Tuesday 26 December 2023

প্রয়াত হলেন এম এস স্বামীনাথন

প্রয়াত হলেন এম এস স্বামীনাথন


    ভারতের সবুজ বিপ্লবের রূপকার বিজ্ঞানী এম এস স্বামীনাথন গত ২৮ সেপ্টেম্বর প্রয়াত হয়েছেন। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৮ বছর। তাঁর জন্ম হয়েছিল বর্তমান তামিলনাড়ুর কুম্ভকোনমে ১৯২৫ সালের ৭ অগস্ট।  ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হওয়ার, কিন্তু ১৯৪৩ সালের বাংলার দুর্ভিক্ষ তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে এয়। এই দুর্ভিক্ষে তিরিশ লক্ষ লোক মারা গিয়েছিল। ভারতের খাদ্য সমস্যা মেটানোর দিশা পাওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি কৃষিবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন।  মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি করার পরে দিল্লির ইন্ডিয়ান এগ্রিকালচারাল রিসার্চ ইন্সটিটিউট (আইএআরআই) থেকে জেনেটিক্স ও উদ্ভিদপ্রজনবিদ্যা নিয়ে এমএসসি করেন। স্বল্পকাল ইউনেস্কো বৃত্তি নিয়ে হল্যান্ডে গবেষণার পরে তিনি কেমব্রিজ থেকে ডক্টরেট করেন। আমেরিকার উইন্সকন্সিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পনেরো মাস গবেষণার পরে সেখানে অধ্যাপনার সুযোগ প্রত্যাখ্যান করে ১৯৫৪ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন। কয়েক মাস পরে তিনি  আইএআরআইতে চাকরি পান।  
    স্বাধীনতার আগেই ভারতে ফলন ছিল জনসংখ্যার অনুপাতে কম। ব্রহ্মদেশ, পুর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাঞ্জাবের মতো উর্বর অঞ্চল ভারত থেকে আলাদা হওয়ার পরে সমস্যা আরো বাড়ে। অন্যদিকে স্বাধীনতার পরে জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি ঘটতে থাকে; কৃষি কোনোভাবেই তার সঙ্গে তাল রেখে উঠতে পারছিল না। ফলে ভারতকে বিদেশ থেকে খাদ্যশস্য আমদানি করতে হত। বয়স্কদের হয়তো আমেরিকার পিএল ৪৮০ গমের কথা মনে আছে, সেই গমের গুণমান ছিল অত্যন্ত খারাপ, এবুং সেই সাহায্যের পরিবর্তে আমেরিকার শর্ত মেনে নিতে হত। স্বামীনাথনের মতো তরুণ বিজ্ঞানীরা এই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটান। মার্কিন কৃষিবিজ্ঞানী নর্মান বোরলাগের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে গবেষণা করে স্বামীনাথন  মেক্সিকোর বামন প্রজাতির গম ও জাপানি গমের মিলন ঘটিয়ে ভারতে চাষের উপযোগী নতুন এক ধরনের গমের জন্ম দেন। পরে এক সাক্ষাৎকারে স্বামীনাথন বলেছিলেন মহেঞ্জোদড়োর যুগ থেকে চারহাজার বছরের ইতিহাসে যে ফলন হত, ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৮ এই চার বছরেই তাকে দ্বিগুণ করা সম্ভব হয়েছিল। চাষীদেরও সেই উচ্চ ফলনশীল শস্য ব্যবহারে সম্মত করার পরে ১৯৬৮ সালে গমের ফলন আগের বছরের তুলনায় তিরিশ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পায়। বোরল্যাগ শুধু ভারত নয়, এশিয়ার অনেক দেশকেই উচ্চফলনশীল শস্য গবেষণাতে সাহায্য করেছিলেন;  সেই অবদানের স্বীকৃতিতে ১৯৭০ সালে তাঁকে নোবেল শান্তি পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়। বোরল্যাগ তার ঠিক আগে স্বামীনাথনকে লিখেছিলেন যে সবুজ বিপ্লবের কৃতিত্ব ভারত সরকারের অফিসারদের, বিজ্ঞানীদের, নানা সংস্থার ও চাষীদের; কিন্তু মেক্সিকোর বামন প্রজাতির গমের গুরুত্ব স্বামীনাথনই বুঝতে পেরেছিলেন। তা না হলে হয়তো এশিয়াতে সবুজ বিপ্লব সম্ভব হতো না। যে কোনো রকম বিপ্লবের মতো সবুজ বিপ্লবেরও নিঃসন্দেহে ভালো ও খারাপ  দুই দিকই আছে, তা নিয়ে আলোচনার পরিসর ভিন্ন। কিন্তু এ কথা অনস্বীকার্য যে ভারতকে খাদ্যে স্বনির্ভর করার পিছনে আছে সবুজ বিপ্লব।
    স্বামীনাথনের সভাপতিত্বে ন্যাশনাল কমিশন অন ফার্মারস শস্যের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যকে উৎপাদন খরচের দেড়গুণ রাখার  সুপারিশ করেছিল। সাম্প্রতিক কৃষক আন্দোলনের এই প্রধান দাবি কেন্দ্রীয় সরকার মেনে নিলেও এখনো রূপায়িত করেনি। তিনি পরিবেশ রক্ষা করে কৃষির জন্য সচেষ্ট ছিলেন। স্বামীনাথন ১৯৭২ থেকে ১৯৮০ ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ এগ্রিকালচারাল রিসার্চের অধিকর্তা ছিলেন। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৮ তিনি ছিলেন ফিলিপাইন্সের ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিসার্চ ইন্সটিটিউটের অধিকর্তা। চিন, ভিয়েতনাম, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, কেনিয়া সহ বহু দেশের কৃষি গবেষণাতে তিনি সাহায্য করেছিলেন।
    ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজের প্রথম প্রাপক স্বামীনাথন, সেই অর্থে গড়ে তুলেছিলেন স্বামীনাথন রিসার্চ ফাউন্ডেশন। আলবার্ট আইনস্টাইন পুরস্কার, ম্যাগসেসে পুরস্কার, পদ্ম বিভূষণ সহ বহু সম্মান তিনি পেয়েছেন। ২০০৭ সাল থেকে তিনি ছ' বছর রাজ্যসভার মনোনীত সদস্য ছিলেন। টাইমস পত্রিকার বিচারে বিংশ শতাব্দীর সব থেকে প্রভাবশালী কুড়ি জন এশীয়ের তালিকাতে তিন ভারতীয়ের একজন ছিলেন স্বামীনাথন, অন্য দুজন  গান্ধী  ও রবীন্দ্রনাথ।

                                        গৌতম গঙ্গোপাধ্যায় 

সৃষ্টির একুশ শতক পত্রিকার নভেম্বর ২০২৩ সংখ্যায় প্রকাশিত

Sunday 10 December 2023

গুপ্তধনের সঙ্কেত

 

গুপ্তধনের সঙ্কেত

গৌতম গঙ্গোপাধ্যায়



পুজোর কটা দিন মাত্র ছুটি, তার প্রথম দিন। সকালে চোখ খুলেছি কি না খুলেছি, বাপ্পার ফোন। ঘুম জড়ানো গলাতে বললাম, “কী হল?”

