Friday 26 April 2024

আর্নল্ড সমারফেল্ড

আর্নল্ড সমারফেল্ড

 গৌতম গঙ্গোপাধ্যায়

 


আমরা বোরের মডেলের কথা স্কুলে পড়েছি। এই ব্লগের অন্য লেখাতে সেই মডেলের কথা আছে। হাইড্রোজেনের বর্ণালী ব্যাখ্যা করতে সফল হলেও বোরের মডেল অন্যান্য পরমাণুর ক্ষেত্রে সমান সাফল্য পায়নি। এমনকি হাইড্রোজেন পরমাণুর উপর তড়িৎ বা চৌম্বকক্ষেত্র প্রয়োগ করলে তার বর্ণালীর চরিত্র পাল্টে যায়, বোর মডেল তার সমস্ত দিক ব্যাখ্যা করতে পারছিল না। এই সমস্যার সমাধানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন একাধিক বিজ্ঞানী, তাঁদের মধ্যে প্রথমেই আসে আর্নল্ড সমারফেল্ডের কথা। কোয়ান্টাম তত্ত্বের অন্য দিকপালদের ঔজ্জ্বল্যে তাঁর নাম এখন কিছুটা আড়ালে পড়লেও আমরা দেখব যে সেই তত্ত্বে তাঁর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে।

সমারফেল্ড এক বিশেষ রেকর্ডের অধিকারী। নোবেল পুরস্কারের জন্য তাঁর সমর্থনে মোট চুরাশিটি মনোনয়ন জমা পড়েছিল, অন্য যে কোনো পদার্থবিজ্ঞানীর থেকে বেশি। কিন্তু সেই পুরস্কার তাঁর অধরাই থেকে গিয়েছিল। অন্য একদিক থেকে তাঁকে জে জে টমসনের সঙ্গে তুলনা করা যায়। তাঁর ছাত্রদের মধ্যে নোবেল পেয়েছিলেন ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ, উলফগ্যাং পাউলি, পিটার ডিবাই, হান্স বেথে, ইসিডর রাবি, লাইনাস পাউলিং ও মাক্স ফন লউ। এছাড়াও তাঁর বেশ কয়েকজন ছাত্র পদার্থবিদ্যার জগতে খুবই বিখ্যাত। কঠিন পদার্থের আপেক্ষিক তাপ বিষয়ক আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তাপ তত্ত্বের উন্নতিসাধন করেছিলেন ডিবাই, তবে তিনি অণুর গঠন এবং গ্যাস মাধ্যমে এক্স-রশ্মি ও ইলেকট্রন অপবর্তন বিষয়ে রসায়নবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। পাউলি ও হাইজেনবার্গ কোয়ান্টাম বলবিদ্যাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন।

সমারফেল্ডের জন্ম ১৮৬৮ সালের ৫ ডিসেম্বর জার্মানির ক্যোনিসবার্গ শহরে, বর্তমানে তা অবশ্য রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত। বাবা ফ্রাঞ্জ ছিলেন ডাক্তার, মায়ের নাম সিসিলিয়া। তিনি ক্যোনিসবার্গের আলবার্টিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা ও গণিত বিষয়ে পড়াশোনা করেন। সেখানে থেকে মাত্র ২২ বছর বয়সে ডক্টরেট করার পরে তিনি গটিনগেন, আখেন ও মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে পড়িয়েছিলেন। তাঁকে জার্মান তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার জনক বলা হয়, একই সঙ্গে পদার্থবিদ্যার সর্বকালের সেরা শিক্ষকদের মধ্যেও তাঁর নাম একেবারে উপরের সারিতে আসবে। ১৯১০ ও ১৯২০-র দশকে বলা হত জার্মান পদার্থবিদ্যা তিন স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে - প্লাঙ্ক, আইনস্টাইন ও সমারফেল্ড। আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের তাৎপর্য যাঁরা প্রথম উপলব্ধি করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে সমারফেল্ড অন্যতম। তাঁর সমর্থন বিজ্ঞানী মহলে এই তত্ত্বের স্বীকৃতির পথ প্রশস্ত করেছিল।

