দুই বন্ধু
গৌতম গঙ্গোপাধ্যায়
দুই বন্ধুর প্রথম দেখা হয়েছিল ১৯১১ সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে। একজন ওই কলেজেরই ছাত্র, ইন্টারমিডিয়েট পাস করে বিএসসি ম্যাথামেটিক্স ক্লাসে ভর্তি হয়েছেন। অন্যজন একই ক্লাসের নতুন ছাত্র। তবে একে অন্যের নাম জানতেন। কারণ ম্যাট্রিক ও ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষাতে তাঁরা ছিলেন পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী। একজন দুটি পরীক্ষাতেই তৃতীয় হয়েছিলেন। অন্যজন ম্যাট্রিকে পঞ্চম, ইন্টারমিডিয়েটে প্রথম। প্রথমজনের নাম মেঘনাদ সাহা, দ্বিতীয়জনের নাম সত্যেন্দ্রনাথ বসু। প্রথম পরিচয় কেমন করে হয়েছিল কেউ লিখে যাননি। নিখিলরঞ্জন সেন মেঘনাদের সঙ্গে ঢাকাতে পড়েছিলেন, আবার ইন্টারমিডিয়েট পড়েছিলেন কলকাতাতে সত্যেনের সঙ্গে; হয়তো তিনিই দুজনের আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন। সেই থেকে দুই বন্ধুর জীবন এক গ্রন্থিতে বাঁধা পড়েছিল।
মেঘনাদের জন্ম হয়েছিল ১৮৯৩ সালের ৬ অক্টোবর ঢাকার কাছে শেওড়াতলি গ্রামে, সত্যেনের তার পরের বছর ১ জানুয়ারি কলকাতার গোয়াবাগানে। তাঁদের বয়সের তফাত তিন মাসেরও কম, জন্মস্থানের দূরত্ব তিনশো কিলোমিটার। সে যুগের যোগাযোগ ব্যবস্থার বিচারে তিনশো কিলোমিটার দূরত্বটা খুব কম নয়। কিন্তু তাঁরা জন্মসূত্রে বাঙালি সমাজের এমন দুই স্তরের বাসিন্দা, ইতিহাসের সেই মুহূর্তে যাদের মধ্যে দূরত্বকে কিলোমিটারে প্রকাশ করতে পারলে তার মাপ হতো আরো অনেক বেশি। জাতের বিচারে মেঘনাদ ছিলেন বৈশ্য সাহা, বাঙালী হিন্দু সমাজে তখন যাদের স্থান ছিল অত্যন্ত নিচু। একাধিকবার তাঁকে স্কুল কলেজের সরস্বতী পূজার মণ্ডপ থেকে বার করে দেওয়া হয়। কলকাতার হিন্দু হস্টেলে অন্য ছাত্রদের সঙ্গে বসে খাওয়ার অধিকার তাঁর ছিল না। সত্যেন্দ্রনাথের পরিবার কুলীন কায়স্থ, তাঁকে কখনো এই পরিস্থিতির সামনে পড়তে হয়নি।
শুধু জাতপাতের বিচারে নয়, আর্থিক অবস্থাতেও দুজনের অনেক অমিল। মেঘনাদের পরিবার ছিল হতদরিদ্র, গ্রাম্য মুদি বাবা জগন্নাথ ছেলের পড়া ছাড়িয়ে দোকানে বসাতে চেয়েছিলেন। কখনো অন্যের বাড়িতে থেকে, কখনো বা ছাত্রবৃত্তির উপর ভরসা করে পড়াশোনা চালিয়েছেন মেঘনাদ। মা শেষ সম্বল হাতের বালা বিক্রি করে ছেলের ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার ফি ভরেছেন। সত্যেন্দ্রনাথের বাবা সুরেন্দ্রনাথ ছিলেন রেলের চাকুরে, পাশাপাশি ইন্ডিয়ান কেমিক্যাল এন্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস বলে এক কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা। সেকালের বিচারে বাঙালী সমাজে তাঁরা যথেষ্ট সচ্ছল। আর্থিক সমস্যা কখনো সত্যেনের শিক্ষালাভের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।