পুজোতে ঠাকুর দেখার কী প্ল্যান?”

মানে?” মুখ থেকে কথাট বেরিয়ে এলো। বাপ্পা পুজোর প্ল্যান জিজ্ঞাসা করছে! কোনোদিন তাকে কোনো প্যান্ডেলে যেতে দেখিনি। গতবছর সেরা থিমের পুজো করেছিল সবেদাবাগান সার্বজনীন, ওকে হাজার চেষ্টাতেও সেটা দেখতে নিয়ে যেতে পারিনি।

মানে হল, গ্রামের পুজো দেখতে যাবি?”

কোন গ্রাম?”

বলছি বলছি, তার আগে বল যাবি কিনা?”

তুই গ্রামে যাবি পুজো দেখতে? আরো কিছু পিছনে আছে মনে হচ্ছে।”

বাপ্পা সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামাতে ভালোবাসে, নিজেকে বলে প্রবলেম সলভার, পুরানো বাংলা গল্প থেকে কথাটা পেয়েছে।ওর কাছে নানা রহস্য নিয়ে আসে, এমনকি পুলিশও কয়েকবার ওর সাহায্য নিয়েছে।

সেরকম কিছু নয়, আমার বন্ধু শৈলেশদের গ্রামের বাড়িতে দুর্গাপুজো হয়। পুরোনো জমিদারবাড়ির পুজো। ও যেতে বলছে। যাবি তো চল, আমি তোর কথা বলেছি। ”

পুজোতে সত্যিই কোনো প্ল্যান ছিল না, রাজি হয়ে গেলাম। ভোরবেলা বেরিয়ে পড়লাম। শৈলেশ বাপ্পার বাড়ি থেকে আমাদের নিয়ে এসেছিল। আমাদেরই সমবয়সী, ওদের বাড়ি কলকাতা থেকে খুব দূরে নয়, গ্রামের নাম দখিনপুর। শিয়ালদা থেকে ট্রেনে ঘন্টা দেড়েক, স্টেশনে শৈলেশদের বাড়ির পুরানো অ্যাম্বাসাডার গাড়ি আমাদের জন্য দাঁড়িয়ে ছিল।

রাস্তা ভালো নয় কিন্তু,” শৈলেশ কিছুটা অপরাধীর সুরে বলে।

রাস্তা সত্যিই দু’এক জায়গায় ভাঙা, কিন্তু তাতে বিশেষ অসুবিধা হলো না। সারা পথ ধরে চোখ জুড়িয়ে গেল সবুজ গাছগাছালিতে। ঘন্টাখানেক পরে গাড়ি গিয়ে থামল শৈলেশদের বাড়ির সামনে।

পুরানো জমিদারবাড়ি, অনেকটাই ভেঙে পরেছে। তবে সামনের দিকটা মোটামুটি ভালো আছে, বোঝাই যায় যে নিয়মিত মেরামত করা হয়। সেই দিকটাতেই শৈলেশের বাবা মা থাকেন। শৈলেশ কলকাতায় চাকরি করে, ছুটিছাটাতে বাড়ি আসে। শৈলেশের মা বললেন, “তোমরা চান করে নাও, অনেকক্ষণ বেরিয়েছ। খিদে পেয়ে গেছে নিশ্চয়। লুচি ভাজা হচ্ছে।”

আমি কিছু বলার আগেই বাপ্পা একগাল হেসে বলল, “না মাসিমা, রাস্তাতে খেয়েছি।” মাসিমা অবশ্য সৌভাগ্যবশত ওর কথাতে পাত্তা দিলেন না, তাড়াতাড়ি চান করতে বলে গেলেন।

সেদিন ছিল সপ্তমী। ঠাকুরদালানে পুজো হচ্ছে। গ্রামের একটাই পুজো, কাজেই অনেকেই এসেছে। কচিকাঁচারা ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে।

মূর্তি আমাদের বাড়িতেই তৈরি হয়,” শৈলেশ বলল।

জয় বাবা ফেলুনাথ গল্পে পড়েছিলাম,” আমি বললাম।

হ্যাঁ, তবে আমাদের বাড়িতে কোনো মূল্যবান গণেশের মূর্তি নেই। তার বদলে আছে একটা ধাঁধা, যদিও সেটার আদৌ কোনো মানে আছে কিনা জানি না।”

আমি বাপ্পার দিকে তাকালাম, আমার অনুমান মিলে গেছে। বাপ্পা অবশ্য ব্যাপারটাকে খুব একটা গুরুত্ব দিল না, বলল, “সে পরে দেখা যাবে। আগে চল গ্রামটা ঘুরে আসি। যা ব্রেকফাস্ট হয়েছে, হজম করতে হবে।”

ছোট্ট গ্রাম, ঘুরতে বেশি সময় লাগল না। আরো কম লাগত, কিন্তু শৈলেশকে অনেকবার দাঁড়াতে হল। ছোটবেলা এখানেই কেটেছে, কাজেই অনেকেই ওর পরিচিত। সকলেই ডেকে খবর নিচ্ছিল।

দুপুরের খাবারটাও জোরদার হল। তারপরে আমরা তিনজনে একটা ঘরে আশ্রয় নিলাম। আমি একটু দিবানিদ্রার তোড়জোড় করছিলাম, কিন্তু সেই সুযোগ হল না। বাপ্পা বললম “শৈলেশ, এবার ধাঁধাটা শুনি।”

ধাঁধাটা শোনার নয়, দেখার। নিয়ে আসছি।” শৈলেশ ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। একটু পরেই ঘরে ঢুকল, হাতে একটা বেতের পেটি। তার থেকে বার করল একটা সরু লম্বা কাপড়ের টুকরো, অনেকটা ফিতের মতো, কিন্তু বোঝা যাচ্ছে অনেক পুরানো দিনের। বাপ্পার হাতে দিল, আমি উঁকি মেরে দেখলাম তার উপর লম্বা করে উপর নিচে কিছু লেখা আছে। বাংলাতেই লেখা, পুরানো দিনের হরফে, পড়া যাচ্ছে, কিন্তু অক্ষরগুলো পরপর পড়ে কোনো মাথামুণ্ডু বোঝা যাচ্ছে না। বাপ্পা জিজ্ঞাসু চোখে শৈলেশের দিকে তাকাল।

আমাদের বংশে ঠিক কতদিন ধরে এই ফিতেটা আছে আমরা কেউ জানি না। আমাদের এক পূর্বপুরুষ এখানে জঙ্গল কেটে বসত করেছিলেন। একসময় আমরা এখানে অনেক সম্পত্তি করেছিলাম, ফলে ডাকাতের চোখ পড়েছিল। তখন ইংরেজ আমল, এই জায়গাটাও ছিল জঙ্গলের মধ্যে, কাজেই থানাপুলিশ ছিল না। তখন নাকি বেশ কিছু সোনাদানা আমার কোনো পূর্বপুরুষ কোথাও লুকিয়ে রেখেছিলেন, আর এই ফিতেটাতে তার সঙ্কেত লিখে রেখেছিলেন। তাঁর ছিল দুই ছেলে, শোনা যায় তিনি দুজনকে ডেকে একজনের হাতে এই পেটিটা তুলে দিয়েছিলেন। অন্যজনকে যে কী দিয়েছিলেন তা আমরা ঠিক জানি না। কেউ বলে একটা কাগজ যাতে এই ফিতেতে কী লেখা আছে পড়ার উপায় ছিল। কেউ বলে একটা কাঠের মুগুর, যদিও মুগুর কী কাজে লাগবে আমি জানি না। কেউ বলে সোনাদানা যে সিন্দুকে করে লুকিয়েছেন তার চাবি। তিনি নাকি ছেলেদের বলেন যে তিনি সম্পত্তি কোথায় লুকিয়েছেন তা এই ফিতেতে লেখা আছে, কিন্তু সেটা খুঁজে পেতে দুজনকেই লাগবে। যাতে করে একজন না অন্যজনকে ফাঁকি দিতে পারে সে জন্য তিনি এই ব্যবস্থা করেছেন। পরে তিনি কেমনভাবে সেই সংকেত উদ্ধার করতে হবে তা বলে দেবেন।”

এক মুহূর্ত দম নিয়ে শৈলেশ আবার শুরু করে, “সম্ভবত সেই সুযোগ আর আসে নি, হঠাৎই আমার সেই পূর্বপুরুষ মারা যান। তাঁর ছেলেরা সংকেতের অর্থ উদ্ধার করতে পারেনি। তার কিছুদিন পরেই বাড়িতে আগুন লাগে, ফিতেটা উদ্ধার হয়েছিল, কিন্তু অন্য জিনিসটা পাওয়া যায়নি। সেই থেকে এই ফিতেটা যত্ন করে রাখা আছে। গল্পটা পুরুষানুক্রমে আমাদের বাড়িতে চলে আসছে। আমাদের বাড়ির অবস্থা তো দেখছ, কোনো রকমে একটা অংশ মেরামত করা গেছে। আমাদের বংশের এখন অনেক শরিক। এই বাড়িতে অবশ্য আমার বাবা মা, আর এক দূর সম্পর্কের কাকা কাকিমা, এরাই থাকে। তবে পুজোর সময় সবাই আসার চেষ্টা করে, তাই এই ক’টা দিন একটু জমজমাট থাকে। এখন সত্যিই যদি কিছু লুকানো থাকে এবং উদ্ধার করা যায়, তাহলে অনেকের মধ্যে ভাগ হবে। তবু কিছু পেলে হয়তো বাড়িটা আর একটু বাসযোগ্য করা যেতে পারে।”

আমি জিজ্ঞাসা করি, “এমন হতে পারে কি যে এক ভাই অন্যজনকে না জানিয়ে গুপ্তধন উদ্ধার করে নিয়েছে?”

মনে হয় না, শুনেছি দুই ভাইয়ের মধ্যে খুব সদ্ভাব ছিল।”

কিন্তু অন্য ভাইয়ের জিনিসটা না পেলে, অন্তত সেটা কী না জানলে কি সংকেতের মানে উদ্ধার করা যাবে?” আমি হতাশ হয়ে বলি।

বাপ্পা হসতে হাসতে বলল, “আমি জানি অন্য জিনিসটা কী ছিল।”

আমরা দুজন অবাক হয়ে তাকালাম। “কী ছিল?” শৈলেশ বলে।

একটা কাঠের মুগুর।”

কী করে জানলি?” আমি জিজ্ঞাসা করি।

গ্রিসের ইতিহাস থেকে,” বাপ্পার হেঁয়ালিভরা সংক্ষিপ্ত উত্তর। “শৈলেশ, একটা কাগজ পেন দে।”

বাপ্পা ফিতের অক্ষরগুলো পাশাপাশি লিখলো, আমি উঁকি মেরে দেখলাম কাগজে লেখা আছে,

ম ক্রা র অ র ত্র হ পে মি খ তে ক ন্তি _ ট্টা _ _ ই টি ত্ত ন _ _ ম লি ছা প বে কা _ ন হ _ দি ধ্যা কা য়া তি _ _ _ ই স ব হ্নে শী _ ত র _ ত্র ক বে ং সে _ র্ষে য _ ত্ন নি _ রি

নিচে দাগগুলো কী?”

ওগুলো ফাঁকা, মনে হয় দুটো শব্দের মধ্যের অন্তর।”

কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বাপ্পা বলল, “দূর, এর মধ্যে কোনো রহস্য নেই। একেবারে সোজা।”

ওই কাঠের মুগুর না কী, সেটা ছাড়াই পড়া যাবে?” আমি অবাক হয়ে বলি। “আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।”

একটা গল্প বলি। গ্রিসে স্পার্টা বলে একটা শহর ছিল, তারা যুদ্ধের সময় সেনাপতিদের কাছে সংকেত পাঠানোর একটা কায়দা ব্যবহার কত। একটা কাঠের ব্যাটনের গায়ে একটা ফিতে জড়াত, তারপর পাশাপাশি লিখত। এবার ফিতেটা আর ব্যাটনটা আলাদা আলাদা পাঠাত। শত্রুপক্ষের হাতে দুটোই না পড়লে তারা সংকেত উদ্ধার করতে পারবে না।

অবশ্য বেশিদিন এই কায়দা চলেনি। বিপক্ষ যখন বুঝতে পারল, তখন তারা ফিতেটা পেলে নানা সাইজের ব্যাটন ব্যবহার করে পড়ার চেষ্টা করত। একটা না একটা মিলে যেত। এখানেও সেইভাবেই লেখা আছে।”

তাহলে আমি কাঠের নানা মাপের কয়েকটা গোল গোল টুকরো নিয়ে আসি!” শৈলেশ উৎসাহভরে বলল।

তার দরকার হবে না। এমনিই পড়া যাচ্ছে। তোদের বাড়িটার সব থেকে উঁচু জায়গাটার উচ্চতা জানিস?” শৈলেশ মাথা নাড়ে। “ঠিক আছে, অন্য উপায়ও আছে। ছাদে ওঠা যাবে তো? কাল সাড়ে এগারোটার আগে ছাদে যাব। সেখান থেকে সূর্যের অবস্থান দেখে একুশে ডিসেম্বর কোথায় ছায়া পড়বে আন্দাজ করা যাবে।”

একুশে ডিসেম্বর?” আমার অবাক লাগে। “একুশে ডিসেম্বর কেন?”

