Saturday 3 November 2018

শতবর্ষ পেরিয়ে অধ্যাপক বাসন্তীদুলাল নাগচৌধুরি


শতবর্ষ পেরিয়ে অধ্যাপক বাসন্তীদুলাল নাগচৌধুরি
গৌতম গঙ্গোপাধ্যায়
       গত বছর অধ্যাপক বাসন্তীদুলাল নাগচৌধুরির জন্মের একশ বছর অতিক্রান্ত হল। সাধারণভাবে তিনি বিডি নাগচৌধুরি নামেই পরিচিত হয়েছিলেন। ভারতের প্রথম নিউক্লিয় পদার্থবিদদের মধ্যে তাঁর নাম উল্লেখযোগ্য। ভারত সরকারের বিভিন্ন বিজ্ঞান বিষয়ক কমিটিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। সেজন্য  তিনি পদ্মবিভূষণ সম্মান পেয়েছিলেন। মেঘনাদ সাহার সংস্পর্শে এসে তাঁর জীবনের ধারা নির্ধারিত হয়েছিল। এই সংক্ষিপ্ত নিবন্ধে আমরা তাঁর জীবনের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায়ের প্রতি দৃষ্টি রাখব।


       বাসন্তীদুলালের জন্ম কলকাতায় ১৯১৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বরতাঁদের পৈতৃক বাড়ি অবিভক্ত ভারতের ঢাকার কাছে বারোদি গ্রামেবাবা উমেশচন্দ্র নাগ ছিলেন ইংরাজির অধ্যাপক, তিনি বিভিন্ন সময়ে স্কটিশ চার্চ কলেজ, বিদ্যাসাগর কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রংপুর কলেজে পড়িয়েছিলেন। পরে তিনি বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরাজি বিভাগে যোগ দেন বাসন্তীদুলালের মাতামহ ছিলেন জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার ডায়রেক্টর। মা লীলামঞ্জরীও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক বোঝাই যায় তাঁদের বাড়িতে লেখাপড়ার চল ছিল, বাসন্তীদুলাল ছোটবেলা থেকেই ছিলেন একনিষ্ঠ পাঠক। উমেশচন্দ্র লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরাজি সাহিত্যে ডক্টরেট করেছিলেন। বাসন্তীদুলালের এক ছোটো ভাই ডাক্তারি পাস করার পরে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণা করে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন ও বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সসে শারীরবিদ্যা বিভাগে অধ্যাপনা করেন। মাত্র তেরো বছর বয়সে বাসন্তীদুলাল বেনারস হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়ে উত্তীর্ণ হন। বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বিএসসিতে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। তারপর পদার্থবিদ্যাতে এমএসসি পড়ার জন্য ভর্তি হন এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সালটা ছিল ১৯৩৫।
       এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাওয়ার অন্যতম কারণ ছিল সেখানে তখন পড়াচ্ছেন মেঘনাদ সাহা১৯২৩ থেকে ১৯৩৮, এই পনের বছর সাহা এলাহাবাদে ছিলেন। বাসন্তীদুলাল তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। এই সময়ই বাসন্তীদুলাল বিপ্লবী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন, কয়েকবার লক আপেও    কাটিয়েছিলেন। তাঁকে দেখে মেঘনাদের নিজের ছাত্রাবস্থার কথা মনে পড়েছিল। তিনিও অনুশীলন সমিতি ও যুগান্তর দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, বাঘা যতীন তাঁকে বলেন মেঘনাদের মতো মেধাবী ছেলেদের সরাসরি স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ না নিয়ে বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে দেশের মুখ উজ্জ্বল করার চেষ্টা করা উচিত। বাসন্তীদুলালকে সাহা বোঝালেন পড়াশোনা করাটা কতটা জরুরি, পুলিশের হাত থেকে বাঁচাতে হস্টেল থেকে নিয়ে এসে নিজের বাড়িতেই কিছুদিন লুকিয়ে রেখেছিলেন।