সত্যেন্দ্রনাথ পড়েছিলেন কলকাতার তিনটি স্কুলে। নর্মাল স্কুল ছিল বাড়ির কাছে, বাড়ি পরিবর্তন করার পরে পড়েছিলেন নিউ ইন্ডিয়ান স্কুলে। সবশেষে তাঁর বাবা তাঁকে হিন্দু স্কুলে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করেছিলেন যাতে তাঁর প্রতিভা সঠিক দিশা পায়। ম্যাট্রিক পাস করে ভর্তি হলেন হিন্দু স্কুল থেকে রাস্তা পেরিয়ে প্রেসিডেন্সি কলেজে। মেঘনাদের পড়াশোনা শুরু পাঠশালায়, তারপর গ্রামে স্কুল না থাকায় দূরের শিমুলিয়া গ্রামে গিয়ে অন্যের বাড়িতে থেকে পড়াশোনা। ছাত্রবৃত্তির টাকা সম্বল করে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল, কিন্তু বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের উত্তাল সময়ে বাংলার ছোটোলাটকে বিক্ষোভ দেখানোর অপরাধে সেখান থেকে বিতাড়ন। অগত্যা ভরসা ঢাকার কিশোরীলাল জুবিলি স্কুল। ম্যাট্রিক পাস করার পরে ঢাকা কলেজ। সেখান থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা পাস করলেন।
প্রেসিডেন্সি কলেজ তখন গোটা এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে নামকরা কলেজ। সারা বাংলাদেশ এমনকি বাংলার বাইরে থেকেও ছেলেরা এসে সেই কলেজে ভর্তি হয়। মেঘনাদ সত্যেন দুজনেই সেখানে গণিতে অনার্স নিয়ে পড়লেন। দু বছর পরে বিএসসি পাস করলেন দুজনে, ভর্তি হলে প্রেসিডেন্সির কলেজের এমএসসিতে। দুজনেরই বিষয় এক, মিশ্র গণিত। ১৯১৫ সালে এমএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন দুই বন্ধু। বিএসসি এবং এমএসসি, দুই পরীক্ষার ফলই এক। প্রথম সত্যেন্দ্রনাথ বসু, দ্বিতীয় মেঘনাদ সাহা।
কেমন কেটেছে কলেজের চার বছর? দুজনেই আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রের খুব প্রিয় ছাত্র, জগদীশচন্দ্রের কাছেও পড়েছেন। কলেজে দুজনের বন্ধুত্ব হয়েছে আরো কয়েকজনের সঙ্গে যাঁরা ভবিষ্যতে ভারতবর্ষের বিজ্ঞানের স্থপতি হিসাবে কাজ করবেন -- রসায়নে জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ, জ্ঞানেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, নীলরতন ধর, গণিতে নিখিলরঞ্জন সেন, পদার্থবিদ্যাতে প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ, স্নেহময় দত্ত। কলেজে বন্ধুত্ব হলেও দুজনের খুব ঘনিষ্ঠতা হয়নি; সেই ঘনিষ্ঠতা আসবে পরে, গবেষণা ও অধ্যাপনার সময়। কলেজ ছাত্র সত্যেনের ঘনিষ্ঠ বন্ধুবৃত্ত বিরাট, সেখানে অক্লেশে স্থান পায় বয়সে ছোটরা, আর্টস বা অন্য বিষয় নিয়ে পড়া ছাত্ররা, সঙ্গীত বা শিল্পকলাতে উৎসাহীরা। পরে তাঁদের অনেকেই বিখ্যাত হবেন। প্রতিদিন বিকাল সন্ধেতে হেদোর পুকুরের ধারে তাঁদের আড্ডা বসে, কিন্তু সেখানে মেঘনাদের উপস্থিতির খবর পাই না। অবশ্য তাঁর সেখানে যাওয়ার সময়ও নেই, খরচ চালাতে সাইকেল চড়ে কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ টিউশনি করে বেড়াতে হয় তাঁকে। তাই মেঘনাদের বন্ধুবৃত্ত কলেজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বাঙাল ভাষাতে কথা বলা শহুরে আদবকায়দা না জানা ছাত্রটিকে নাগরিক কলকাতা আপন করে নেয়নি। মেঘনাদের সামাজিক হেনস্থার প্রতিবাদে তাঁর সঙ্গেই হিন্দু হস্টেল ছেড়েছিলেন জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ, ভূপেন্দ্রনাথ ঘোষ ও নীলরতন ধর, কিন্তু সত্যেন্দ্রনাথ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি। অনেক বছর পরে সত্যেন্দ্রনাথ তাঁর স্মৃতিচারণে সে সময় মেঘনাদের পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ না করাটা তাঁর ভুল বলেই স্বীকার করবেন।
