Wednesday, 19 March 2025

জড় তরঙ্গের শতবর্ষ

 

জড় তরঙ্গের শতবর্ষ

গৌতম গঙ্গোপাধ্যায়


বিংশ শতাব্দীর প্রথম তিন দশকে পদার্থবিজ্ঞানের জগতে যে উথালপাথাল ঘটেছিল, তার তুলনা পৃথিবীতে বিরল। কয়েক শতাব্দীব্যাপী জ্ঞানচর্চা বিশ্বপ্রকৃতি সম্পর্কে একটা ধারণা গড়ে তুলেছিল, এই সময়ে একের পর এক আবিষ্কার তা চুরমার করে দেয়। ১৯০০ সালে যে বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল, তা এখনো শেষ হয়নি, তার তাৎপর্য নিয়ে আজও তর্কবিতর্ক চলছে। ১৯০০ থেকে ১৯২৪ এই সময়টাকে বলা হয় পুরানো কোয়ান্টাম তত্ত্বের যুগ। এর পরই কোয়ান্টাম বলবিদ্যা আবিষ্কার হয়। এই বলবিদ্যার আবিষ্কারক হিসাবে আমরা সাধারণত দু'জনের নাম বলে থাকি, ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ ও এরউইন শ্রয়ডিঙ্গার। এই দু'জনের পথ সম্পূর্ণ ভিন্ন মনে হলেও পরে দেখা গিয়েছিল তাদের মধ্যে কোনো মূলগত পার্থক্য নেই। হাইজেনবার্গের গবেষণা অবশ্যই আগে প্রকাশিত হয়েছিল, কিন্তু আমরা এখন সাধারণভাবে শ্রয়ডিঙ্গারের তত্ত্বকেই ব্যবহার করি। শ্রয়ডিঙ্গারের আবিষ্কৃত সমীকরণটিকে বলা হয় তরঙ্গ বলবিদ্যা। কোয়ান্টাম তত্ত্বে সেই ধরনের তরঙ্গের কথা প্রথম বলেছিলেন ফরাসি বিজ্ঞানী লুই দ্য ব্রয়লি। সেই জন্য অনেকেই তাঁকেও কোয়ান্টাম বলবিদ্যার আবিষ্কারকদের মধ্যে ধরেন। দ্য ব্রয়লির সেই গবেষণা তাঁর ডক্টরেট থিসিসে প্রকাশ করেছিলেন, সেই সালটা ছিল ১৯২৪। কিন্তু তার আগের বছরেই সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে তিনি কয়েকটি গবেষণাপত্রে তাঁর মূল কথাগুলি প্রকাশ করেছিলেন, যদিও তখন তা কারো নজরে পড়েনি। সেই হিসাবে আমরা এখন কোয়ান্টাম বলবিদ্যার সূচনার শতবর্ষে প্রবেশ করেছি। এই লেখাতে আমরা দ্য ব্রয়লি ও তাঁর সেই আবিষ্কারের নিয়ে কিছু কথা আলোচনা করব। তার জন্য আমাদের কিছু পুরানো কথা জেনে নিতে হবে।

কোয়ান্টাম তত্ত্বের সূচনাতেই আছে মাক্স প্লাঙ্কের কোয়ান্টাম তত্ত্ব। যে বস্তু তার উপরে পড়া সমস্ত তড়িৎচৌম্বক রশ্মি বা বিকিরণ সম্পূর্ণ ভাবে শোষণ করে তাকে বলে কৃষ্ণ বস্তু। এই কৃষ্ণ বস্তুকে উত্তপ্ত করলে তার থেকে তড়িৎচৌম্বক তরঙ্গ বিকিরিত হয়। এই বিকিরণকে বলে সাম্যাবস্থার বিকিরণ, অর্থাৎ বস্তু ও বিকিরণ পরস্পরের সঙ্গে সাম্যাবস্থায় আছে; এক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কোন দৈর্ঘ্যের তরঙ্গ কত পরিমাণ বিকিরণ হবে তাপগতিবিদ্যার সূত্র থেকে তা খুব নিশ্চিত ভাবে বলা যায়। কিন্তু পরীক্ষাগারে পর্যবেক্ষণের সঙ্গে সেই হিসাব একেবারেই মিলছিল না। তার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ১৯০০ সালে মাক্স প্লাঙ্ক প্রথম কোয়ান্টাম তত্ত্বের ব্যবহার করেন। প্লাঙ্ক দেখান যে বিকিরণ বা শোষণের সময় তড়িৎচৌম্বক তরঙ্গের শক্তির পরিমাণ যেমন খুশি হতে পারে না; একটা নির্দিষ্ট ন্যূনতম পরিমাণের গুণিতক পরিমাণ শক্তি নির্গত বা শোষিত হয়। এই ন্যূনতম শক্তির পরিমাণকে প্লাঙ্ক বললেন কোয়ান্টাম। যদি তরঙ্গের কম্পাঙ্ক n  হয়, তাহলে কোয়ান্টামের শক্তির মাপ হল hn। এখানে h একটি ধ্রুবক, এখন আমরা তাকে বলি প্লাঙ্কের ধ্রুবক।

