশেখর। তখন থেকেই এডিংটন তাঁর কাছে আদর্শস্বরূপ।
তোমরা দেখবে যে শেষ পর্যন্ত কিন্তু এডিংটনকে এত শ্রদ্ধার ফল চন্দ্রের পক্ষে ভালো হয়নি।
সে বছরই মাদ্রাজে
এসেছিলেন এক বিখ্যাত বিজ্ঞানী। পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র মাত্রেই তাঁর নাম জানে, আর্নল্ড
সমারফেল্ড। তিনিও আঠারো বছরের এই ছাত্রের বিজ্ঞানে দখল দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন এবং
তাঁকে ভবিষ্যৎ গবেষণার বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছিলেন। ফলত সেই বছরই; অর্থাৎ ১৯২৮ সালে
চন্দ্রের প্রথম গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছিল। এডিংটনের তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে তারাদের
ভিতরে পরমাণু, ইলেকট্রন ও আলো নিজেদের মধ্যে কেমনভাবে ক্রিয়া করে সে বিষয়ে তিনি গবেষণাটি
করেছিলেন।
তরুণ চন্দ্রশেখর
এখন অনেক বেশী সাহসী । তিনি ইংল্যান্ডের রয়্যাল সোসাইটির সদস্য র্যালফ ফাউলারকে তাঁর
পরবর্তী গবেষণাটি লিখে পাঠান। উত্তর দিয়েছিলেন ফাউলার। তাঁর মতামত অনুযায়ী সামান্য
পরিবর্তন করে সেটি Proceedings of the Royal Society-তে ছাপা হয়। এসময় মাদ্রাজে এসেছিলেন
আর এক দিকপাল পদার্থবিদ ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ। চন্দ্রশেখর জানতেন আটাশ বছর বয়সী এই
বিজ্ঞানী আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করেছেন। মাত্র চব্বিশ বছর বয়সে তিনি
যে আবিষ্কার করেছিলেন, তার জন্য একত্রিশ বছর বয়সে তিনি নোবেল পুরস্কার পান। তোমরা
নিশ্চয় ভাবছ যে মাত্র চব্বিশ বছর বয়সে এত বড়ো কাজ করা সম্ভব? আমাদের গল্পের শেষ
পর্যন্ত অপেক্ষা করো । যা হোক, হাইজেনবার্গের সঙ্গে চন্দ্রশেখরের বন্ধুত্ব হয়েছিল।
মেঘনাদ সাহাও এসময় চন্দ্রশেখরের গবেষণার প্রশংসা করেন।
চন্দ্রশেখর স্থির
করলেন ইংল্যান্ডে যাবেন। পড়তে যাবেন কেমব্রিজে। সেখানে আছেন ফাউলার। আর আছেন তাঁর
আদর্শ এডিংটন। ১৯৩০ সালের ৩১ শে জুলাই বোম্বাই বন্দর থেকে তাঁর জাহাজ ইংল্যান্ডে রওনা
হল। চন্দ্রশেখরের বয়স কুড়ি পূর্ণ হতে তখনো কয়েক মাস বাকী।
শান্ত আরব সাগরের
বুক চিরে জাহাজ এগিয়ে চলেছে। ডেকে বসে এক তরুণ পদার্থবিজ্ঞানের বইতে নিমগ্ন। কী ভাবছেন
তিনি? তাঁর মনে ঘুরে বেড়াচ্ছে এডিংটনের বইতে লেখা নক্ষত্রদের মৃত্যুর বিবরণ। সূর্য
কেন নিজের মাধ্যাকর্ষণের টানে আরো ছোটো হয়ে যাচ্ছেনা? এডিংটন দেখিয়েছেন যে সূর্যের
বিকিরণের চাপ ও উত্তপ্ত গ্যাসের চাপ মাধ্যাকর্ষণের বিপরীতে কাজ করে। তারাই সূর্যকে
