Sunday 10 December 2023

গুপ্তধনের সঙ্কেত

 

গুপ্তধনের সঙ্কেত

গৌতম গঙ্গোপাধ্যায়



পুজোর কটা দিন মাত্র ছুটি, তার প্রথম দিন। সকালে চোখ খুলেছি কি না খুলেছি, বাপ্পার ফোন। ঘুম জড়ানো গলাতে বললাম, “কী হল?”

পুজোতে ঠাকুর দেখার কী প্ল্যান?”

মানে?” মুখ থেকে কথাট বেরিয়ে এলো। বাপ্পা পুজোর প্ল্যান জিজ্ঞাসা করছে! কোনোদিন তাকে কোনো প্যান্ডেলে যেতে দেখিনি। গতবছর সেরা থিমের পুজো করেছিল সবেদাবাগান সার্বজনীন, ওকে হাজার চেষ্টাতেও সেটা দেখতে নিয়ে যেতে পারিনি।

মানে হল, গ্রামের পুজো দেখতে যাবি?”

কোন গ্রাম?”

বলছি বলছি, তার আগে বল যাবি কিনা?”

তুই গ্রামে যাবি পুজো দেখতে? আরো কিছু পিছনে আছে মনে হচ্ছে।”

বাপ্পা সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামাতে ভালোবাসে, নিজেকে বলে প্রবলেম সলভার, পুরানো বাংলা গল্প থেকে কথাটা পেয়েছে।ওর কাছে নানা রহস্য নিয়ে আসে, এমনকি পুলিশও কয়েকবার ওর সাহায্য নিয়েছে।

সেরকম কিছু নয়, আমার বন্ধু শৈলেশদের গ্রামের বাড়িতে দুর্গাপুজো হয়। পুরোনো জমিদারবাড়ির পুজো। ও যেতে বলছে। যাবি তো চল, আমি তোর কথা বলেছি। ”

পুজোতে সত্যিই কোনো প্ল্যান ছিল না, রাজি হয়ে গেলাম। ভোরবেলা বেরিয়ে পড়লাম। শৈলেশ বাপ্পার বাড়ি থেকে আমাদের নিয়ে এসেছিল। আমাদেরই সমবয়সী, ওদের বাড়ি কলকাতা থেকে খুব দূরে নয়, গ্রামের নাম দখিনপুর। শিয়ালদা থেকে ট্রেনে ঘন্টা দেড়েক, স্টেশনে শৈলেশদের বাড়ির পুরানো অ্যাম্বাসাডার গাড়ি আমাদের জন্য দাঁড়িয়ে ছিল।

রাস্তা ভালো নয় কিন্তু,” শৈলেশ কিছুটা অপরাধীর সুরে বলে।

রাস্তা সত্যিই দু’এক জায়গায় ভাঙা, কিন্তু তাতে বিশেষ অসুবিধা হলো না। সারা পথ ধরে চোখ জুড়িয়ে গেল সবুজ গাছগাছালিতে। ঘন্টাখানেক পরে গাড়ি গিয়ে থামল শৈলেশদের বাড়ির সামনে।

পুরানো জমিদারবাড়ি, অনেকটাই ভেঙে পরেছে। তবে সামনের দিকটা মোটামুটি ভালো আছে, বোঝাই যায় যে নিয়মিত মেরামত করা হয়। সেই দিকটাতেই শৈলেশের বাবা মা থাকেন। শৈলেশ কলকাতায় চাকরি করে, ছুটিছাটাতে বাড়ি আসে। শৈলেশের মা বললেন, “তোমরা চান করে নাও, অনেকক্ষণ বেরিয়েছ। খিদে পেয়ে গেছে নিশ্চয়। লুচি ভাজা হচ্ছে।”

আমি কিছু বলার আগেই বাপ্পা একগাল হেসে বলল, “না মাসিমা, রাস্তাতে খেয়েছি।” মাসিমা অবশ্য সৌভাগ্যবশত ওর কথাতে পাত্তা দিলেন না, তাড়াতাড়ি চান করতে বলে গেলেন।

সেদিন ছিল সপ্তমী। ঠাকুরদালানে পুজো হচ্ছে। গ্রামের একটাই পুজো, কাজেই অনেকেই এসেছে। কচিকাঁচারা ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে।