আলোও এক ধরনের তড়িৎচৌম্বক তরঙ্গ; পাঁচ বছর পরে আলোকতড়িৎ ক্রিয়ার ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে আইনস্টাইন দেখালেন যে আলোর কোয়ান্টাম তত্ত্ব এই ঘটনার সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারে। ধাতুর উপরে আলো ফেললে তার থেকে ইলেকট্রন বেরিয়ে আসে, একে বলে আলোকতড়িৎ ক্রিয়া। আইনস্টাইন দেখান যে এই কোয়ান্টামের নির্দিষ্ট ভরবেগ আছে, অর্থাৎ সে কণার মতো আচরণ করে।

১৯১৩ সালে নিল্‌স বোর তাঁর পরমাণুর মডেল প্রকাশ করেছিলেন। তিনি দেখালেন যে পরমাণুর নিউক্লিয়াসের চারপাশে ইলেকট্রনেরা যে কোনো কক্ষপথে ঘুরছে না, তাদের নির্দিষ্ট কতকগুলি কক্ষপথ আছে, এই ধরে নিলে পরমাণু থেকে নির্গত আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সঠিক ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব। সেই নির্দিষ্ট কক্ষপথগুলির কৌণিক ভরবেগের মান প্লাঙ্কের ধ্রুবকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তাঁদের গবেষণার স্বীকৃতি স্বরূপ প্লাঙ্ক, আইনস্টাইন ও বোর যথাক্রমে ১৯১৮, ১৯২১ ও ১৯২২ সালের নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত হন।

আধুনিক আলোক বিজ্ঞানের সূচনা হয়েছিলে আইজ্যাক নিউটনের হাত ধরে। বিজ্ঞানী রেনে দেকার্তে, রবার্ট হুক এবং ক্রিশ্চিয়ান হাইজেন্স বললেন আলো হল তরঙ্গ। নিউটন অবশ্য আলোকে তরঙ্গ বলে মানতে তৈরি ছিলেন না। তিনি মনে করেছিলেন যে আলো হল কণিকার স্রোত। ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়াতে টমাস ইয়ং পরীক্ষা করে প্রমাণ করেন আলো হল তরঙ্গ। মাইকেল ফ্যারাডে অনুমান করেন আলো হল তড়িৎ ও চুম্বক ক্ষেত্রের কম্পন, জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েলের তত্ত্ব থেকে তা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। বিজ্ঞানীরা যখন নিশ্চিত হয়েছিলেন যে আলো তরঙ্গ; ঠিক তখনই প্লাঙ্ক ও আইনস্টাইন আলোর কণিকাধর্ম প্রমাণ করলেন।

লুই দ্য ব্রয়লি প্লাঙ্ক ও আইনস্টাইন তত্ত্ব আত্মস্থ করলেন, কিন্তু গেলেন সম্পূর্ণ নতুন পথে। লুই যে বিজ্ঞানী হিসাবে বিশেষ পরিচিত ছিলেন তা নয়। তাঁর কাজের প্রসঙ্গে আইনস্টাইন অপর এক বিখ্যাত বিজ্ঞানী হেনড্রিক লরেঞ্জকে লিখেছিলেন, “আমাদের চেনা দ্য ব্রয়লির ভাই একটা খুব কৌতূহলোদ্দীপক কাজ করেছে।” দাদা মরিসের ভাই হিসাবেই তাঁর প্রাথমিক পরিচয় ছিল।

অভিজাতরা কখনো কখনো শখে বিজ্ঞান গবেষণাতে অংশগ্রহণ করেছেন। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানে তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান বিরল ঘটনা। আর্ল অফ রসে ঊনবিংশ শতাব্দীতে পৃথিবীর বৃহত্তম দূরবিনটি বানিয়েছিলেন, কিন্তু তা দিয়ে তিনি বিশেষ কোনো পর্যবেক্ষণ করতে পারেননি। অষ্টাদশ শতাব্দীর ইংল্যান্ডে লর্ড ক্যাভেন্ডিশের উদাহরণকে ব্যতিক্রমের মধ্যেই ধরতে হবে। বিংশ শতাব্দীর প্রথম চার দশকে প্যারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগে একশো তেরোজন অধ্যাপক নিয়োগ করা হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে মাত্র একজন এসেছিলেন অভিজাত বংশ থেকে। সুপরিচিত বিজ্ঞানী পল লাজভাঁর ঠাকুর্দা ছিলেন ক্ষুদ্র চাষী। ফরাসি নোবেলজয়ীদের মধ্যে জাঁ পের‍্যাঁর ঠাকুর্দা ছিলেন তালার মিস্ত্রি, পিয়ের কুরির বাবা ছিলেন ডাক্তার, মেরি কুরির বাবা শিক্ষক।