       বাসন্তীদুলাল এমএসসি পাস করার পরে পরেই মেঘনাদ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা বিভাগে পালিত অধ্যাপকের পদে যোগ দেন। বাসন্তীদুলালও তাঁর সঙ্গে কলকাতায় আসেন। পরমাণু শক্তি তখনও ভবিষ্যতের স্বপ্ন, কিন্তু মেঘনাদ সাহা তখনই নিউক্লিয় পদার্থবিজ্ঞানের গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিলেন। কলকাতাতে শুরু করলেন নিউক্লিয় পদার্থবিজ্ঞানের পাঠক্রম। কিন্তু সে কাজে প্রধান অন্তরায় হল যন্ত্রপাতির অভাব। পদার্থবিজ্ঞানের মূল কথা হল পরীক্ষানিরীক্ষা, কিন্তু যন্ত্র না থাকলে তা সম্ভব নয়। নিউক্লিয় পদার্থবিজ্ঞানে প্রথম যেটা দরকার তা হল কণাত্বরক। দুটি নিউক্লিয়াসের মধ্যে বিক্রিয়া ঘটানো শক্ত কারণ নিউক্লিয়াসের আধান ধনাত্মক, তাই এক নিউক্লিয়াস অন্য নিউক্লিয়াসকে বিকর্ষণ করে। সেই বিকর্ষণকে অগ্রাহ্য করে বিক্রিয়া তখনই হতে পারে যখন সংঘর্ষরত দুটি নিউক্লিয়াসের মধ্যে অন্তত একটার গতিশক্তি খুব বেশি। নিউক্লিয়াসের গতিশক্তি বাড়াতে পারে কণাত্বরক বা অ্যাক্সিলারেটর। মেঘনাদ বুঝলেন নিউক্লিয় বিজ্ঞানে গবেষণার চাবিকাঠি হল কণাত্বরক।
       সেই সময় সবচেয়ে আধুনিক কণাত্বরক হল সাইক্লোট্রন। সাইক্লোট্রন যন্ত্রে একটা কণাকে প্রায় বৃত্তাকার পথে বারবার ঘোরানো হয় এবং অল্প অল্প করে তার শক্তি বাড়ানো হয়। সাইক্লোট্রনের আবিষ্কর্তা আর্নেস্ট লরেন্স, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলেতে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আছেন। লরেন্স মেঘনাদের পূর্বপরিচিত, মেঘনাদ ১৯৩৭ সালে তাঁর অতিথি হিসাবে গিয়ে লরেন্সের সাইক্লোট্রন দেখেছেন। মেঘনাদ বাসন্তীদুলালকে বার্কলেতে পাঠালেন গবেষণার জন্য। তরুণ বাসন্তীদুলালের কাছে সে এক নতুন অভিজ্ঞতা, কী করতে হবে তা নিয়ে তাঁর নিজের কোনো স্পষ্ট ধারণাই নেই। সেটা ছিল ১৯৩৮ সালের দ্বিতীয় অর্ধ। পরের বছর লরেন্স পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পাবেন। সে বছরই শুরু হবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে যোগদান করে ১৯৪১ সালের শেষে।
       ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বাসন্তীদুলাল ডক্টরেট করেন লরেন্সেরই ল্যাবরেটরিতে অপর এক ভবিষ্যৎ নোবেল জয়ীর কাছে কাজ করে, তাঁর নাম এমিলিও সেগ্রে। সেগ্রে ১৯৫৯ সালে অ্যান্টিপ্রোটন আবিষ্কারের জন্য পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পাবেন। নভেম্বর মাসে ডক্টরেটের জন্য থিসিস জমা দিলেন বাসন্তীদুলাল, বিষয় ছিল তিনটি নতুন কৃত্রিম তেজস্ক্রিয় মৌল যেগুলি বার্কলেতে বানানো সম্ভব হয়েছে। কৃত্রিম তেজস্ক্রিয়া বিষয়ে তাঁর আগ্রহ চিরদিন থাকবে। ১৯৪১ সালে দেশে ফিরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন তিনি।