কলেজের বাইরে কলকাতাতে মেঘনাদের ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল কিছু মানুষের সঙ্গে। তাঁদের মধ্যে সবার আগে থাকবেন যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। সেই নামে তাঁকে কেউ কেউ হয়তো চিনতেন না, কিন্তু যুগান্তর দলের বিপ্লবী নেতা বাঘা যতীন তখন সকলের কাছেই পরিচিত। ঢাকাতে থাকাকালীন অনুশীলন সমিতির নেতা পুলিনবিহারী দাসের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল মেঘনাদের, সেই সূত্রেই বাঘা যতীনের সঙ্গে আলাপ। মেঘনাদ চেয়েছিলেন তাঁর দলে যোগ দিতে, বাঘা যতীন তাঁকে ফিরিয়ে দিলেন। বললেন, “দেশসেবাতে তোমার পথ ভিন্ন।” চাকরি পাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল বিপ্লবীদের সঙ্গে মেঘনাদের যোগাযোগ। রয়্যাল সোসাইটির ফেলো হওয়াও পিছিয়ে গিয়েছিল। প্রথমবার বিদেশ থেকে ফেরার সময় বার্লিন থেকে মেঘনাদ নিয়ে এসেছিলেন সেই সঙ্কেতবার্তা, যা প্রবাসী ও দেশের সশস্ত্র বিপ্লবীদের পরস্পরকে চিনতে সাহায্য করবে।
সত্যেন্দ্রনাথ কি কখনো বিদেশী শাসন থেকে মুক্তির কথা ভাবেননি? আইনস্টাইন তাঁকে জিজ্ঞাসা করবেন, “ধরুন আপনার সামনে একটা বোতাম আছে যা টিপলেই দেশ ইংরাজ শাসন মুক্ত হবে। আপনি কী করবেন?” সত্যেন্দ্রনাথের উত্তর, “কোন চিন্তা না করেই টিপে দেব।” গরীব ঘরের যে ছেলেরা পয়সার অভাবে স্কুলে ভর্তি হতে পারে না, কলেজে পড়ার অবসরে তাদেরকে বিনা মাইনেতে পড়াতেন সত্যেন। সেই নাইট স্কুল চালাত বিপ্লবীরা। প্রিন্সিপাল ছিলেন প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক ডি এন মল্লিক। প্রথমবার বিদেশ যাওয়ার সময় সত্যেন্দ্রনাথ মারফত বার্লিনে প্রবাসী ভারতীয় বিপ্লবীদের কাছে অর্থ পৌঁছেছিল। তাসখন্দে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মানবেন্দ্রনাথ রায়ের সহযোগী অবনী মুখার্জী কলকাতাতে এসে সত্যেন্দ্রনাথের সাহায্যে অনুশীলন সমিতির বিপ্লবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, ঢাকাতেও তাঁর সাহায্য পেয়েছিলেন। প্রৌঢ় সত্যেন্দ্রনাথকে প্রশ্ন করেছিলেন ছাত্র, মেঘনাদ বা সত্যেন্দ্রনাথের সাফল্যের পিছনে অনুপ্রেরণা কী ছিল। সত্যেন্দ্রনাথ উত্তর দিয়েছিলেন, “দ্যাখ, আমাদের মনে হত সাহেবরা যা পারে, আমরা তা পারবো না কেন? বিজ্ঞানে আমরা যে সাহেবদের চেয়ে কম নই, তা দেখিয়ে দিতে হবে।”