তার বর্তমান আকারে ধরে রাখে । কিন্তু যখন কোনো তারকার জ্বালানি ফুরিয়ে যায় তখন কী
হয়? তখন তো এই দুই বল আর মাধ্যাকর্ষণের সমান থাকবে না। এডিংটন বললেন তারকা নিজের মাধ্যাকর্ষণের
টানে আস্তে আস্তে ছোটো হতে থাকবে । যত ছোটো হবে, স্বাভাবিক ভাবে ততই তার ঘনত্ব বাড়তে
থাকবে । এডিংটনের মতে এক সময় নক্ষত্রের কেন্দ্র এতটাই ঘন হয়ে যাবে যে তাকে মাধ্যাকর্ষণ
আর চাপ দিয়ে ছোটো করতে পারবে না।
সত্যিই সে রকম তারার
সন্ধান পাওয়া গেল। আমরা সবাই রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা লুব্ধক বা সিরিয়াসকে
চিনি। খালি চোখে দেখা যায় না এমন আর একটা তারা লুব্ধকের খুব কাছে আছে। তার নাম সিরিয়াস
বি। দেখা গেল এই দ্বিতীয় তারাটির ভর সূর্যের প্রায় সমান, কিন্তু তা আয়তনে পৃথিবীর
থেকে সামান্য বড়ো। এরকম আরো তারকার খাঁজ মিলল। সহজ অঙ্ক কষে দেখা গেল এদের এক ঘন সেন্টিমিটার,
মানে বড়ো চামচের এক চামচ, পদার্থের ভর হবে একশো কিলোগ্রাম। তারার কেন্দ্রের এই বিশাল
ঘনত্বই মাধ্যাকর্ষণকে প্রতিহত করে। আয়তনে
ছোটো ও সাদা রঙের বলে এধরনের নক্ষত্রদের নাম দেয়া হল শ্বেত বামন। এডিংটনের সহকর্মী
ফাউলার দেখালেন যে নতুন আবিষ্কৃত কোয়ান্টাম তন্ত্র প্রয়োগ করলে দেখা যায় তারাদের
ঘনত্ব একটা নির্দিষ্ট মানের চেয়ে বেশী হতে পারে না। পদার্থের অতি ঘন অবস্থায় ইলেকট্রনেরা
যে চাপ তৈরি হয়, তা মাধ্যাকর্ষণকে প্রতিহত করে।
যদিও ফাউলারের তত্ত্ব
মাত্র দু বছর আগে প্রকাশিত হয়েছিল, তরুণ চন্দ্রশেখর এই সমস্ত বিষয়ে পরিচিত ছিলেন।
জাহাজে যেতে যেতে তিনি ভাবলেন যে ফাউলার তো ধরে নিয়েছেন ইলেকট্রনরা নিউটনের গতিসূত্র মেনে চলে । কিন্তু আমরা
জানি যে যদি কোনো কণা আলোর বেগের কাছাকাছি বেগে চলে, তাহলে তাদের জন্য নিউটনের বলবিদ্যা
কাজ করে না। আইনস্টাইন আবিষ্কৃত বিশেষ আপেক্ষিকতাবাদ
বা Special Theory of Relativity-ই একমাত্র তার গতিবিধি ব্যাখ্যা করতে পারে। চন্দ্রশেখর
বুঝতে পারলেন যে নক্ষত্র যখন মাধ্যাকর্ষণের টানে ছোটো হয়ে আসে, তখন তার ভিতরের ইলেকট্রনের
বেগ খুব বেড়ে যায়। তার ফলে ফাউলারের তত্ত্বের পরিবর্তন হতে বাধ্য । জাহাজেই তিনি
প্রাথমিক অঙ্কটা কষে ফেললেন। দেখলেন যে শ্বেত বামনের ভর সূর্যের থেকে ১.৪ গুণের বেশী
হওয়া সম্ভব নয়। তার থেকে বেশী ভরের তারাদের মাধ্যাকর্ষণ আরো বেশী, তাই ইলেকট্রনের
চাপ মাধ্যাকর্ষণকে প্রতিহত করতে পারবে না। তারাটা ছোটো হতে হতে একটা বিন্দুতে পর্যবসিত