কাঠের টুকরোটা কী করেছিল? পরপর দুটো অক্ষরের মধ্যে একটা নির্দিষ্ট সংখ্যার অক্ষর ঢুকিয়ে দেয়। এখানে দেখ কতগুলো যুক্তাক্ষর আছে যাদের ব্যবহার খুব বেশি নয়। ধর ‘হ্নে’ এই যুক্তাক্ষরটা। তোরা কী কী শব্দ জানিস যেখানে এটা ব্যবহার হয়?”

অহ্নে, সায়াহ্নে,” আমি বলি। শৈলেশ যোগ করল “মধ্যাহ্নে।”

ঠিক। তাহলে দেখ ‘হ্নে’-র আগে বসতে পারে ‘অ’, নয়তো ‘য়া’, নয়তো ‘ধ্যা’। এখানে এই তিনটে অক্ষরই একবার করে আছে। ‘অ’ আর ‘হ্নে’-র মাঝে আছে তেতাল্লিশটা অক্ষর, মানে শূন্যস্থানগুলোকে ধরে। তাহলে প্রতি চুয়াল্লিশ নম্বর অক্ষর পড়তে হবে। তবে এটা উত্তর হতে পারে না, কারণ ফিতেতে আছে মোট পঁয়ষট্টিটা অক্ষর; তাহলে কাঠের টুকরোটা এত মোটা হত যে ফিতেটা দুবার পাকও খেত না। তাতে করে কোনো কথা লেখা সম্ভব নয়।

বাকি রইল ‘য়া’ আর ‘ধ্যা'। প্রথমটা আর ‘হ্নে’-র মাঝে আছে আটটা অক্ষর, দ্বিতীয়টার জন্য দশটা। এবার দুটো নিয়ে চেষ্টা করলাম। প্রথমটা মিলল না, দ্বিতীয়টার জন্য এই বাক্যটা পাওয়া গেল।” কাগজের নিচে বাপ্পা লিখল,

মকর সংক্রান্তি দিবসের মধ্যাহ্নে অট্টালিকাশীর্ষের ছায়া যত্র পতিত হইবে রত্নপেটিকার নিমিত্ত তত্র খনন করিতে হইবে

আমি আর শৈলেশ লেখাটা পড়ে মুখ চাওয়াচাওয়ি করলাম। সত্যিই, বাপ্পা বুঝিয়ে দেওয়ার পরে ব্যাপারটা জলের মতো সোজা।

অন্য অক্ষর দিয়েও করা যেত, যেমন ‘ট্টা’ বা ‘ত্ন’,” বাপ্পা হাসতে হাসতে বলে।

কিন্তু মকর সংক্রান্তির মধ্যাহ্নেই কেন?” আমি জিজ্ঞাসা করি।

কারণ সূর্য প্রতিদিন দুপুর বেলা আকাশের একই জায়গায় থাকে না। মকর সংক্রান্তি হল একুশে ডিসেম্বর। সেইদিন দুপুরে এই বাড়ির ছায়ার শেষ অংশটা যেখানে পড়বে, সেখানে খুঁড়তে বলেছে। এখন প্রশ্ন হল বাড়িটার সেই অংশটা অক্ষত আছে কিনা।”

তা আছে,” শৈলেশ বলল। “শীতকালে আমাদের বাড়ির পিছন দিকে সূর্য থাকে, কাজেই ছায়া পড়বে সামনের অংশের। এই দিকটা নিয়মিত মেরামত করা হয়, শুনেছি এটাই সব থেকে প্রাচীন অংশ।”

তাহলে তো ডিসেম্বর অব্দি অপেক্ষা করতে হবে, এখনো দু মাসের বেশি বাকি আছে। কিন্তু মকর সংক্রান্তির স্নান তো জানুয়ারির মাঝামাঝি হয়। তুই ডিসেম্বর বলছিস কেন?” আমি জিজ্ঞাসা করলাম।

“সূর্য যেদিন দুপুরবেলা মকরক্রান্তি রেখার উপর লম্বভাবে থাকে, সেদিন হল মকর সংক্রান্তি।  বছর গোনা যখন শুরু হয়েছিল, তখন পয়লা বৈশাখ হত মহাবিষুব্র দিন, মানে একুশে মার্চ। মকর সংক্রান্তি হত বাইশে ডিসেম্বর। আমাদের পঞ্জিকার বছরের হিসেবটা ঠিক নয়, তাই সমস্ত সংক্রান্তি পিছিয়ে গেছে। অতদিন অপেক্ষা করার দরকার নেই, গুগল করে এই জায়গার অক্ষাংশ জেনে যাব, তাহলে এখন সূর্য কত ডিগ্রি কোণ করে আছে জানতে পারব। মকর সংক্রান্তির সময় সূর্য কোথায় ঠিক দুপুরবেলা থাকবে তো জানি। কালকেই কোন জায়গা খুঁড়তে হবে চিনে নেব,” বাপ্পা বলল। “তবে এখনি কাউকে বলিস না।সাড়ে এগারোটা কেন? মধ্যাহ্ন মানে তো দুপুর বারোটা,” আমি আপত্তি জানাই।

"মধ্যাহ্ণ মানে বারোটা থেকে তিনটে, তবে এখানে নিশ্চয় দুপুর বারোটার কথা বলা হচ্ছে। শৈলেশ যখনকার গল্প বলল তখন তো আর ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড টাইম চালু হয়নি, আমাদের দেশে দুটো টাইম জোন ছিল, ক্যালকাটা আর বম্বে। কলকাতার টাইম চব্বিশ মিনিট মতো এগিয়ে থাকে, তার মানে এগারোটা ছত্রিশ নাগাদ এখানে দুপুর হবে। নিশ্চয় হয় স্থানীয় সময় নয় ক্যালকাটা টাইম অনুযায়ী দেখতে হবে, সৌভাগ্যক্রমে এই জায়গার স্থানীয় সময় বা ক্যালকাটা টাইম প্রায় এক।”

পরের দিন বাপ্পা মাপজোক করে জায়গাটা ঠিক করে দিয়েছিল। কিন্তু বাড়ির বড়রা সবাই মিলে ঠিক করে পুজো মিটে গেলে দেখা যাবে। এখন গ্রামের লোক সব সময় আসছে যাচ্ছে, তাদের সামনে খোঁড়াখুঁড়ি না করাই ভালো। অবশ্য অনেকেই বাপ্পার কথাকে পাত্তা দেননি, বুঝিয়ে বলার পরেও না। আমরাও পরের দিন বিকেলে ফিরে আসি।