এই অধ্যাপকদের মধ্যে একমাত্র ব্যতিক্রমটি ছিলেন প্রিন্স এবং পরবর্তীকালের ডিউক লুই দ্য ব্রয়লি। শুধুমাত্র অভিজাত নয়, দ্য ব্রয়লিরা ছিলেন যথেষ্ট ধনী। প্যারির বাইরে ছিল তাঁদের বিরাট প্রাসাদ। সেখানেই ছিল লুইয়ের দাদা মরিসের পরীক্ষাগার। সে যুগে ইউরোপের সব থেকে উন্নত গবেষণাগারগুলোর মধ্যে তা ছিল অন্যতম। সত্যেন্দ্রনাথ বসু যখন ১৯২৪ সালে ফ্রান্সে যান, তখন সেই গবেষণাগারে তিনি অনেকটা সময় কাটিয়েছিলেন। ঘটনাচক্রে তাঁর গবেষণার সঙ্গে অনেক মিল লুইয়ের কাজের, কিন্তু তাঁদের সে সময় সাক্ষাৎ হয়নি।

লুই দ্য ব্রয়লির জন্ম ১৮৯২ সালের ১৫ আগস্ট। দাদা মরিস তাঁদের বংশে প্রথম বিজ্ঞান গবেষণাতে যোগ দেন। তাঁর এ বিষয়ে উৎসাহকে তাঁর পরিবার ভালো চোখে দেখেনি, তা সত্ত্বেও তিনি ১৯০৮ সালে নৌবাহিনী থেকে পদত্যাগ করে বিজ্ঞান গবেষণাতেই আত্মনিয়োগ করেন। তিনিই ছিলেন ভাই লুইয়ের অনুপ্রেরণা। অভিজাতরা সাধারণত প্রশাসন, সামরিক বাহিনী বা বৈদেশিক মন্ত্রকের উচ্চপদে যোগ দিতেন। লুইও সে জন্য ইতিহাস ও আইন বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। ১৯১১ সালে প্রথম সলভে সম্মেলন হয়েছিল বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে, মরিস সেখানে সচিবের কাজ করেছিলেন; সম্মেলনের কার্যবিবরণী তৈরিও তাঁর দায়িত্বের মধ্যে ছিল। লুই সেটা পড়ে এতটাই উৎসাহিত হন যে তিনি নিজের বিষয় পরিবর্তন করে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। সে সময় ইউরোপের অধিকাংশ দেশের মতোই ফ্রান্সেও সমস্ত যুবকের একুশ বছর বয়স হলে এক বছরের জন্য সামরিক বাহিনীতে কাজ করা বাধ্যতামূলক ছিল, লুই যোগ দেন ১৯১৩ সালে। পরের বছরই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়, ফলে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত তিনি জন্য সামরিক বাহিনীতে ছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই পড়াশোনাতে ছেদ পড়েছিল। লুই নিজে বলেছেন যে তার পরেও তিনি অনেকদিন বিজ্ঞানে মনোনিবেশ করতে পারেননি। 


 

যুদ্ধের পরে লুই আবার দাদার গবেষণাগারে কাজ শুরু করেছিলেন। মরিস সে সময় অণুপরমাণুর বর্ণালী এবং এক্স-রশ্মি নিয়ে কাজ করছিলেন, বিভিন্ন সময়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে আলোচনা হয়। ধাতুর উপর এক্স-রশ্মি ফেললে ইলেকট্রন বেরোয়, মরিস দেখালেন যে তার শক্তির ব্যাখ্যা একমাত্র আইনস্টাইনের আলোকতড়িৎ সূত্র মেনেই সম্ভব, অর্থাৎ আলো হল কোয়ান্টাম। মরিস এমনকি ১৯২২ সালে তাঁর এক বইতে এ কথাও লিখেছিলেন, “There is something kinetic in the vibratory radiation, and something periodic in the projection of corpuscles…the same reality manifests itself, sometimes under its kinetic face, some other times under its undulatory face.” সংক্ষেপে বলতে পারি, কণা ও তরঙ্গের মধ্যে অনেক মিল আছে, একই বাস্তবতা কখনো তরঙ্গ বা কখনো কণারূপে প্রকাশ পায়। মরিসের এই ধারণাই ভাইয়ের গবেষণাতে প্রকাশ পাবে। লুই পরে বলেছিলেন যে মরিসের সঙ্গে আলোচনা তাঁর চিন্তাধারাকে সঠিক পথে চালনা করেছিল।