হবে যার ঘনত্ব অসীম । আমরা যাকে আজ কৃষ্ণ গহ্বর বা Black Hole বলি, তাই হল ভারী তারাদের
অন্তিম পরিণতি । এই কাজের সময় চন্দ্রশেখরের বয়স কুড়িও পূর্ণ হয়নি।
![]() |
আর্থার এডিংটন |
কেমব্রিজে পৌঁছে
চন্দ্রশেখর তাঁর তত্ত্ব ফাউলার, এডিংটন প্রমুখদের কাছে ব্যাখ্যা করেন। পরের দু বছরে
তিনি তাকে আরো বিকশিত করেন। ফাউলারের অধীনে তিনি গবেষণা করেছিলেন। এডিংটনও তাঁর সঙ্গে
যোগাযোগ রাখতেন, তার এ বিষয়ে গবেষণার খবর নিতেন। এডিংটনকেই তখন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ
জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানী বলে সবাই মেনে নিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে আলোচনার সুযোগ পেয়ে চন্দ্রশেখর
নিজেও খুব খুশী ছিলেন। হঠাৎই হল বিনা মেঘে বজ্রপাত।
১৯৩৫ সালের ১১ই জানুয়ারি
রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনেমিকাল সোসাইটির এক সভায় চন্দ্রশেখর তাঁর তন্ত্র ব্যাখ্যা করেন।
তাঁর ঠিক পরে বলতে ওঠেন এডিংটন। তিনি কোনো বৈজ্ঞানিক যুক্তি ছাড়াই চন্দ্রশেখরের গবেষণাকে
তীব্রভাবে আক্রমণ করেন। চন্দ্রশেখর হতচকিত হয়ে যান। তিনি অনেকবার এডিংটনের সঙ্গে তার
গবেষণা নিয়ে আলোচনা করেছেন, কখনো তো এডিংটন তাঁর কাজকে ভুল বলেন নি। হঠাৎ করে প্রকাশ্যে
আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের এক সভায় এরকম ব্যক্তিগত আক্রমণ তাঁকে স্তম্ভিত করে দেয়।
চন্দ্রশেখর উঠে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করতে যান, কিন্তু সভাপতি তাঁকে সেই সুযোগ দেন নি।
চন্দ্রশেখর জানতেন
এডিংটন যা বলছেন তা পুরোপুরি ভুল। তিনি আরো অবাক হয়ে যান এই ভেবে যে এডিংটন নিজে আইনস্টাইনের
আপেক্ষিকতাবাদ বিষয়ে প্রথম সারির বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অন্যতম। অন্য কেউ না বুঝুক, তিনি
তো চন্দ্রশেখরের গবেষণার প্রকৃত অর্থ বুঝবেন! এডিংটনের নামডাক তখন এতই বেশী যে কোনো
বিজ্ঞানীই প্রকাশ্যে সে সময় চন্দ্রশেখরকে সমর্থন করলেন না। এর পরেও এডিংটন আরো প্রায়
দশ বছর বেঁচে ছিলেন। কিন্তু কখনোই তিনি নিজের ভুল স্বীকার করেন নি। পরেও বারবার তিনি
চন্দ্রশেখরের তত্ত্বকে আক্রমণ করেছেন। চন্দ্রশেখর অবশ্য তার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন।
আশ্চর্যের বিষয় এই যে ১৯৪৪ সালে যখন চন্দ্রশেখর রয়্যাল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন,
তাঁর নাম প্রস্তাব করেছিলেন এডিংটন। কিন্তু ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেল। চন্দ্রশেখরের