লক্ষ্মীপুজোর দিন সকালবেলা বাপ্পার ফোন, “চলে আয়, শৈলেশ আসছে।” বলেই কেটে দিল।

এ কদিন আমার উত্তেজনাতে ভালো করে ঘুম হয়নি। তাড়াতাড়ি করে বাপ্পার বাড়ি পৌঁছলাম।

অল্প পরেই শৈলেশ এলো। মুখে একগাল হাসি। "তুই যে জায়গা বললি, খুঁড়ে তার কাছাকাছি একটা বাক্স পাওয়া গেছে, তার মধ্যে বেশ কিছু গয়না আর দামি পাথর ছিল। অবশ্য অনেক ভাগ হবে, তাই খুব যে বেশি আমরা পাব তা নয়। কিন্তু অন্তত বাড়িটাকে সারানো যাবে। আর বড়রা সবাই একমত হয়ে আমাদের তিনজনের জন্য এই পুরস্কারটা পাঠিয়েছে। না বলবি না, তা হলে আমার কপালেও জুটবে না।”

একটা খাম দিল, বার করে দেখি গ্রিস বেড়াতে যাওয়ার একটা ব্রশিওর। “সব খরচ আমাদের পরিবারের। আমিও যাব, একবার বাপ্পার সঙ্গে স্পার্টা দেখে আসি।”

আমাদের দুজনের চোখ চকচক করে উঠল। 

 

প্রকাশঃ এ যুগের কিশোর বিজ্ঞানী, শারদীয় ১৪৩০

Saturday 2 December 2023

জ্যোতির্বিজ্ঞান ও উনিশ শতকের কয়েকজন মহিলা বিজ্ঞানী


জ্যোতির্বিজ্ঞান ও উনিশ শতকের কয়েকজন মহিলা বিজ্ঞানী

গৌতম গঙ্গোপাধ্যায়


আধুনিক বিজ্ঞানের প্রথম যুগ নারীদের দূরে সরিয়ে রেখেছিল। সমাজের বাধা অতিক্রম করে বিজ্ঞানের অঙ্গনে প্রবেশ করতে তাদের অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছিল। আধুনিক বিজ্ঞানের জন্ম জ্যোতির্বিদ্যার থেকে, নানা বাধা পেরিয়ে সেই বিজ্ঞানেও কয়েকজন মহিলা অবদান রেখে গেছেন। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের সব থেকে পুরানো সংগঠন হল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি অফ লন্ডন। ১৮২০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সোসাইটি ১৮৩১ সালে নাম পরিবর্তন করে হয় রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি। কিন্তু ১৯১৫ সালের আগে মহিলারা এই সোসাইটির সদস্য হতে পারতেন না। তবে সাম্মানিক সদস্য হওয়ার সুযোগ ছিল, কয়েকজন নারী সেই সম্মান পেয়েছিলেন। এই লেখাতে আমরা তাঁদের মধ্যে চারজনের কথা সংক্ষেপে শুনব।

১৮৩৫ সালে প্রথম দুই মহিলাকে সোসাইটির সাম্মানিক সদস্য করা হয়, তাঁরা হলেন ক্যারোলাইন লুক্রেশিয়া হার্শেল ও মেরি সমারভিল। ক্যারোলাইন হার্শেলের তাঁর জন্ম ১৭৫০ সালে জার্মানির হ্যানোভারে। তাঁর দাদা বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ উইলিয়াম হার্শেল। ইউরেনাস গ্রহের আবিষ্কার, তারাদের সাপেক্ষে সূর্যের প্রকৃত গতি, আমাদের ছায়াপথের প্রথম মডেল, শ্বেত বামন নক্ষত্র, যুগ্ম নক্ষত্র উইলিয়ামের আবিষ্কারের তালিকা শেষ হবে না। সেই সময় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জ্যোতির্বিদ উইলিয়াম হার্শেলের অনেক আবিষ্কারের সময় তাঁকে সাহায্য করেছিলেন ক্যারোলাইন। 

ক্যারোলাইন হার্শেল

 

উইলিয়ামের প্রথম জীবন বেশ কষ্টে কেটেছিল। তিনি জার্মানি থেকে ইংল্যান্ডে চলে আসেন। জ্যোতির্বিদ্যা ছিল তাঁর শখ। তাঁকে বাড়ির কাজে সাহায্যের জন্য ক্যারোলাইন ইংল্যান্ডে আসেন। ক্যারোলাইন বাড়িতে পড়াশোনার বিশেষ সুযোগ পাননি। দশ বছর বয়সে টাইফাস রোগের জন্য তাঁর বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তাঁর উচ্চতা ছিল মাত্র চার ফুট তিন ইঞ্চি। হার্শেল তাঁকে নিজের কাজের সহকারী করে নিয়েছিলেন; সে যুগের সেরা দূরবিনগুলি তাঁর হাতেই তৈরি। ক্যারোলাইন তাঁকে সাহায্য করেছিলেন। ইউরেনাস আবিষ্কারের পর উইলিয়ামের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে, রাজার অনুগ্রহে একজন সহকারী রাখার অর্থও মঞ্জুর হয়।

তখনো ফটোগ্রাফি আবিষ্কার হয়নি, ক্যারোলাইন উইলিয়ামের পর্যবেক্ষণ লিখে রাখতেন। সেই সমস্ত পর্যবেক্ষণ সুশৃঙ্খলভাবে প্রকাশের উপযোগী করতেন। নিজে পর্যবেক্ষণ করতেন, এবং অঙ্ক কষে জ্যোতিষ্কের অবস্থান ও কক্ষপথও নির্ণয় করতেন। তাই দাদা বোনকেই সহকারী বেছে নেন। ক্যারোলাইন হলেন প্রথম পেশাদার মহিলা জ্যোতির্বিদ, এবং ইংল্যান্ডের ইতিহাসে প্রথম বেতনভুক মহিলা সরকারী কর্মচারী। উইলিয়ামের জ্যোতিষ্ক পর্যবেক্ষণের রেকর্ড প্রকাশের উপযোগী করেন ক্যারোলাইন। ১৭৯৮ সালে রয়্যাল সোসাইটির গবেষণাপত্রিকা ফিলোজফিক্যাল ম্যাগাজিনে সেই তালিকাতে তাঁর নামও লেখক হিসাবে আছে। তিনিই প্রথম মহিলা যাঁর গবেষণা ফিলোজফিক্যাল ম্যাগাজিনে ছাপা হয়েছিল। তিনি রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিকাল সোসাইটির প্রথম মহিলা স্বর্ণপদক বিজয়ী এবং তার প্রথম দুজন সাম্মানিক মহিলা সদস্যের একজন। উইলিয়ামের ছেলে জন তাঁর সময়ের অন্যতম সেরা জ্যোতির্বিদ ছিলেন, ক্যারোলাইন ও জন চিঠিপত্রে জ্যোতির্বিদ্যা নিয়ে আলোচনা করতেন।