       এর মধ্যে অনেক ঘটনা ঘটেছে। সাহা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা সাইক্লোট্রনের জন্য অর্থ সংগ্রহ  করেছেন, মূল লক্ষ্য চিকিৎসাতে নিউক্লিয় পদার্থবিজ্ঞানের প্রয়োগ। নেহরুর চেষ্টায় টাটারা তাঁকে ষাট হাজার টাকা দিয়েছেন টাটা ট্রাস্টের কাছে লেখা চিঠিতে মেঘনাদ সাইক্লোট্রনের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য বাসন্তীদুলালের নামই লিখেছিলেন। অনেক টালবাহানার পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট সেই টাকা নিতে রাজি হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ও সমপরিমাণ টাকা দে। সাইক্লোট্রনের জন্য লরেন্সের সঙ্গে কথা বলেছেন সাহা, লরেন্স রাজি হয়েছেন যন্ত্রাংশ পাঠাতে। লরেন্স ও ডোনাল্ড কুকসের তত্ত্বাবধানে আমেরিকান রোলিং মিলস কোম্পানি সাইক্লোট্রনের পরিকল্পনা ও মূল যন্ত্রাংশগুলি তৈরি করে। যন্ত্রাংশের দাম অবশ্য অনেক বেশি, কিছু কিছু বার্কলে থেকে উপহার হিসাবে পাওয়া গেল। মেঘনাদ বাসন্তীদুলালকে সাইক্লোট্রন অফিসার পদে নিয়োগ করে যন্ত্রাংশ কলকাতায় পাঠানোর ভার দিয়েছেনবাসন্তীদুলাল সেই দায়িত্ব পালন করেছেন। সেটা মোটেই সহজ কাজ ছিলনা। সাইক্লোট্রনে যে তড়িৎচুম্বক লাগে তারই ওজন ছিল পঞ্চাশ টন। দেশে ফেরার আগে সমস্ত যন্ত্রপাতি পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন বাসন্তীদুলাল।
       ১৯৪২ সালে সাইক্লোট্রনের জন্য আলাদা করে বাড়ি তৈরি করতে হয়। মেঘনাদ পদার্থবিদ্যা বিভাগের ভিতরেই তৈরি করলেন ইন্সটিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স। সাইক্লোট্রনের বিপুল পরিমাণ যন্ত্রাংশ একসঙ্গে আসা সম্ভব নয়। ১৯৪১ সালের শেষে জাপান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আক্রমণ করেছে, আমেরিকাও যুদ্ধে যোগ দিয়েছে। ফলে জাহাজ চলাচলে সমস্যা দেখা দিয়েছে। বাকি সব কিছু এলেও ভ্যাকুয়াম পাম্পগুলি যে মালবাহী জাহাজে আসছিল তা সিঙ্গাপুরের কাছে জাপানি আক্রমণে ডুবে যায়। শান্তিস্বরূপ ভাটনগরের নেতৃত্বাধীন বোর্ড অফ সায়েন্টিফিক রিসার্চ সাইক্লোট্রন তৈরির জন্য দেড় লক্ষ টাকা মঞ্জুর করলেও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ার্কশপে অত সূক্ষ্ম পাম্প তৈরির সমস্ত চেষ্টাই ব্যর্থ হয়। ফলে সাইক্লোট্রনের কাজ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। কাজ শুরু করার জন্য বাসন্তীদুলালকে আবার বার্কলেতে ফিরে যেতে হয় ১৯৪৭ সালে। সেখানে একবছর তিনি সাইক্লোট্রনের উপর কাজ করেন। লরেন্স তাঁকে আবার সাহায্য করেছিলেন। ১৯৫৪ সালে সেগ্রে কলকাতায় এসেছিলেন, তিনি সাইক্লোট্রনের বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি নিয়মিত চিঠিতেও মতামত পাঠাতেন। অবশেষে ১৯৬০ সালে সাইক্লোট্রন আংশিক কাজ শুরু করল। যন্ত্র পুরোপুরি কার্যকর হতে লেগে গিয়েছিল ১৯৬৬ সাল।
       সেই যুগের পরিস্থিতির কথা চিন্তা করলে আমরা হয়তো বিডি নাগচৌধুরিদের সামনে সমস্যার গভীরতাটা বুঝতে পারব। সাইক্লোট্রন এমন যন্ত্র নয় যে কিনে এনে বসিয়ে দেওয়া যাবে। বিভিন্ন অংশ বিদেশ থেকে নিয়ে এলেও তাদের একসঙ্গে করে বসানোর কাজটা মোটেই সহজ নয়, সে সময় ভারতে কোনো  বিশেষজ্ঞ থাকার প্রশ্নই ওঠে না। ইঞ্জিনিয়ারিঙের সমস্যা সমাধান করতে হত পদার্থবিজ্ঞানীদের। যুদ্ধের জন্য অনেক জিনিস দেশে অমিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ার্কশপ এই ধরনের কাজের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই। মেঘনাদের সঙ্গে নেহরুর সম্পর্ক ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। ১৯৪০-এর দশকে দেশের বিজ্ঞান গবেষণার অনুদানকে নিয়ন্ত্রণ করেন শান্তিস্বরূপ ভাটনগর ও হোমি জাহাঙ্গির ভাবা ভাবার সঙ্গে মেঘনাদের সম্পর্ক কোনোদিনই ভালো নয়, ভাটনগরের সঙ্গেও  তাঁর পুরানো বন্ধুত্ব নানা কারণে ভেঙে যাওয়ার মুখে। ফলে কলকাতার ইন্সটিটিউটের জন্য অর্থ বরাদ্দও নিতান্ত অপ্রতুল। বিজ্ঞানীর সংখ্যাও কম, যৌথ ভাবে কাজ করার অভ্যাস তখনো দেশে গড়ে ওঠেনি। বাসন্তীদুলালকে মূলত তরুণ ছাত্রদের সহায়তায় কাজ করতে হয়েছিল। রাঁচির হেভি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসে সাহায্য তিনি নিয়েছিলেন। মেশিন দেখাশোনার জন্য ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ ১৯৫০-এর দশকের শেষ দিকের আগে সম্ভব হয়নি।     
       বিডি নাগচৌধুরি সাইক্লোট্রন অফিসারের দায়িত্ব পালন করার সঙ্গে সঙ্গে ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবৈতনিক লেকচারার। ১৯৪৬ সালে হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম তারিণীচরণ শূর রিডার, সেই পদে ছিলেন ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত।  মেঘনাদ সাহা শূর এনামেল এন্ড স্টাম্পিং ওয়ার্কসের থেকে দুই লক্ষ টাকা জোগাড় করেছিলেন এই পদের জন্য। মেঘনাদ সাহা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তারকনাথ পালিত অধ্যাপক হিসাবে অবসর নেওয়ার পরে ১৯৫৩ সালে বাসন্তীদুলাল ওই পদে যোগদান করেন। ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন পালিত অধ্যাপক। মেঘনাদ সাহা ১৯৫১ সালে লোকসভাতে নির্বাচিত হন। ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দি কাল্টিভেশন অফ সায়েন্সের দায়িত্ব তিনি নিয়েছিলেন আরো অনেক আগেই, প্রথমে সচিব, মাঝে সভাপতি ও দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে অধিকর্তা। তিনি বহু কাজের মাঝে সময় কম পাচ্ছেন, তাই তাঁর অনুপস্থিতিতে বাসন্তীদুলালকে ইন্সটিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। ১৯৫৬ সালে সাহার মৃত্যুর পরে বাসন্তীদুলাল ইন্সটিটিউটের কার্যকরী অধিকর্তার দায়িত্ব নেন। ১৯৫৯ থেকে ১৯৬৭ তিনি ছিলেন ইন্সটিটিউটের অধিকর্তা, তখন তার নাম হয়েছে সাহা ইন্সটিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স। অল্প কিছুদিন তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উর্বানাতে ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয় ও বার্কলেতে অতিথি অধ্যাপক ছিলেন, ১৯৬৭-৬৭ সালে হয়েছিলেন সে দেশের লিঙ্কন অধ্যাপক।
এক জটিল সময়ে তিনি সাহা ইন্সটিটিউট পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন, মেঘনাদ সাহার চেষ্টাতে দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাতে বরাদ্দ হয়েছে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা। এতদিন পর্যন্ত যে পরিমাণ অর্থ ইন্সটিটিউটে এসেছিল, এ তার থেকে কয়েক গুণ বেশি। কিন্তু টাকা আসার আগেই সাহার মৃত্যু ইন্সটিটিউটের ভবিষ্যৎকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছিলে। বিশেষ করে দেশের উঁচু মহলে অনেকেরই সঙ্গে সাহার নীতি ও মতের পার্থক্য ছিল, ইন্সটিটিউটের অকালমৃত্যু ঘটলে তাঁরা খুব দুঃখিত হতেন না। ইন্সটিটিউট তৈরি হয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে, কিন্তু ১৯৫১ সাল থেকেই তা স্বশাসিত। অর্থের প্রায় সবটাই আসে ডিপার্টমেন্ট