সমারফেল্ডের নানা অবদানের এমনকি উল্লেখ করারও পরিসর আমাদের নেই, আমরা কোয়ান্টাম বলবিদ্যাতে তাঁর সবথেকে উল্লেখযোগ্য অবদানের উপরেই দৃষ্টি রাখব। সমারফেল্ড বোরের তত্ত্বকে আরো এগিয়ে নিয়ে যান এবং কোয়ান্টাম তত্ত্বে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। একটি আমরা এখনো নানা জায়গায় ব্যবহার করি, সেটিকে আমরা সমারফেল্ড কোয়ান্টাম শর্ত বলি।

সমারফেল্ডের কোয়ান্টাম শর্ত থেকে শুধুমাত্র বোরের মডেল পাওয়া যায়, তা নয়। বোরের মডেলে ধরে নেওয়া হয়েছিল যে ইলেকট্রন শুধুমাত্র বৃত্তাকার কক্ষপথে ভ্রমণ করে। কিন্তু পদার্থবিদ্যা অনুযায়ী ইলেকট্রনের কক্ষপথ বৃত্তাকার না হয়ে উপবৃত্তাকারও হতে পারে। উপবৃত্তাকার কক্ষপথে ইলেকট্রনের ভরবেগ পরিবর্তন হয়, তাই বোরের মডেল সরাসরি প্রযোজ্য নয়। ( তুলনায় বলতে পারি, পৃথিবী সূর্যকে ঘিরে উপবৃত্তাকার কক্ষপথে আবর্তন করে বলে তার বেগ সারাবছর সমান নয়। ডিসেম্বর মাসে যখন পৃথিবী সূর্যের সব থেকে কাছে তাকে তার বেগ সব থেকে বেশি হয়। আবার জুন মাসে সূর্য থেকে সর্বোচ্চ দূরত্বে থাকে বলে পৃথিবীর বেগ সেই সময় সব থেকে কম হয়। এটি কেপলারের দ্বিতীয় সূত্র।) সমারফেল্ডের মডেলে পরমাণুর মডেলে উপবৃত্তাকার কক্ষপথ যোগ করা সম্ভব হল। এর জন্য আরো নতুন কোয়ান্টাম সংখ্যার প্রয়োজন হয়েছিল। এর নাম কৌণিক কোয়ান্টাম সংখ্যা। এই সমস্ত কোয়ান্টাম সংখ্যার তাৎপর্য অবশ্য কোয়ান্টাম বলবিদ্যা আবিষ্কারের আগে পুরোপুরি বোঝা সম্ভব হয়নি।

সমারফেল্ডের মডেল তড়িৎক্ষেত্রে হাইড্রোজেনের বর্ণালীর পরিবর্তনকে ব্যাখ্যা করতে সম্ভব হয়েছিল। জোহানেস স্টার্ক দেখেছিলেন যে হাইড্রোজেন পরমাণুকে তড়িৎক্ষেত্রে রাখলে বর্ণালীর প্রতিটি রেখা একাধিক রেখাতে ভেঙে যায়। তড়িৎক্ষেত্রের মান বাড়ালে এই রেখাগুলোর মধ্যে ব্যবধান বাড়ে। স্টার্ক ভেবেছিলেন হাইড্রোজেন পরমাণুতে নিঃসন্দেহে একের বেশি ইলেকট্রন আছে, তা না হলে বোরের মডেল থেকে এতগুলি রেখা পাওয়া যেতে পারে না। সমারফেল্ডের মডেল প্রয়োগ করে কার্ল শোয়ারচাইল্ড ও সমারফেল্ডের একদা ছাত্র পল এপস্টাইন আলাদা আলাদাভাবে দেখালেন যে নতুন কোয়ান্টাম সংখ্যাগুলি প্রয়োগ করলে সহজেই এই ঘটনার ব্যাখ্যা সম্ভব, কারণ তড়িৎক্ষেত্র থাকলে হাইড্রোজেন পরমাণুর শক্তি স্তরের মান পরিবর্তন হয়ে যায়। তখন আর তাকে শুধুমাত্র বোর মডেলের কোয়ান্টাম সংখ্যা দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না, শক্তি স্তরগুলি এই নতুন কোয়ান্টাম সংখ্যার উপরও নির্ভর করে। ফলে একটি রেখার জায়গায় একাধিক রেখা পাওয়া যায়। একাধিক রেখার ব্যাখ্যার জন্য তাই একাধিক ইলেকট্রন লাগে না। প্রসঙ্গত শোয়ার্জচাইল্ড প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন, এবং সেখানে এক দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হন। যুদ্ধক্ষেত্র থেকেই তিনি তড়িৎক্ষেত্রে হাইড্রোজেন পরমাণুর বর্ণালীর ব্যাখ্যা করেছিলেন। তিনি আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা সমীকরণের প্রথম সমাধান দিয়েছিলেন, কৃষ্ণ গহ্বরের ব্যাসার্ধকে তাঁর নামে বলা হয় শোয়ার্জচাইল্ড ব্যাসার্ধ। সেই বিখ্যাত গবেষণাপত্রটিও যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পাঠানো। কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি মারা যান।