মূর্তি আমাদের বাড়িতেই তৈরি হয়,” শৈলেশ বলল।

জয় বাবা ফেলুনাথ গল্পে পড়েছিলাম,” আমি বললাম।

হ্যাঁ, তবে আমাদের বাড়িতে কোনো মূল্যবান গণেশের মূর্তি নেই। তার বদলে আছে একটা ধাঁধা, যদিও সেটার আদৌ কোনো মানে আছে কিনা জানি না।”

আমি বাপ্পার দিকে তাকালাম, আমার অনুমান মিলে গেছে। বাপ্পা অবশ্য ব্যাপারটাকে খুব একটা গুরুত্ব দিল না, বলল, “সে পরে দেখা যাবে। আগে চল গ্রামটা ঘুরে আসি। যা ব্রেকফাস্ট হয়েছে, হজম করতে হবে।”

ছোট্ট গ্রাম, ঘুরতে বেশি সময় লাগল না। আরো কম লাগত, কিন্তু শৈলেশকে অনেকবার দাঁড়াতে হল। ছোটবেলা এখানেই কেটেছে, কাজেই অনেকেই ওর পরিচিত। সকলেই ডেকে খবর নিচ্ছিল।

দুপুরের খাবারটাও জোরদার হল। তারপরে আমরা তিনজনে একটা ঘরে আশ্রয় নিলাম। আমি একটু দিবানিদ্রার তোড়জোড় করছিলাম, কিন্তু সেই সুযোগ হল না। বাপ্পা বললম “শৈলেশ, এবার ধাঁধাটা শুনি।”

ধাঁধাটা শোনার নয়, দেখার। নিয়ে আসছি।” শৈলেশ ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। একটু পরেই ঘরে ঢুকল, হাতে একটা বেতের পেটি। তার থেকে বার করল একটা সরু লম্বা কাপড়ের টুকরো, অনেকটা ফিতের মতো, কিন্তু বোঝা যাচ্ছে অনেক পুরানো দিনের। বাপ্পার হাতে দিল, আমি উঁকি মেরে দেখলাম তার উপর লম্বা করে উপর নিচে কিছু লেখা আছে। বাংলাতেই লেখা, পুরানো দিনের হরফে, পড়া যাচ্ছে, কিন্তু অক্ষরগুলো পরপর পড়ে কোনো মাথামুণ্ডু বোঝা যাচ্ছে না। বাপ্পা জিজ্ঞাসু চোখে শৈলেশের দিকে তাকাল।

আমাদের বংশে ঠিক কতদিন ধরে এই ফিতেটা আছে আমরা কেউ জানি না। আমাদের এক পূর্বপুরুষ এখানে জঙ্গল কেটে বসত করেছিলেন। একসময় আমরা এখানে অনেক সম্পত্তি করেছিলাম, ফলে ডাকাতের চোখ পড়েছিল। তখন ইংরেজ আমল, এই জায়গাটাও ছিল জঙ্গলের মধ্যে, কাজেই থানাপুলিশ ছিল না। তখন নাকি বেশ কিছু সোনাদানা আমার কোনো পূর্বপুরুষ কোথাও লুকিয়ে রেখেছিলেন, আর এই ফিতেটাতে তার সঙ্কেত লিখে রেখেছিলেন। তাঁর ছিল দুই ছেলে, শোনা যায় তিনি দুজনকে ডেকে একজনের হাতে এই পেটিটা তুলে দিয়েছিলেন। অন্যজনকে যে কী দিয়েছিলেন তা আমরা ঠিক জানি না। কেউ বলে একটা কাগজ যাতে এই ফিতেতে কী লেখা আছে পড়ার উপায় ছিল। কেউ বলে একটা কাঠের মুগুর, যদিও মুগুর কী কাজে লাগবে আমি জানি না। কেউ বলে সোনাদানা যে সিন্দুকে করে লুকিয়েছেন তার চাবি। তিনি নাকি ছেলেদের বলেন যে তিনি সম্পত্তি কোথায় লুকিয়েছেন তা এই ফিতেতে লেখা আছে, কিন্তু সেটা খুঁজে পেতে দুজনকেই লাগবে। যাতে করে একজন না অন্যজনকে ফাঁকি দিতে পারে সে জন্য তিনি এই ব্যবস্থা করেছেন। পরে তিনি কেমনভাবে সেই সংকেত উদ্ধার করতে হবে তা বলে দেবেন।”