উইলিয়ামকে যখন সাহায্য করতে হত না, ক্যারোলাইন নিজে তখন একটি ছোট দূরবিন দিয়ে আকাশ পর্যবেক্ষণ করতেন। ধূমকেতু খোঁজার জন্য সেটি উইলিয়াম ক্যারোলাইনের জন্যই বানিয়েছিলেন। ১৭৮৩ সালে তিনি তিনটি নীহারিকা খুঁজে পেয়েছিলেন। ১৭৮৬ থেকে ১৭৯৭ সালের মধ্যে আটটি ধূমকেতু ক্যারোলাইন আবিষ্কার করেছিলেন। প্রথম আবিষ্কারের দিনটা ছিল ১ আগস্ট, ১৭৮৬। সেটি নিঃসন্দেহে পুরোপুরি ক্যারোলাইনের একার কৃতিত্ব, দাদা সেই সময় সেখানে ছিলেন না।

হার্শেলদের আকাশ পর্যবেক্ষণ নিরুপদ্রব ছিল না। উত্তর ইউরোপের শীতে সারা রাত বাইরে কাটানোর মূল্য হিসবে নিউমোনিয়া ছিল খুব স্বাভাবিক ঘটনা। অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের আগে নিউমোনিয়া ছিল প্রাণঘাতী রোগ। একবার অন্ধকারে বরফে ঢাকা মাঠের উপর দিয়ে দৌড়োতে গিয়ে এক লোহার গজাল ক্যারোলাইনের পায়ে ঢুকে গিয়েছিল। অনেক দিন তাঁকে বিছানাতে কাটাতে হয়েছিল। কিন্তু নিজের আঘাত নয়, ক্যারোলাইন চিন্তিত ছিলেন তাঁর দুর্ঘটনার ফলে উইলিয়ামের আকাশ পর্যবেক্ষণে কতটা অসুবিধা হবে তাই নিয়ে। তিনি সবসময়েই বিশ্বাস করতেন যে উইলিয়ামই আসল, তাঁর নিজের কাজটা এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ নয়।

উইলিয়ামের মৃত্যুর পরে ক্যারোলাইন জার্মানি ফিরে যান। সেখানে তিনি উইলিয়ামের রেকর্ড থেকে আড়াই হাজার নীহারিকার এক তালিকা বানিয়েছিলেন। তাঁর তৈরি করা জ্যোতিষ্কের তালিকাগুলি এখনো আকাশ পর্যবেক্ষণে ব্যবহার হয়। বিশেষ করে জার্মানিতে প্রকাশিত তালিকাটির উপর ভিত্তি করে পরের নিউ গ্যালাকটিক ক্যাটালগ (NGC) তৈরি হয়েছিল। এখনো আকাশে অনেক আলোকউৎসকে NGC সংখ্যা দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। তাঁর ছিয়ানব্বই বছর বয়সে প্রুশিয়ার সম্রাট তাঁকে এক স্বর্ণপদকে ভূষিত করেন। তাঁর আবিষ্কৃত ধূমকেতুগুলি ছাড়াও একটি গ্রহাণু, চাঁদের বুকে একটি গহ্বর, দুটি নক্ষত্রমণ্ডল ও একটি কৃত্রিম উপগ্রহের নাম তাঁর নামে দেওয়া হয়েছে।

মেরি সমারভিল ছিলেন রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিকাল সোসাইটির প্রথম দুই সাম্মানিক নারী সদস্যের অপরজন। তাঁর জন্ম ১৭৮০ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্কটল্যান্ডে। তাঁর বাবা উইলিয়াম ফেয়ারফ্যাক্স ছিলেন ব্রিটিশ নৌবাহিনীর ভাইস অ্যাডমিরাল। ক্যারোলিনের সঙ্গে মেরির একটা পার্থক্য ছিল, তিনি একাই গবেষণা করেছিলেন। তিনি ছিলেন স্বশিক্ষিত, বই পড়ে তিনি বীজগণিত, জ্যামিতি, ক্যালকুলাস, গতিবিদ্যা ইত্যাদি শিখেছিলেন। নিউটনের বিখ্যাত বই 'প্রিন্সিপিয়া ম্যাথামেটিকা' তিনি পড়েছিলেন। ক্যালকুলাসের কিছু সমস্যার সমাধান করে তিনি ছদ্মনামে প্রকাশ করেছিলেন। পিয়ের-সিমোঁ লাপ্লাসের লেখা গ্রহনক্ষত্রদের গতিবিধি ও মাধ্যাকর্ষণ সংক্রান্ত বিখ্যাত বইটি তিনি ফরাসি থেকে ইংরাজিতে অনুবাদ করেছিলেন, বহুদিন সেটি ইংল্যান্ডে পাঠ্যপুস্তক হিসাবে ব্যবহার হত। 

মেরি সমারভিল

 

মেরির প্রথমবার বিয়ে হয় ১৮০৪ সালে তাঁর দূর সম্পর্কের আত্মীয় স্যামসন গ্রেগের সঙ্গে। তাঁরা লন্ডনে থাকতেন। কিন্তু তাঁর স্বামী মেয়েদের বিদ্যাচর্চার প্রয়োজন আছে মনে করতেন না। ১৮০৭ সালে স্যামসনের মৃত্যু হলে মেরি স্কটল্যান্ডে ফিরে যান। ১৮১২ সালে তাঁর দ্বিতীয় বিবাহ হয় অপর এক দূরসম্পর্কের আত্মীয় ডাক্তার উইলিয়াম সমারভিলের সঙ্গে। ইউলিয়াম মেরিকে পড়াশোনা ও গবেষণা চালিয়ে যেতে উৎসাহ দিয়েছিলেন। সূর্যালোকের বেগুলি রশ্মির চৌম্বক ধর্ম বিষয়ে তাঁর গবেষণা প্রবন্ধ ১৮২৬ সালে ফিলোজফিকাল ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছিল, সেটিই এই পত্রিকাতে প্রকাশিত কোনো মহিলার একক লেখা প্রথম প্রবন্ধ। ইউরেনাসের তার গতিবিধি ব্যাখ্যা করার জন্য আরো দূরের একটি গ্রহের কথা যাঁরা প্রথম বলেছিলেন, মেরি তাঁদের মধ্যে অন্যতম।