সমারফেল্ডের মডেলে একই সঙ্গে আরো একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কেও হিসাবে আনা সম্ভব হল, তা হল বিশেষ আপেক্ষিকতার জন্য ভরের পরিবর্তন। ১৯০৫ সালেই আইনস্টাইন দেখিয়েছিলেন বস্তুর ভর তার বেগের উপর নির্ভর করে। অবশ্য সাধারণ মানের বেগের জন্য বস্তুর ভরের পরিবর্তন ধর্তব্য নয়; বেগ যদি আলোর বেগের থেকে খুব কম না হয়, তাহলেই একমাত্র সেই পরিবর্তন চোখে পড়বে। উপবৃত্তাকার কক্ষপথে আবর্তনরত ইলেকট্রনের বেগ পথের সর্বত্র সমান নয়, ফলে তার ভরেরও পরিবর্তন হয়। সেক্ষেত্রে বেগের জন্য ভরের পরিবর্তনকে হিসাবে আনতে হবে। সেই কাজটা সমারফেল্ডের মডেলে করা যায়। সমারফেল্ড সেই অঙ্কটা কষলেন, এবং দেখালেন যে কোনো বিশেষ মুখ্য কোয়ান্টাম সংখ্যার জন্য যতগুলি কৌণিক কোয়ান্টাম সংখ্যা হয়, তাদের সকলের শক্তি স্তর আলাদা আলাদা, যদিও তারা পরস্পরের খুব কাছাকাছি অবস্থান করে। কয়েক মাসের মধ্যেই পরীক্ষা করে দেখা গেল যে দেখা গেল তাঁর গণনা একদম সঠিক।

পরমাণুর অভ্যন্তরে ইলেকট্রনদের বেগ পারমাণবিক সংখ্যার সমানুপাতী। হাইড্রোজেন পরমাণুর পারমাণবিক সংখ্যা এক, কিন্তু অন্য মৌলের পরমাণুর ক্ষেত্রে তা অনেক বেশি, যেমন সিসার 82 বা ইউরেনিয়ামের 92। এই সব মৌলের পরমাণুতে ইলেকট্রনের বেগ এত বেশি হয় যে তা আলোর বেগের কাছে পৌঁছে যায়। সে জন্য হাইড্রোজেন বর্ণালীতে এই বিভিন্ন শক্তি স্তরের মধ্যে পার্থক্য খুব কম, তাই আগে এই বিষয়টা দেখা যায়নি। একমাত্র খুব উন্নত বর্ণালীবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েই হাইড্রোজেন পরমাণুর শক্তি স্তরের এই বিভাজন পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব।