এক মুহূর্ত দম নিয়ে শৈলেশ আবার শুরু করে, “সম্ভবত সেই সুযোগ আর আসে নি, হঠাৎই আমার সেই পূর্বপুরুষ মারা যান। তাঁর ছেলেরা সংকেতের অর্থ উদ্ধার করতে পারেনি। তার কিছুদিন পরেই বাড়িতে আগুন লাগে, ফিতেটা উদ্ধার হয়েছিল, কিন্তু অন্য জিনিসটা পাওয়া যায়নি। সেই থেকে এই ফিতেটা যত্ন করে রাখা আছে। গল্পটা পুরুষানুক্রমে আমাদের বাড়িতে চলে আসছে। আমাদের বাড়ির অবস্থা তো দেখছ, কোনো রকমে একটা অংশ মেরামত করা গেছে। আমাদের বংশের এখন অনেক শরিক। এই বাড়িতে অবশ্য আমার বাবা মা, আর এক দূর সম্পর্কের কাকা কাকিমা, এরাই থাকে। তবে পুজোর সময় সবাই আসার চেষ্টা করে, তাই এই ক’টা দিন একটু জমজমাট থাকে। এখন সত্যিই যদি কিছু লুকানো থাকে এবং উদ্ধার করা যায়, তাহলে অনেকের মধ্যে ভাগ হবে। তবু কিছু পেলে হয়তো বাড়িটা আর একটু বাসযোগ্য করা যেতে পারে।”

আমি জিজ্ঞাসা করি, “এমন হতে পারে কি যে এক ভাই অন্যজনকে না জানিয়ে গুপ্তধন উদ্ধার করে নিয়েছে?”

মনে হয় না, শুনেছি দুই ভাইয়ের মধ্যে খুব সদ্ভাব ছিল।”

কিন্তু অন্য ভাইয়ের জিনিসটা না পেলে, অন্তত সেটা কী না জানলে কি সংকেতের মানে উদ্ধার করা যাবে?” আমি হতাশ হয়ে বলি।

বাপ্পা হসতে হাসতে বলল, “আমি জানি অন্য জিনিসটা কী ছিল।”

আমরা দুজন অবাক হয়ে তাকালাম। “কী ছিল?” শৈলেশ বলে।

একটা কাঠের মুগুর।”

কী করে জানলি?” আমি জিজ্ঞাসা করি।

গ্রিসের ইতিহাস থেকে,” বাপ্পার হেঁয়ালিভরা সংক্ষিপ্ত উত্তর। “শৈলেশ, একটা কাগজ পেন দে।”

বাপ্পা ফিতের অক্ষরগুলো পাশাপাশি লিখলো, আমি উঁকি মেরে দেখলাম কাগজে লেখা আছে,

ম ক্রা র অ র ত্র হ পে মি খ তে ক ন্তি _ ট্টা _ _ ই টি ত্ত ন _ _ ম লি ছা প বে কা _ ন হ _ দি ধ্যা কা য়া তি _ _ _ ই স ব হ্নে শী _ ত র _ ত্র ক বে ং সে _ র্ষে য _ ত্ন নি _ রি

নিচে দাগগুলো কী?”

ওগুলো ফাঁকা, মনে হয় দুটো শব্দের মধ্যের অন্তর।”

কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বাপ্পা বলল, “দূর, এর মধ্যে কোনো রহস্য নেই। একেবারে সোজা।”

ওই কাঠের মুগুর না কী, সেটা ছাড়াই পড়া যাবে?” আমি অবাক হয়ে বলি। “আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।”

একটা গল্প বলি। গ্রিসে স্পার্টা বলে একটা শহর ছিল, তারা যুদ্ধের সময় সেনাপতিদের কাছে সংকেত পাঠানোর একটা কায়দা ব্যবহার কত। একটা কাঠের ব্যাটনের গায়ে একটা ফিতে জড়াত, তারপর পাশাপাশি লিখত। এবার ফিতেটা আর ব্যাটনটা আলাদা আলাদা পাঠাত। শত্রুপক্ষের হাতে দুটোই না পড়লে তারা সংকেত উদ্ধার করতে পারবে না।

অবশ্য বেশিদিন এই কায়দা চলেনি। বিপক্ষ যখন বুঝতে পারল, তখন তারা ফিতেটা পেলে নানা সাইজের ব্যাটন ব্যবহার করে পড়ার চেষ্টা করত। একটা না একটা মিলে যেত। এখানেও সেইভাবেই লেখা আছে।”