অফ অ্যাটমিক এনার্জি থেকে। ফলে রাজ্য সরকার, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও ইন্সটিটিউটের মধ্যে এক ত্রিপাক্ষিক চুক্তি অনুসারে ইন্সটিটিউট পরিচালিত হয়। এই জটিলতার মধ্যেও বাসন্তীদুলালের চেষ্টাতে সাহা ইন্সটিটিউট আরো প্রসারিত হয়। তৃতীয় পরিকল্পনাতে সাহা ইন্সটিটিউটের বরাদ্দ আবারও দুগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পায়। বাসন্তীদুলাল যখন অধিকর্তার দায়িত্ব ছেড়ে গেলেন, তার পরের এক বছরেই কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে ইন্সটিটিউট পেয়েছিল একচল্লিশ লক্ষ টাকারও বেশি। তাঁর সময়েই সাহা ইন্সটিটিউটে নিউট্রন জেনারেটর, পারমাণবিক ভরের বর্ণালীবীক্ষ যন্ত্র, নিউক্লিয় ম্যাগনেটিক রেসোন্যান্স যন্ত্র ইত্যাদি তৈরি হয়েছিল। সাইক্লোট্রনের কথা আগেই বলেছি। নিউক্লিয় পদার্থবিদ্যাতে তত্ত্বীয় গবেষণার জন্য নতুন বিভাগের জন্মও হয় তাঁরই উৎসাহে। প্লাজমা পদার্থবিদ্যাতে গবেষণা শুরু করার জন্য তিনি টোকিয়ো বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। বিজ্ঞান প্রশাসনের ক্ষেত্রে তাঁর দক্ষতা প্রশ্নাতীত।
       এই দক্ষতারই সুবাদে হয়তো তাঁর কথা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছে পৌঁছয়। ১৯৬৭ সালে ডাক আসে প্ল্যানিং কমিশন থেকে। ১৯৬৭ থেকে ১৯৭০ ছিলেন কমিশনের বিজ্ঞান বিষয়ক সদস্য। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭২ বিজ্ঞান প্রযুক্তি সংক্রান্ত ক্যাবিনেট কমিটির সভাপতি, ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ ডিফেন্স রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ডিআরডিও) ডিরেক্টর জেনারেল ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা, ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৮ দিল্লীর জহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ১৯৭৯ থেকে ১৯৮১ বিজ্ঞান প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত মানবসম্পদ সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি  -- এক কর্মময় জীবনের চালচিত্র। এর সঙ্গে লিখেছেন পরিকল্পনা, উন্নয়ন, পরিবেশ ইত্যাদি বিষয়ে বহু প্রবন্ধ, নানা পত্রিকায় সেগুলি প্রকাশিত হয়েছে।
       বিজ্ঞানী হিসাবে বিডি নাগচৌধুরি কেমন ছিলেন, সে কথা বিচার করতে গেলে কয়েকটা কথা মনে রাখা প্রয়োজন। মেঘনাদ সাহার নির্দেশে তিনি সাইক্লোট্রন তৈরির কাজে লেগেছিলেন। আমরা দেখেছি কোন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তাঁকে প্রায় আড়াই দশক সেই বিষয়ে কাজ করতে হয়েছে। মাত্র ছত্রিশ বছর বয়সেই তাঁকে ইন্সটিটিউটের দায়িত্ব নিতে হয়েছিল। নানা সমস্যা, অনেকের বিরোধিতা, এ সমস্ত তাঁকে অতিক্রম করতে হয়েছিল।  এর পরে পঞ্চাশ বছর বয়সে তাঁকে সম্পূর্ণ অন্য দায়িত্ব নিতে হয়েছিল। দেশ গঠনের সে আহ্বানে তিনি সাড়া দিয়েছিলেন। তাই অন্য অনেকের মতো বিজ্ঞান নিমগ্ন থাকার সুযোগ তাঁর হয়নি। তার মধ্যেই তিনি নিউক্লিয় বিজ্ঞানে সাইক্লোট্রন তৈরির দায়িত্ব পালন করা ছাড়াও নানা বিষয়ে গবেষণা করেছেন। কৃত্রিম তেজস্ক্রিয়া বিষয়ে তাঁর উৎসাহ ছিল, জীবপদার্থবিজ্ঞানে সেই ধরনের পদার্থের প্রয়োগে তিনি দেশের মধ্যে অগ্রগণ্য ছিলেন। তেজস্ক্রিয়তা মেপে পাথরের বয়স নির্ণয় করাতে দেশে তিনি পথিকৃৎ। তাঁরই উৎসাহে সাহা ইন্সটিটিউটে প্লাজমা বিষয়ে গবেষণার সূচনা হয়। অর্ধপরিবাহী পদার্থ বিষয়েও তিনি গবেষণা করেছেন। দেশেবিদেশে নানা বিখ্যাত জার্নালে তাঁর অনেকগুলি গবেষণা পত্র প্রকাশিত হয়েছিল।  