মরিসের ল্যাবরেটরির পরীক্ষানিরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত থাকার ফলে লুই দ্য ব্রয়লি আইনস্টাইনের আলোর কোয়ান্টামে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করতেন, ১৯২১ সালে তিনি প্রথম যে গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন, সেখানে তিনি পরমাণুর সঙ্গে এক্স-রশ্মির ক্রিয়াপ্রতিক্রিয়া ব্যাখ্যা করতে আইনস্টাইন ও বোরের তত্ত্বের প্রয়োগ করেছিলেন। আলোর কণার স্থিরভর হল শূন্য, পরের বছর কৃষ্ণ বস্তুর বিকিরণ বিষয়ে গবেষণাতে দ্য ব্রয়লি আলোর কণার স্থিরভর শীন্য না লে তার ফল কী হতে পারে সেই বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন। সেই সময় তিনি মন্তব্য করেছিলেন যে আইনস্টাইনের আলোকতড়িৎ তত্ত্ব অনুযায়ী আলোর কোয়ান্টামের শক্তি E=hn


সুতরাং তার স্থিরভর শূন্য ধরে নিলে তার ভরবেগ (p) হল hn/c; এখানে হল আলোর বেগ।1

দ্য ব্রয়লি এর মধ্যেই আলোর কণার ভর থাকলে কী হতে পারে তা নিয়ে ভেবেছিলেন; এবার তাঁর মনে হল যে আলোকতরঙ্গের কণার যদি ভরবেগ থাকে, তাহলে কি ইলেকট্রনের মতো সাধারণ কণারও কোনো তরঙ্গধর্ম থাকতে পারে? এই হলো জড় তরঙ্গ বিষয়ে প্রথম চিন্তা। ১৯২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি এই বিষয়ে তাঁর প্রথম গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করেন। সেই হিসাবে আমরা এখন জড় তরঙ্গের শতবর্ষ পালন করছি। কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি একই বিষয়ে আরো কয়েকটি গবেষণাপত্র লেখেন।পরের বছর তিনি সরবোন অর্থাৎ প্যারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টরেটের জন্য তাঁর থিসিস জমা দেন, সেখানে তিনি জড় তরঙ্গ বিষয়ে তাঁর তাঁর চিন্তাভাবনাকে প্রকাশ করে লেখেন।

দ্য ব্রয়লির প্রকল্প নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা যাক। আমরা এখানে আধুনিক কালে দ্য ব্রয়লির তত্ত্ব কেমনভাবে পড়ানো হয় তা অনুসরণ করব। তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যাতে যে সমস্ত জটিল অঙ্ক আসে, তাদের কোনো প্রয়োজন আমাদের হবে না। দ্য ব্রয়লির কৃতিত্ব জটিল গণিতে নয়, সম্পূর্ণ নতুন এক চিন্তাতে। আইনস্টাইনের গবেষণা দ্য ব্রয়লিকে পথ দেখিয়েছিল। আগে দেখলাম, ফোটন কণার শক্তি ও আলোর কম্পাঙ্কের মধ্যে সম্পর্কটি হল E=hn এবং ফোটন কণার ভরবেগ হল hn/c। আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের (l)2 সাহায্যে লিখতে পারি

                                                 p=hl
দ্য ব্রয়লি বললেন, এই সম্পর্কটা শুধু আলো নয়, সমস্ত জড়বস্তুর জন্যও সত্য। প্রত্যেক গতিশীল বস্তুর একটি ভরবেগ আছে, সুতরাং তার একটি তরঙ্গদৈর্ঘ্য পাওয়া যাবে। এই হল দ্য ব্রয়লির তত্ত্ব।

বোরের পরমাণুর মডেলকে খুব সহজে ব্যাখ্যা করলেন দ্য ব্রয়লি। বোর বলেছিলেন যে পরমাণুর নিউক্লিয়াসের চারপাশে ইলেক্ট্রনগুলি কতকগুলো নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘোরে। সেগুলোকে বলে স্থায়ী কক্ষপথ। কিন্তু কেন সেগুলোই স্থায়ী, অন্যগুলো নয়, তার কোন ব্যাখ্যা বোর দিতে পারেননি। দ্য ব্রয়লির ব্যাখাটা নিচের ছবি থেকে পরিষ্কার হবে। কক্ষপথের ইলেকট্রনের একটা নির্দিষ্ট ভরবেগ আছে, সুতরাং তার তরঙ্গদৈর্ঘ্য আছে যা উপরের সূত্র থেকে পাওয়া যাবে। সেই কক্ষপথগুলোই স্থায়ী যেখানে কক্ষপথের দৈর্ঘ্য তরঙ্গদৈর্ঘ্যের পূর্ণ সংখ্যার গুণিতক হবে। বাঁদিকের ছবিতে ইলেকট্রন তরঙ্গ এই শর্তপূরণ করছে, ফলে তরঙ্গশীর্ষ ও তরঙ্গপাদগুলি স্থায়ী হচ্ছে। ডানদিকের ছবিতে এই শর্ত পূরণ হয় না, ফলে তরঙ্গশীর্ষ ইত্যাদি স্থায়ী হওয়া সম্ভব নয়। তাই কিছু কিছু কক্ষপথই একমাত্র স্থায়ী হয়। বোর স্থায়ী কক্ষপথের জন্য যে প্রাথমিক সূত্র দিয়েছিলেন, তা দ্য ব্রয়লির তত্ত্বের সঙ্গে অবিকল মিলে গেল।