তাহলে আমি কাঠের নানা মাপের কয়েকটা গোল গোল টুকরো নিয়ে আসি!” শৈলেশ উৎসাহভরে বলল।

তার দরকার হবে না। এমনিই পড়া যাচ্ছে। তোদের বাড়িটার সব থেকে উঁচু জায়গাটার উচ্চতা জানিস?” শৈলেশ মাথা নাড়ে। “ঠিক আছে, অন্য উপায়ও আছে। ছাদে ওঠা যাবে তো? কাল সাড়ে এগারোটার আগে ছাদে যাব। সেখান থেকে সূর্যের অবস্থান দেখে একুশে ডিসেম্বর কোথায় ছায়া পড়বে আন্দাজ করা যাবে।”

একুশে ডিসেম্বর?” আমার অবাক লাগে। “একুশে ডিসেম্বর কেন?”

কাঠের টুকরোটা কী করেছিল? পরপর দুটো অক্ষরের মধ্যে একটা নির্দিষ্ট সংখ্যার অক্ষর ঢুকিয়ে দেয়। এখানে দেখ কতগুলো যুক্তাক্ষর আছে যাদের ব্যবহার খুব বেশি নয়। ধর ‘হ্নে’ এই যুক্তাক্ষরটা। তোরা কী কী শব্দ জানিস যেখানে এটা ব্যবহার হয়?”

অহ্নে, সায়াহ্নে,” আমি বলি। শৈলেশ যোগ করল “মধ্যাহ্নে।”

ঠিক। তাহলে দেখ ‘হ্নে’-র আগে বসতে পারে ‘অ’, নয়তো ‘য়া’, নয়তো ‘ধ্যা’। এখানে এই তিনটে অক্ষরই একবার করে আছে। ‘অ’ আর ‘হ্নে’-র মাঝে আছে তেতাল্লিশটা অক্ষর, মানে শূন্যস্থানগুলোকে ধরে। তাহলে প্রতি চুয়াল্লিশ নম্বর অক্ষর পড়তে হবে। তবে এটা উত্তর হতে পারে না, কারণ ফিতেতে আছে মোট পঁয়ষট্টিটা অক্ষর; তাহলে কাঠের টুকরোটা এত মোটা হত যে ফিতেটা দুবার পাকও খেত না। তাতে করে কোনো কথা লেখা সম্ভব নয়।

বাকি রইল ‘য়া’ আর ‘ধ্যা'। প্রথমটা আর ‘হ্নে’-র মাঝে আছে আটটা অক্ষর, দ্বিতীয়টার জন্য দশটা। এবার দুটো নিয়ে চেষ্টা করলাম। প্রথমটা মিলল না, দ্বিতীয়টার জন্য এই বাক্যটা পাওয়া গেল।” কাগজের নিচে বাপ্পা লিখল,

মকর সংক্রান্তি দিবসের মধ্যাহ্নে অট্টালিকাশীর্ষের ছায়া যত্র পতিত হইবে রত্নপেটিকার নিমিত্ত তত্র খনন করিতে হইবে

আমি আর শৈলেশ লেখাটা পড়ে মুখ চাওয়াচাওয়ি করলাম। সত্যিই, বাপ্পা বুঝিয়ে দেওয়ার পরে ব্যাপারটা জলের মতো সোজা।

অন্য অক্ষর দিয়েও করা যেত, যেমন ‘ট্টা’ বা ‘ত্ন’,” বাপ্পা হাসতে হাসতে বলে।

কিন্তু মকর সংক্রান্তির মধ্যাহ্নেই কেন?” আমি জিজ্ঞাসা করি।

কারণ সূর্য প্রতিদিন দুপুর বেলা আকাশের একই জায়গায় থাকে না। মকর সংক্রান্তি হল একুশে ডিসেম্বর। সেইদিন দুপুরে এই বাড়ির ছায়ার শেষ অংশটা যেখানে পড়বে, সেখানে খুঁড়তে বলেছে। এখন প্রশ্ন হল বাড়িটার সেই অংশটা অক্ষত আছে কিনা।”

তা আছে,” শৈলেশ বলল। “শীতকালে আমাদের বাড়ির পিছন দিকে সূর্য থাকে, কাজেই ছায়া পড়বে সামনের অংশের। এই দিকটা নিয়মিত মেরামত করা হয়, শুনেছি এটাই সব থেকে প্রাচীন অংশ।”