তড়িৎক্ষেত্রের মতো চৌম্বকক্ষেত্রেও পরমাণুর বর্ণালী বিশ্লিষ্ট হয় যায় বা একধিক রেখায় ভেঙে যায়। ১৮৯৬ সালে বিজ্ঞানী পিটার জিম্যান এই ঘটনা প্রথম দেখিয়েছিলেন। তার ব্যাখ্যা অবশ্য আরো জটিল। সমারফেল্ড ও পিটার ডিবাই আলাদা আলাদাভাবে দেখান যে শুধুমাত্র কৌণিক ভরবেগকে ধরে নিলেই তড়িৎ বা চৌম্বকক্ষেত্রে পরমাণুর বর্ণালীর সমস্ত চরিত্রের ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে না। বাইরে থেকে কোনো তড়িৎক্ষেত্র বা চৌম্বকক্ষেত্র প্রয়োগ করলে ইলেকট্রনের আবর্তনতল ওই ক্ষেত্রের সঙ্গে কয়েকটি নির্দিষ্ট কোণ করে থাকবে, এবং সেই কোণগুলির মানও প্লাঙ্কের ধ্রুবকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, এই অনুমানও জরুরি। ওই নির্দিষ্ট কোণগুলির মানের সঙ্গে সমারফেল্ডের নতুন কোয়ান্টাম সংখ্যা সংশ্লিষ্ট। এই নতুন কোয়ান্টাম সংখ্যাকে বলা হয় চৌম্বক কোয়ান্টাম সংখ্যা।

কোয়ান্টাম সংক্রান্ত আগের ধারণাগুলির থেকে এই বিষয়টা অনেকটাই আলাদা বলে মনে করা হচ্ছিল। এখানে শক্তি বা কৌণিক ভরবেগের মতো কোনো বিশেষ রাশির নয়, ইলেকট্রনের কক্ষপথ কোন দিকে ঘুরে থাকবে সে কথা বলা হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে যে তারও কতকগুলো নির্দিষ্ট অভিমুখ আছে। সেজন্য এই ধারণাকে বলা হল স্পেস বা স্থান কোয়ান্টাইজেশন।

সমারফেল্ড ছিলেন আদ্যন্ত জার্মান, কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে জার্মানিতে যে উন্মাদনা দেখা দিয়েছিল, তিনি তার শরিক হননি। প্লাঙ্কের অধ্যায়ে আমরা দেখেছি যে বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির বেলজিয়াম অধিকার সমর্থন করে তিরানব্বই জন বুদ্ধিজীবী এক প্রচারপত্রে সই করেছিলেন, সমারফেল্ড তাঁদের মধ্যে ছিলেন না। পরে কিন্তু তিনি আর নিরপেক্ষ থাকতে পারেননি, জার্মান যুদ্ধোন্মাদনার শিকার হয়ে পড়েছিলেন, এবং জার্মানির পরাজয়ের পরে হতাশ হয়ে পরেছিলেন, যদিও পড়াশোনা বা গবেষণা তাতে প্রভাবিত হয়নি। তবে ১৯৩০-এর দশকে নাৎসিদের চূড়ান্ত জাতীয়তাবাদী মতকে তিনি মেনে নিতে পারেননি। হিটলারের আমলে ইহুদি বিজ্ঞানীদের সমর্থনের জন্য এবং আইনস্টাইনের তত্ত্ব পড়ানোর জন্য তিনি প্লাঙ্ক ও হাইজেনবার্গের মতোই নাৎসিদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। ইহুদি ছাত্ররা যাতে বিদেশে কাজ করার সুযোগ পায়, তার জন্য তিনি নানা চেষ্টা করেছিলেন। হল্যান্ডে তাঁকে কয়েকটি বক্তৃতা দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়, তিনি তার জন্য অনেক টাকা চেয়েছিলেন। উদ্যোক্তারা অবাক হলেও রাজি হলেন। পুরো টাকাটাই তিনি ইংল্যান্ডে পালিয়ে যাওয়া জার্মান বিজ্ঞানীদের জন্য দান করে দিয়েছিলেন, অন্য কোনো ভাবে জার্মানি থেকে টাকা পাঠানোর উপায় ছিল না। শেষ পর্যন্ত তাঁকে অবসর নিতে বাধ্য করা হয়, এবং সেই পদে তাঁর পছন্দের হাইজেনবার্গের জায়গায় এমন এক ব্যক্তিকে নিয়োগ করা হয় যাঁর তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে কোন জ্ঞানই ছিল না। ছ'বছর পরে জার্মানি পরাজিত হলে সমারফেল্ড আবার পড়ানো শুরু করেন।