বাসন্তীদুলালের চরিত্রের মধ্যে পরস্পর বিরোধিতা ছিল না বললে অন্যায় হবে। ১৯৬৮ সালে প্ল্যানিং কমিশনের সদস্য হিসাবে এক লেখায় তিনি লিখেছিলেন যে ভারতের বিজ্ঞানীদের কিছুটা ঝুঁকি নিতে উৎসাহ দেওয়া উচিত। আমরা জানি যে তাঁর শিক্ষক মেঘনাদ সাহা জীবনে বহুবার ঝুঁকি নিয়েছিলেন -- সাইক্লোট্রন তৈরি করার সিদ্ধান্ত তার একটা বড় উদাহরণ। এক দশকের বেশি ইন্সটিটিউট পরিচালনাতে কিন্তু বাসন্তীদুলাল নাগচৌধুরিকে সেই রকম কোনো ভূমিকাতে দেখা যায়নি।  বিজ্ঞানীদের মধ্যে মত বিনিময়ের গুরুত্ব বোঝাতে ১৯৬৯ সালে এক প্রবন্ধে তিনি লিখেছিলেন, ‘(দেশে) বিজ্ঞানভিত্তিক সমালোচনা ও মূল্যায়নের শক্তিশালী ঐতিহ্য গড়ে ওঠার মতো সময় পাওয়া যায়নি। সরকারি প্রশাসন কেন্দ্রীভূতই আছে, বিস্তারিত তথ্য প্রায়শই আমলাতন্ত্রের কবলে ... এই পরিস্থিতিতে স্বেচ্ছাচারী ও পায়াভারি কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে বিজ্ঞান প্রযুক্তির বিকাশ বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।‘ সাহা ইন্সটিটিউটে ও পরে বিশেষ করে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে কাজ করার সময় বিডি নাগচৌধুরিকে নিশ্চয় এই সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল, পুরোপুরি সমাধান ছিল তাঁর ক্ষমতার অতীত।
মেঘনাদ সাহা হয়তো ডিআরডিওর অধিকর্তার আসনে তাঁর ছাত্রকে দেখলে অবাক হয়ে যেতেন। সাহা গবেষণাতে গোপনীয়তার বিরোধী ছিলেন, তা নিয়ে তাঁর সঙ্গে নেহরু বা হোমি জাহাঙ্গির ভাবার বিরোধও লেগেছে বারবার। তবে কখনোই তা প্রকাশ্যে যাতে না আসে তা নিয়ে সাহা সচেতন ছিলেন। প্রতিরক্ষা গবেষণা বিষয়ে সাহার আদর্শবাদী চিন্তাধারাও হয়তো ষাটের বা সত্তরের দশকের  পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খেত না।  প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশে তাঁকে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বহু গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব নিতে হয়েছিল। তার মধ্যে দুটির উল্লেখ করা প্রয়োজন। ১৯৭০ সাল থেকেই ডিআরডিও ভারতে মিসাইল তৈরির কাজে হাত লাগায়। বাসন্তীদুলালই হায়দ্রাবাদের ল্যাবরেটরিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বহন করে নিয়ে যান। প্রথম পরিকল্পনা ছিল অনেকটাই অবাস্তব, দুবছর পরে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে তা অনেকটা পরিবর্তন করেন বাসন্তীদুলাল। এভাবেই ভ্যালিয়ান্ট মিসাইল প্রকল্পের জন্ম। এছাড়া ১৯৭৪ সালের পোখরানে পরমাণু বোমা বিস্ফোরণেও ডিআরডিওর ডিরেক্টর জেনারেল হিসাবে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