তাহলে তো ডিসেম্বর অব্দি অপেক্ষা করতে হবে, এখনো দু মাসের বেশি বাকি আছে। কিন্তু মকর সংক্রান্তির স্নান তো জানুয়ারির মাঝামাঝি হয়। তুই ডিসেম্বর বলছিস কেন?” আমি জিজ্ঞাসা করলাম।

“সূর্য যেদিন দুপুরবেলা মকরক্রান্তি রেখার উপর লম্বভাবে থাকে, সেদিন হল মকর সংক্রান্তি।  বছর গোনা যখন শুরু হয়েছিল, তখন পয়লা বৈশাখ হত মহাবিষুব্র দিন, মানে একুশে মার্চ। মকর সংক্রান্তি হত বাইশে ডিসেম্বর। আমাদের পঞ্জিকার বছরের হিসেবটা ঠিক নয়, তাই সমস্ত সংক্রান্তি পিছিয়ে গেছে। অতদিন অপেক্ষা করার দরকার নেই, গুগল করে এই জায়গার অক্ষাংশ জেনে যাব, তাহলে এখন সূর্য কত ডিগ্রি কোণ করে আছে জানতে পারব। মকর সংক্রান্তির সময় সূর্য কোথায় ঠিক দুপুরবেলা থাকবে তো জানি। কালকেই কোন জায়গা খুঁড়তে হবে চিনে নেব,” বাপ্পা বলল। “তবে এখনি কাউকে বলিস না।সাড়ে এগারোটা কেন? মধ্যাহ্ন মানে তো দুপুর বারোটা,” আমি আপত্তি জানাই।

"মধ্যাহ্ণ মানে বারোটা থেকে তিনটে, তবে এখানে নিশ্চয় দুপুর বারোটার কথা বলা হচ্ছে। শৈলেশ যখনকার গল্প বলল তখন তো আর ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড টাইম চালু হয়নি, আমাদের দেশে দুটো টাইম জোন ছিল, ক্যালকাটা আর বম্বে। কলকাতার টাইম চব্বিশ মিনিট মতো এগিয়ে থাকে, তার মানে এগারোটা ছত্রিশ নাগাদ এখানে দুপুর হবে। নিশ্চয় হয় স্থানীয় সময় নয় ক্যালকাটা টাইম অনুযায়ী দেখতে হবে, সৌভাগ্যক্রমে এই জায়গার স্থানীয় সময় বা ক্যালকাটা টাইম প্রায় এক।”

পরের দিন বাপ্পা মাপজোক করে জায়গাটা ঠিক করে দিয়েছিল। কিন্তু বাড়ির বড়রা সবাই মিলে ঠিক করে পুজো মিটে গেলে দেখা যাবে। এখন গ্রামের লোক সব সময় আসছে যাচ্ছে, তাদের সামনে খোঁড়াখুঁড়ি না করাই ভালো। অবশ্য অনেকেই বাপ্পার কথাকে পাত্তা দেননি, বুঝিয়ে বলার পরেও না। আমরাও পরের দিন বিকেলে ফিরে আসি।

লক্ষ্মীপুজোর দিন সকালবেলা বাপ্পার ফোন, “চলে আয়, শৈলেশ আসছে।” বলেই কেটে দিল।

এ কদিন আমার উত্তেজনাতে ভালো করে ঘুম হয়নি। তাড়াতাড়ি করে বাপ্পার বাড়ি পৌঁছলাম।

অল্প পরেই শৈলেশ এলো। মুখে একগাল হাসি। "তুই যে জায়গা বললি, খুঁড়ে তার কাছাকাছি একটা বাক্স পাওয়া গেছে, তার মধ্যে বেশ কিছু গয়না আর দামি পাথর ছিল। অবশ্য অনেক ভাগ হবে, তাই খুব যে বেশি আমরা পাব তা নয়। কিন্তু অন্তত বাড়িটাকে সারানো যাবে। আর বড়রা সবাই একমত হয়ে আমাদের তিনজনের জন্য এই পুরস্কারটা পাঠিয়েছে। না বলবি না, তা হলে আমার কপালেও জুটবে না।”

একটা খাম দিল, বার করে দেখি গ্রিস বেড়াতে যাওয়ার একটা ব্রশিওর। “সব খরচ আমাদের পরিবারের। আমিও যাব, একবার বাপ্পার সঙ্গে স্পার্টা দেখে আসি।”

আমাদের দুজনের চোখ চকচক করে উঠল। 

 

প্রকাশঃ এ যুগের কিশোর বিজ্ঞানী, শারদীয় ১৪৩০

No comments:

Post a Comment