সমারফেল্ডের সঙ্গে ভারতীয় বিজ্ঞানীদের সম্পর্ক ছিল বেশ গভীর। মেঘনাদ সাহা জার্মানিতে থাকার সময় সমারফেল্ড তাঁর গবেষণাপত্র পড়ে তাঁকে মিউনিখে আমন্ত্রণ জানান। সেই সময়ে রবীন্দ্রনাথও মিউনিখে গিয়েছিলেন, সমারফেল্ড তাঁর সঙ্গে দেখা করেন, মেঘনাদকেও তিনিই রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে পরিচয় করান। রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিত্ব তাঁকে মুগ্ধ করেছিল, তাই কয়েক বছর পরে তিনি যখন ভারতে আসেন, শান্তিনিকেতনে কবির সান্নিধ্যে কয়েকদিন কাটান।

সমারফেল্ডের কলকাতা আসার পিছনে ছিল মেঘনাদ সাহা ও চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রামনের প্রয়াস। রামনের বিখ্যাত আবিষ্কার হয়েছিল ১৯২৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি। সমারফেল্ড তার কয়েকমাস পরে রামনকে এক চিঠিতে তাঁর আবিষ্কারের ভূয়সী প্রশংসা করে লিখেছিলেন, “আপনি একটা দারুণ পরীক্ষা করেছেন, আমরা সকলেই এই নিয়ে খুব উৎসাহী। জাপান আধুনিক পদার্থবিদ্যা নিয়ে আরো অনেকদিন কাজ করছে, সেখান থেকে তো আপনার কাজের সঙ্গে তুলনীয় কিছু এখনো বেরোয়নি।” সমারফেল্ডের সমর্থন ইউরোপে রামনের স্বীকৃতি আদায়ে সাহায্য করেছিল। 


 

সমারফেল্ড কলকাতা আসেন সে বছর অক্টোবর মাসে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সাম্মানিক ডিএসসি উপাধি দিয়েছিল। তিনি সেখানে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার উপরে কয়েকটি বক্তৃতা দিয়েছিলেন। সেগুলির নোট নিয়েছিলেন কে এস কৃষ্ণন ও নিখিলরঞ্জন সেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেই নোটগুলি বই আকারে প্রকাশিত হয়েছিল, Lectures on Wave Mechanics নামের সেই বইটি কোয়ান্টাম বলবিদ্যা বিষয়ে পৃথিবীর প্রথম বইগুলির অন্যতম। তিনি রামনের মূল কর্মক্ষেত্র ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স-এও সময় কাটিয়েছিলেন। তাঁর ডায়েরিতে অ্যাসোসিয়েশিনের কাজকর্মের প্রশংসার সঙ্গে বাথরুমগুলো যে খুব খারাপ সে কথা লিখতে তিনি ভোলেননি! দেশে ফিরে তিনি এক পত্রিকাতে প্রবন্ধ লিখে ভারতের বিজ্ঞান গবেষণার প্রশংসা করেছিলেন। লিখেছিলেন যে তা ইউরোপ ও আমেরিকার সঙ্গে একই স্তরে অবস্থান করছে। বিশেষ করে তিনি রামন ও সাহার উল্লেখ করেছিলেন। অনেক বছর পরে এক বিজ্ঞানী ভারতীয় গবেষণা সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করাতে তিনি প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন। এক পথ দুর্ঘটনায় ১৯৫১ সালের ২৬ এপ্রিল তিনি মারা যান। যে বছর তাঁর মৃত্যু হয়, সেই বছরেও তাঁর সমর্থনে চারটি মনোনয়ন জমা পড়েছিল; একজন মনোনয়নকারী ছিলেন মেঘনাদ সাহা। 

 

No comments:

Post a Comment