তাঁর অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে তিনি বেশ কিছু প্রবন্ধ ও বক্তৃতায় বিজ্ঞান প্রশাসন সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। প্রশাসন ও বিজ্ঞানীর মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে তাঁর লেখার কথা আগেই উল্লেখ করেছি। ল্যাবরেটরির মধ্যে সমালোচনা ও বিতর্কের প্রয়োজনীয়তার কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেছিলেন প্রতিষ্ঠানের আমলাতন্ত্রের চাপে নবীন বিজ্ঞানীরা অনেক সময় বাঁধাধরা গবেষণার পথ বেছে নেন। তাঁদের মধ্যে হতাশা ও বিচ্ছিন্নতার জন্ম হয়। তরুণ ও প্রবীণ বিজ্ঞানীদের বেতনের বৈষম্যও এর একটা কারণ। নবীন বিজ্ঞানীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তাদের বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানে স্বশাসনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছিলেন সরকার অনেক সময় এদের যথাযথ সম্মান দেয় না। প্রশাসনের অধিকর্তাকে সেরা বিজ্ঞানী না হলেও চলবে, কিন্তু তাঁকে পরিচালনাতে দক্ষ হতে হবে। বিজ্ঞান গবেষণার চরিত্র যে বদলে গেছে, তাও তাঁর নজর এড়ায় নি। বার্কলেতে তিনি সাইক্লোটনকে কেন্দ্র করে একদল বিজ্ঞানীর একজন হিসাবে কাজ করেছেন, কলকাতাতে সাইক্লোট্রন গ্রুপ তৈরি করেছেন। তিনি দেখেছেন যে ব্যক্তিগত গবেষণাতে যে রকম খেয়ালখুশি মতো কাজ করা যায়, যৌথ গবেষণাতে সেই স্বাধীনতা পাওয়া যায় না। দেশ গঠনের কাজে বিজ্ঞানকে যুক্ত হতে হবে, তার জন্য যৌথ গবেষণার গুরুত্ব খুব বেশি। এই সমস্ত বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা অর্জন করতে পেরেছিলেন বলেই তিনি স্বশাসিত গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি বিজ্ঞান দপ্তর দুইই সাফল্যের সঙ্গে পরিচালনা করেছিলেন।
শিক্ষা বিষয়েও তাঁর চিন্তাধারা ছিল স্বচ্ছ। আধুনিক যুগে আমরা আন্তঃবিষয়ক গবেষণার কথা বলি, বাসন্তীদুলাল ষাটের দশকেই এর গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিলেন । শিক্ষার ক্ষেত্রে শুধু বর্তমান নয়, তিনি বলতেন যে সমাজের ভবিষ্যৎ সমস্যার কথাও মাথায় রাখতে হবে। তিনি বিশ্বাস করতেন যে ধার করা প্রযুক্তি হল পিছিয়ে থাকা প্রযুক্তি। তাঁর উপাচার্য থাকার সময় জহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য প্রসারণ ঘটেছিল।
       বিডি নাগচৌধুরির অপর এক দিকের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা দরকার, তা হল পরিবেশ বিষয়ে তাঁর চিন্তা। ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৭ তিনি ছিলেন পরিবেশ ও পরিকল্পনার সমন্বয় সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সভাপতি। পরিবেশ বিষয়ে তাঁর বেশ কিছু কাজ আছে। ১৯৮৭ সালে তিনি ও শালিগ্রাম ভাট ১৯৮৭ সালে একটি বই লেখেন, Global environment Movement: A New Hope for Mankind।  বইয়ের ভূমিকায় মেঘনাদ সাহার ছাত্র বিখ্যাত শিক্ষাবিদ দৌলত সিং কোঠারি লিখেছিলেন যে ভারতীয় চিন্তা ও দর্শনের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি বইটির বৈশিষ্ট্য, লেখকরা দেখিয়েছেন অহিংসা ও বিজ্ঞান ছাড়া মানুষের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। নাগচৌধুরিরা বলেছিলেন পরিবেশ আন্দোলনকে সারা বিশ্বের সঙ্গে একসঙ্গে দেখতে হবে। সারা বিশ্বকে একই সমাজ হিসাবে ভাবতে হবে। জহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর সময়েই শুরু হয় School on Environmental Sciences -- এর জন্য তিনি সেলিম আলির মতো পরিবেশবিদদের পরামর্শ নিয়েছিলেন। পরিবেশ সংক্রান্ত আইনের ক্ষেত্রে তিনি বিশেষজ্ঞ হিসাবে পরিচিত ছিলেন। রাষ্ট্রসংঘের পরিবেশ সংক্রান্ত কমিটির সদস্য ছিলেন ছ’বছর, ১৯৭৬ থেকে ১৯৮২।