এমএসসি পাস করলেন দুজনে, এবার কী? মেঘনাদ ভাবলেন চাকরি করবেন, কিন্তু বাদ সাধল সরকার। বিপ্লবীদের সঙ্গে যোগাযোগের সন্দেহে ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের পরীক্ষাতে বসার অনুমতি মিলল না। সত্যেন কয়েক জায়গায় দরখাস্ত করলেন, সঙ্গে ডি এন মল্লিকের সুপারিশ পত্র। এমএসসিতে রেকর্ড নাম্বার পেয়েছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ, তা দেখে ডি এন মল্লিক বলেছিলেন, “এত নম্বর পেয়েছ পরীক্ষায়, বড় বেমানান লাগছে হে।” গুরুবাক্য মিথ্যা হয়নি। বিহারের কলেজ বা কলকাতার আবহাওয়া অফিস একই কথা বলে ফিরিয়ে দিল, তারা সেকেন্ড ক্লাস এমএসসি খুঁজছে। এত ভালো ছাত্র তাদের দরকার নেই।
দুজনেরই ইচ্ছা গবেষণা করবেন, কিন্তু সুযোগ কোথায়? এক সহপাঠী শৈলেন্দ্রনাথ ঘোষ এসে খবর দিলেন, তিনজনকে ডেকেছেন স্যার আশুতোষ। ১৯১৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ থেকে সরে যাওয়ার ঠিক আগে বিজ্ঞান কলেজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন তিনি। সেখানে ১৯১৬ সাল থেকে চালু হবে পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নে এমএসসি পড়ানো ও গবেষণা। উপাচার্য পদে না থাকলেও আশুতোষই বিজ্ঞান কলেজের প্রাণ। রসায়ন বিভাগে আছেন দুই অধ্যাপক, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় ও প্রফুল্লচন্দ্র মিত্র। পদার্থবিজ্ঞানে দুই অধ্যাপকের একজন সি ভি রামন কেন্দ্রীয় সরকারের চাকুরে, তখনো ছাড়পত্র পাননি। অন্যজন দেবেন্দ্রমোহন বসু উচ্চশিক্ষার জন্য জার্মানিতে গিয়েছিলে। বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়াতে আটকা পড়েছেন। ছাত্রদের পড়াবে কে? দুই বন্ধুর সম্পর্কে তিনি খবর নিয়েছেন। গণিতের ছাত্র হলে কি হবে, তারা যে পদার্থবিদ্যা পড়াতে পারবে সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত।
দুজনকে ডেকে পাঠালেন বাংলার বাঘ। সত্যেনকে দায়িত্ব দিলেন আপেক্ষিকতা পড়ানোর, মেঘনাদ পড়াবেন কোয়ান্টাম তত্ত্ব। তাঁদের পদ হল পদার্থবিজ্ঞানে পালিত অধ্যাপকের সহকারী, যদিও পালিত অধ্যাপক পদে আরো এক বছরেরও বেশি পরে যোগ দেবেন রামন। নামে সহকারী হলেও অবশ্য দুই বন্ধু কোনোদিনই রামনের সঙ্গে কাজ করেন নি, চিরকালই গবেষণাতে তাঁরা স্বাধীন। শৈলেনের উপর দায়িত্ব পড়েছিল পদার্থবিদ্যা বিভাগের ল্যাবরেটরি তৈরির। সে সুযোগ তাঁর হয়নি, কিন্তু সে অন্য গল্প।
কাজ সহজ নয়, পড়াতে হবে এমন দুটি বিষয় যেগুলি তখন সদ্যোজাত। কোয়ান্টাম তত্ত্বের জন্ম হয়েছে ১৯০০ সালে, তা তখনো পরিবর্তনশীল। সাধারণ আপেক্ষিকতা বিষয়ে আইনস্টাইনের তত্ত্ব প্রকাশিত হয় ১৯১৫ সালে, তার পরের বছরেই তা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রমে ঢুকবে। গণিতে এমএসসি পড়তে গিয়ে সত্যেন ও মেঘনাদ পদার্থবিদ্যার এই দুই নতুন তত্ত্বের সম্মুখীন হননি। তার থেকেও বড়ো সমস্যা হল বিষয়দুটি নতুন বলে কোনো পাঠ্যবই নেই। ছাত্রদের পড়াবেন কেমন করে? বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসে লেখা আছে শিক্ষকরা মূল গবেষণাপত্র থেকে পড়াবেন। কিন্তু সেখানেও সমস্যা। দুটি বিষয়েই অধিকাংশ গবেষণাপত্রগুলি জার্মান ভাষায় লেখা -- কারণ যাঁরা কাজগুলি করছেন, তাঁদের মধ্যে অধিকাংশ বিজ্ঞানীই জার্মান। সে যুগে তাঁরা প্রবন্ধ লেখেন তাঁদের মাতৃভাষায়।