আবিষ্কারের তাৎপর্য বুঝতে বুঝতে আরোপ্রায় তিরিশ বছর গড়িয়ে যায়। অনেক বিজ্ঞানের ঐতিহাসিক
মনে করেন যে এর ফলে জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞান অন্তত দুই দশক পিছিয়ে গেছে।
১৯৩৫ সালের পরে চন্দ্রশেখর
আরো বিভিন্ন 'বিষয়ে গবেষণা করেন। তিনি অবশেষে আমেরিকা চলে যান ও সেখানেই বসবাস করতে
থাকেন। শ্বেত বামনের সর্বোচ্চ ভরকে আমরা আজ চন্দ্রশেখর সীমা বলে নাম দিয়েছি। আমরা
এও জানি যে শ্বেত বামন ও কৃষ্ণগহ্বরের মধ্যে আরো একটা স্তর আছে। যে সমস্ত তারাদের মোটামুটি
তিন গুণের কম, সেগুলো জ্বালানি ফুরিয়ে গেলে নিউট্রন তারাতে রূপান্তরিত হয়। চন্দ্রশেখর
যখন গবেষণা করেছিলেন, তখন নিউট্রন আবিষ্কার হয়নি, তাই তীর পক্ষে সে সময় তাকে হিসাবে
ধরা সম্ভব ছিল না। অবশেষে ১৯৮৩ সালে তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। উনিশ বছরের এক
তরুণ জাহাজের ডেকে বসে যা ভেবেছিলেন, সেটাকেই নোবেল করিটি সেই তরুণের সবচেয়ে বড়ো
কৃতিত্ব মনে করেছিলেন। হবেই তো, নক্ষত্রের শেষ পরিণতি কী হবে, তা আমাদের বুঝিয়েছিলেন
চন্দ্র। তার চেয়ে বড়ো কাজ আর কী খুব বেশী হবে?
১৯৯৫ সালে তাঁর মৃত্যু
হয়। জীবনের প্রায় শেষ দিন পর্যন্ত তিনি পৃথিবীর প্রথম সারির বিজ্ঞানীদের একজন বলে
পরিচিত ছিলেন। ১৯৯৯ সালে মহাকাশে উৎক্ষিপ্ত তাঁর নামাঙ্কিত চন্দ্র এক্স-রে অবজারভেটরি
আজও মহাকাশ থেকে নানা খবর আমাদের কাছে পাঠাচ্ছে।
কেন এডিংটন এভাবে
চন্দ্রশেখরকে আক্রমণ করেছিলেন তা আজও আমরা ভালোভাবে বুঝতে পারিনি। নানা লোকে নানা মত
দিয়েছেন। পরাধীন ভারতবাসীর কৃতিত্ব কি তাঁর সহ্য হচ্ছিল না? কেমব্রিজের আর এক অধ্যাপক
হার্ডি অঙ্কের প্রতিভা শ্রীনিবাসন রামানুজনকে কেমন করে সাহায্য করেছিলেন তা আমাদের
সকলের জানা। এডিংটন কিন্তু সেই উদাহরণ দেখাতে পারেন নি। বিজ্ঞানীরাও মানুষ, তাঁদেরও
ভুলভ্রান্তি হয়, ব্যক্তিগত বিশ্বাস অনেক সময় বৈজ্ঞানিক যুক্তিকে ছাড়িয়ে ওঠে। এডিংটন
জ্যোতির্পদার্থবিদ্যাকে পরিণত বিজ্ঞানে রূপান্তরিত করেন। তাঁর এই ব্যবহার বিজ্ঞানের
ইতিহাসে কলঙ্কময় ঘটনাদের অন্যতম। বিজ্ঞানের সৌভাগ্য যে চন্দ্রশেখর নিজের জোরে এ মানসিক
অবস্থা কাটিয়ে ওঠেন এবং আরো দীর্ঘ ষাট বছর বিজ্ঞানকে নানাভাবে সমৃদ্ধ করেন। বিংশ শতাব্দীর
শ্রেষ্ঠ জ্যোতির্পর্দার্থবিজ্ঞানীদের নাম করলে তার নাম কারোর পরে থাকবে না, এমনকি এডিংটনের
পরেও নয়।
প্রকাশ : ফিনিক্স
বৈশাখ ১৪১৭ (২০১১), পরিমার্জিত
No comments:
Post a Comment