বিষয়টা শুনতে সহজ হলেও তার তাৎপর্য ছিল খুব গভীর। দ্য ব্রয়লির থিসিসের পরীক্ষা হয় ১৯২৪ সালের ২৫ নভেম্বর। পরীক্ষকদের মধ্যে ছিলেন পিয়ের লাঁজেভা ও নোবেলজয়ী পদার্থবিদ জাঁ পের‍্যাঁ। শ্রোতাদের মধ্যে ছিলেন তরুণ আমেরিকান বিজ্ঞানী রবার্ট ভ্যান ডি গ্রাফ, তাঁর স্মৃতিচারণা থেকে জানা যায় দ্যা ব্রয়লি এমন নতুন কথা বলেছিলেন যে পরীক্ষকসহ উপস্থিত প্রায় সকলেরই বুঝতে অসুবিধা হয়েছিল। লাজেভাঁ ছিলেন থিসিসের সুপারভাইসার বা উপদেষ্টা। দ্য ব্রয়লি পরে বলেছেন যে লাজেভা প্রকল্পটির বিষয়ে সন্দিহান ছিলেন।3 জেনেভাতে তাঁর সঙ্গে আইনস্টাইনের দেখা হয়, আলোচনা প্রসঙ্গে সেই থিসিসের কথা আসে। আইনস্টাইন আগ্রহ দেখালে লাজেভাঁ প্যারিতে ফিরে লুই দ্য ব্রয়লিকে থিসিসের একটি কপি আইনস্টাইনকে পাঠাতে বলেন। আইনস্টাইন সেটি পড়ে লাজেভাঁকে ১৬ ডিসেম্বর ১৯২৪ লেখা এক চিঠিতে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। একই দিন হেনড্রিক লরেঞ্জকে আইনস্টাইন যে চিঠি লেখেন তার কথা আগেই এসেছে। সেখানে তিনি লেখেন যে দ্য ব্রয়লির কাজ হল প্রকৃতির গূঢ়তম রহস্যের উপর প্রথম ক্ষীণ আলোককিরণ।

আইনস্টাইন শুধু চিঠি লিখেই ক্ষান্ত থাকেননি। তার অল্প দিন আগে সত্যেন্দ্রনাথ তাঁর বিখ্যাত প্রবন্ধটি আইনস্টাইনকে পাঠিয়েছিলেন। সত্যেন্দ্রনাথ তাঁর সূত্রকে ভরহীন ফোটন কণার জন্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, আইনস্টাইন সেই সূত্রকে ভরযুক্ত কণিকার জন্য ব্যবহারের উপযোগী করেছিলেন, সেই নিয়ে তিনি পরপর তিনটি গবেষণা পত্র প্রকাশ করেছিলেন। সত্যেন্দ্রনাথ তাঁর বিখ্যাত চিঠিটি পাঠান ১৯২৪ সালের ২ জুন, আইনস্টাইন তাঁকে উত্তর দেন ২ জুলাই, সেদিনই তিনি প্রবন্ধটি প্রকাশের জন্য জমা দেন। এরপর ১০ জুলাই প্রুশিয়ান আকাডেমি তিনি এ বিষয়ে তাঁর প্রথম গবেষণাপত্রটি পাঠ করেন। খুব সম্ভবত এর পরে তিনি দ্য ব্রয়লির থিসিসটি হাতে পান। পরের বছর জানুয়ারি মাসের ৮ তারিখে তিনি দ্বিতীয় গবেষণাপত্রটি পাঠ করেন এবং সেখানে নতুন সংখ্যায়ন এবং দ্য ব্রয়লির কণাতরঙ্গ, এই দুইকেই ব্যবহার করেন। এই লেখাটি পড়েই দ্য ব্রয়লির কাজের প্রতি কোয়ান্টাম বলবিদ্যার অন্যতম স্রষ্টা শ্রয়ডিঙ্গারের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছিল, এবং শেষ পর্যন্ত তার থেকেই তিনি কণাতরঙ্গের জন্য একটি সমীকরণ প্রতিষ্ঠা করেন,4 যাকে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার দ্বিতীয় জন্ম বলা যায়। হাইজেনবার্গ আগেই অবশ্য তাঁর ম্যাট্রিক্স বলবিদ্যা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, কিন্তু শ্রয়ডিঙ্গারের সমীকরণের পরই কোয়ান্টাম বলবিদ্যার বিষয়টি কিছুটা বোধগম্য হয়। শ্রয়ডিঙ্গার আইনস্টাইনকে এক চিঠিতে লিখেছিলেন তাঁর জানুয়ারি মাসের গবেষণাপত্রটি তাঁর চোখে না পড়লে তিনি এ বিষয়ে চিন্তাভাবনাই শুরু করতেন না। দ্য ব্রয়লির থিসিস অ্যানালস ডে ফিজিক পত্রিকার ১৯২৫ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল, তবে সেটি সম্ভবত শ্রয়ডিঙ্গারের চোখ এড়িয়ে গিয়েছিল।5 শ্রয়ডিঙ্গার ১৯২৬ সালের মার্চ মাসে দ্য ব্রয়লিকে লেখা এক চিঠিতে তাঁর অবদানের কথা স্বীকার করেন। আইনস্টাইনের গবেষণাপত্রটিই জার্মানিতে ম্যাক্স বর্ন, সুইজারল্যান্ডে শ্রয়ডিঙ্গার বা ইংল্যান্ডে পল ডিরাকের মতো বিজ্ঞানীদের দ্য ব্রয়লির কাজ সম্পর্কে সচেতন করে। এই তিনজনই পরবর্তীকালে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার বিকাশে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেবেন।