মেঘনাদ জার্মান কিছুটা জানতেন, ইন্টারমিডিয়েটে পড়েছিলেন। সত্যেন্দ্রনাথ শিখেছিলেন ফরাসি, তাতে চলবে না। দুজনে মিলে ভর্তি হয়ে গেলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মান শেখার ক্লাসে। সেখানে সহপাঠী পেলেন আর এক বিখ্যাত পণ্ডিতকে, ভাষাচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়। নিজেরা শিখলেন, কিন্তু ছাত্রদের কী হবে? তাদের সবার পক্ষে তো একটা নতুন ভাষা শেখা সম্ভব নয়। ভেবেচিন্তে দুই বন্ধু আইনস্টাইনের কাছ থেকে তাঁর আপেক্ষিকতা সংক্রান্ত গবেষণাপত্রগুলি অনুবাদ করে ছাপা অনুমতি চাইলেন। অনুমতি দিলেন আইনস্টাইন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হল আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্বের মূল গবেষণাপত্রগুলির প্রথম ইংরাজি অনুবাদ। অনুবাদক মেঘনাদ সাহা ও সত্যেন্দ্রনাথ বসু। ভূমিকা লিখলেন তাঁদের থেকে এক বছরের সিনিয়র প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থবিজ্ঞানের তরুণ শিক্ষক প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশ।
দুজনেই হাতড়াচ্ছেন গবেষণার পথ। কখনো কখনো তাঁদের উৎসাহ এক জায়গায় এসে মেলে। গ্যাসের অবস্থার সমীকরণ সংক্রান্ত একটি গবেষণাপত্র লিখে ফেললেন দুই বন্ধু, সেটি সত্যেন্দ্রনাথের প্রথম পেপার। সেই গবেষণা ছিল তাপগতিবিদ্যার সঙ্গে যুক্ত। তাপগতিবিদ্যার তাত্ত্বিক ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করে পরিসংখ্যানগত বলবিদ্যা। দুই বন্ধুর দুই শ্রেষ্ঠ কীর্তি সাহা সমীকরণ ও বোস-আইনস্টাইন সংখ্যায়ন দুইই পদার্থবিদ্যার এই শাখার মধ্যেই পড়বে, সেই যৌথ গবেষণা তাঁদের ভবিষ্যৎ পথে প্রথম পদক্ষেপ। কিন্তু সেই শেষ, আর কোনো গবেষণাপত্রের লেখক তালিকায় একই সঙ্গে দুই বন্ধুর উপস্থিতি পাওয়া যাবে না।
এবার ভিন্ন পথে বয়ে চলল দুজনের জীবনধারা। থিসিস জমা দিলেন মেঘনাদ, পেলেন ডক্টরেট ডিগ্রি, ডিএসসি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বসে আবিষ্কার করলেন বিখ্যাত তাপ আয়নন সমীকরণ। নক্ষত্রের অভ্যন্তরে উঁকি মারার সেই চাবিকাঠিকে সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানী মহলে সাড়া জাগাল, শুরু হল জ্যোতির্পদার্থবিদ্যার নব যুগের। তা প্রকাশের আগেই অবশ্য মেঘনাদ পাড়ি দিয়েছেন ইংল্যান্ডে, সেখান থেকে জার্মানি। কিন্তু মন পড়ে রয়েছে দেশে। আশুতোষেরও মনে আছে তাঁর কথা, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পৃথিবীর বিজ্ঞানজগতে প্রথম তুলে ধরেছেন মেঘনাদ। তাই প্রথম সুযোগেই পদার্থবিদ্যা বিভাগে তৈরি করলেন এক নতুন পদ, খয়রা অধ্যাপক। মেঘনাদ এসে যোগ দিলেন সেই পদে। সেটা ১৯২১ সাল।