সারা জীবনে অনেক স্বীকৃতি পেয়েছেন বিডি নাগচৌধুরি। ১৯৭৫ সালে দেশসেবার স্বীকৃতি হিসাবে তিনি পদ্মবিভূষণ সম্মানে ভূষিত হন। তিনি স্টকহোল্‌মের ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন অফ সায়েন্সের প্রোগ্রাম কমিটির সভাপতি ছিলেন ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত। তিন বছর ছিলেন ওই সংগঠনের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য। ইতালির ট্রিয়েস্টের ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর থিওরেটিকাল ফিজিক্সের সায়েন্টিফিক কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৪। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের ও বিদেশের নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতির তিনি ছিলেন সদস্য। দেশের তিনটি বিজ্ঞান অ্যাকাডেমিরই তিনি ফেলো  নির্বাচিত হয়েছিলেন।
বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণে তিনি বিশেষ উৎসাহী ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের সঙ্গে যুক্তিবাদী বিজ্ঞানমনস্ক এই মানুষটির সম্পর্ক ছিল খুব নিবিড়। ১৯৮৬ সালে বিজ্ঞান মঞ্চ শুরু হয়েছিল। প্রতিষ্ঠার সময় থেকে বেশ কয়েক বছর তিনি ছিলেন সংগঠনের সভাপতি। তখনই তাঁর শরীর খুব ভালো নয়, অন্য ব্যস্ততাও আছে। তার মধ্যেও সময় করে মঞ্চের খবর রাখতেন। বিজ্ঞান মঞ্চ প্রকাশিত একটি বইয়ের ভূমিকাতে তিনি লিখেছিলেন নতুন ভারতবর্ষ গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন যুক্তিনির্ভর চেতনা ও বিজ্ঞান মানসিকতা। কুসংস্কার দূর করে ভারতের যুক্তিবাদী চিন্তাধারার ঐতিহ্যকে সামনে আনতে হবে। অন্যত্র তিনি ব্যক্তিগত জীবনে যে বিজ্ঞানীরা ধর্মীয় কুসংস্কার কাটিয়ে উঠতে পারেন না, তাঁদের তীব্র সমালোচনা করেছেন।
ব্যক্তি জীবনে তিনি খুব সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। তাঁর স্ত্রী ছিলেন বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী দীপালি নাগ। তাঁদের বাড়িতে রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্রের মতো অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তির সমাগম ঘটেছিল। তাঁদের এক পুত্র দীপঙ্করও অধ্যাপক। বিডি পরে বেহালাতে জমি কিনে বাড়ি করেছিলেন।  বাসন্তীদুলালের সহকর্মীরা মনে করতে পারেন যে ছোটো গাড়ি নিজেই চালিয়ে তিনি সাহা ইন্সটিটিউটে বা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে আসতেন, সহকর্মীদের জোরাজুরি করতেন গাড়িতে ওঠার জন্য। তাঁর অনুজ সহকর্মীরা স্মৃতিচারণ করেছেন যে গাড়িটা খুব নতুন ছিল না, মাঝে মাঝেই খারাপ হত, ঠেলতে হত। ইন্সটিটিউটের ছাত্রদের সমস্যার দিকে খেয়াল রাখতেন। তাঁর অধীনে গবেষণা করে অনেকেই ডক্টরেট করেছেন, তাঁর সবাই পরবর্তীকালে নিজেদের ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত। ২০০৪ সালের ২৬ জুন তাঁর মৃত্যু হয়।
তথ্যসুত্রঃ
১। স্মৃতিচিত্রঃ অধ্যাপক বাসন্তীদুলাল নাগ চৌধুরি – শ্যামল চক্রবর্তী
২। Nucleus and the Nation- Robert Anderson
৩। Basanti Dulal Nag Chaudhuri, Biographical Memoirs of the Fellows of Indian National Science Academy – Atri Mukhopadhyay

প্রকাশঃ জনবিজ্ঞানের ইস্তাহার শারদীয় ২০১৮ (পরিমার্জিত)


No comments:

Post a Comment