আলোর যেমন কণিকা ধর্ম আছে, ঠিক তেমনি সমস্ত কণিকারও তরঙ্গ ধর্ম আছে। শুধু কণা নয়, সমস্ত বস্তুরই তরঙ্গ ধর্ম আছে, কিন্তু আমরা সেটা দেখতে বা মাপতে পারি না। একমাত্র খুব কম ভরের বস্তুর জন্য সেটা দেখা যাবে। ইলেকট্রন হল তখনো পর্যন্ত আমাদের জানা সব থেকে কম ভরের কণা, সুতরাং তার তরঙ্গ ধর্ম দেখা সব থেকে সহজ। আলাদা আলাদা ভাবে সেই কাজটা ১৯২৭ সাল নাগাদ করলেন ব্রিটেনে জর্জ টমসন ও আমেরিকাতে ক্লিন্টন ডেভিসন এবং তাঁর সহযোগী লেস্টার জার্মার।

তাঁদের পরীক্ষাতে তরঙ্গের একটা বৈশিষ্ট্যকে ব্যবহার করা হয়। সামনে কোনো বাধা এলে তরঙ্গ বাঁকা পথে তাকে এড়িয়ে চলতে পারে, একে বলে অপবর্তন (Diffraction)। বাধার সামনে কোনো তরঙ্গ কতটা বাঁকবে তা তার দৈর্ঘ্যের উপর নির্ভর করে। তরঙ্গ বা ঢেউয়ের পরপর দুটো মাথার মধ্যে যে দূরত্ব তাকে বলে তরঙ্গদৈর্ঘ্য। ইলেকট্রনের তরঙ্গদৈর্ঘ্য আরো অনেক ছোট, অবশ্য সেটা ইলেকট্রনের ভরবেগের উপর নির্ভর করে)। ইলেকট্রনের গতিশক্তি যদি একশো ইলেকট্রন ভোল্ট6 হয়, তার তরঙ্গদৈর্ঘ্য এক মিটারের হাজার কোটি ভাগের এক ভাগের কাছাকাছি। এই তরঙ্গের অপবর্তন দেখতে যে সূক্ষ্ম ছিদ্র লাগবে, তার মাপও এর কাছাকাছি হতে হবে।

এত সূক্ষ্ম বাধা বা ছিদ্র কোথায় পাওয়া যাবে? এক্সরশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্যও একই রকম মানের হয়, পদার্থের কেলাসের পরমাণুদের মাঝের ফাঁকা জায়গাগুলোকে ছিদ্র হিসাবে ব্যবহার করে তার অপবর্তন দেখা সম্ভব হয়েছে। একই পদ্ধতি ইলেকট্রন তরঙ্গের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা হল। সংক্ষেপে জর্জ টমসনের পরীক্ষার বর্ণনা করি, ধাতুর পাতলা ফিল্মের উপরে উচ্চগতির ইলেকট্রনের স্রোত গিয়ে পড়ল, পিছনে তিনি রেখেছিলেন একটা ফটোগ্রাফিক প্লেট। অপবর্তন না হলে প্লেটের উপরে ইলেকট্রনরা একটা বিন্দুতে গিয়ে পড়ত, তা না হয়ে দেখা গেল প্লেটের উপর সুন্দর গোল গোল রিং তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ ইলেকট্রনেরও তরঙ্গ ধর্ম আছে। ডেভিসনরাও একই সময়ে প্রায় একই রকম পরীক্ষা করেছিলেন।