সত্যেন কিন্তু তার কয়েকমাস আগে কলকাতা ছেড়েছেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক পদ তাঁর মেলেনি। মেঘনাদের মতোই বিদেশে গবেষণার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু এক জায়গায় দুই বন্ধুর জীবনে তফাত হয়ে গিয়েছিল। এমএসসি পড়তে পড়তেই মায়ের আদেশ মেনে বিয়ে করেছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ; বিদেশে গবেষণার জন্য বৃত্তি তাই নিয়মের জালে আটকে গিয়েছিল। আশুতোষের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক মেঘনাদের মতো মসৃণ নয়। একবার তো আশুতোষের করা প্রশ্নপত্রে একটা অঙ্কের ভুল নিয়ে দুজনের তুমুল তর্ক হয়ে গেল। দশ বছর আগে ঢাকা ছেড়ে কলকাতায় এসেছিলেন মেঘনাদ, দশ বছর পরে কলকাতা থেকে ঢাকা গেলেন তাঁর বন্ধু। ১৯২১ সালেই যোগ দিলেন নতুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যার রিডার পদে। আশুতোষ অবশ্য তখন বেশি বেতন দিয়ে কলকাতায় ধরে রাখতে চেয়েছিলেন সত্যেন্দ্রনাথকে, রাজি হননি তিনি।
মেঘনাদ সত্যেন কেউই জানতেন না, ঢাকার চাকরির ক্ষেত্রেও দুজনে ছিলেন প্রতিদ্বন্দ্বী। মেঘনাদ বিদেশ থেকে আবেদন পাঠিয়েছিলেন, কলকাতায় এসে সত্যেনকে আবেদন করতে বলেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য ফিলিপ হার্টগ। ঢাকার পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রধান ওয়াল্টার জেনকিন্সের রিপোর্টে দুজনেরই প্রশংসা ছিল, শেষ পর্যন্ত সত্যেন্দ্রনাথের পক্ষেই তাঁর মত। তাই একই বছর উত্তর কলকাতার বাসিন্দা সত্যেন্দ্রনাথ গেলেন ঢাকা; ঢাকার অনতিদূরে জন্মানো মেঘনাদ হলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।
ঢাকা থেকে মেঘনাদকে চিঠিতে লিখলেন সত্যেন, ‘মাসখানেকের উপর তোমাদের দেশে এসেছি। এখানকার কাজ এখনও আরম্ভ হয়নি। তোমাদের ঢাকা কলেজে জিনিস অনেক ছিল, কিন্তু অযত্নে তাদের যে দুর্দশা হয়েছে তা বোধ হয় নিজেই জান।’
দুজনের কর্মস্থান আবার এক হবে ১৯৪৫ সালে যখন সত্যেন্দ্রনাথ ঢাকা থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যাবেন, হবেন খয়রা অধ্যাপক। কলকাতা ছেড়ে এসেছিলেন প্রতিশ্রুতিবান এক অখ্যাত তরুণ, ফিরে যাবেন পঞ্চাশোর্ধ্ব এক বিশ্ববিশ্রুত বিজ্ঞানী। মেঘনাদও মাঝে দেড় দশক এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে কাটিয়ে ১৯৩৮ সালে পালিত অধ্যাপক হিসাবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার যোগ দিয়েছেন। দুই বন্ধুই ততদিনে অনেক পরিণত, বিশেষ করে মেঘনাদ তো নানা কাজে ভীষণ ব্যস্ত। দুজনের মধ্যে যোগাযোগের সূত্র ততদিনে খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছে।
সত্যেন কলকাতা ছাড়ার পরে মেঘনাদ কলকাতায় বেশিদিন থাকতে পারেননি, রামনের সঙ্গে বিবাদের ফলে তিনি দু বছরের মধ্যেই চলে যান এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে এক ঝাঁক ছাত্র তৈরি করেছেন যাঁরা পরে দেশের নানা বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করবেন। সত্যেন্দ্রনাথের ছাত্রের সংখ্যা কম, তাঁদের কারোরই বিজ্ঞান প্রশাসনে আগ্রহ ছিল না। মেঘনাদ নিউক্লিয় পদার্থবিদ্যা বিষয়ে গবেষণার জন্য কলকাতাতে তৈরি করলেন ইন্সটিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স। তার বাইরেও