জ্যোতির্বিদ্যা ছাড়াও অনেক বিষয়ে তাঁর উৎসাহ ছিল। বেশ কয়েকটি বই লিখেছিলেন মেরি সমারভিল। ১৮৩১ সালে তাঁর লেখা প্রথম বই দি মেকানিজম অফ দি হেভেন্‌স' প্রকাশিত হয়। তিন বছর পরে প্রকাশিত হয় অন দি কানেকশন অফ দি ফিজিক্যাল সায়েন্সেস। বইটির পনের হাজার কপি বিক্রি হয়েছিল; জার্মান ও ইতালিয়ান ভাষাতে অনূদিত হয়েছিল। ডারউইনের অরিজিন অফ স্পিসিস প্রকাশের আগে বিজ্ঞান বিষয়ক কোনো ইংরাজি বই এত সংখ্যায় বিক্রির নজির নেই। ১৮৪৮ সালে প্রকাশিত হয় 'ফিজিক্যাল জিওগ্রাফি’, ইংরাজি ভাষায় এই বিষয়ের প্রথম বই। ১৮৬৯ সালে ঊননব্বই বছর বয়সে প্রকাশিত হয় 'মলিকিউলার এন্ড মাইক্রোস্কোপিক সায়েন্স’, বইটি লিখতে তিনি সময় নিয়েছিলেন দশ বছর। ১৮৭২ সালের ২৯ নভেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়। তার পরের বছর প্রকাশিত হয় তাঁর আত্মজীবনী 'পার্সোনাল রিকালেকশনস'। সে যুগের অনেক বৈজ্ঞানিকের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল ও নিয়মিত চিঠি বিনিময় হত। তাঁর নামে একটি গ্রহাণু, চাঁদের বুকে একটি গহ্বর ও একটি কৃত্রিম উপগ্রহের নাম রাখা হয়েছে। ২০১৭ সালে জনগণের ভোটে ব্যাঙ্ক অফ স্কটল্যান্ডের নতুন দশ পাউন্ডের নোটে তাঁর ছবি ছাপার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

১৯০৩ সালে সোসাইটি মার্গারেট লিন্ডসে হাগিন্স ও অ্যাগনেস মেরি ক্লার্ককে সাম্মানিক সদস্যপদ দেয়। মার্গারেট লিন্ডসে হাগিন্সের জন্ম ১৮৪৮ সালে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে। তাঁর বাবা জন মারে ছিলেন উকিল। মার্গারেটের মা হেলেন লিন্ডসে মারা যাওয়ার জন আবার বিয়ে করেন। সেই সময় থেকে জনের বাবা রবার্ট ছিলেন মার্গারেটের সঙ্গী। রবার্ট ছিলেন শৌখিন জ্যোতির্বিদ, তিনি মার্গারেটের মনে এই বিষয়ে আগ্রহ জাগিয়েছিলেন। মার্গারেট জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ে নানা বইপত্র পড়ে নিজে নিজে শিখতেন। ১৮৭৩ সালে একটি প্রবন্ধে তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞানী উইলিয়াম হাগিন্সের তৈরি একটি বর্ণালীবীক্ষণ যন্ত্রের কথা পড়ে নিজেই একটি বর্ণালীবীক্ষণ তৈরি করেন। এক যন্ত্রনির্মাতার মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে উইলিয়াম হাগিন্সের আলাপ হয়, ১৮৭৫ সালে তাঁদের বিয়ে হয়। দুজনে একসঙ্গে কাজ শুরু করেন। 

মার্গারেট লিন্ডসে হাগিন্স

 

উইলিয়াম সবসময়েই তাঁদের গবেষণাকে দুজনের যৌথ কাজ বলতেন। মার্গারেটের দায়িত্ব ছিল দূরবিনের মাধ্যমে নক্ষত্রটিকে দেখা, তারপর দুজনে মিলে তার বর্ণালীর ফটোগ্রাফ তুলতেন। সেই সময় ফটোগ্রাফির অনেক উন্নতি হয়েছিলেন,। মার্গারেট ও উইলিয়াম প্রথম জ্যোতির্বিদ্যাতে সেই নতুন পদ্ধতির প্রয়োগ করেন। তাঁরা অভিজিৎ নক্ষত্রের হাইড্রোজেনের বর্ণালী পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। ১৮৮৯ সালে মার্গারেটের নাম প্রথম কোনো গবেষণাপত্রিকাতে লেখক হিসাবে প্রকাশিত হয়; সেটির বিষয় ছিল গ্রহের বর্ণালী পর্যবেক্ষণ। অন্য অনেক নক্ষত্র ও নীহারিকার বর্ণালী তাঁরা পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। নীহারিকের বর্ণালীতে তাঁরা অনেক অচেনা চিহ্ন খুঁজে পান। প্রথমে ভাবা হয়েছিল এ কোনো অজানা মৌলের চিহ্ন, মার্গারেটের বন্ধু অ্যাগনেস মেরি ক্লার্ক সেই প্রস্তাবিত মৌলের নাম দেন নেবুলিয়াম। অনেক বছর পরে বোঝা যায় সেটি ছিল আয়নিত অক্সিজেনের বর্ণালী। ১৮৯২ সালে দেখতে পাওয়া নোভা পর্যবেক্ষকদের একদম প্রথম সারিতে ছিলেন হাগিন্স দম্পতি। তাদের পর্যবেক্ষণ থেকে বোঝা যায় যে নোভার থেকে হাইড্রোজেন গ্যাস প্রচণ্ড গতিতে বাইরের দিকে বেরিয়ে যাচ্ছে। ১৮৯৭ সালে প্রকাশিত হয় তাঁদের যৌথ বই, 'ফটোগ্রাফিক আটলাস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ স্টেলার স্পেকট্রা'। এরপর থেকে তাঁরা পরীক্ষাগারে বর্ণালী পর্যবেক্ষণে মন দেন। তাঁরা সূর্যের বর্ণালীতে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের পরিমাণ নির্ণয়ের কাজ করেছিলেন। পরবর্তীকালে মেঘনাদ সাহার সমীকরণ তাঁদের পর্যবেক্ষণের ব্যাখ্যা দেবে। মার্গারেট প্রাচীনযুগে জ্যোতির্বিদ্যাতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ছিলেন ও এনসাইক্লোপেডিয়া ব্রিটানিকাতে সেই বিষয়ে লিখেছিলেন। তিনি ও উইলিয়াম ১৯০৩ থেকে ১৯০৫ সাল পর্যন্ত তেজস্ক্রিয় পদার্থ নিয়েও গবেষণা করেছিলেন। উইলিয়ামের মৃত্যু হয় ১৯১০ সালে। পাঁচ বছর পরে ১৯১৫ সালের ১৪ মার্চ মার্গারেট প্রয়াত হন।

অ্যাগনেস মেরি ক্লার্ক মুলত জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক বেশ কয়েকটি বই লেখার জন্য পরিচিত হয়েছিলেন। তাঁর বইগুলি সমকালে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছিল, পেশাদার বিজ্ঞানীদের তা সাহায্য করেছিল। অ্যাগনেসের জন্ম ১৮৪২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি আয়ারল্যান্ডের কর্কে। তাঁর বাবা জন উইলিয়াম ক্লার্ক ছিলেন ব্যাঙ্কের ম্যানেজার। জন ডাবলিনের ট্রিনিটি কলেজে পড়েছিলেন; অ্যাগনেসের মা ক্যাথরিনও ছিলেন উচ্চ শিক্ষিতা। তিন ছেলেমেয়েকে তাঁরা বাড়িতেই শিক্ষা দিয়েছিলেন। জনের একটি টেলিস্কোপ ছিল, অ্যাগনেস ছোটবেলা থেকেই সেটি ব্যবহার করতেন। মাত্র পনের বছর বয়সেই তিনি জ্যোতির্বিদ্যার এই ইতিহাস লেখা শুরু করেন।