বিজ্ঞানীরা তখনই দ্য ব্রয়লির তত্ত্বকে প্রথমেই যথেষ্ট গুরুত্ব দিতেন, তাহলে হয়তো তার প্রমাণ পেতে ১৯২৭ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হত না। থিসিস পরীক্ষার সময় জাঁ পের‍্যাঁ প্রশ্ন করেছিলেন দ্যা ব্রয়লি ঠিক বলছেন কিনা তা পরীক্ষা করে কেমনভাবে দেখা যাবে? পরীক্ষার্থী সঠিক উত্তরই দিয়েছিলেন যে কেলাসের সাহায্যে এক্স-রশ্মির মতোই ইলেকট্রন তরঙ্গেরও অপবর্তন দেখতে পাওয়া উচিত। তিনি দাদা মরিসের সহযোগী এক্স-রশ্মি বিশেষজ্ঞ আলেকজান্ডার দ্যভালিয়েরকে পরীক্ষাটা করে দেখার জন্য অনুরোধ করেছিলেন, কিন্তু দ্যভালিয়ের অন্য গবেষণাতে ব্যস্ত ছিলেন বলে তাঁর প্রস্তাবে সাড়া দেননি।

টমসন ও ডেভিসনদের পরীক্ষার পরে দ্য ব্রয়লির প্রকল্প নিয়ে আর কোনো সন্দেহ রইল না। তিনি নোবেল পুরস্কার পেলেন ১৯২৯ সালে। সেই বছর তাঁর সমর্থনে বারোটি মনোনয়ন জমা পড়েছিল; তার মধ্যে একটি ছিল তাঁর থিসিসের পরীক্ষক জাঁ পের‍্যাঁর। তার আট বছর পরে টমসন ও ডেভিসন পুরস্কার নিতে মঞ্চে উঠলেন। ঘটনাচক্রে ইলেকট্রনের তরঙ্গধর্ম প্রমাণকারী জর্জ টমসন হলেন ইলেকট্রন কণা আবিষ্কর্তার জোসেফ জন টমসনের ছেলে।

ইলেকট্রনের এই অদ্ভুত তরঙ্গধর্ম ব্যবহার করে তৈরি হয়েছে ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ, যা আমাদের অতি ক্ষুদ্র বস্তু দেখতে সাহায্য করে। এ দেখা মানে অবশ্য চোখে দেখা নয়, পর্যবেক্ষণ বলা যেতে পারে। আধুনিক যুগে একই পদ্ধতিতে তৈরি হয়েছে স্ক্যানিং টানেলিং মাইক্রোস্কোপ বা অ্যাটমিক ফোর্স মাইক্রোস্কোপ। ১৯৮৬ সালে ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ উদ্ভাবনের জন্য আর্ন্সট রুস্কা ও স্ক্যানিং টানেলিং মাক্রোস্কোপের জন্য জার্ড বিনিচ ও হাইনরিখ রোহ্‌রারকে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। এই সব নতুন অণুবীক্ষণ দিয়ে একক পরমাণুকেও পর্যবেক্ষণ করাও সম্ভব। শুধু ইলেকট্রন নয়, নিউট্রনের মতো কণার তরঙ্গধর্মকে এখন বিজ্ঞানের পরীক্ষাগারে এবং শিল্পপ্রযুক্তিতে নিয়মিত ব্যবহার করা হচ্ছে।

ইলেকট্রন তাহলে কী? বস্তু না তরঙ্গ? ইলেকট্রন বা অন্য যে কোনো বস্তুই সাধারণ অর্থে তরঙ্গ হতে পারে না, কারণ তরঙ্গের ধর্ম হল ছড়িয়ে পড়া; ইলেকট্রনকে ছড়িয়ে পড়তে কেউ দেখেনি। এই তরঙ্গ তাহলে কী? এই প্রশ্নের উত্তর দেবেন মাক্স বর্ন, তিনি দেখাবেন শ্রয়ডিঙ্গারের সমীকরণে যে তরঙ্গের কথা বলা হচ্ছে, তা হল সম্ভাবনা (probability); তা হল বস্তুকণার ভবিষ্যত গতিবিধির সূচক। দ্য ব্রয়লি এই ব্যাখ্যার সঙ্গে একমত হতে পারেননি। তিনি যে ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, তাকে বলা হয় পাইলট তরঙ্গ। তাঁর নিজের কথায়, “The corpuscle may thus be regarded as guided by the wave a kind of pilot-wave. This view provides an interesting picture of the motion of corpuscles in Wave Mechanics without there being any need to abandon classical ideas too sweepingly.” সেখানে ইলেকট্রন কণার মতোই ব্যবহার করে, তার গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করে তার সঙ্গে যুক্ত জড় তরঙ্গ যার এক পৃথক অস্তিত্ব আছে। এখানে চিরায়ত পদার্থবিদ্যাকে কিছুটা অন্তত অনুসরণ করা যায়। এই ব্যাখ্যা অধিকাংশ বিজ্ঞানীর সমর্থন পায়নি, দ্য ব্রয়লি নিজেও জানতেন যে এই ব্যাখ্যাতে বহু সমস্যা আছে। পরে অবশ্য এই বিষয়টাকে আরো গিয়ে নিয়ে গেছেন কয়েকজন বিজ্ঞানী। কিন্তু কোয়ান্টাম বলবিদ্যার তাৎপর্যের জটিল আলোচনাতে ঢোকার সুযোগ এই লেখাতে নেই। শুধু একটা কথা বলা যেতে পারে, বহু বিজ্ঞানীর চেষ্টা সত্ত্বেও একশো বছর পরেও এই বিষয়ে কোনো নিশ্চিত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি।