কলকাতারই ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অফ কাল্টিভেশন অফ সায়েন্সের অধিকর্তা হয়েছিলেন, একইসঙ্গে দুটি প্রতিষ্ঠানকে সাফল্যের সঙ্গে পরিচালনা করেছিলেন মেঘনাদ। সত্যেন্দ্রনাথ হয়েছিলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য, সে অভিজ্ঞতা তাঁর পক্ষে খুব সুখের হয়নি। ১৯৫২ সালে মেঘনাদ সাহা বামপন্থীদের সমর্থিত নির্দল প্রার্থী হিসাবে কংগ্রেস প্রার্থীকে পরাজিত করে লোকসভায় নির্বাচিত হলেন, সেই বছরই রাজ্যসভার মনোনীত সদস্য হলেন সত্যেন্দ্রনাথ বসু। কিন্তু যৌথভাবে তাঁরা কোনো কাজ রাজনীতির অঙ্গনে করেননি।
বিজ্ঞান জগতের বাইরে তাঁদের দুজনেরই বিস্তার ছিল। সত্যেন্দ্রনাথের বহুমুখী প্রতিভা বিকাশের পথ খুঁজে নিয়েছিল সঙ্গীতে, শিল্পকলায়, সাহিত্যে। সত্যেন্দ্রনাথের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের মধ্যে ছিলেন গায়ক দিলীপকুমার রায় ও ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, কবি বিষ্ণু দে, শিল্পী যামিনী রায়। মেঘনাদ সত্যেন্দ্রনাথ দুজনেরই স্বপ্ন ছিল দেশের সেবা, পথ ছিল আলাদা। সত্যেন বিশ্বাস করতেন দেশের উন্নতির জন্য মাতৃভাষায় বিজ্ঞান শিক্ষা জরুরি। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার জন্য তৈরি করেছিলেন বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ। মেঘনাদ সাহার আগ্রহ ছিল দেশের উন্নতিতে সরাসরি বিজ্ঞানের প্রয়োগ, সেজন্য রাজনীতি জগতের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। লোকসভা নির্বাচনে দাঁড়ানো তারই অঙ্গ। সুভাষচন্দ্র, নেহরু, শ্যামাপ্রসাদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ হয়েছিল। শিল্পায়ন, জাতীয় পরিকল্পনা, নদী পরিকল্পনা, ক্যালেন্ডার সংস্কার – নানা বিষয়ে স্বাধীনতার আগে ও পরে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন মেঘনাদ।
নানা দিক থেকে দুজনে ছিলেন বিপরীত চরিত্রের মানুষ। মেঘনাদ সাহার পিতৃদত্ত নাম ছিল মেঘনাথ, সামাজিক বৈষম্যের শিকার কিশোর নিজেই মধুসূদনের কাব্যের চিরন্তন প্রতিবাদী চরিত্রটি থেকে বেছে নিয়েছিল নিজের নাম। শৈশব-কৈশোর-যৌবনে নানা অবহেলা-বঞ্চনার শিকার মেঘনাদ সবসময়েই নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন। এক বিদেশী বিজ্ঞানী একটি সূত্র আবিষ্কার করেছেন, মেঘনাদ বিখ্যাত বিদেশী পত্রিকাতে লিখে স্মরণ করিয়ে দিলেন অনেক বছর আগেই তিনি এই সূত্রের কথা লিখে গেছেন। অনেক বছর পরে একটা চিঠিতে মেঘনাদ লিখবেন, ‘ব্রিটিশ বিজ্ঞানীদের এক অংশ দীর্ঘদিন ধরে জ্যোতির্পদার্থবিদ্যাতে আমার প্রথম জীবনের অবদানকে ছোট করে দেখাচ্ছেন।’ সারা জীবন মেঘনাদ এই নিরাপত্তাহীনতার শিকার। খ্যাতি বিষয়ে সত্যেন্দ্রনাথের কোনো আগ্রহ নেই। আইনস্টাইন সত্যেন্দ্রনাথের সেই বিখ্যাত গবেষণাপত্রটি অনুবাদের সময় নিজের বিচারমতো একটি সংশোধন করে সত্যেন্দ্রনাথের প্রস্তাবিত মৌলিক কণার ঘূর্ণন প্রসঙ্গটি বাদ দিয়ে দেন। অল্প দিন পরেই দুই বিদেশি বিজ্ঞানী ঘূর্ণন সংক্রান্ত প্রকল্প স্বাধীনভাবে প্রস্তাব করবেন। তিনি যে এক অত্যন্ত মৌলিক আবিষ্কার থেকে বঞ্চিত হলেন, সত্যেনের তাতে তাপ উত্তাপ নেই। নানা কারণে তাঁর একসময়কার ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে মেঘনাদের সম্পর্ক খারাপ হয়েছে। সত্যেন্দ্রনাথ অজাতশত্রু।