অ্যাগনেসের স্বাস্থ্য ভালো ছিল না। দিদি এলেন ও তিনি সেই জন্য ১৮৬৭ থেকে ১৮৭৭ সাল পর্যন্ত ইতালির ফ্লোরেন্সেই বেশি সময় কাটান। ১৮৭৭ সাল থেকে তাঁদের পরিবার লন্ডনে বাস শুরু করেন। সেই বছরেই সুপরিচিত এডিনবার রিভিউ পত্রিকাতে অ্যাগনেসের দুটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়, তার মধ্যে একটি ছিল কোপার্নিকাসের সময়ে ইতালির জ্যোতির্বিদ্যার ইতিহাস। প্রবন্ধগুলি উচ্চপ্রশংসিত হয়েছিল, এরপর থেকে তিনি প্রতিবছর দুটি করে প্রবন্ধ লেখার আমন্ত্রণ পান। শেষ পর্যন্ত মোট পঁয়ত্রিশটি প্রবন্ধ তিনি এডিনবার রিভিউতে লিখেছিলেন। 

অ্যাগনেস মেরি ক্লার্ক

 

সমকালীন জ্যোতির্বিদ্যার গবেষণার সম্পর্কে লেখার জন্য বিজ্ঞানী মহলে অ্যাগনেসের পরিচিতি হয়। ১৮৮০ সালে তিনি প্রকাশ করেন 'দি কেমিস্ট্রি অফ স্টারস'। সেই প্রবন্ধকে কেন্দ্র করেই জন্ম হয় তাঁর প্রথম বইয়ের, 'এ পপুলার হিস্ট্রি অফ অ্যাস্ট্রোনমি অফ দি নাইনটিন্‌থ সেঞ্চুরি'। ১৮৮৫ সালে প্রকাশিত এই বইটি পেশাদার জ্যোতির্বিদদের কাছেও অবশ্যপাঠ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এর আগে এই ধরনের সমস্ত বইতে কোপার্নিকাস থেকে নিউটনের কাল পর্যন্ত জ্যোতির্বিজ্ঞানের কথা লেখা হত। অ্যাগনেসের বইতে প্রথম আধুনিক জ্যোতির্বিদ্যার বিবরণ পাওয়া গেল। সমস্ত প্রধান ইউরোপিয় ভাষা জানতেন অ্যাগনেস, তিনি সব সময় মূল প্রবন্ধ পড়ে তবেই তার সম্পর্কে লিখতেন। বইটির চারটি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল। এমন কি প্রকাশের তিরিশ বছর পরে সুদূর ভারতবর্ষে মেঘনাদ সাহার গবেষণার প্রেরণা ছিল এই বই।

বই প্রকাশের আগে অ্যাগনেসের সংগে কোনো পেশাদার জ্যোতির্বিদের সরাসরি পরিচয় ছিল না। এর পরেই তাঁর সঙ্গে মার্গারেট হাগিন্সের পরিচয় ও বন্ধুত্ব হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার মানমন্দির থেকে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তিনি তিন মাস সেখানে কাটান। সেখানে করা তাঁর পর্যবেক্ষণ মানমন্দিরে প্রকাশিত হয়। ১৮৯০ সালে তিনি তাঁর দ্বিতীয় বই দি সিস্টেম অফ দি স্টারস প্রকাশ করেন। ১৯০৩ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর তৃতীয় বই 'প্রবলেমস ইন অ্যাস্ট্রোফিজিক্স'। ১৯০৫ সালে প্রকশিত হয় 'মডার্ন কসমোজেনিস'। এনসাইক্লোপেডিয়া ব্রিটানিকার একাদশ সংস্করণে তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাস এবং তিরিশ জন জ্যোতির্বিদের জীবনী লেখেন। ব্রিটেনে ১৮৮২ সালে থেকে প্রকাশিত হতে শুরু করে ডিকশনারি অফ ন্যাশনাল বায়োগ্রাফি সংকলন। সেখানে অন্তত ১৬৫টি প্রবন্ধ লিখেছিলেন অ্যাগনেস। ১৯০৭ সালের ২০ জানুয়ারি তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যু পর্যন্ত লিখে গেছেন অ্যাগনেস। তাঁর মৃত্যুর পরে এডিনবার রিভিউতে প্রকাশিত হয় তাঁর লেখা শেষ প্রবন্ধ, সেটি ছিল আর্নেস্ট রাদারফোর্ডের তেজস্ক্রিয়তা বিষয়ে গবেষণার বিবরণ। চাঁদের বুকে একটি গহ্বরের নাম তাঁর নামে দেওয়া হয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি তাঁর নামে একটি পদক চালু করেছে; জ্যোতির্বিদ্যা বা ভূপদার্থবিদ্যার ইতিহাস বিষয়ে গবেষণার জন্য এই পদক দেওয়া হয়।

১৯১৫ সালের আগে আরো তিনজন মহিলাকে সোসাইটির সাম্মানিক সদস্যপদ দেওয়া হয়েছিল। জ্যোতির্বিদ্যার জন্য অর্থ সাহায্য করার জন্য অ্যানে শিপশ্যাঙ্কসকে ১৮৬২ সালে সাম্মানিক সদস্যপদ দেওয়া হয়েছছিল। তিনি কেমব্রিজ মানমন্দিরকে দশ হাজার পাউন্ড দিয়েছিলেন। সেই অর্থে কেনা দূরবিনের নাম তাঁর নামে রাখা হয়েছিল। চাঁদের বুকে একটি গহ্বরও তাঁর নাম বহন করে। মার্কিন যুক্তরাষ্টের হার্ভার্ড মানমন্দিরের দুই কর্মী উইলেমিনা ফ্লেমিং ও অ্যানি জাম্প ক্যাননকেও যথাক্রমে ১৯০৭ ও ১৯১৪ সালে সাম্মানিক সদস্য পদ দেওয়া হয়েছিল। জ্যোতির্বিদ্যার ক্ষেত্রে দুজনেরই বিপুল অবদান আছে, এই প্রবন্ধে স্বল্পপরিসরে তার পরিচয় দেওয়া সম্ভব নয়। সামান্য সুযোগ পেয়েই এই নারীরা প্রতিবন্ধকতার পাহাড় জয় করতে পেরেছিলেন। সেই সমস্ত বাধা কিছুটা হলেও দূর হয়েছে সন্দেহ নেই, তার পিছনে আছে এঁদের মতো নারী বিজ্ঞানীদের অবদান। 

 

প্রকাশ জনবিজ্ঞানের ইস্তাহার, শারদীয় ২০২৩