তথ্যসূত্রঃ

  1. Aristocratic Culture and the Pursuit of Science: The de Broglies in Modern France, Mary Jo Nye, Vol. 88, No. 3 (Sep., 1997), pp. 397-421

  2. Matter and Light, Louise de Broglie, Translation by W.H. Johnston, 1939

  3. A Reexamination of Early Debates on the Interpretation of Quantum Theory: Louis de Broglie to David Bohm, José Gandarias Perillán, 2011

  4. The Historical development of Quantum Mechanics-Vol I Part 2, Jagdish Mehra and Helmut Rechenberg, 1982

  1. Louis Victor Pierre Raymond de Broglie, A. Abragam, Biographical Memoirs of Fellows of the Royal Society, 1988

  2. Probabilities of the Quantum World, Daniel Danin, 1983

  3. The Second Creation, Robert P. Crease and Charles P. Mann, 1996

1 আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিকতাবাদ অনুযায়ী কোনো বস্তু বা কণার ভরবেগ, শক্তি ও স্থিরভরের মধ্যে সহজ সম্পর্কটি হল 

E2=p2c2+m2c4

2 লোর বেগ, তরঙ্গদৈর্ঘ্য ও কম্পাঙ্কের মধ্যে সম্পর্কটি হল c=nl

3 অন্য সূত্রেও জানা যায় যে লাজেভাঁ দ্য ব্রয়লির প্রকল্পকে কিছুটা কষ্টকল্পনাই মনে করতেন। অবশ্য তিনিই আবার ১৯২৪ সালের এপ্রিল মাসে সলভে কনফারেন্সে সেটি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। সেখানে রাশিয়ান পদার্থবিদ আব্রাম ইওফেকে তিনি বলেছিলেন বিষয়টা যাই হোক, দ্য ব্রয়লির তত্ত্বের সৌষ্ঠব যে অসাধারণ তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

4 ফেলিক্স ব্লখ স্মৃতিচারণ করেছেন শ্রয়ডিঙ্গার একবার দ্য ব্রয়লির কাজ নিয়ে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন, তখন পিটার ডিবাই মন্তব্য করেন যে তরঙ্গ থাকলে তার একটা সমীকরণ থাকা উচিত। এর কিছুদিন পরে আবার বক্তৃতা দিয়ে গিয়ে শ্রয়ডিঙ্গার বলেন যে ডিবাই যে সমীকরণটি চাইছিলেন, সেটি তিনি খুঁজে পেয়েছেন। পিওতর কাপিৎজাও এই ঘটনার কথা লিখেছেন, তবে শ্রয়ডিঙ্গার বা ডিবাই কেউই এই ঘটনার কখনো উল্লেখ করেননি।

5 দ্য ব্রয়লির থিসিস শ্রয়ডিঙ্গার কবে প্রথম দেখেছিলেন তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী সাক্ষ্য আছে। শ্রয়ডিঙ্গার সুইজারল্যান্ডের জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতেন। ফরাসি রসায়নবিদ ভিক্টর আঁরি বলেছেন তিনি ১৯২৫ সালে দ্য ব্রগলির থিসিসের এক কপি লাজেভাঁর থেকে জুরিখে নিয়ে যান, কিন্তু কিছুই বোধগম্য না হওয়াতে সেটি শ্রয়ডিঙ্গারকে পড়তে দেন। দু সপ্তাহ পরে শ্রয়ডিঙ্গার তাঁকে থিসিসটি ফেরত দেন, উপরে মন্তব্য লেখা ছিল ‘রাবিশ’। লাজেভাঁ সেই কথা শুনে বলেন শ্রয়ডিঙ্গার ভুল করছেন, তাঁরা আর এক বার দেখা উচিত।

6 একটা ইলেকট্রনকে একশো ভোল্ট বিভবপ্রভেদের মধ্যে দিয়ে পাঠালে তার গতিশক্তি হয় একশো ইলেকট্রন ভোল্ট।

 
প্রকাশ সাম্পান ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

1 comment:

  1. আমার ভূবনে স্বাগতম,বাংলাদেশ

    ReplyDelete