১৯৫৬ সালে সাহার মৃত্যু পর্যন্ত দুই বন্ধু এক বিভাগে কাজ করলেও কৈশোর-যৌবনের বন্ধুত্বের সেই উত্তাপ আর কখনো ফিরে আসে নি। তাঁদের ছাত্ররা ১৯৪৭ সালের এক ঘটনার কথা বলেছেন। একদিন দুপুরবেলা মেঘনাদ সাহা সত্যেন্দ্রনাথের ঘরে ঢুকলেন। দুজনের এক মিটিঙে উপস্থিত হওয়ার কথা। ঘরে তখন উপস্থিত এক বংশীবাদক। মেঘনাদ সত্যেন্দ্রনাথকে মিটিঙের কথা মনে করিয়ে দিলেন। সত্যেন উত্তর দিলেন। ‘বাজনা শুনবে? এই লোকটা বাঁশীতে বেহাগ বাজাবে।’ মেঘনাদ উত্তর না দিয়ে হনহন করে বেরিয়ে গেলেন। এই শীতলতার পিছনে ব্যক্তিগত অসূয়ার স্থান ছিল না। সমস্যা হয়েছিল বিভাগ পরিচালনাতে। সত্যেন্দ্রনাথ বিভাগীয় প্রধান, বিভাগে সরকারি বেসরকারি অনুদান কম আসে আসে না। কিন্তু তা সমস্তই মেঘনাদের ইনস্টিটিউটের জন্য, বিভাগ পরিচালনাতে সত্যেন্দ্রনাথের হাত পা বাঁধা।
দুই ভিন্ন শহরে কাজের জন্য দুই বন্ধুর সম্পর্ক অপেক্ষাকৃত শীতল হয়ে পড়তেই পারে, কিন্তু সত্যেনের প্রতিভার উপর অগাধ আস্থা ছিল তাঁর বন্ধুর। ১৯৩৮ সালে ঢাকাতে এসেছিলেন মেঘনাদ সাহা। আয়নমণ্ডল থেকে বেতার তরঙ্গের প্রতিফলন বিষয়ে একটি কাজ করেছিলেন তিনি, সেই প্রসঙ্গে বক্তৃতা দিতে গিয়ে তিনি বলেন যে তিনি একটা জটিল সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। বন্ধুকে এ ব্যাপারে সাহায্য করার অনুরোধ জানান মেঘনাদ। বন্ধু তাঁকে নিরাশ করেননি – কয়েকদিন পরিশ্রমের পরেই সত্যেন্দ্রনাথ সমস্যাটির সমাধান করে ফেলেন।
![]() |
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সত্যেন্দ্রনাথ ও মেঘনাদ |
১৯২৪ সালের মার্চ মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা নিতে এসেছেন মেঘনাদ। আছেন সত্যেন্দ্রনাথের বাড়িতে; বন্ধুকে বললেন ঠিক আগের বছর বিকিরণ সংক্রান্ত ম্যাক্স প্লাঙ্কের সমীকরণ সম্পর্কিত সমস্যা নিয়ে দুটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। একটির লেখক উলফগ্যাং পাউলি। অন্যটি লিখেছিলেন পল এহরেনফেস্ট ও আলবার্ট আইনস্টাইন। প্রবন্ধ দুটি তিনি বন্ধুর কাছে রেখে যান, বিশেষ করে পাউলির প্রবন্ধটিতে একটা বিশেষ সমীকরণের দিকে তিনি সত্যেনকে নজর দিতে বলেন। সেই সমস্যার সমাধান করতে গিয়েই সত্যেন্দ্রনাথ এক নতুন সংখ্যায়নের প্রস্তাব করেছিলেন যাকে আমরা আজ বোস-আইনস্টাইন সংখ্যায়ন বলে চিনি। এর পরে আইনস্টাইনকে চিঠি লেখার গল্প আমাদের সকলেরই জানা। এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্বের বিজ্ঞানীমহলে বিখ্যাত হয়ে যান সত্যেন্দ্রনাথ। দুজনের বন্ধুত্বের স্মারক হয়ে থাকবে পদার্থবিজ্ঞানের নতুন শাখা কোয়ান্টাম পরিসংখ্যানবিদ্যার জন্মের এই ইতিহাস।
No comments:
Post a Comment